১. "'অনেকে বলেন, বাংলাদেশে 'লিভ করা' (থাকা) করা নাকি কঠিন, আমি তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, না ভাই,কথাটা হওয়া উচিত এরকম- বাংলাদেশকে "লিভ করা" (ছেড়ে যাওয়া) কঠিন। আমার পুরো হৃদয় এই মুহুর্তে রক্তাক্ত। কারণ আমার প্রিয় এই দেশটাকে ছেড়ে আমাকে চলে যেতে হচ্ছে।"
অালোচ্য এই উক্তিটি একজনের ফেইসবুক স্ট্যাটাস। কোন বাংলাদেশীর নয়। এক ইউরোপীয়ানের। ২০১৩ -এর শেষার্ধে সে বাংলাদেশে এসেছিল। তখনই ওর সাথে পরিচয়। দেশে তখন তুমুল জ্বালাও পোড়াও চলছে। ওরই চোখের সামনে একদিন মাইক্রোবাসে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল পিকেটাররা। ও প্রতিদিন এ্ইসব ঘটনার বর্ণনা দিত চোখ বড় বড় করে। মানুষ যে মানুষের সাথে এত হিংস্রতা দেখাতে পারে, এটা ওর ধারণার অতীত ছিল।সেই সমসয়েও ওই ইউরোপীয়ান ছেলেটি বাংলাদেশের আর কয়টা দিন বেশি থাকার জন্য সমানে তার ভিসা এক্সটেন্ড করে চলেছিল। সবশেষে যখন ফিরে যাওয়া অশ্যাম্ভাবী হয়ে গেল তখন যাওয়ার আগের রাতে ফেইসবুকে এই স্ট্যাটাসটা লিখে গিয়েছিল।
ওর সাথে শেষ যেদিন দেখা হয়েছিল, সেদিন অদ্ভূত বিষণ্ণ মুখে বলেছিল, ' দেশে গেলে আমি আবার নি:সঙ্গ হয়ে যাব। এত উষ্ণতা ওখানে কোথায় পাব?'
২. 'মাত্র এক সপ্তাহের জন্য আমি বাংলাদেশ ছেড়ে গিয়েছিলাম। বিশ্বাস কর, শ্যামা, আমি আমার কোন বিদেশী বন্ধুকে ওই মুহুর্তে মিস করিনি। মিস করেছি কেবল আমার বাঙ্গালী বন্ধুগুলোকে।'
অালোচ্য এই উক্তিটিও কোন বাংলাদেশীর নয়। একজন আমেরিকানের। আমার কলিগ। বাংলাদেশকে ভাসা ভাসা চোখে দেখা আর দশটা বিদেশীর সাথে এই মেয়েটার আকাশপাতাল পার্থক্য।
৩. "......"
উপরের ফাঁকা জায়গাতে আজকের দিনের সবচেয়ে আলোচিত ফেইসবুক স্ট্যাটাসটি বসবে। ওটা আমি লিখে আমার প্রোফাইলটা নোংরা করতে চাইলাম না।
আলোচ্য এই তিন নম্বর উক্তিটি কিন্তু একজন বাংলাদেশীর মুখনিসৃত। আমার এই দেশী গরিলা ভাইটি চলে এলেন এই দেশটাকে ফা_ করতে। কথায় বলে, দুইদিনের বৈরাগী ভাতেরে কয় অন্ন।
এখন আমার প্রশ্ন- নিশ্চিন্ত নিরাপদ দেশের সেই ইউরোপীয়ান, যিনি একজন ফাস্ট্ক্লাস নাগরিক, এহেন অপদার্থের মত একটি স্ট্যাটাস কেন লিখলেন? (১ নং উক্তি দ্রষ্টব্য) কী এমন ভীমরতি ধরেছিল তার? কী পেয়েছিলেন তিনি এই বাংলাদেশে? এই পিকেটারদের বাংলাদেশে? নষ্ট রাজনীতিবিদদের বাংলাদেশে?
ওই আমেরিকান মেয়েটাই বা রোজ জ্যাম ঠেলে চলাচল করে কী আনন্দ পাচ্ছে যে বিদেশে গিয়েও এই দেশটাকে মিস করছে?
ওই দুই বিদেশী এবং আমার পরিচিত আরো অনেক দেশী বিদেশী বন্ধুগুলো জানেন, পিকেটার,সন্ত্রাসী এবং নষ্ট রাজনীতিবিদরাই দেশের একমাত্র নাগরিক নয়। শুধুমাত্র তাদের দিয়ে গোটা দেশের বিচার করা যায় না। আমেরিকার সন্ত্রাসীরা কিন্তু ফুল হাতে নিয়ে ঘোরে না। ওইসব দেশের কোথাও কোথাও, অানুষ্ঠানিক সতর্কবাণী দিয়ে অনুরোধ করা হয়, প্লীজ কমপক্ষে ১০০ ডলার পকেটে রেখে তবেই রাস্তায় বেরোবেন। নইলে হাইজ্যাকার সামান্য টাকা দেখলে আপনাকে মেরে ফেলতে পারে। ফ্রান্সে যখন তখন ধর্মঘট ডেকে দেয়। বাংলাদেশে তো তবু আগের দিন প্রেস কনফারেন্স করে আগে থেকে হরতালের কথা জানিয়ে দেয়। ওরা অনেক সময় সেটুকুও করে না।
ফুয়াদ, আপনি এবং আপনার স্ত্রী ওই মুহুর্তে বিপন্ন বোধ করেছিলেন। সেই বিপন্নতার প্রতি আমাদের সহানৃভূতি রইল। কিন্তু আপনার বিরক্তিপ্রকাশের ভাষা ছিল অসংযত, অভব্য এবং অমানবিক। আপনি দেশ ছেড়ে চলে যেতে চান? প্লীজ যান। আপনাকে আমাদের দরকার নেই। ওই পিকেটারগুলো তো কেবল নাগরিকদের উদ্দেশ্যে ঢিল ছোঁড়ে। আপনি গোটা দেশসুদ্ধ সবাইকে ফা_ করতে চেয়েছেন। একটু আগে, একজনের কমেন্টের জবাবে আপনি লিখেছেন, 'তোমার মাকেও দিলাম' কমেণ্টের সূত্র ধরে দেখলাম, আপনি তার মাকে গালি দেওয়া মিন করেছেন। সন্দেহ নেই, আপনি ওই পিকেটারদের চেয়েও বর্বর।
ঘৃণায় মুখ বিকৃত করে আমরা , আপনার ভাষায় 'lost case' এর রিপ্রেজেন্টিটিভরা আপনাকে বিশুদ্ধ প্রাকৃত জনের ভাষায় বলতে পারতাম, 'আয়, তোরে আর তোর বৌরে চু_"
কিন্তু না, আমরা এটা বলবো না। যত ঘৃণাই করি, একটা অসভ্য নোংরা জীবকে ফা_ করা মোটেই হাইজিনিক নয়। তাই না? অসীম বিরক্তি সত্ত্বেও আমরা আপনাকে ফা_ করতে অস্বীকৃতি জানালাম।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:৫৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




