somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নির্বাচনে বামের না পারা-প্রথম অংশ।

২২ শে জানুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৫:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাজনতৈকি বক্তব্যে যেমন সমাজ পরিবর্তন বা রাষ্ট্র বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা নির্মাণের অংশ হিসেবে অথবা এটাও কি বলা যায় যে-সমাজতন্ত্রিদের নাম বাম হওয়ার পাশ্চাত্য কারণের বিকল্প নির্মাণে আমাদের দেশের বাম দলগুলোর প্রচেষ্টা নির্বাচন এলে ঠিকই চোখে পড়ে। এরা নানা দল আর মোর্চার আয়োজনে নির্বাচনে বৈচিত্র কতোটা আনতে পারে তা এই লিখার আলোচ্য বিষয় হলেও এরাই মোটা দাগে সমস্ত বুর্জোয়া রাজনীতির বিকল্প হিসেবে অন্তত শিক্ষিত শহুরে জনগণের সামনে প্রতিভাত। গ্রামে নিম্নবিত্ত বা সর্বহারাদের কাছে এদের পরিচিতি বা সংগঠন একেবারেই নেই তা বলা যায় না তবে তা আমাদের দেশের নদীগুলোর মতোই ক্রমশ ক্ষীয়মান বা নিশ্চিহ্ন প্রায় কিংবা কোথাও হয়তো অংকুরিত চারাগাছ। কর্মী সংখ্যার তুলনায় ভোট বেশি পাওয়া বামের জন্য এখন পর্যন্ত নির্বাচনী সাফল্যের মাপকাঠি। দলগুলোর ভাষ্যমতে-কোন কোন আসনে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা হয়তো আছে কিন্তু যেহেতু নির্বাচনে জয়ী হওয়া শেষ কথা নয় এবং জনগণের কাছে নিজেদের বক্তব্য পৌঁছানোর জন্য নির্বাচন হলো এমন একটা সময় যে সময় ঈদের দিনের মত এবং জনতা খুব সমাদরের সাথে তাদের বক্তব্য গ্রহণ করেন-তাই জনগণকে বামপন্থার পক্ষে সংগঠিত করাই নির্বাচনের মূল লক্ষ্য। নির্বাচনের মেনিফেষ্টো-দাবি-শত্রু-মিত্র নির্ধারণে দল বা মোর্চাগুলোর মধ্যে পার্থক্য জনগণ কি আসলেই আলাদা করতে পারে। ঘাম ঝরানো আর ঘোলে স্বাদ মেটানোর হাসির ঢঙে এদের পার্থক্য সুক্ষ হলেও তা জনতার আড়ালেই থাকে। নির্বাচন তাই এদের কাছে জনগণের সামনে নিজের ভাবমূর্তি পরীক্ষারও বিষয়। কোন বাম দলের বয়স আশি কি তার বেশি হোক আর পঁচিশ বা তার কম হোক-নির্বাচন সংক্রান্ত তাদের সাফল্য অধরাই থেকে যায়নি কি। এক্ষেত্রে অবশ্য রাশেদ খান মেনন কিংবা দিলীপ বড়ুয়া অথবা ইতিহাস টেনে কেউ যদি ইনু-রবকে এই লিখার সামনে দাঁড় করান তবে তা বিফল হবে। যদিও এরা যেকোন ভাবেই আমাদের দেশের বাম রাজনীতির দীর্ঘঃশ্বাস।

কিছু জিজ্ঞাসা একজন সাধারণ রাজনীতি সচেতন নাগরিক হয়েই বাম দলগুলোর সামনে রাখা যায়। যেমন-নির্বাচন যদি বিপ্লবী রাজনীতির কর্মকান্ডের অংশ হয় বা যে ভাষাটা রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত হয়, রণকৌশল-তার প্রস্তুতি কালীন সময়ের শুরুটা কখন হয়। সাধারণভাবে বিভিন্ন দাবি দাওয়া আদায়ের আন্দোলনের কি নির্বাচন মুখিনতা থাকে নাকি তা দলগুলোর নিজস্ব রাজনৈতিক দর্শন অনুযায়ি বিপ্লব সংগঠনের অংশ। তা হলেও আমাদের জনগণের যে মানসিকতা বা চিন্তা তার ছাপ নির্বাচনেও পড়ে। বাম দলগুলোর ভোট প্রাপ্তির স্বল্পতা কি এটাই প্রমাণ করে না যে আন্দোলন তৈরিতে তারা যথেষ্ট সফল নয়। আন্দোলনকে বোঝার বিষয় আছে। আন্দোলন কি তাই যার দৃশ্যপটে এসে হাজির হয় মিছিল-পুলিশ-টিয়ার গ্যাস-মামলা। নাকি আন্দোলন আসলে বহমান জীবন নদী- সবসময়ই যা চলমান এবং ঝড়ে তা প্রচন্ড হয়ে ওঠে। আন্দোলন কি শুধুমাত্র বেতন বৃদ্ধি-ছাঁটাই বন্ধ বা সারের দাম কমানো নাকি আন্দোলন মানে এটাও যে-তা মানুষের অন্তর্গত বোধের জন্ম দেয় এবং অব্যশই যা মানুষের মস্তিষ্ক ও মননের শৃঙ্খল ভাঙ্গার, মৃত্তিকাসম্ভূত গণসংস্কৃতি-জীবনাচরন নির্মাণের কাজ করে। আন্দোলনকে এইভাবে দেখতে না পারলে বা সংগঠিত করতে না পারলে জনমনে কোন প্রভাব তৈরি করা যাবে না। পণ্যসংস্কৃতির যুগে আন্দোলনও নানা পোশাকে ও বর্ণ-গন্ধে হাজির হয়-শহরমুখীনতার গন্ডি অতিক্রম করতে পারে না। কিংবা বুর্জোয়া রাজনীতির কৌশল আন্দোলন তৈরি করে বা সংকটের কারণে আন্দোলন জনিত সমস্যায় পড়লেও তা কাটিয়ে ওঠার কৌশল-চলমান পরিস্থিতি উভয়ই তার পক্ষে থাকে। ফলে বারে বারেই আশ্বাস পূরণ বা দাবি মেনে নেয়ার ডাঙায় উঠে সমস্ত আন্দোলনই ছটফট করে মরেছে। বামদলগুলোর তার স্বাক্ষী মাত্র। বুর্জোয়া শোষণের আগুনে পুড়তে থাকা জনতার কাছে এই আন্দোলনগুলো হয়তো ক্ষণিকের স্বস্তির বাতাস বয়ে এনেছে কিন্তু তা শোষণকে আরো বাস্তব করে তুলেছে বৈকি। উত্তুঙ্গ আন্দোলনকে ধারণ করার ক্ষমতা কোন বাম দলের আছে কি। শুধুমাত্র আন্দোলনের পাশে থাকা বা দাবি মেনে নেয়ার মালিকী আশ্বাস পর্যন্ত আন্দোলনকে টেনে নেয়া ব্যতিত ভিন্ন কোন ইতিহাস বামদলগুলো স্বাধীনতার পর থেকে এদেশে তৈরি করতে পারে নি। জনগণের মনেও তাই দলগুলোর বিশেষ কোন অবস্থান নেই। অর্থাৎ সমস্ত রকম বুর্জোয়া প্রচারণার বিরুদ্ধে গিয়ে বাম দলগুলোর পক্ষে অন্তত ভোটের মাধ্যমে অবস্থান নেয়ার কোন প্রেরণাই জনগণ বোধ করে না। ফলে নির্বাচনের বহুবর্ণিল জোয়ার থেকে বের করে জনগণকে নিজেদের করে নেয়ার প্রচেষ্টা সর্বশেষ নির্বাচন পর্যন্ত তাদের পক্ষে সফল হয়নি।

উপরোক্ত আলোচনার সমালোচনা, ভূল-ত্রুটি নির্ধারণে আরো অনেক বিষয় উপস্থিত হবে। এখানে আরো একটি বিষয় আলোচ্য হতে পারে। বামদলগুলো শহরেই তাদের প্রার্থী দাঁড় করান বা বেশির ভাগ প্রার্থীই শহর অঞ্চলে নির্বাচন করেন। এমনকি ঢাকা শহরে যতো প্রার্থী দাঁড়ান গোটা দেশের প্রায় অর্ধেক। এটার কারণ কি। কাজ আছে যে এলাকায় সেখানেই প্রার্থী দাঁড় করাতে হবে এমনটাই বোধহয় নিয়ম হয়ে গেছে। অন্য এলাকাগুলোর কি হবে তাইলে। তাছাড়া দীর্ঘমেয়াদি একটা পরিকল্পনা নিয়ে -সংগঠন, আন্দোলন বিকাশের অংশ হিসেবে কোন নির্দিষ্ট শ্রমিক বা কৃষক এলাকায় গিয়ে সেখানে ধীরে ধীরে কাজ গড়ে তুলে তাদের মধ্য থেকে কাউকে প্রার্থী দাঁড় করানোর বিষয়টি এখনো কাগজে লিপিবদ্ধাকারে বা নেতৃত্বের মুখ নিশ্রিত বাণি হিসেবেই রয়ে গেল। বয়োপ্রাপ্ত বাম দলগুলো আরো সাহসী হলে কোন ক্ষতি ছিল না। মাটির গন্ধ মাখা গায়ে কোন প্রার্থীকে দেখা যায় না। বাম দলগুলোরও প্রায় সমস্ত প্রার্থীই মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা। যে কৃষক গলা পানিতে নেমে পাট কাটে-গরুর খুরে নিজের ভবিষ্যৎ বাঁধে তার প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা কোথাও নেই-বাম দলেও না। এটা হয় না কারণ দলগুলো শ্রেণী সংগ্রামের পথে হাঁটে না। তাছাড়া বুর্জোয়া রাষ্ট্র নির্বাচনের ডাক দিলে তখনই কেবলমাত্র মনে পড়ে যায়-নির্বাচন বিপ্লবী রণকৌশল। অন্যথায় নির্বাচনকে মাথায় না রেখেও যদি কোন এলাকায় কোন দল কাজ করে, সেখানকার মানুষের জীবনচর্চায়-সংস্কৃতি পঠন আর নির্মাণের কাজ করে তার ফলাফল নির্বাচনে পাওয়া যেতই। কিন্তু এমনটা হলো কই। কোথাও যদি এমন উদ্যোগ থাকেও তবে তা চলনে বলনে যেমন গ্রামীণ-অঞ্চলিক হয়ে উঠতে পারেনি তেমনি শহরমুখীনতার মোহ ছাড়তে পারে নি। ফলে আজ পর্যন্ত হাতের করেই নির্বাচনের সাফল্য বাঁধা পড়ে রইল।

[বন্ধুরা, শেষ অংশও লিখি- কি বলেন।]
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৪০
১০টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×