কোথাও যাওয়ার আগে আমার সব কিছু খুব গুছানো থাকে আগের দিনই।তাড়াতাড়ি ড্রেসড আপ হয়ে বের হয়েই আরেক যন্ত্রনা! বৃষ্টি!! পৌষ মাসের মাঝে এসে যদি এহেন জিনিসের মুখে পরতে হয়,তবে কেমনটা লাগে!! আবার বাসায় ফিরলাম।ছাতা টা ব্যগে পুরে বের হলাম।কলেজ বাস মিস করব,সিওর।পাবলিক বাস ই ভরসা।
ইচ্ছে ছিল কাটাবন নামব।কিন্তু শাহাবাগের মোড়ে সকাল ৮.৩০এ যেন ফুলের স্বর্গ নেমে আসে।ঘ্রান আমাকে এতটা মুগ্ধ করল যে,নেমে গেলাম সেখানেই।আমার পছন্দ টকটকে লাল গোলাপ।ইদানিং কার গোলাপগুলো হয় সব মেজেন্টা/গোলাপী।খুজে খুজে খুজে খুজে একটা ছোট্ট মেয়ের কাছে পেলাম,কয়েকটা ফুল।টকটকে রক্ত লাল না হলেও,অন্য সবগুলো থেকে আলাদা।নিয়ে নিলাম।
এবার রিকশা নিলাম,আজিমপুর।সোহরাওয়ার্দী উদ্যান টা পার হওয়ার সময় জায়গাটা কে এত্ত চমৎকার লাগল যে,সিদ্ধান্ত নিলাম,এখানেই নেমে যাব।রিকশা থামালাম। কি আজব! আজ সবকিছুই আমার প্ল্যন এর বাইরে দিয়ে হচ্ছে!! কিছুই বুঝছিনা।মাথার সমস্ত টেনশন বিদায় করে দিলাম।এরপর,কেবল ৫মিনিটের অপেক্ষা।সে এল,ধীরে।
হাসিমাখা একটা মুখ বুকে ব্যথার কারন হয়ে দাড়ালো।কোথাও শুনেছিলাম,পুরুষরা হল বীর্যের প্রতীক।তাই,তাদের চেহারায় কাঠিন্য একে দেয়া হয়।কিন্তু আমার সামনে যে এল,তাকে দেখেতো ভয় আরো পালিয়ে যাবার উপক্রম!সব পুরুষের মায়া গুলো জমিয়ে মনে হয় আল্লাহ এই ছেলে টাকে বানিয়েছেন।ঠিক তাই মনে হচ্ছিল আমার।সাথে সেই পুরোনো অনুভুতির সুতীব্র জাগরন।এই ছেলের কাছে সব কিছু সঁপে দেয়া যায়,নির্দ্বিধায়।
পাশাপাশি হাটছি দুজন।পায়ে পায়ে তাল রেখে।জীবন এখন একা নয়।একটা মানুষ আমার জন্য হাটছে,কিংবা আমাকে নিয়ে হাটছে। মাথা নিচু করে তাই ভাবছিলাম।এই তাল মিলানোতে যে কত সুখ জমা!
এতটা বছর যা অনুভব করে এসেছি,এখন বাস্তবতার মুখে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছে,আসলেই বাস্তবতাই সবচেয়ে বড় এবং পোক্ত জিনিস,কোন কিছু বুঝার।আমি ঠিক বুঝছিলাম।
যা ঘটে গেল,তা এত দ্রুত চলছিল যে আমি নিজে বুঝার মত সময় ই পাইনি।কিন্তু যখন তার হাতটা নিয়ে আমার হাতে রাখলাম এবং দেখলম,আমার ছোট্ট হাত দুটো তার হাতের বিশালতায় হারিয়ে গেল,তখনই সব পরিস্কার হয়ে এল আমার কাছে,এক ঝটকায়।
আসলেইতো!এই পুরো জীবনটাকেই ওর মধ্যে হারিয়ে দিতে পারি আমি।ঝেরে ফেললাম সমস্ত দ্বন্দ্ব।হয়ে গেলাম সম্পূর্ন স্বাধীন।নিজের দায় থেকে মুক্ত।নিজেকে আগলে রাখার কাজটি আর আমার নয়।আমার পাশে বসে থাকা এই মানুষটির!
আমার স্বাধীন হওয়ার সময়টা বুঝি বৃষ্টির ও খুব মনে ধরেছিল।তাই সে জোরে নেমে স্বাগত জানালো।আশেপাশের সবাই উঠে গেল,ছাতার অভাবে।পুরো বিশাআল গ্যলারি জুড়ে কেবল আমরা দুটিতে,ছাতা মাথায়।পরিপূর্ন এ ভালবাসা।পবিত্রতায় মেশানো এই ভালোবাসা। বৃষ্টি ও কুয়াশা ভেজা নরম স্নিগ্ধ প্রকৃতির শীতল পরশ মাখা স্বর্গীয় এ ভালোবাসা।একান্তই আমাদের ভালোবাসা।
বিধাতা বোধহয় তখন মুচকি হেসেছিল।আমাদের আশেপাশের সমস্ত কিছুই প্রকাশ করছিল যে, এইটাই আমাদের নিয়তি,এইটাই আমাদের জীবন।ধন্যবাদ প্রকৃতি।
কথার মাঝে কথা,হাসির মাঝে হাসি,কখনো কৌতুকের সাথে অভিনয়,কিংবা হালকা চোখ রাঙ্গানো।এটাই ভালোবাসা।কাঁধে মাথা রেখে ক্ষানিক বসা,তাও বোধহয় ভালোবাসা।হাতে হাত রেখে হেটে চলা,এটাই বুঝি ভালোবাসা।এখানে কোন অভিনয় ছিল না।ছিলনা সঙ্কোচ।
ছেলেটা আমাকে এক মুহূর্তের জন্য একা ছাড়ছিলো না!কি টানে আমিও আটকে আছি!অবাক!প্রথম দেখাতেই এতটা আপন করে নিতে পারব ভাবতেই পারিনি।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে,যা করছি তাও কম পরে যাচ্ছে।আরেকটু আপন করে যদি নেওয়া যেত!
ভালবাসার টানে,পাশে আনে। বহুত হেসেছিলাম এয়ারটেলের জিঙ্গেল টা শুনে।এখন এটারই প্রতিফলন পাচ্ছি।প্রতিটা মুহূর্তে সে আমাকে বুঝিয়ে দিচ্ছে,সে আমার।একমাত্র আমার।জীবনের সমস্ত টুকু দিয়ে সে আমার।তার ওই বুকটাতে মুখ লুকাবো কেবল আমি।তার চোখের মায়ার গভীরতায় হারিয়ে ফেলব নিজেকে,শুধুই আমি।তার হাসির শব্দে উল্লাসে কেপে কেপে উঠবো,তাও কেবল আমিই।
**৭টা ঘন্টা।সময়ের বৈশিষ্ট্য টা খুবই কঠিন।কারো জন্যে অপেক্ষা করলে সময় কাটতেই চায়না।আবার তারই সন্নিধ্যে থাকলে ফুরুত করে উড়ে যায়,একই সময়।অদ্ভূত! আমিও এর স্বীকার।চলে আসতে হবে। ইসস!এই চেহারাটাকে চোখ থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে।হাতটাকে ছাড়িয়ে নিতে হবে।অস্থির মতন লাগছিল।দেখলাম,আমিই যদি ভেঙ্গে পরি,তবে ও যে একা পরে যাবে।তাই আলতো হাতের ছোঁয়ায় জানান দিলাম,তুমি একা নও ছেলে।আমি আছি তোমারই সাথে।সামনে না পেলেও মনের আঙিনায় পাবে আমায়।ছুতে না পারলেও হৃদয়ে হাত রাখলেই পাবে আমার অস্তিত্ব।আমি থাকব।ভালোবাসায় জড়িয়ে গেছি যে তোমার!
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৩৮