somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চুলকানিনামা

১৫ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার চুলকানি হয়েছে। গায়ে এবং মনে- দুইখানেই। বাসায় চুলকাই নিশ্চিন্তে, নির্ভাবনায়- কোন এটিকেট না মেনেই। অফিসেও প্রায় তাই। আমার রুমের দুই সহকর্মী ঢাকার বাইরে। তাই নিশ্চিন্তে চুলকে যাচ্ছি। এক সহকর্মী সাহস দিয়ে বলে গেলেন- চুলকানিকে গায়ে মাখতে নেই। ক’দিন পর নিজেই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু নাহ্! চুলকে চুলকে চামড়া উঠে যাবার জোগাড়! আমার মা-বাবা আমার আচরণে কোন মনুষ্যত্বের লক্ষণ দেখেন না, তাদের মতে আমি একটি বিশুদ্ধ বাঁদর। কিন্তু হায়! আজ চুলকাতে গিয়ে বুঝলাম- আমার গায়ের চামড়াটা মানুষের।

কাঁহাতক আর চুলকানো যায়! অফিসের মেইন উইন্ডোতে কোন পর্দা নেই। এক হাফপ্যান্ট পরা ভদ্রলোক তার বারান্দায় সিগারেট ফুঁকতে আসেন। তিনি নিশ্চয়ই ভাবছেন- দিনে সাড়ে আট ঘন্টা আমি নিজের হাত-পা চুলকে বেতন নিই। কাঁচের সামনে চেয়ার দিয়ে ভদ্রলোকের দৃষ্টি ঢেকে দিলাম। তখনি দেখলাম- অন্য বারান্দার একটা ছোট্ট মেয়ে আর তাদের কাজের মেয়েটা ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছে। কাজের মেয়েটা হয়তো ছোট্ট মেয়েটাকে বলবে- “আফামনি, দেখছনি তামশা! ল্যাহাপড়া করতে চাও না! দেহ! ল্যাহাপড়া শেখনের কত ফায়দা! খাওজাইয়াই বেতন পাওয়া যায়!” নাহ। শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ! আমার কারণে একটি ভবিষ্যৎ নষ্ট হতে দেওয়া যায় না।

গেলাম ডাক্তারের কাছে। ডাক্তারের হাসপাতালটি আমার ধারণক্ষমতার অনেক উপরে ছিল।কিন্তু সময় মিলিয়ে আর কোন অপশন ছিল না। বেছে বেছে মহিলা ডাক্তারের সাথে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়েছিলাম। উনি স্কিন স্পেশালিস্ট হলেও উনার ঈশ্বরপ্রদত্ত স্কিনটি দেখার সৌভাগ্য আমার হল না। পুরোটাই মেকাপচর্চিত। উনি আমাকে ময়েশ্চারাইজারই প্রেসক্রাইব করলেন চার রকম। প্রত্যেকটার গায়ে লেবেল এঁটে দিলেন-“ দিনে দুবার করে লাগাবে। আমি চাকরি করি শুনে বলে দিলেন- “অফিসে বসে বসে সারা গায়ে মেখে নেবে। ” ইয়ে মানে, অফিসে বসে বসে সারা গায়ে! যাহোক, উনি অনেক পাস দেওয়া ডাক্তার! উনাকে প্রশ্ন করা আমার মানায় না।

বিশ্বস্তভাবে উনার প্রেসক্রিপশনের প্রতিটি কথা মানতে গিয়ে আমি আবিষ্কার করলাম, আমার শরীরে জায়গা বড় অপ্রতুল। ১২০০ টাকা মূল্যের বডি ওয়াশ দিয়ে বডিকে ধুয়ে মুছে সেই বডিতে ১৪০০ টাকা মূল্যের একটা লোশন লাগানোর পরে বাকিরা ঠিক এঁটে উঠতে পারছে না। বাকিদের লাগানোর আগেই শরীরটা কেমন ফ্যাঁচফেচে হয়ে উঠছে। তবু, এটাকে আমার শরীরের কাণ্ডজ্ঞানহীনতা বলেই ধরে নিলাম। উনার সাথে আমার সাক্ষাতের দ্বিতীয় দিনে বেরোবার মুখে কলিগের সাথে দেখা! কলিগ আমাকে দেখে আঁতকে উঠে বললেন, “আপা, মুখটা এত তেলতেলে কেন? মুখটা ধুয়ে যান।” আমি তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বললাম, “চোখটাকে একটু জাতে ওঠান, মিয়া। জানেন, এই মুখে অন্তত ৬হাজার টাকার প্রোডাক্ট লাগানো আছে! তাও তো দুইটা লাগাই নি!” আমার সহকর্মী চুপসে গেলেন।

প্রথম দর্শনেই সেই চিকিৎসক ১৬,৬৩৬ টাকা বিল করেছেন (তার দেখা পাওয়ার আগেই অবশ্য দর্শনী এবং রেজিস্ট্রেশন বাবদ আমার আরও ১৪৫০ টাকা খসেছে)। আজ রিপোর্ট হাতে পেয়ে যে কী করবেন, বিধাতাই জানেন!

উনার প্রতীক্ষায় বসে থাকতে থাকতে চারদিকে চোখ বুলালাম- চারপাশে চকচকে সব রোগি। সবার চোখেই কেমন সরু আর তেরছা দৃষ্টি। টাকা বা স্ট্যাটাস থাকলে সোজাসুজি তাকাতে নেই। সবাই যেন একটা থিম সং গাইছে- “শেইক মি বেবে! আই অ্যাম এ মানি ট্রি।”

আমার ডাক পড়ল। টেস্টের রিপোর্ট খুবই ভাল। উনি মিষ্টি করে হেসে ওষুধ রিভিউ করাতে লাগলেন। আরো স্পষ্ট করে বলতে গেলে, যোগ করতে লাগলেন। হঠাৎই তার খেয়াল হল- উনি আগের দিন আমাকে কোন ফেইস ওয়াশ দেন নি। তড়িঘড়ি অ্যসিসটান্ট ডক্টরকে ধমকে উঠলেন, “ আই কান্ট বিলিভ যে তুমি ফেইসের জন্য কিছু লেখ নি!” এতটা সেই অ্যাসিসট্যান্টও নিতে পারলেন না। বললেন, “ম্যাম, উনার ফেইসে তো কিছু হয় নি। ” উনি বললেন, “তো কী হয়েছে? না হলেও দিতে হবে। যে প্রোডাক্ট আমি বডির জন্য দেব, সেটা ফেইসের জন্যও দিতে হবে। পেশেন্টের সমস্যা না থাকলেও দিতে হবে।” অ্যাসিস্ট্যান্ট ছেলেটি এখনো গলা কাটতে ততটা সিদ্ধহস্ত হয়নি বোঝা গেল।

যাহোক, এই শেষ লাইনটি দিয়ে উনি আমার চক্ষুদান করলেন। আমি হাসিমুখে চেম্বার থেকে বেরিয়ে প্রেসক্রিপশনে চোখ বুলিয়ে দেখলাম- অ্যালার্জির ওষুধ মাত্র দুটি। একটির মূল্য ৪০ টাকা। আরেকটির মূল্য ৭০ টাকা। বাকি সব প্রসাধনী। উনার দৌলতে আগামী তিনমাস আমাকে কোনরকম প্রসাধনী কিনতে হবে না।

আমার হঠাৎই মনে পড়ল- একটা লোশনের ক্যান এখনো আনওপেনড (যেটা কীনা অফিসে বসে আমার সারা গায়ে মাখার কথা)। ওটা আমার ব্যাগেই ছিল। ফার্মেসীতে গিয়ে ফিরিয়ে দিয়ে এলাম। ওই একটা লোশন ফেরত দিয়ে কত টাকা পেলাম, জানেন? ৪৬০০ টাকা।

মোরাল অব দ্য স্টোরি: ডান হাত চুলকালে টাকা আসে। বাম হাত চুলকালে যায়। আর সর্বাঙ্গ চুলকালে মতিভ্রম হয়। তারপর… তারপর…পকেটটা পাতলা হয়ে যায় আর মনটা ভারি হয়ে যায়। আর তারপর মনে হয়, বাংলা প্রবাদবাক্যগুলো রিভিউ করা দরকার। বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা, পুলিশে ছুঁলে ছত্রিশ ঘা, আর ডাক্তার ছুঁলে ???
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৭
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×