গ্রীষ্মকালে অবসরে মাঝে মাঝেই হাঁটতে বের হই। শীতকাল চলে যাবার সাথে সাথে প্রকৃতি আড়মোড়া দিয়ে জেগে ওঠে। ধীরে ধীরে বাহারি রকমের ফুলে চারদিক শোভিত হয়। হাঁটাহাঁটির সময় রাস্তার চারপাশে লাস্যময়ী সব ফুলগুলো অবাক দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করি। কী অপরূপ স্নিগ্ধতা নিয়ে খিলখিলিয়ে হাসছে! অপার বিস্ময়তা থেকে কিছু ফুল ক্যামেরাবন্দী করেছিলাম। কিন্তু সময়ের অভাবে তখন ব্লগে দেয়া সম্ভব হয়নি। আবারো শীতকাল দুয়ারে উঁকি দিয়েছে। তবুও সবার মাঝে সুন্দরের সৌরভ ছড়িয়ে দেবার প্রয়াসে এখন তা ব্লগে শেয়ার দিলাম।
১. গোলাপ
ফুলের কথা আসতেই শুরুতেই মনের পর্দায় ভেসে ওঠে গোলাপের নাম। সভ্যতার পর সভ্যতা চলে যাবে তবুও বোধহয় ফুলের রানী গোলাপের আবেদন নিঃশেষ হবেনা কখনো। র্প্রাচীনকাল থেকেই গোলাপ ফুল সমাদৃত হয়ে আসছে তার সুবিন্যস্ত গড়নের জন্য। সেজন্য ইতিহাসখ্যাত রাজা-রানী থেকে শুরু করে এখনকার ছেলেমেয়েদের কাছেও তা প্রণয় ও পরিপূর্ণতার প্রতীক। তাইতো, বিশেষ মুহূর্তগুলোতে প্রেমিক পুরুষ একগোছা গোলাপ খুঁজে প্রণয়িনীকে ভালোবাসার বাহুডোরে বাঁধতে।
লাল গোলাপকে ভালোবাসার প্রতীক বলা হয়। গ্রিক উপকথা মতে, 'ভেনাস' যিনি কিনা প্রেমের দেবী, তাঁর পায়ের রক্ত থেকে গোলাপের জন্ম। আরব্য কাহিনীতে প্রচলিত আছে যে, বুলবুলি পাখি সাদা গোলাপকে আলিঙ্গন করতে গেলে কাঁটার আঘাতে আহত হয়। তখন তার রক্ত সাদা গোলাপে লেগে লাল গোলাপের জন্ম হয়েছে।
সাদা গোলাপ-পবিত্রতা, বিশুদ্ধতা ও শান্তির প্রতিক। সাদা মানেই শান্তি। তাই হয়তো সাদা গোলাপ পবিত্রতা, নিষ্কলুষতা ও শান্তি বুঝায়। জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করতে সঙ্গিনীকে এই গোলাপ দিয়ে স্বাগত জানানো হয়। আবার হয়তো কাওকে খুব মিস করছেন কিন্তু মনের ভাব প্রকাশ করতে পাচ্ছেননা। কোনো রকম সাত-পাঁচ না ভেবে তাকে এক তোড়া সাদা গোলাপ উপহার দিন। দেখবেন, সে আপনাআপনি আপনার মনের কথা বুঝে গেছে।
হলুদ গোলাপ নাকি বন্ধুত্বের প্রতীক। সম্পর্কের দৃঢ়তা আর শক্ত বন্ধন বোঝায় এই রঙের গোলাপ দিয়ে।
সততা, আন্তরিকতা, প্রশংসাসূচক ও সহমর্মিতার ভাব বোঝানো হয় পিচ গোলাপের মাধ্যমে।
এটাকে বলে 'ক্যাবেজ রোজ।' কৃতজ্ঞতা আর স্বীকৃতির প্রতীক হলো- গোলাপি রঙের গোলাপ। যেই মানুষগুলো তাদের কথা, কাজ, আচরণ দিয়ে আপনাকে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছে, তাকে ছোট্ট করে ধন্যবাদ দিতে গোলাপি রঙের গোলাপ খুব ভালো একটা উপহার হতে পারে।
এছাড়া আরো বহু রঙের গোলাপ রয়েছে যেগুলো আমার কালেকশনে নেই। তবুও আপনাদের সুবিধার্থে জানিয়ে রাখছি। কামনা, বাসনা, আবেগ ও উৎসাহের প্রতীক হলো কমলা রঙের গোলাপ। প্রিয়জনের পাশে ভালোবাসা হয়ে আছেন এটি বুঝাতে অনায়াসে উপহার দিতে পারেন এই গোলাপ। রয়েল গোলাপ খ্যাত বেগুনি গোলাপ দিয়ে রানীকে সম্মান জানানো হয়। রহস্য বুঝাতে নীল গোলাপ, শোক বুঝাতে কালো গোলাপ এবং সবুজ গোলাপ ভাগ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।
হাইব্রিড গোলাপ যা কিনা বাংলায় হাজারী গোলাপ নাম পরিচিত। আজকাল বাগানে এই গোলাপ বেশ শোভা পায়।
আজ বিকেলের ডাকে যদি তোমার কোনো চিঠি পাই প্রিয় ...
বাগান সাজানোর আইডিয়াটা বেশ ভালো লেগেছে।
২. লিলি
নয়নাভিরাম আর ঐশ্বর্যিক সুন্দরের প্রতীক একেকটা ফুল। বর্ষার ফুল লিলি পুষ্পপ্রেমিকদের অনেক প্রিয়। তেমন কোনো যত্ন ছাড়াই বেড়ে ওঠা ফুলগুলো ভারী বর্ষণের সময়ে সজীবতা আর প্রফুল্লভাব দিয়ে বাগানের সৌন্দর্য্য বহুলাংশে বাড়িয়ে দেয়। আমাদের দেশে তা পেঁয়াজ ফুল নাম পরিচিত। কেউ কেউ আবার একে চন্দ্রতারা বলে চেনে। এ ফুল লাল, সাদা, গোলাপ, কমলা, হলুদ ইত্যাদি বাহারি রঙের হয়ে থাকে। সর্বশেষ ফুলটিকে 'টর্চ লিলি।'
৩. কসমস
এই ফুলের আদি নিবাস সুদূর মেক্সিকো। গ্রীক শব্দ কসমস অর্থ ঐকতান অথবা সামঞ্জস্যপূর্ণ পৃথিবী।জানা যায়, ভিক্তোরিয়ান আমলে এই ফুল শ্লীলতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হতো। শীতকালীন এই ফুলের পাতাগুলোও আলাদা সৌন্দর্য্য বহন করে। অনেকটা গাজরের পাতার সাথে এর সাদৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। শোভাবর্ধক এসব নান্দনিক ফুলের সৌরভে বিমোহিত হয়ে প্রজাপতি, মৌমাছি ছুটে আসে রূপ-রস আস্বাদন করতে।
৪. ড্রাগন ফুল
ড্রাগনের মুখের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ থাকায় এদের নাম স্ন্যাপ ড্রাগন অথবা ড্রাগন ফুল। এসব ফুল সাধারণত ইউরোপ, আমেরিকা ও নর্থ -আফ্রিকার পাথুরে অঞ্চলে দেখা যায়। ফটোতে দেখানো ফুলটি'কে স্ন্যাপ ড্রাগন (Snap Dragon) বলা হয়।
৫. ফোর ও'ক্লক ফ্লাওয়ার (4 o’clock Flower)
সম্ভবত পেরু'তে এর উৎপত্তি জন্য এর ইংরেজি নাম হয় 'মার্ভেল অভ পেরু।' বহুবর্ষজীবী এই উদ্ভিদটি বৈচিত্র্য রকমের হয় যা হতে পারে বসতবাড়ীর শোভাবর্ধক। জেনে অবাক হই যে, এর পাতা নাকি খাওয়া যায়! এর ফুল খাদ্য প্রকিরাযকরণ শিল্পে রং তৈরির উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আধো আলো আধো ছায়াযুক্ত স্থানে এটি'র জন্য উপযুক্ত পরিবেশ এবং প্রচন্ড শীতের সময় ও তুষারে ফুলগাছ মরে যায়।
৬. আজালিয়া
এই ফুলের নাম আজালিয়া (Azalea)। নাতিশীতোষ্ণ উত্তর গোলার্ধে মে -জুন মাসে এই ফুল ফোটে। এশিয়া, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা মহাদেশে ফুলটি দেখা যায়। দক্ষিণ-পূর্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে অলংকার হিসেবে আজালিয়া চাষ করা হয়।
৭. ব্লু-ডেলফিনিয়াম:
গ্রীক শব্দ ডলফিন থেকে নাম'টি এসেছে। বলা হয়ে থাকে, ডলফিনের মতো দেখতে জন্য এমন নামকরণ হয়েছে। বাংলা নাম, 'নীলাম্বরী।' নীলরঙা মনোহরী এই ফুলের ইংরেজি নাম 'Malabar Delphinium.' এর পাঁপড়িগুলো বেশ সুবিন্যস্ত ও বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। তবে, এই ফুল বেশ বিষাক্ত।
৮. মালভা
এশিয়া, ইউরোপ এবং আফ্রিকা মহাদেশের উষ্ণমণ্ডলীয় ও গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলগুলোতে এই ফুলগাছ জন্মায়। ফুলে পাঁচটি পাঁপড়ি থাকে। তুরস্কে এর পাতা শাক হিসেবে খাওয়া হয়। অল্প বয়সী পাতা লেটুসের বিকল্প হতে পারে। আর কুঁড়ি এবং ফুল সালাদে ব্যবহার করা যেতে পারে। গাছগুলিতে বেড়ে ওঠা ছোট ফলগুলিও কাঁচা খাওয়া যায়। মালভা পাতা হ'ল উত্তর ভারতের কাশ্মীর রাজ্যের একটি অত্যন্ত লালিত সবজির থালা। একে বলা হয় "সোচাল"। এই ফুলের ওষুধি গুণাগুণ জানলে বেশ অবাক হতে হয়। অস্ট্রিয়া'তে ওষুধ হিসেবে এর পাতা থেকে চা বানিয়ে খাওয়া হয়। আবার বাহ্যিক বিভিন্ন অসুখ যেমনঃ ত্বকের ব্যাধি, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্ট এবং শ্বাসযন্ত্রের ব্যাধিগুলির চিকিত্সার জন্য এর পাতা স্নানের সাথে ব্যবহার করা হয়। কাঁশি অথবা গলা ব্যাথা হলে এর কাঁচা পাতা চিবানো যেতে পারে। লর্ড মনবড্ডো একটি প্রাচীন এপিগ্রামের তাঁর অনুবাদ বর্ণনা করেছেন যাতে জানা যায়, পূর্ববর্তী কবরগুলিতে মালভা রোপণ করা হয়েছিল, এই বিশ্বাস থেকে যে মৃতরা এইরকম নিখুঁত গাছপালা খেতে পারে।
৯. পপি
মনে করা হয়, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে এর উদ্ভব হয়েছিল। দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে বন্য এলাকায় জন্মাতে দেখা যায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বেলজিয়ামের ফিল্যান্ডার্সের পোস্ত জমিতে খন্দক যুদ্ধের পরে, পপিরা যুদ্ধকালীন সময়ে মারা যাওয়া সৈন্যদের স্মরণে প্রতীক হয়ে উঠেছে।
সময় স্বল্পতার জন্য আরো কিছু ফুলের বর্ণনা দিতে পারলামনা। আপনাদের দেখবার জন্য শুধু ফটো নামসহ আপলোড করে দিলাম।
১০.
নাম তার 'Chamomile।'
১১.
একে 'Chinese Hibiscus' বলে।
১২.
অপরূপ এই ফুলের নাম 'ডায়ান্থাস।'
১৩.
হলুদ রঙের এই ফুলকে ফলস সানফ্লাওয়ার (False Sunflower) বলে।
১৪.
নাকফুলের মতো দেখতে ছোট্ট আর কিউট এই ফুলের নাম নাকি ফিল্ড মেরিগোল্ড।
১৫.
ফক্স গ্লোভ (Foxglove) নাম পরিচিত এই ফুল।
১৬.
গোলাপি এই ফুলটির নাম জার্মেনিয়াম (Germanium)।
১৭.
লুপিন (lupin) নাম তার।
১৮.
নেনিবেরি (Nannyberry) নাম এই শুভ্র ফুলের।
১৯.
রক্তলাল এই ফুলের নাম মিল্কউইড (Milkweed)।
২০.
নাম তার আইসপ্লান্ট (Iceplant)।
২১.
এক বাড়িতে ঝুলানো এই পেটুনিয়া (Petuniya) দেখতে কী মনোমুগ্ধকর!
২২.
বেগুনি রঙের ফুলটির নাম ল্যাভেন্ডার (Lavender)। মৌমাছিদের আবাসস্থল।
২৩.
ফুলটার নাম পেরেনিয়াল (Perrenial )।
২৪.
মটরশুঁটির ফুল। তাই নয় কি!
আজ তবে এই পর্যন্তই। সবাই ভালো থাকুন। আর করোনা মহামারীর প্রকোপ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করুন।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ৩:২৫