somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সূর্য ( কল্প-বিজ্ঞান)

৩১ শে মে, ২০১৫ রাত ১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বৃষ্টি পরছে।
বৃষ্টি পরছে অঝোর ধারায়, অবিশ্রান্ত ভাবে,
বৃষ্টি পরছে...কখন বেশি...কখন কম...কখন মাঝারি বেগে।
কিন্তু বৃষ্টি পড়েই চলেছে একটানা একবারও না থেমে, ১১ বছর ধরে।

স্কুল এর বাচ্চা দের কেউ কোনদিন মেঘহীন আকাশ দেখেনি, বৃষ্টিহীন দিন দেখেনি,রাত ও দেখেনি।
কারন তাদের সবার বয়স ১১ বছরের কম। তারা সবাই জন্মেছে পৃথিবী থেকে অনেক দূরের এই গ্রহে, তাদের বাবা-মা রা
অনেক আগে থেকেই আছে এই গ্রহে......... স্কুল এর টিচার রাও তাই।

মা-বাবাদের কাছে... টিচার এর কাছে বাচ্চারা পপৃথিবীর গল্প শুনেছে, যেখানে বৃষ্টি পড়ে কিন্তু বৃষ্টি থেমেও যায়, আকাশে সূর্য দেখা যায়... রোদ ওঠে। তারা সূর্যের ছবিও দেখেছে, কিন্তু রোদ কেমন তারা জানে না কারন রোদের ছবি হয় না।
কিন্তু তাদের কেউই আসল সূর্য চেনে না, আসল রোদ চেনে না।
একটু ভুল হোল, একজন চিনে- রুকু। তারও বয়স ১১ বছরের কম। তবে সে বাবা-মার সঙ্গে এই গ্রহে এসেছে মোটে ৬ বছর আগে, তাই সে নাকি আসল সূর্য দেখেছে, আসল রোদ দেখেছে। অন্ততঃ সে তাই দাবি করে, যদিও অন্য বাচ্চারা তার কথা বিশ্বাস করে না। তাছাড়া রুকু সূর্য আর রোদের বর্ণনা ঠিক মত দিতে পারে না। কখন সে বলে সূর্য নাকি একাটা মস্ত লাল রঙের চাকার মতো, কখন আবার বলে- না, না বড় নয় আর লাল নয় কমলা রঙের।
আর রোদ???
রোদ খুব গরম না, না স্টোভের আগুনের মতো গরম না, ক্লাস এর বসানো হিটার এর মতো, বিছানার কম্বলের নিচের তাপের মতো, মায়ের বুকের ওমের মতো গরম। আর রোদ মানে হোল আলো, উজ্জল চোখ ধাঁধানো আলো...... আর সূর্য উঠে ভোরে।
কেন রুকুর কথা বাচ্চা রা বিশ্বাস করবে? তারা কেউই সূর্য উঠতে দেখেনি, উজ্জল রোদ দেখেনি।
দিনের আলো তাদের কাছে মটেও উজ্জল নয়, গরম তো নয়ই।

কিন্তু গতকাল তারা টিচার এর কাছে শুনেছে বৃষ্টি নাকি থামবে। বিজ্ঞানীরা হিসেব করে বের করেছেন বৃষ্টি থামার সময় এসে গেছে। ১১ বছর পর ১দিন নাকি বৃষ্টি থামে কিছু সময় এর জন্নে। মেঘের আড়াল থেকে সূর্য বেরিয়ে আসে আর সকলের অবাক দৃষ্টির সামনে মুখ দেখায়। হা ১১ বছর পর এই একবের জন্নেই এই গ্রহের বাসিন্দারা রোদ দেখতে পায়। সারা গায়ে রোদের ওম মেখে নিতে পারে।
গতকাল সারাদিন ধরে ক্লাস এ বাচ্চারা সূর্যের কথা পড়েছে। আর সূর্য কে নিয়ে ছোট ছোট গল্প আর ছড়া লিখেছে।
--- ' সূর্য যেন একটা হলদে ফুল,
এক ঘণ্টার জন্নে ফুটবে কেবল'
----- রুকু

রুকু জানে, বিজ্ঞানীদের হিসেব ভুল হবে না। আজ সত্যি সূর্য দেখা যাবে, রোদ উঠবে, হোক না তা কেবল এক বা দুই ঘণ্টার জন্নে।
তখন সবাই বুজবে সে মিথ্যা বলেনি, সূর্য আসলেই একটা হলদে ফুলের মতো।
অন্য বাচ্চারা কিন্তু বলছে কিছুই হবে না, সব মিথ্যা। আকাশ এর মেঘ কাটবে না, বৃষ্টি থামবে না। বিজ্ঞানীদের হিসেব আসলে একটা ঠাট্টা। তা তো হবেই, কারন আসলে সূর্য বলে কিছু নেই, তাই রোদ বলেও কিছু নেই।

আজ কিন্তু সত্যি বৃষ্টি থামবে, মেঘ কাটবে, আর সূর্য দেখো তোমরা--- রুকু বলে উঠে।-- বিজ্ঞানীরা ভুল বলতে পারে না- ওরা জনেন।

'সব ঠাট্টা, সব ঠাট্টা, ওসব কিছুই হবে না-' বলে উঠল অন্য বাচ্চারা- চল মিথ্যেবাদী রুকু কে আমরা আলমারির ভিতর বন্ধ করে রাখি- মিথ্যে বলার উচিৎ শাস্তি হবে সেটা।

সবাই হাত ধরাধরি করে গোল হয়ে রুকু কে ঘিরে ফেললো যেন সে পালাতে না পারে। রুকু ভয়ে ভয়ে সকলের দিকে চেয়ে বলতে লাগলো-- 'আমি সত্যি বলছি, একটুও মিথ্যে নয়, আমার বাবা বিজ্ঞানী, আমি জানি বাবা মিথ্যা বলে না কোনদিন'।

'মিথ্যেবাদী রুকু......... মিথ্যেবাদী রুকু।' সবাই চেঁচিয়ে বলল- ' ধর ওকে-।'

হটাত করেই বৃষ্টি থেমে গেলো।
আর- ঠিক যেন ছিনেমার পর্দার প্রোজেক্টর থেমে গেলো, সমস্ত শব্দ, গর্জন নিমিষের মাঝে স্তব্ধ হয়ে গেলো, আর পরও মুহূর্তেই তার জায়গাই ভেসে উঠলো বৃষ্টিতে ধোওয়া প্রান্তর, বন-জঙ্গল, দূরের কালচে সবুজ পাহাড়, আকাশে ক্রমে পাতলা হয়ে আসা মেঘ।
আর পরিষ্কার আকাশের গায়ে সূর্য।

চোখ ধাঁধানো জ্বলন্ত পেতলের চাকার মতো, আর বিশাল বড়। তার চারপাশের আকাশের রঙ উজ্জল নীল, নিচে মাটিতে গাছপালা, মাঠঘাট রোদে ঝলমল। বাচ্চারা কয়েক মুহূর্ত স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার পর চিৎকার করতে করতে ছুটে বেরিয়ে এলো এই সম্পূর্ণ অপরিচিত কিন্তু অসম্ভব সুন্দর, পরম আশ্চর্য জগতের বুকে।

বাচ্চারা সবাই হইচই করতে করতে নেমে পড়েছে মাঠে। তাদের সকলের মুখ আকাশের দিকে তোলা। তাদের গাঁয়ে রোদের উষ্ণ পরশ, তাদের জ্যাকেট আর শার্ট খুলে ফেলে সারা গাঁয়ে তারা মেখে নেয় সূর্যেই আগুন গরম কিরন।

' সান-লাম্পের চেয়ে অনেক ভালো, তাই না?'
অবশ্যই- অনেক অনেক ভালো।'

তারা লুকুচরি খেলল, আরও অনেক কিছু... কিন্তু সব থেকে বেশিক্ষণ তারা চেয়ে রইলো মাথার উপরের সূর্যের দিকে... যতক্ষণ না তাদের চোখ ঝলসে গেলো আর গাল বেয়ে অস্রুধারা গড়াতে লাগলো। এক ঘণ্টা অথবা দুই ঘণ্টা ধরে তারা ছুটোছুটি করেই গেলো একবারের জন্নেও না থেমে।
তারপর হটাত-----------------

একটি মেয়ে কেঁদে উঠলো। সবাই থমকে দাঁড়ালো। একটু ফাঁকা জায়গায় দাঁড়ানো মেয়েটি একটা হাত বারিয়ে ধরল- ' দেখো দেখো না'- কাঁপা কাঁপা গলায় সে বলল।

সবাই তার কাছে এগিয়ে এসে তার খোলা হাতের তালুর দিকে তাকালও- টলটল করছে মস্ত বৃষ্টির ফোঁটা।
সেটার দিকে তাকিয়ে সবাই ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো।
সবাই মুখ তুলে আকাশের দিকে চাইলো----
'ওহো---- ওহো---'
তদের নাকের উপর আর গালের উপর, মুখের উপর টপ টপ করে বৃষ্টির ফোঁটা এসে পড়লো। সূর্য যেন ধীরে ধীরে একটা কুয়াশার চাদরের আড়ালে ঢাকা পড়ে যেতে লাগলো। সবাই এক সঙ্গে পেছন ফিরে হাঁটতে লাগলো স্কুলের দিকে। তাদের মুখের হাসি মিলিয়ে গেলো আর চোখের উজ্জ্বলতা বিলীন হয়ে এলো।
হটাত করে মেঘ ডাকার আওয়াজে বাচ্চারা চমকে উঠলো। আর সঙ্গে সঙ্গে শুরু হোল অঝোর ধাঁরাই বৃষ্টি পরা।

'আবারো কি ১১ বছর?'
হা, এগারো।'

একজন হটাত বলল, 'রুকু'-?
'তাইতো, রুকু কোথায়-???
তারপর একজন বলল, ' ঐ যে ঐ তো রুকু---'

'রুকু সত্যি কথাই বলেছিল' একজন বলল।
'রুকু আসলে মিথ্যেবাদী নয়,' যে মেয়েটির হাতের তালুতে বৃষ্টির ফোঁটা প্রথম পড়েছিল সে বলল।
' সত্যি সূর্য হুলদ ফুলের মতো-'
' আর রোদ আসলেই গরম, মায়ের বুকের ওমের মতো-----'

' এগারো বছর পর আবার সূর্য দেখা যাবে----'
' এগারো বছর পর আবার রোদ উঠবে------'
' এগারো বছর পর---------'

বাচ্চারা সবাই রুকুকে ঘিরে দাঁড়ালো............... তারা রুকুর কাছে শুনতে চায় সূর্য নিয়ে তার সৃতির কথা............... রোদ নিয়ে আরও অনেক অনেক কথা। যা তাদের এগারো বছর অপেক্ষা করার শক্তি দিবে.............
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×