বাঙালীর গর্ব ভাষা আন্দোলন, বাঙালীর গর্ব মুক্তিযুদ্ধ।
বাঙালীর গর্ব ক্রিকেট, বাঙালীর গর্ব মাশরাফি...( আরো অনেক কিছু আছে, শুধু প্রাসঙ্গিক অংশটুকু টানলাম)
এবার দেখুন আনন্দবাজার পত্রিকায় দেয়া মাশরাফির বক্তৃতার একাংশ...
প্র: যেমন আপনি বলেছেন ক্রিকেটকে জাতীয়তাবাদের স্তম্ভ হিসেবে দেখাটা আপনি সমর্থন করেন না।
মাশরফি: আমি নিজের মনের কথা বলেছি। আমি মনে করি দিনের শেষে খেলাটা একটা বিনোদন। তাও তো ক্রিকেট হল স্পোর্টসের একটা অংশ। পুরো খেলা নয়। সেখানে এত হিরো ওয়ারশিপের দরকার কী?
প্র: আপনার চোখে হিরো কারা?
মাশরফি: সবচেয়ে বড় হিরো আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা। তাঁদের জন্যই তো আজ স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা রয়েছি। আমি ওদের অসম্ভব সম্মান করি। আমি সম্মান করি বৈজ্ঞানিকদের। ওঁদের এক-একটা আবিষ্কার জাতিকে কত বছর আগে নিয়ে যায়। আমি সম্মান করি ডাক্তারদের। যাঁরা মানুষের জীবন বাঁচান। এর চেয়ে মহত্ কাজ আর কী হতে পারে। আমাদের নিয়ে যত নাচানাচিই হোক, আমরা কি কারও জীবন বাঁচাতে পারছি?
প্র: একটা এত বড় ফাইনালে ওঠার পর আপনার মুখে কথাগুলো সত্যিই ব্যতিক্রমী।
মাশরফি: আমি ভেতর থেকে বিশ্বাস করি আমাদের সমর্থন করছেন খুব ভাল। আমার টিম কৃতজ্ঞ। কিন্তু সেই মেয়েটিকেও করুন যে স্যাগ গেমসে চারটে সোনা জিতে সবার অলক্ষ্যে ঢাকা ফিরেছে। আমরা যদি স্পোর্টসের লোক হই তো ওই মেয়েটিও স্পোর্টসেরই লোক। সাপোর্ট জীবনের সব বিভাগে করুন। তা হলেই তো বাংলাদেশ এগোতে পারবে। শুধু ক্রিকেটে পড়ে থেকে কী লাভ!
জাতি দুই দলে বিভক্ত( আসলে তিন দল হবে)
এক দল ক্রিকেটে রাজনীতি আনার পক্ষে, আরেকদল ক্রিকেটে রাজনীতির বিপক্ষে।
আর তৃতীয় দলে পড়ি আমরা, যারা ওই দুই দলের কাউকেই Don't give a shit.
প্রথম দলের বেশীরভাগ মানুষ পাকিস্তান সাপোর্টার। নিজেদের সুবিধার্থে তারা ক্রিকেট থেকে রাজনীতি দূরে সরাতে চায়। আর দ্বিতীয় দলের বেশীরভাগ মানুষ প্রচন্ড পাকিস্তান বিদ্বেষী( অবশ্যই এর সঙ্গত কারণ আছে) তাই এরা ক্রিকেটে রাজনীতি টানতে চায়।
রাজনীতি কূটনীতির ব্যাপারটা যেহেতু আমি বুঝিনা, তাই আমি বলি, " ক্রিকেটের মাঠে যে ১১জন আমার দেশের ১১ জনের বিরুদ্ধে নামবে তখনকার জন্য তারাই আমার শত্রু/প্রতিদ্বন্দ্বী । আবার যখন রমিজ, সিধু, বয়কট আমার দেশের ক্রিকেট টীম নিয়ে কটুক্তি করবে তখন তারা আমার শত্রু।
শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জয়ের দিনে যে পাকিস্তানী লোকটা আমার দেশের পতাকা উড়ালো তার সাথে আমার কোনও শত্রুতা নেই। একাত্তরে যে পতাকার অসম্মান করেছিল ওরা, এখন সেই পতাকাকেই মাথায় তুলে নাচছে। এটাতো আমাদের জয়। আমাদের ক্রিকেটারদের জয়। অথচ তাকে এভাবে হেনস্তা করা হলো। একে কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলে?
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ জুয়েল ক্রিকেটের চেতনা নিয়ে যুদ্ধে যাননি, দেশের ডাকে গিয়েছিলেন। আবার মাশরাফিরা নিজেরা খেলার সময় মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে থেকে প্রেরণা নেন, নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা ভাবেন না।
যারা বাঙালী পাকিস্তানী সাপোর্টারদের মুন্ডুপাত করছেন তাদের বলি, ভাই নিজের লেভেলটা বোঝেন। কাদের সাথে তর্ক করছেন? যদি আপনার কথা শুনে তারা বদলে যেত, তবে আপনাকে কিছুই বলতে হতোনা।
আরেকটা কথা, রাজনীতির কথা আসছে তো? অস্ট্রেলিয়া কিন্তু তাদের অনুর্ধ্ব ঊনিশ দলকে এবারের বিশ্বকাপ খেলতে পাঠায় নি, ভারত কিন্তু আজো আমাদের ক্রিকেট টীমকে তাঁদের দেশে ডাকেনি। ক্রিকেটে রাজনীতি ব্যাপারটা কেমন সেটাই হয়তো আমি বুঝতে পারছিনা।
সবশেষে মাশরাফির কথাই বলি, "দিনের শেষে খেলাটা একটা বিনোদন। তাও তো ক্রিকেট হল স্পোর্টসের একটা অংশ। পুরো খেলা নয়। সেখানে এত হিরো ওয়ারশিপের দরকার কী?" তবুও ধরে নিলাম ক্রিকেটটা আমাদের আবেগ। কিন্তু সেই আবেগটা খেলার মধ্যেই থাক?
বিদ্বেষটা যাদের প্রতি, তাদের একের পর এক জবাব দিয়ে যাচ্ছে আমাদের জাতীয় ক্রিকেট টীম এবং জবাব দিয়েই যাবে।
বিঃদ্রঃ অগোছালো বলে পড়তে সমস্যা হলে পড়ার দরকার নেই। কারো কোমল হৃদয়ে আঘাত দিয়ে থাকলে ক্ষমা চাই।