বড় ছেলে মারা যাওয়ার ৫টি বছর পর আমার মায়ের কোলে আমার জন্ম।পুরো পরিবারের আনন্দ কেবল আমাকে নিয়ে তখন।এভাবেই বড় হয়েছি আমি।সবার কাছ থেকে আদর পেয়ে পেয়ে,কিংবা আদর আদায় করে।সাধারনত এরকম ছেলেমেয়েরা অনেক একরোখা হয়ে যায়।নিজের মর্জি মতন চলা,নিজের মতন করা ইত্যাদি।কিন্তু আমার ক্ষেত্রে হল ঠিক তাঁর উল্টো।আমি হয়ে গেলাম আরো কাঙ্গাল।ইচ্ছে করে পৃথিবীর সমস্ত ভালবাসা নিজের মুঠোয় নিয়ে আসি।হয়ে গেলাম হাসিখুশী একটা মেয়ে।কারো কথাই গায়ে লাগেনা,কারো উপরই রাগ করিনা।প্রচন্ড হৈচৈ প্রবন,আড্ডাবাজ মেয়ে।অনুভব করি অন্তরের টানগুলো!মানুষের ভালোবাসাগুলো। এভাবেই বছর ঘুরে চলল।বড় হলাম।আশেপাশের বন্ধু-বান্ধব রা বদলাতে শুরু করল।সবাই খুব অদ্ভূত ভাবে বদলাতে লাগল।অবাক হয়ে যা খেয়াল করলাম,এরা প্রেমে পড়ছে একে একে।বিষয়টা খুব স্বাভাবিক ভাবেই নিলাম।বয়স হয়ছে যা করার তা তো ওঁরা করবেই।আমি হয়ে গেলাম, অবসরের সঙ্গী।কারো মন খারাপ,কারো নোট দরকার,কেউ আমার নাম করে ডেটিং এ যাবে,কারো সাজেশন দরকার,কেউ পড়াটা বুঝছেনা,কারো আবার একটু হাসার জন্য আমাকে দরকার হতে লাগল।বাহ! আমিও ঠিক আনন্দ পেয়ে গেলাম এর মাঝে। যেহেতু কেউ আমাকে জানতেই চায়না!,সাবার মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দিলাম,কেবল নিজের আপন সত্ত্বা টা কে সযতনে আগলে রাখলাম।এটাই আমার একমাত্র সঙ্গী হয়ে দাড়ালো,যাকে আমি সবসময় সাথে পাই।যার সাথে যখন ইচ্ছে হারিয়ে যাই।যাকে নিজ হাতে ভাঙ্গি,আবার নিজ হাতেই গড়ে তুলি। এভাবেই আস্তে আস্তে টিন এজ ছাড়ালাম।
কোন এক ব্যক্তি বলে গেছেন, "১৮বছর বয়স পর্যন্ত অর্জন করা অভিজ্ঞতাই মানুষের সারা জীবনের কান্ড জ্ঞান।"
আমি এর চমৎকার প্রতিফলন পেলাম আমার কাজে কর্মে।এভাবে নিজেকে নিয়ে খেলতে খেলতে কেমন অত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠলাম।নিজেকে নিয়ন্ত্রন করার শক্তি পেয়ে গেলাম। নিজেকে একটা সুউচ্চ প্রাচীর মনে হয় তখন।যেটাকে নির্ভিক ভাবে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় অনেক দূর থেকে,কাছে এসে ছোঁয়া যায়, মাথা কুটে প্রয়োজন আদায় করে নেয়া যায়।কিন্তু দেয়ালের ওপাশে কি আছে সেটা কখনই দেখা যায় না।
সময় এগিয়েঃ
সহজ স্বভাবিক জীবন আমার।যখন যা ইচ্ছে করে তা নিয়ে ভাবি,সুযোগ মতন পূরন করি।সেই ধারাবাহিকতায় ই বাসায় কম্পিউটার এলো।তারও অনেক পরে এলো ইন্টারনেট।বিশাল দুনিয়া!ঘুরছি।এক বন্ধুর আহ্বানে ঢুকলাম ব্লগে।যেদিন প্রথম ঢুকলাম তখন ব্লগ বেশ সরগরম।তখন কেবল জনপ্রিয় ব্লগারদের লেখা পড়তাম খুজে খুজে।একদিন আমিও কিছু লিখে বসলাম দুঃসাহস নিয়ে।উৎসাহ পাওয়াতে ধীরে ধীরে এগোল লেখা।একদিন আমার প্রিয় এক ব্লগারের কমেন্ট পেলাম।আমিতো অভিভূত! যাহোক,এরপর স্রোতে ভেসে অনেক কিছুই করেছি। বছর ঘুরে এলো।ব্লগের একটা ছোট অংশ ফেসবুকেও জুটে গেল!সবকিছুই আমি সাধারন ভাবে নেই।তাই যখন একজন অতীত জনপ্রিয় ব্লগার ফেসবুকে আমাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানলো, অবাক হইনি।কিন্তু যখন সে আমার সেই কমেন্টকারী ব্লগার! তখন আবার বেশ অবাক লাগল,এবং ভালোও।এই যা।
মাস তিনেক পরে,আবার তাহার আগমন। এবার সরাসরি চ্যাট এ নক।বাহ! যেহেতু তাঁর প্রতি আগ্রহ টা পুরানো,কথা চালালাম।
তুলা রাশির জাতকদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় টা খুব বেশী কর্মঠ হয় বলেই কিনা,আমি ধরে ফেললাম,ছেলেটা একটা অযুহাত খুজছে কথা বলার।সেটা সে ভালোভাবেই সম্পন্ন করল।আমি মজা পেয়ে গেলাম।তবে এর পরে আর একবারের জন্য ও মনে হয়নি তাঁর আচরনে কোন মেকী ভাব ছিল।আমি অবাক হলাম,এই জন্যেই।তার সহজ সাবলীল সততা দেখে।গভীর থেকে সবকিছু দেখার চেষ্টা করি বিধায় আস্তে আস্তে ছেলেটার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠলাম এই কারনেই যে,সে তাঁর অন্যায় টাও যেমন অকপটে স্বিকার করে নেয়,তেমন নিজের গুনাবলী গুলিও তুলে ধরে! এগিয়ে চলল কথাগাড়ি।'আমার আরেকটা ছোট্ট অভ্যেস হল,আমি যেটা অনুমান করতে পারি সেটা যার সম্পর্কে তাঁর মুখ দিয়েই স্বীকার করিয়ে নেই।বেরিয়ে এলো, সে আমায় ভালোবাসে।
এমন পরিস্থিতি নতুন নয়।প্রতিজ্ঞা করেছি, আমার জীবনসঙ্গী ব্যপারটা আমি সম্পূর্ন রূপে আমার মা-বাবার কথায় নির্ধারন করব বিধায় এই পরিস্থিতি গুলা আমাকে সিদ্ধান্ত হীনতায় ভূগায় না।তাই যথারীতি সরে এলাম।কিন্তু,অদ্ভূত ছেলেটার মায়া!কোথায় যেন আমাকে আটকে রেখেছে!কি যেন একটা অন্যরকম আছে তাঁর মধ্যে!যা দেখলাম,তার দৃঢ়তা।আমাকে আমার প্রতিজ্ঞা রক্ষা করিয়েই নিয়ে যাবার প্রতিজ্ঞা!! বেশ ধাক্কা খেলাম। এভাবেই সে আমাকে ধাক্কাতে লাগল,তার দৃঢ়তা দিয়ে।বিশ্বাস দিয়ে।জেদ দিয়ে।সততা দিয়ে।আর,সর্বোপরি তাঁর তুমুল ভালোবাসা দিয়ে।আমি ভেসে গেলাম খড় কুটোর মতন।
এভাবেই আমি দিন দিন দুর্বল হয়ে যাচ্ছি,তাকে জানাইনি।মনে হচ্ছে কেউ একজন আমার চারপাশে খুটির মতন দাঁড়িয়ে গেছে।পড়ে যাওয়ার আগেই আকড়ে ধরবে।এই অনুভূতি, না, এটা বিশ্বাস। এই বিশ্বাসটাই আমাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। মাথায় কেবল একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে,যদি সে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে, আমাকে চেয়ে বসে?!কি জবাব দিব আমি তার?এটাই কি তবে ভালোবাসা?! কতদূর এর সীমানা?
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১১:২১