গত বছরের এই সময়ে ব্রেকাপের পর যখন আমি পুরোটাই ভেঙে পরতেছিলাম, তখন এই ব্লগেরই কয়েকজন আমাকে এমন সব কথা বল্লো, আমি কিভাবে কোথা থেকে যেনো ঘুরে দাড়াবার সবটুকু শক্তি পেয়ে গেলাম!! আশ্চর্য ব্যাপার বটে! চিনি না, জানি না, আসল নামটাও বলতে পারবো না - এই টাইপের কিছু লোক একেবারে ছোটো ভাই মনে করে সব কিছু বুঝায় দিয়া গেলো...।
অনেকদিন হয়ে গেছে, ১ বছরেরও বেশি। একসময় সব কিছুই ঠিক হয়ে যায় - কথাটা অবান্তর শুনালেও কথাটা আসলেই ঠিক। এখন এসব ব্যাপার একটা ভোতা অনুভূতি ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না।
বলতে গেলে প্রথমেই বিবর্তনবাদীর কথা বলতে হয়। এই মানুষটা সবচেয়ে ট্যালেন্ট। সামান্য ২ লাইন বলবে, এই দুই লাইনই আমাকে সারাক্ষন ভাবাবে এবং লাইনে আসার জন্য এই দুই লাইনই যথেষ্ঠ।
রাতমজুর নানা প্রায়ই ঐ সময়টায় ইয়াহুতে বসে বসে আমাকে বুঝাইতেন কি করতে হবে, কি করতে হবে না। সাইফুর মামার সামান্য "মন খারাপ করে না ভাই" কথা শুনলে মন খারাপ করা হারামের পর্যায়ে চলে যেত!!
আরেক পাব্লিক ছিলো নাফিস ইফতেখার। ফোন দিয়া দুনিয়ার যাবতীয় টেকি ব্যাপারে আলাপ করতো, ইয়াহুতে সারাদিন-রাত কথা হইতো। প্রথম দিকে বিরক্ত লাগলেও আস্তে আস্তে নেশায় ধরে যায়। আমরা একসাথে বসে নতুন পোস্টের আইডিয়া বের করতাম, টেকি প্রবলেমের সলিউশন বের করতাম। কয়েক মাস পর টের পাই, নাফিস হয় ইচ্ছা করে, নাহয় নিজের অজান্তেই আমার মনটাকে অন্য দিকে ডাইভার্ট করে রাখতো সবসময়, এভাবেই।
ফারা তন্বী আপু আমাকে প্রথমে ব্লগে, এরপর ইয়াহুতে সব কিছু বুঝায় বলছিলেন। সাপোর্ট দিছিলেন। উনার নিজের রিলেশনশিপের অবস্থা ছিলো করুন, তাও কোনোদিন আমার প্রতি সামান্য বিরক্ত হন নাই।
মন খারাপ থাকলে যে বাবা-মার কথা ভাবতে হয় এই মেথডটা আমি জানতাম না। সুলতানা শিরীন সাজি সেটা জানায় দিয়ে গেছেন। এটা সবচেয়ে বেশি কাজে লাগে, সবক্ষেত্রে। একরামুল হক শামীম ভাইয়ের উপলব্ধিগুলা মনে রাখার মত। ভেবে ভেবে বলি অবশ্য মুখের উপর সত্যি কথা বলে ফেলছিলেন। উনার কমেন্টের জবাব দেয়ার সাহস এখনও হয় নাই আমার। স্বপ্নকর বলছিলো, "প্রেম করলে এমন ভাবে করবা যেনো কখনও ব্রেকআপ করা না লাগে। সেটা না পারলে দরকার নাই এসবের"। কথাটা কানে বাজে সবসময়েই। নাহিন কিভাবে এই বাজে সময় কাটানো যায় তার হাজারটা উপায় বাতলে দিলেন!
আকাশ_পাগলার কথা আর কি বলবো! সমবয়সী এই ছেলেটা আমার সবকথা শুনে ব্লগেই আগাগোড়া বিশ্লেষন করে মেয়ের হাজারটা দোষের কথা বের করে ফেলছিলো!! প্রথমে তার কথা ভালো না লাগলেও, ঠান্ডা মাথায় যখন ভাবি, তখন মনে হইছে সে ভূল কিছু বলে নাই। আপনাকে অনেক সালাম বস।
উপরে যাদের কথা বল্লাম, তাদের সবার সাথেই ব্লগে কমবেশি খাতির ছিলো। ছন্নছাড়ার পেন্সিল এক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম। উনার ব্লগে জীবনেও যাই নাই অথচ উনি আইসা বল্লো, রাতমজুর/একরামুল হক শামীম ভাইয়ের কাছে নাকি আমার ব্যাপারে অনেক শুনছে। এরপর সে আমাকে বিভিন্ন এংগেল দিয়া দেখাইতে লাগলো এখানে কোথায় কার দোষ ছিলো আর আমাকেই বা এখন কি করা লাগবে!!
এর বাইরে আছেন আমি এক যাযাবর, আমি পৃথিবী রচে যায়, বিষণ্ণ দুপুরে নির্জন নিষাদ, রিসাত, শান্তির দেবদূত, ধ্রুবমেঘ, আকাশচুরি, এন এইচ আর , অজানা এক পথিক, নীল-দর্পণ - যাদের কথা কখনও ভুলার নয়।
ব্লগের বাইরেও কয়েকজন আছে। বৈশাখী আপু, রুশো ভাই, এ্যানি আপু, লাবন্য সুলতানা, হামজা ও অনন্যা। এদেরকে কখনও ধন্যবাদ দেয়া হয় নাই। যেইভাবে ভূমিকম্প হইতেছে, দেরী করা ঠিক হবে না।
ঐ পোস্টটা আমার ব্লগজীবনের সবচেয়ে প্রিয় পোস্ট। যখন মন খারাপ থাকে, যখন ভেঙে পড়ি, যখন একা লাগে; পুরো পোস্টটা একবার পড়ি। আপনাদের কথা গুলা আমাকে সামনে চলার প্রেরনা দেয়। কাপুরুষ কাঙালকে সাহসী করে তুলে।
সত্যি বলতে, মাঝে মাঝে পোস্টটা পড়লে নিজের অজান্তেই চোখ ঝাপসা হয়ে যায়। হয়তো আমার মনের মানুষ নাই, হয়তো জীবনের প্রথম সম্পর্কে কেউ আমার সাথে বিট্রে করছে। কিন্তু সামহোয়ারে আমার অনেক কাছের কয়েকজন মানুষ আছেন যাদের কথা শেষ নিঃশ্বাসেও মনে থাকবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:০৪