কয়েক বছর ধরে আমাদের মিডিয়া জগতে এসএসসি কিংবা এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল সংক্রান্ত সংবাদে নতুন এক প্রতিযোগিতার আবির্ভাব ঘটেছে। পরীক্ষার ফলের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠছে ছেলে-মেয়েদের মধ্যে 'যুদ্ধে' যে জয়লাভ করলো তা। সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে, এবার মেয়েরা এগিয়ে / এবার ছেলেরা এগিয়ে। এবারও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। বেশিরভাগ সংবাদপত্রই এ বছর ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা যে ভালো ফল করেছে তা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ছাপিয়েছে। শিরোনাম দেখলে যে কারো মনে হতেই পারে যে পরীক্ষার্থীরা বুঝি ভালো ফলাফলের চেয়ে নিজেদের বিপরীত লিঙ্গের পরীক্ষার্থীকে পরাজিত করার পণ নিয়ে যুদ্ধে নেমেছিল। মানে এখানে একটা যুদ্ধ, দ্বন্দ্ব কিংবা প্রতিযোগিতা ছিল।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংবাদের অনেক উপাদানের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে যুদ্ধ, দ্বন্দ্ব ও প্রতিযোতগিতাকে চিহ্নিত করা হয়। শিখানো হয়, যেসব ঘটনার মধ্যে এই উপাদানগুলো থাকবে সেগুলো পাঠককে আকৃষ্ট করবে। তাই এগুলো দিনের গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ হওয়ার যোগ্য। আর কোনো ঘটনায় যদি এরকম একাধিক উপাদান থাকে তাহলে তো কথাই নেই। সংবাদ রসায়নের সূত্র ধরে সেটি মহা গুরুত্ব পাওয়ার ক্ষমতা রাখে। কারণ সেটি পাঠককে আরো বেশি আকৃষ্ট করবে।
কোনো ঘটনার সংবাদ হয়ে ওঠার পিছনের এই অতি সাধারণ প্রক্রিয়াকে মাথায় রেখে এখন আমরা আমাদের পরীক্ষা সংক্রান্ত সংবাদগুলোকে দেখতে পারি। সাধারণভাবে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে এ সংক্রান্ত সংবাদ গুরুত্ব পাওয়ার যোগ্য। মানুষ এ সংক্রান্ত সংবাদ জানতে চায়। তাছাড়া এগুলোর প্রতি কয়েক লক্ষ পরীক্ষার্থী ছাড়াও তাদের পরিবার-পরিজনদেরও বিশেষ আকর্ষণ কাজ করে। স্বাভাবিকভাবেই এ জাতীয় সংবাদ সংবাদপত্রগুলোতে গুরুত্বের সাথে ছাপানো হয়।
সংবাদ রসায়নের কথা আগেই বলেছি। এখন এই পরীক্ষা সংক্রান্ত সংবাদের সাথে যদি নতুন কোনো উপাদান যোগ করা যায় তাহলে তার প্রতি আরো বেশি পাঠককে আকৃষ্ট করা সম্ভব। আর বেশি পাঠক মানেই বেশি বেশি পত্রিকা বিক্রির সম্ভাবনা। আর বেশি বিক্রি মানে যে বেশি লাভ এটা সহজ কথা। ফলাফল সংক্রান্ত সংবাদে এই চিন্তা থেকেই জোর করে যুদ্ধ, দ্বন্দ্ব ও প্রতিযোগিতা নামক উপাদানগুলোকে ঢুকানো হচ্ছে বলে মনে হয়। আর এর মাধ্যমে জীবনের শুরুতেই ছেলে-মেয়েদেরকে যে নতুন এক দ্বন্দ্বের শিক্ষা দেয়া হচ্ছে তা মনে হয় ভেবে দেখা দরকার। কারণ ইতোমধ্যে নানামুখী দ্বন্দ্বে জর্জরিত নারী-পুরুষের মধ্যে ব্যবধান যে এর মাধ্যমে আরো বাড়ারই সম্ভাবনা!
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০১০ দুপুর ১২:৪৫