somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাঙালি কি আজ কিছু 'পরবে' নাকি 'পড়বে'?

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাঙালির গোড়ায়ই যদি গলদ থেকে যায়, তাহলে একুশ শুধু সাদা শাড়ি আর কাল পাড়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে।
আসুন কয়েকটা সমস্যার আগে সমাধান করে নিই।
১. আপনি কি কাপড় পড়েন নাকি পরেন?
পরলে ঠিক আছে। কিন্তু “পড়লে”তো ভাই আমার দুটো কথা আছে। আপনার কাপড় পড়া বিদ্যাটা আমাকে একটু শিখিয়ে দিতে হবে যে! কারণ, আমার মা-বাপ আমাকে শুধু বই পড়া শিখিয়েছে! আমার নানীজানের কাছে কখনো কখনো পানি পড়া জাতীয় শব্দও শুনেছি। বৃষ্টিও পড়ে; কখনো টুপটাপ পড়ে, আর টিনের চালে তো বেশ সশব্দেই পড়ে। আরও কতরকম পড়া হয়! প্রেমে পড়া, জলে পড়া, অসুখে পড়া, কাদায় পড়া।
এই দুইরকম ‘পড়া’তেই -অর্থাৎ, পাঠ এবং পতন অর্থে যদি আপনি পড়েন তবে অনুগ্রহ করে ‘ড়’ সহযোগে পড়বেন। কেমন?
আমার সাধারণ বুদ্ধিতে বলে, কাপড়কে পড়া যায় না। সেটা ফ্যাশন ডিজাইনার বা টেক্সটাইল ইঞ্জিনীয়ারদের পক্ষেও সম্ভব নয়। তারা বড়জোড় কাপড় সম্বন্ধে পড়েন। কাপড়কে পড়ে ফেলা বা কাপড়ের ভূত ভবিষ্যৎ পড়ে ফেলা তাদের পক্ষেও সম্ভব নয়।
২. আরো একটা সমস্যা দেখছি ইদানীং। রহিম, করিম, অন্তু, বিন্তু, তন্তু-এরা কেউই আর ঘুমে থেকে ওঠে না। এরা সবাই ঘুম থেকে “উঠে”-
হ্যাঁ, তারপর? ঘুম থেকে উঠে তারা কী করে? দাঁত মাজে, খায়, না আড়মোড়া ভাঙ্গে? উঠে তারা কিছু তো করে? কী করে?
বোঝা গেল না? বেশ, বুঝিয়ে বলি। “উঠে” একটি অসমাপিকা ক্রিয়া। “উঠে” বললে আপনার বক্তব্যটা সম্পূর্ণ হবে না।
যেমন: ১.সে ঘুম থেকে উঠে…
২. আমি এই চিঠিটা লিখে…
৩. আমি এই কাজটা করে…
৪. আমি কফি বানিয়ে..
এই প্রতিটা বাক্য শুনেই আপনার মনে প্রশ্ন জাগবে- তারপর? কারণ আপনি আরো কিছু শোনার প্রত্যাশা করছেন ওই ‘লিখে”, ‘করে’, ‘বানিয়ে’ এবং ‘উঠে’শব্দগুলোর কারণে। আসুন, বাক্যগুলো শেষ করি। প্রথমটি হতে পারে- সে ঘুম থেকে উঠে দাঁত মাজে। আপনি চাইলে বলেতে পারেন সে ঘুম থেকে উঠে গান গায়। সুযোগ যখন পেয়েছেন, যা খুশি তাকে দিয়ে করিয়ে নিন। ব্যাকরণে ভুল না হলেই হল। বাকিগুলো আর বললাম না, আপনারা করে নিন না! দেখা যাক, কে কত সৃষ্টিশীল হতে পারে বাক্য গঠণে।
ওহ হ্যাঁ, যদি একটা ক্রিয়া বা কাজ দিয়েই শেষ করে দিতে চান তাহলে বলবেন- সে ঘুম থেকে ওঠে, আমি এই চিঠিটা লিখি। আমি এই কাজটি করি। আমি কফি বানাই।
৩. যখন কারো জন্য কাঁদবেন বা কাউকে খুঁজবেন, কিংবা কোথাও হাঁটবেন তখন চন্দ্রবিন্দু সহযোগে করবেন, কেমন? কাজগুলো জোর পাবে।
হ্যাঁ বলার সময়ও চন্দ্রবিন্দু সহযোগে বলবেন। লিখবেনও তাই।
ভাল কথা, আমি এই পোস্টটা পণ্ডিতি ফলানোর জন্য লিখি নি। আমি ব্যাকরণবিদ নই। আমারও অনেক বানান নিয়ে এখনো অনেক সংশয় জাগে, ভুল হয়। কিন্তু এই তিনটি জিনিস বাঙ্গালী হিসেবে আমাদের সবার জানা জরুরি। তাই, শেয়ার করলাম।
আমার বেয়াড়া কীবোর্ডে অভ্র সফ্টওয়্যারে বেশ কয়টি কী ‘ইউনিবিজয়’ মোডে কাজ করে না। যেমন চন্দ্রবিন্দু, র-ফলা, ৎ। লেখার সময় কম্পিউটার স্ক্রীণে যুক্তাক্ষরগুলো সব ভাঙ্গা দেখায়। কিন্তু অভ্র ফনেটিক দিয়ে টাইপ করে আমার পোষায় না। তাই, প্রথম বার এক দফা লিখে নিয়ে আবারো কয়েক দফায় ফিরে ফিরে আসি মোবাইল দিয়ে অন্য মোডে সেই জানা বানানগুলো শুধরে দিতে।
এত কষ্ট কেন করি? যা খুশি লিখলেই তো হয়? বানানে আর কী আসে যায়? কী আর বলব! আজকে যেন কী দিন?
নরেন বিশ্বাস বলেছিলেন,"এই ভাষা তোমার মা। আজ থেকে প্রতিজ্ঞা কর, তোমার ভাষাকে তুমি বিকৃত করবে না, বিবর্ণ করবে না, বিকলাঙ্গ করবে না।"
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১২:০৯
১৭টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×