somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নির্বাচনে বামের না পারা-শেষ অংশ।

২৭ শে জানুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৪:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম অংশ

নির্বাচনে বামের না পারা বলতে দলগুলো কি বোঝে সেটা জরুরি একটা বিষয়। ফলে জনগণের সামনে নির্বাচন পরবর্তী মূল্যায়ন বা সফলতা কিম্বা ব্যর্থতা তুলে ধরা উচিত। সেটা কখনো কি চোখে পড়েছে। আর নির্বাচন এলেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার সংস্কৃতি ছাড়তে হবে। কেন তারা নির্বাচনে দাঁড়াবেন-কি করবেন-তাদের দাবি কি-সমস্ত বিষয়ে জনগণকে অবহিত করার রাজনৈতিক চর্চা যেমন থাকতে হয় তেমনি জনগণের পক্ষের দল যারা নিজেদের দাবি করেন তাদের উচিত নির্বাচনে দাঁড়ানোর বিষয়ে জনগণের অনুমতি নেয়া। অনুমতি নেয়ার বিষয়টা এমনই হতে পারে যে গ্রামে-পাড়ায়-বাজারে-বিভিন্ন জায়গায় সভা করার মধ্য দিয়ে নিজেদের নির্বাচনে দাঁড়ানোর যুক্তি তুলে ধরতে হবে-জনগণের সামনে দলের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে হবে-সব শুনে যদি ঐ এলাকার জনগণ মনে করে সেই দলের প্রার্থী দাঁড়ানো উচিত তাহলে তারা দাঁড়াবেন। এই কাজ অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদি এবং দল বিকাশে অপরিহার্য। আমাদের দেশের বাম দলগুলো বিভিন্ন জায়গায় সভা-সমাবেশ করে বা প্রকাশনার মাধ্যমে জনগণের সামনে সবসময় উপস্থিত থাকলেও তাতে জনগণ আম জনতা হিসেবেই বিবেচিত হয় অর্থাৎ দলের অংশ হয়ে ওঠে না। বিষয়টিকে আরো ব্যাখ্যা করলে বলতে হয়- দলগুলোর তৈরি করা কর্মসূচিতে জনগণ অংশগ্রহণকারী মাত্র-সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদের ভূমিকা নেই। বামেরা নির্বাচনে যে ভোট পায় তার চরিত্রও নির্ণয় জরুরি-সাধারণত জনগণের বিকল্পের প্রতি ঝোঁক-নিজেদের অসহায় আবস্থার মুক্তি, এ সমস্ত বিবেচনা থেকে বামে ভোট দেয়। দল-রাজনীতি বুঝে ভোট দেয়া এবং সেই দলের কাজে অংশগ্রহণের তড়না বোধ করে কয়জন। এটা দলগুলোর রাজনৈতিক চর্চার কারণেই হয়। আমাদের দেশের ধারণায়-ইতিহাসের প্রেক্ষিতে দল কি এবং দলের সংজ্ঞা-বৈশিষ্ট্য কি তা কোন দল নির্ধারণ করতে শুনিনি বা চর্চায় নেই এটা বলা যায়।

গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি তা হলো-দলগুলো জনগণের মনোজগতের পাঠ নিতে পারে না। অর্থাৎ ধর্ম-বিশ্বাস এই সমস্ত বিষয়ে বামেরা বরাবরই নিরুত্তাপ থেকেছে। এটা হওয়ার কারণ ধর্মের দার্শনিক বোধ সম্পর্কে ধারণা তৈরি না হওয়া-বা ধর্ম সম্পর্কে মোটাদাগের ধারণা ছাড়া বিশেষায়িত জ্ঞান দলগুলোর মধ্যে নেই-ধর্মের উদ্ভব এবং বর্তমানে তার বিকৃত চর্চা সম্পর্কে জনমনের তৃষ্ণা মেটানো এদের পক্ষে সম্ভব হয় না। যে কারণে- ধর্ম মানে এমন কেউ কি কখনো দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছে। আবার জনগণের সংস্কৃতিক চেতনা-বিশ্ববোধ-প্রকৃতিমুখীনতা-জীবন চর্চা-রুচিবোধ-সৌন্দর্য চেতনা গড়ে তোলা কোন বিষয়ে কি বামদের কাজ আছে। নির্বাচনি প্রচারণাওতো সেই মিছিল পোষ্টারে সীমাবদ্ধ-কখনোতো শুনিনি প্রচারণার অংশ হিসেবে-বাউল গানের আসর হবে-একটা নাটক হবে-জনতা ভোট না দিক অন্তত চেতনার দেখা পাবে। তা হয়নি-দলগুলোর নির্বাচনি স্লোগান হয়েছে এক ভোট এক নোট। এটা নিঃসন্দেহে পুঁজিবাদের স্বেদ বিন্দু- টাকা দিয়ে ভোট কেনার বিকল্প হিসেবে বামেদের কৌশলে টাকাকেই যে আরো প্রধাণ করে রাখা হয়েছে তা কে বুঝবে। তাছাড়া যার টাকা দেয়ার সামর্থ্য নেই যাদের তারাই দলগুলোকে ভোট দেয়ার কথা- যার টাকা দেয়ার সামর্থ্য আছে সে মধ্যবিত্ত-শহুরে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুরুষ। যখন ভোটের চেয়ে নোটের সংখ্যা বেশি হয় তখণ ওই স্লোগানের সলিল সমাধি হয় পুঁজিবাদের অট্রহাস্য মুখে। একের বিছিন্নতা আলোচনা নাই করলাম। ওই যে বললাম টাকা দেয়ার সামর্থ্য রাখে পুরুষ, তারই সাথে সঙ্গতিপূর্ণ সমালোচনা হল-দলগুলোতে নারী প্রার্থির সংখ্যা কত-কয়জন আদিবাসী।

নির্বাচন পুঁজিবাদের সামলে ওঠার সময়। ফলে তার আগ্রহ-একাগ্রতা-হিসেব নিকেষ সমস্তই এই সময়ে সজাগ থাকে। তার তৈরি করা ইসুতে মাঠ গরম হয়। সেই ইস্যু হয়তো জনসংশ্লিষ্টই-কিন্তু এর ফলাফল জনগণের পক্ষে নাও যেতে পারে। ফলে সেই সময়ে জনগণের পক্ষের দাবি দাওয়া তৈরি করা উচিত-সেটা এই অর্থে যে তার খবর মিডিয়ায় না আসলেও জনগণই বহন করে নিয়ে চলবে এবং সেই দাবি অনুষ্ঠানিকতাকে ছাড়িয়ে জীবনমুখি হবে। কিন্তু সারা বছর বাম দলগুলো যেমন পত্রিকার তৈরি করা সংবাদে ভর করে পথ হাঁটে এই সময়েও ভিন্ন পথ তৈরি করতে পারে না।

নির্বাচনওতো সংস্কৃতি নির্মাণের জমিন-জনগণের সংস্কৃতির প্রাবল্য তৈরিইতো নির্বাচনের একমাত্র সাফল্য হওয়া উচিত। রাষ্ট্র এখন প্রচন্ড আর ছলনাময়ী-তার বিরুদ্ধ স্রোত তৈরি যদি নির্বাচনের উদ্দেশ্য হয় তাহলে তার আয়োজন সবসময়েরই। বসন্তের ওই বাতাসটুকুর মতো জনপ্রাণে ছোঁয়া দিতে হবে নির্বাচনের সময়। রঙে-ঢঙে চিত্ত জয় করে নিতে হবে-উৎসব করতে হবে সংস্কৃতি নির্মাণের, পালনের। এক ঘেয়ে রাজনৈতিক চর্চায় নয়- মাটি-কাঁদা মাখা এদেশের মানুষকে জাগিয়ে তোলার মোক্ষম সময় হোক নির্বাচন। তবেই হয়তো হাতের কর ছাড়িয়ে আরো অনেক কিছু বামেরদের নির্বাচনী প্রাপ্তির খাতায় যোগ হবে।

পাঠক-লিখাটিকে অসমাপ্তই বলবো। কারণ বিষয়ে এর বিশাল ব্যাপ্তি-লেখক তার অবয়ব ধরতে ব্যর্থ। আপনাদের আগ্রহ-বিতর্কই পারে লিখাটি শেষ করতে। আরো একবার কৃতজ্ঞতা রইল সহযোগীতার জন্য।


সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৪:৪৭
২০টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×