কুর্দি গ্রাম রানিয়াতে
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
সোলেমানিয়াতে বসে খবর পেলাম রানিয়াতে তুর্কি বিমান আক্রমন করেছে। বাড়ী ঘরের উপর বোমা ফেলেছে গাছপালা জ্বলে গেছে। মানুষগুলো ঘরছাড়া। সকাল বেলা রওয়ানা হলাম সাথে দোভাষী আব্বাসকে নিলাম। রানিয়া পাহাড়ি এলাকা, ইরান সীমান্তের কাছে। তুর্কি বিমান ইরাকের ভিতর ঢুকে এখানে আক্রমণ করেছে ভাবাই যায় না। কুর্দিস্থানের প্রশাসনিক দুর্বলতার সুযোগে তুর্কিরা এই সাহস দেখাচ্ছে। ইরাকী কুর্দিস্থান ও তুর্কি সীমান্তে তুর্কি বিচ্ছিন্নতাবাদী দল ‘পিকেকে’কে সমূলে ধ্বংস করার জন্য তুর্কি সরকার বদ্ধপরিকর। পিকেকে ও তাই সুযোগ বুঝে কুর্দিস্থানে তাদের স্বজাতির কাছে আশ্রয়ের জন্য ঢুকে পড়ে। তুর্কি বাহিনী তখন স্থলপথে ও আকাশ পথে আক্রমন চালায়।
রানিয়ার কাছাকাছি আসতেই দুরের পাহাড় গুলোর চুড়ায় বরফ দেখতে পাচ্ছিলাম। আমাদেরকে গাড়ী ছেড়ে হাঁটাপথে দোলারাকা উপত্যকার কোব গ্রামে যেতে হবে। এই গ্রামেই বিমান আক্রমন হয়েছে। যে কোন সময় আবার বিমান আক্রমনের সম্ভাবনা আছে। তাই গাড়ী দুটো আড়ালে রেখে পাহারার ব্যবস্থা করে পায়ে হেঁটে রওয়ানা হলাম। পেলেনগান গ্রামে থেকে স্থানীয় লোক মোস্তফা উমরকে নিয়ে আমরা উত্তর দিকে রওয়ানা হই । পথে কিছুদুর যাওয়ার পর কোব গ্রামের মুরুব্বি ওমর ইব্রাহীম এর দেখা পাই। দোভাষির মাধ্যমে জানতে পারি তার গ্রাম জনশুন্য। মানূষ বিমান আক্রমনের ভয়ে পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নিয়েছে। পথে মাঝে মাঝে ছোট ছোট গ্রাম। ৮/১০ টা বাড়ী, গ্রামের লোকজন মুরগী পালন করে। ছোট ছোট বাচ্চরা আগ্রহ করে বিদেশীদের দেখছে, বাকীরা ব্যস্ত। মহিলারাই বাড়ীতে আছে। বাজাজপি বামোলাকান হেমানিয়ান গ্রাম পার হয়ে আমরা কোব গ্রামের পাদদেশে আসি। গ্রামটা পাহাড়ের উপর। দুপাশে সবুজ পাহাড় মধ্যখানে উপত্যকা। পাহাড়ের কোলে গ্রামগুলো। অপূর্ব নৈসর্গিক দৃশ্য। চলতে চলতে গাছ পালা ও বাড়ী ঘরের উপর বিমান আক্রমনের ক্ষয়ক্ষতি দেখলাম। গাছপালা কিছু কিছু জ্বলে গেছে। বাড়ীঘর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বোমার আঘাতে ।
আমরা পাহাড়ের চুড়ার দিকে হাঁটা পথ দিয়ে আস্তে আস্তে উপরে উঠছি। পথ চলতে চলতে নীচে দেখলাম ছোট্ট পাহাড়ী নালা দিয়ে ঠান্ডা পানির স্রোত বয়ে যাচ্ছে। পাহাড় চুড়ার বরফ গলা পানির ধারা উপর থেকে নীচে নামছে। খচ্চরে চড়ে পায়ে হেটে মাঝে মাঝে মানুষজনের চলাফেরা দেখাযায়। আমাদেরকে অতিক্রম করার সময় সালাম দেয়। বলে চুয়ানি? অর্থাৎ কেমন আছেন ভাল তো আমরা বলি ‘বাসি’ অর্থাৎ ভাল। হাসিমুখ নিয়ে চলে যায় গন্তব্যে। বেশ খানিক্ষণ চলার পর কোব গ্রামে পৌছালাম। বিরান গ্রাম। গ্রামবাসি বাড়ীঘর ছেড়ে চলে গেছে। বম্বিং এর ফলে সৃষ্ট গর্ত ও স্পিনটার দেখলাম ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। গ্রামে ১০/১২ ঘর বসতি ছিল এখন কোন জনমানব নেই। আমরা গ্রামে ঘুরে দেখেছি। এমন সময় আবার জঙ্গি বিমানের শব্দ পেলাম আমরা আড়ালে চলে গেলাম। বিমান অনেক উপর দিয়ে উড়ে গেছে।
স্থানীয় লোকজন জানালো তুর্কীরা বিমান থেকে দেখে নীচে কেউ চলাচল করছে কিনা। মানুষজন দেখলেই ড্রাইভ দিয়ে বিমান গুলো নীচে নেমে এসে বোমা ফেলে। আশে পাশের এলাকার ও ক্ষয়ক্ষতির ছবি তুললাম। বিমানের শব্দ মিলিয়ে যেতেই গ্রামের মুরুব্বী রাস্তা থেকে শব্দ করল ও আমাদেরকে কাছের পাহাড় গুলোর দিকে তাকাতে বলল। হঠাৎ করে দেখলাম লাল নীল ও নানা রং এর পোশাক পড়া ছেলে, মেয়ে বাচ্চা পাহাড়ের কোলের গর্ত থেকে বেরিয়ে এসেছে। আজব দৃশ্য। এতক্ষণ গ্রামে থেকেও আমরা বুঝতে পারিনি যে পাহাড়ের কোলে এতলোকজন লুকিয়ে আছে। পাহাড়ের গুহায় এদের বসবাস, এখানে রান্না খাওয়া সব চলছে। ্েধাঁয়া যেন বের না হতে পারে বা বাইরে থেকে না দেখা যায় সে জন্য বিশেষ সতর্কতা নেয় তারা। রাতের বেলা সব শান্ত হলে কেউ কেউ গ্রামে নেমে আসে পাহাড় থেকে । পাহাড়ের নীচেও কিছু কিছু জায়গায় আরো কতগুলো পরিবার লুকিয়ে আছে। খালি চোখে এদের দেখা যায় না। একদম কাছে গেলে বোঝাযায় যে মানুষ আছে। আমরা দোভাষির মাধ্যমে জানালাম যে, আমরা এ ঘটনা সঠিক জায়গাতে জানাবো তারা আস্বস্থ হলো।
ঘন্টা খানেক গ্রামে কাটিয়ে এবার ফেরার পালা। সূর্যের আলো পাহাড় চুড়ায় বরফে প্রতিফলিত হয়ে বেশী আলো ছড়াচ্ছে। অন্য পাশে পাহাড়ের ছায়াতে বেশ ঠান্ডা ও অন্ধকার। ফেরার পথে খচ্চরের পিঠে উঠে বসলাম এ এক নতুন ধরনের অভিজ্ঞতা। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে কিছুক্ষণ নামার পর গ্রামের দৃশ্যের ও খচ্চরে ভ্রমণের ছবি তুললাম। প্রায় ২/৩ ঘন্টা হাটাহাটি হলো। ঠান্ডার ভিতরেও ঘামছি। পাহাড়ি নালা থেকে মুখে পানি ছিটালাম। ফ্রেস লাগল ঠান্ডা পানির ঝাপটা। এর মাঝেই হালাকা নাস্তা করে নিলাম। গাড়ী গুলো নিরাপদেই আছে দুপুর দু’টার দিকে আবার সোলেমানিয়ার পথে রানিয়া থেকে রওয়ানা হয়ে গেলাম।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।
১ম ধাপঃ
দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন
মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি
গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন
জানা আপুর আপডেট
জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।
বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন
বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।
এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন
অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!
দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন