গল্প
প্রয়াস
শ্যামল সোম
সেদিন খুব জোরে বহিছিল বাতাস, ঝড় উঠেছে, মেঘের ঘন ঘন ডাক - ব্রজ নিনাদ, হঠাৎ আকাশ থেকে ঝাঁপিয়ে নামলো অঝোরে বৃষ্টি।
নার্সিংহোমে কেবিনে শুয়ে অসহ্য প্রসব বেদনায় প্রসূতি রমা যন্ত্রণায় নীল হয়ে যাচ্ছে, ডাকা ডাকি করতে,সবাই এসে হাজির, রমা কে চলমান শয্যা- বহন, চললো নিয়ে, সাথে নার্স ছুটে গেল অপারেশন থিয়েটারে।
তারপর দীর্ঘ বছরের পর বছর রমা ও তাঁর পরম বন্ধুর মতো স্বামী সৌমেন এক সাথে দুজনে সমাজে সংসারে বহু লোকের, তীব্র ভৎসনা, লোক নিন্দা - বিদ্রুপ, বিদ্বেষ, কোর্ট কাছারি, ভয়ঙ্কর ভাবে উৎপীড়ন, প্রাণনাশের হুমকি, সমস্ত নীরবে দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে যেতে হয়েছিলো।
ঐ বিশেষ সম্প্রদায় বাড়ি ঘেড়াও করে বহুদিন অত্যাচার করে, শেষে মোটা অংকের টাকা খেসারত দিয়ে রেহাই পাওয়া গেলো।
স্কুলে ভর্তির ব্যাপারে অনেক সাহায্য করেছিলেন শিশু ও নারী কল্যাণ সমিতির সদস্য থেকে শুরু করে চেয়ার পারসন মিসেস পল্লবী সেনগুপ্তা, উনি শ্রীজনীকে নিজের মেয়ের চেয়ে ও বেশী ভালোবাসেন।
রমা তার এক মাত্র সন্তানকে এই প্রিয় নাড়ী ছেঁড়া ধন, কেউ চেয়েছিলেন, ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলতে। কেউ পরামর্শ দিয়েছিলেন ঐ ওদের কাছে তুলে দিতে।
কিন্তু ! না ! মাতৃ হৃদয়ের হাহাকার সুগভীর মাতৃস্নেহ, সন্তানের প্রতি মায়া আর প্রবল ইচ্ছাশক্তি ওদের ঈশ্বর ভক্তি সৌমেন সৌহার্দ বন্ধুত্ব পূর্ণ সমর্থন সাহস রমাকে প্রতি নিয়ত অনুপ্রেরণা জুগিয়ে এসেছে।
ওদের দাম্পত্য জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস, শ্রদ্ধা, অনুকম্পা, সহানুভূতি, প্রেম ভালবাসা দীর্ঘ পঁচিশ বছরের আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে সামাজিকতা থেকে দূরে থেকে অনেক অনেক সংঘর্ষে সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে--
আজ তাদের একমাত্র সন্তান আজ মাথা উঁচিয়ে অসম্ভব তীক্ষ্ণ মেধা সম্পন্ন মেধাবী ছাত্রী ঐ আত্মজাকে যখন দেখে দুচোখ জুড়িয়ে যায়, ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা জানায় ওর যেন মঙ্গল হয়।
সার্থক ভাবে পরিপূর্ণ লক্ষণ পরিস্ফুট, হওয়ার জন্যই ঐ বিখ্যাত মুম্বাই হাসপাতালের ডাক্তার সাকশেনের স্মরণাপর্ণ হয়েছিলেন, তিনি অকুণ্ঠ সহযোগিতা করেছিলেন।
তাঁর কাছে রমা ও সৌমেন দুজনে কৃতজ্ঞ। আজ সম্পূর্ণ ভাবে নারীর অহংকারে - মর্যাদা ফিরিয়ে দিয়েছেন ডাঃ সাকশেনা তিনি অতি যত্ন সহকারে কৃতিত্বের সঙ্গে বিভিন্ন অপারেশন মধ্যে দিয়ে এক সার্থক মানুষ হিসাবে এই পৃথিবীতে সুপ্রতিষ্ঠিত করে সকলের প্রশংসনীয় হয়েছেন।
রমার ফুলের মতো সন্তান শ্রীজনী সমাজে অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যবসায় মধ্যে লড়াই করে বড় হওয়ার জন্য স্কুল জীবন থেকেই সমস্ত পরীক্ষা অসামান্য রেজাল্ট করে বিভিন্ন পদক ও প্রশংসা পেয়ে এসেছে, কারণ এটা ছিলো জীবনের বিশাল চ্যালেঞ্জ। সে অসাধারণ পরিশ্রম করে বহু চেষ্টা করে নানা প্রতিযোগতায় সাফল্যের সাথে সফল হয়ে আজ একটি স্বনামধন্য কলেজে লেকচারার হয়ে জয়েন করেছে।
বাড়ি ফিরে আনন্দে বাবা ও মাকে প্রণাম করতে যেতেই রমা আর সৌমেন দুজনে তাদের বহু কাঙ্খিত আদরের সন্তানকে জড়িয়ে কাঁদছে-- এক সাথে তিন জন আজ তিনজনের জন্যই পরস্পরকে অকুল, সুখের কান্নায় ভেঙে পড়ছে ।
লালনের গান ভেসে আসছে, " সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে !"
##### কবিতা #########
সই তুই ঈশ্বরকে ডাক
শ্যামল সোম
ফুলের বাসর ছেড়ে কাল রাতে
তোর দোসর গেছে চলে--
সই ভালোবাসার যাতনা
একা সহিবি কেমন করে ?
এখন সবাই হাতে হাত মিলিয়ে
কেমন হাতে হাতে দিচ্ছে তালি।
পোড়ারমুখী প্রেমে পড়ে তুই
সৈয়দ বংশের নাম ডোবালি ?
হতভাগী ! গোপনে ভালোবেসে
ডুবে ডুবে এত গিললী পানি ?
ঐ দেখ, আড়ালে একা ঘরে অন্ধকারে
তোর কাঁদেন বসে নানী-।
যাও ! এবার তুমি - গলায় কলষ বেঁধে
ঐ কাজরী দিঘির পাড়ে যাও।
এই দুপুরে গাছের ডালে পাতার ফাঁকে
কে ডাকে ? বউ কথা কও !
হারিয়ে গেলো তোর সেই আপনজন,
তাকে হলো আর পাওয়া--!
নদীর পাড়ে গাছ গাছালি, দোতলায়
এই গাঁয়ের ঘর সন দিয়ে ছাওয়া।
এক পলকেই হবে ছাই !
রাতে ঐ কুপীর আগুনটা একবার কাছে পাই।
এখনও তুই মনের ভেতর খুঁজিস কাকে ?
নাই ! নাই ! কেও কোথাও নাই।
নয়ন মেলে দেখ, কালো এক যমের মতো
ঝুলছে ঐ লম্বা ঘরের কড়িকাঠ--
আঁধার রাতে শেয়ালের ডাক শোনা যায়--
বাড়ে বুকের কাঁপন-দুরে শ্মশাণ ঘাট।
পরনের রঙিন শাড়ী হাতে নিয়ে,
আনমনে সই এখনও তুই স্বপ্ন দেখিস বসে ?
সাজানো পালকির সাথে তোর দোসর
আবার বুঝি দাঁড়িয়েছে দুয়ারে এসে ?
রাত পোহালো এলো দিনের আলো-
এখন ফজরের ঐ আযান ভেসে আসে।
***** অনু কবিতা গুচ্ছ *****
যদি যেতে চায় মন, এ ফাগুনে বসন্তের হাওয়ায়,
নিঃশব্দে যেও চলে, ফেরাবো সে কিসের আশায়
যখন রাস্তায় বাড়িছো পা, ফিরে যাবে বলেই।
হাইকু না কাইকু ?
শ্যামল সোম
1) তাহলে ঐ কথাই থাক এখন আমি যাই,
যদি কখন মনে পড়ে ডেকে নিও আমায়
হারিয়ে না গেলে নিশ্চয়ই ফিরবো, যেন।
2)
এই তুমি কৈ ? হারিয়ে গেলে?
অন্ধকার - ভয় করছে ভীষণ
পথে, মাঝরাতে একা ফেলে চলে গেলে?*