somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একদিন দুপুরে :)

১৫ ই জুলাই, ২০১১ রাত ১২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আম্মা ছিলো প্রচণ্ড রাগী আর সাংঘাতিক মেজাজী - সাক্ষাৎ জল্লাদ । মাঝে মাঝে মনে হতো আমরা মনে হয় আম্মার সৎ ছেলেমেয়ে । সবকিছু তার কথামতো হওয়া চায়, কোনও কিছুতেই একটুও ছাড় দিতোনা । প্রচন্ত ডিসিপ্লিন্ড লাইফ ছিলো আমাদের । মাঝে মধ্যে আমরা খুব অবাক হতাম -একটা মানুষ কিভাবে ঘড়ি না দেখেই ঠিক টাইমটা বলে দিতে পারে - এই হচ্ছে আমার আম্মা ।:|

আর আব্বা ছিলও ঠিক তার উল্টো । অমায়িক ব্যবহার, সহজ সরল আর প্রচণ্ড আত্মভোলা একজন নিখাদ ভদ্রলোক যাকে বলে । মানুষকে খুব সহজে বিশ্বাস করতো । কোনোদিন দেখতোনা দোকানী ব্যাগের মধ্যে কি দিলো । যে কারনে আব্বা - বাজার থেকে আসার পর ব্যাগ থেকে প্রায়ই পচা মাছ, পচা সব্জি, হাড়ভর্তি মাংস বের হতো - ফলস্বরূপ আম্মার একক কনসার্ট শুরু, তৎক্ষণাৎ আব্বা খবরের কাগজ নিয়ে বারান্দায় - এবং যথারীতি আমরা দুইবোন আব্বার দুইপাশে মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আব্বাকে সান্ত্বনা দিতাম /:)

আম্মার অনেকগুলো নেশার মধ্যে একটা নেশা ছিলো - আচার বানানো । আম, জলপাই, তেঁতুল, চালতা, শুকনা কুল বরই , রসুন, করমচা, লেবু - আরও অনেক রকমের আচার - আমি এতো নামও জানিনা । আর একটা আইটেম দিয়েই আম্মা কয়েক পদের আচার বানাতো । যেমন শুধু আম দিয়েই আমরা ৭/৮ রকমের আচার খেয়েছি । এবং এই আচার বানানোর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরোটাই আম্মা নিজে একা করতো । কাটাকুটি, রোদে দেয়া, বারান্দায় বা ছাদে দেয়া - আবার ছাদ থেকে তুলে আনা - সব নিজ হাতে করতো । আমাদের দু'বোনকে আচারের বৈয়ামের ধারে কাছে ঘেঁসতে দেয়াতো দুরের কথা - তাকালেই পারলে চোখ তুলে নিতো এমন অবস্থা ছিলো । তবে আমরা খেতে চাইলে - আম্মা নিজ হাতে বৈয়াম খুলে আমাদের দিতো ।

একদিন দুপুরে আম্মা তার রুমে ঘুমাচ্ছে । আমরা দুইবোন আর আব্বা লিভিংরুমে টিভি দেখছি । হঠাৎ আমি বললাম - "খুব আচার খেতে ইচ্ছা করছে"। আপা বললো - " কিন্তু আম্মা তো ঘুমাচ্ছে । না ওঠা পর্যন্ত খাওয়া যাবেনা "। আব্বা আমাদের দুইবোনের চেহারা দেখে কি মনে করে
বললো - "তোরা যে আচারটা খেতে চাস - বৈয়াম নিয়ে আয় " । আপা হায় হায় করে উঠে বললো - " আম্মা কিন্তু মেরে ফেলবে " । আব্বা বলল -" আমি ম্যানেজ করবো - তোরা নিয়ে আয় "। আপা ভয়ে সোফা থেকে এক চুলও নড়লোনা । আমি সাহস করে কাশ্মীরি আচারের বৈয়াম , চামচ পিরিচ আনলাম । আব্বা অল্প একটু খেলো - আর আমরা দুই বোন মনের সাধ মিটায়ে খেলাম । খাওয়া শেষে পিরিচ চামচ ধুয়ে সব জায়গা মতো রেখে দিলাম - যাতে আচার খাওয়ার কোনও প্রমান না থাকে B-)

কিছুক্ষণ পর আম্মা ঘুম থেকে উঠে আমাদের লিভিংরুমের দিকে হেঁটে আসলো । আমরা দুই বোন আম্মার দিকে তাকিয়ে খুব মিষ্টি করে একটা হাসি দিলাম । আব্বাও কেমন বিগলিত হয়ে আম্মার দিকে তাকালো । আম্মা হঠাৎ বিড়ালের মতো নাক দিয়ে কি যেন শুঁকে - আমার দিকে জ্বলন্ত দৃষ্টি দিয়ে বলল "তুই আচার খেয়েছিস ?" ( আম্মার ধারনা তার বড়মেয়ের কোনোদিন সাহস হবেনা আচারের বৈয়ামে হাত দেয়া । করলে এটা আমাকে দিয়েই সম্ভব :)) আব্বা বললো - "আরে না না আমার আচার খেতে ইচ্ছা করছিলো - তাই আমি নিজেই এনে খেয়েছি "। আম্মা এবার অগ্নিমূর্তি ধারণ করে আব্বার দিকে তাকিয়ে বললো - "তুমি কি বলতে
চাচ্ছো - ওরা দুইজন খায়নি ? আব্বা বলল - " না না - আমি ওদেরকে নিজ হাতে দিয়েছি " । আমরা দুইবোন তখন দোয়া পড়া শুরু করে দিয়েছি । আমাদের দিকে তাকিয়ে আম্মার হঠাৎ কি মনে হলো - কিছু না বলে সামনে দিয়ে হেঁটে চলে গেলো । ঘটনা তেমন সুবিধার মনে হলনা - বজ্রপাত হওয়ার কথা - কিন্তু হচ্ছে না কেন ?:-/

পুরো বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কিভাবে যে কাটলো - শুধু আমরাই জানি । রাতে খাওয়ার টেবিলে - আম্মাকে চুপ থাকতে দেখে আব্বা বললো " আচ্ছা তুমি কিভাবে বুঝলা যে - আমরা আচার খেয়েছি"। আম্মা খুব ঠাণ্ডা ভাবে বললো " তোমার মেয়েদের জিজ্ঞেস করো - শোনো - ওরা জানে কিনা ।" আপা সাথে সাথে মিউ মিউ করে বললো - " আম্মু আমি সত্যিই জানিনা " । আব্বা আম্মা দুজনেই আমার দিকে তাকালো । আমি ভয়ে ভয়ে বলল্লাম " আম্মা ছোটবেলায় বলতো - আম্মার নাকি ৪টা চোখ । ২টা আম্মার সাথে থাকে আর ২টা আমাদের পেছনে পেছনে ঘুরে । কিন্তু ২টা নাকের কথাতো কোনোদিন বলেনি " :D
(আমার এই দুঃসাহস আর বদ স্বভাবের জন্যই আম্মা আচার খাওয়ার অপরাধে প্রথমেই আমাকে টার্গেট করেছিলো ;))

পরে জেনেছিলাম - লিভিংরুমে ঢুকেই আম্মা কাশ্মীরি আচারের সুঘ্রানটা পেয়েছিলো :)

[ গত একটা সপ্তাহ জ্বরে কাহিল হয়ে পড়ে আছি । কিছুই খেতে পারছিনা । আম্মার কথা মনে পড়ছে - কতদিন দেখিনা । আম্মা থাকলে আচার এনে বলতো - "একটু আচার খা - দেখবি খাওয়ার রুচী আসবে "]
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০১১ রাত ১২:০১
৪৮টি মন্তব্য ৪৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×