গোকলে বলেছিলেন, বাংলা আজ যা ভাবে, ইন্ডিয়া তা ভাবে আগামীকাল। চিন্তা, চেতানা ও বুদ্ধিতে বাঙ্গালীর অগ্রসরতা অনেক আগে থেকেই। কিন্তু চারপাশের সবাই এগিয়ে গেলেও বাঙ্গালীর উন্নতি হলো না।
বাংলাদেশ ঘুরে গিয়ে পশ্চিমা এক অধ্যাপক তাঁর বাঙ্গালী ছাত্রকে এই প্রশ্নটিই করেছিলেন, ‘আমি যতজন বাঙ্গালী ছাত্র-ছাত্রী পড়িয়েছি, তাদের সকলেই তো খুব মেধাবী। ভীষণ বুদ্ধি তাদের। তার পরও তোমাদের দেশ এতো গরীব কেন? তোমরা কেন উন্নতি করতে পারছো না?’
ছাত্রটি জবাব দিল, ‘উন্নতি করতে গেলে তো হাত দিয়ে কাজ করতে হয়। কিন', আমাদের দুটো হাতের একটিও কাজ করার জন্য ফ্রি থাকে না।’
অধ্যাপক অবাক হয়ে বললেন, ‘কেন, তোমরা হাত দিয়ে কি করো?’
সে বললো, ‘বাঙ্গালী তার একটি হাত দিয়ে সব সময় অন্য বাঙ্গালীর পশ্চাদদেশ খোঁচাতে থাকে।’
- ‘ইন্টারেস্টিং। কিন', অপর হাতটি?’
- ‘সেটিকে ব্যস- রাখতে হয় অন্যদের খোঁচা থেকে তার নিজের পশ্চাদদেশ রক্ষা করতে।’
অন্যের পশ্চাদদেশ খোঁচানোর মধ্যে বাঙ্গালী যত মজা পায়, ততো মজা আর কিছুতেই পায় না। এ ধরণের কোন সুযোগ আসলে সারা জাতি তাতে ঝাপিয়ে পড়ে। খোঁচানোর উল্লাসে কবিদের কাব্য প্রতিভা ঝলসে ওঠে, বুদ্ধিজীবিদের বক্তৃতা, বিবৃতি আর টক শোর জোযার শুরু হয়। টিভি সাংবাদিকগণ মাইক্রোফোন আর ক্যামেরা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েন সেগুলি কভার করতে। সুশীল, সুভদ্র, সুনাগরিক, সুজন ইত্যাদিগণও এ বিষয়ে অত্যন- আগ্রহ ও পারঙ্গমতা প্রদর্শন করে থাকেন। যে কোন টক শো কিংবা গোল টেবিল বৈঠকের কথা বার্তা শুনলে এ কথার সত্যতা মেলে। রাজনীতিকরা অন্য দল এমনকি নিজ দলের লোকদেরও উক্ত যায়গাটিতে বাঁশ দেয়াটাই তাদের পবিত্র দায়িত্ব হিসাবে বিবেচনা করেন। শুধু তাই নয়, পশ্চাদদেশ খোঁচানোর বা তাতে বাঁশ দেয়ার শিল্পটি বার বার আমাদের জাতীয় জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়ে থাকে।
কয়েকটি উদাহরণ দেয়া যাক। সিইসির চেয়ারে এর আগে যে ভদ্রলোকটিকে বসানো হয়েছিলো, প্রথম দিন থেকেই অনেকের দৃষ্টি গেল তাঁর পশ্চাদদেশের দিকে। দুই একজন যেই সেখানে খোঁচা দিল, অমনি খোঁচা যজ্ঞ শুরু হয়ে গেল। কলামিস্টগণ তাঁকে খুঁচিয়ে পত্রিকার পাতা ভর্তি করতে লাগলেন, বুদ্ধিজীবিরা সাক্ষাৎকার আর বক্তৃতা-বিবৃতির ঝড় বইয়ে দিলেন, সাংবাদিকগণ ক্যামেরা তাক করে মাইক্রোফোন বাড়িয়ে কোরাস গাইতে লাগলেন, ‘কবে যাবেন স্যার?’ ফান ম্যাগাজিনগুলো তো তাকে ছাড়া অন্য বিষয় ভাবতেই পারতো না। তাঁকে কেন্দ্র করে যে খোঁচানো অধ্যায় শুরু হয়েছিল, তার শেষ হয়েছে এমন এক স্থানে যা বাঁশবিদগণ কেউই হয়তো অনুমান করতে পারেন নি।
রাজনীতিকরা তো পশ্চাদদেশ খোঁচানোটাকে তাদের পেশা হিসাবেই নিয়ে থাকেন। তাদের মধ্যে আবার ডজনখানেক পিএইচডি ধারী নেত্রীটি এ বিষয়ে একটু বেশী পারদর্শিতা ও আগ্রহ দেখিয়েছেন। এ বিষয়ে তাঁর দক্ষতা তাঁর কথা শুনলে ও মুখভঙ্গি দেখলে পরিস্কার বোঝা যেতো। তাতে প্রাথমিকভাবে সফল হবার পর, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসলে, তিনি নব উদ্যোমে খোঁচানো যজ্ঞের নতুন অধ্যায় শুরু করলেন। ছড়া কেটে বলতে লাগলেন, ‘ধরো ধরো, চোর চোর মহাচোর।’ এক একদিন এক এক জনের নাম বলতেন, আর সরকার সাথে সাথে তাকে ধরে জেলে পুরতো।
কিন্তু ভুল হয়ে গিয়েছিল অন্য যায়গায়। রাজনীতিকদের মধ্যে একটি ধারণা রয়েছে যে, প্রতিদ্বন্দ্বীর পশ্চাদদেশকে যদি বেশী মাত্রায় খোঁচানো যায়, তাহলে সে নিজের অঙ্গটি রক্ষা করতে দুই হাতই নিজের পশ্চাদদেশেই ব্যস- রাখবে, ফলে যে খোঁচাচ্ছে, তার দিকে আর মনোযোগ দিতে পারবে না। এ রকম করতে গিয়ে তারা নিজেদের পশ্চাদদেশ রক্ষায় যথেষ্ট মনোযোগ দিতে পারে না। তখন তৃতীয় পক্ষ যে কিভাবে সুযোগটা নেয়, তা খুলে বলার বোধ হয় দরকার নেই। এ খেলার নির্মম পরিণতির কারণেই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালীর কন্যাকে একই কারাগারে বন্দী থাকতে হচ্ছে ‘চোর চোর মহাচোর’দের সাথে, একই মামলায় আসামী হতে হচ্ছে এবং হয়তো ভবিষ্যতেও একই ভাগ্য বরণ করতে হবে।
পশ্চাদেশ খোঁচানো খেলার এই ট্রিকটির বহুবিধ ব্যবহার স্বৈর শাসকেরা করে থাকে। যেমন পাকিস-ানের কথাই ধরা যাক। মোশাররফ বেনজিরকে ক্ষমতায় বসানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ডেকে আনলেন। তারপর তার মিছিলে বোমা হামলা চালিয়ে অর্ধ শতাধিক মানুষকে হত্যা করে দোষ চাপানো হলো বহু আগে গত হওয়া জিয়াউল হক আর আল কায়েদার ঘাড়ে। মোশাররফ ভেবেছিলেন, বেনজির আর আল কায়েদা পরস্পরের পশ্চাদদেশ দিয়ে ব্যস- হয়ে পড়বে, তাঁর মসনদের দিকে দৃষ্টি দেবার সময় কেউই পাবে না। তৃতীয় শক্তি হিসাবে তিনি খেলাটি দেখবেন আর নিরাপদে ক্ষমতার পেয়ালায় চুমুক দিয়ে যাবেন। কিন', এ খেলায় আরেক পক্ষও থাকে। সেটি হচ্ছে, ‘আন-র্জাতিক সম্প্রদায়’। তারা ইতোমধ্যে প্রকাশ্যে মাঠে নেমে গেছে। প্রথম তিনটি শক্তির পারস্পারিক পশ্চাদদেশ খোঁচানো বন্ধ না হলে ইরাক স্টাইলে শানি- প্রতিষ্ঠা না করে তারা বসে থাকতে পারবে না। নির্যাতিত মানবতার প্রতি তাদের একটা দায়িত্ব আছে না।
এ ধরণের একটি খেলা ছোট আকারে হলেও বাংলাদেশে আবার জমে উঠেছে। এবার রেফারী মহোদয় নিজেই খেলাচ্ছেন। তিনি এক খেলোয়াড়ের দল ভাঙছেন তো আরেক খেলোয়াড়ের পশ্চাদদেশের দিকে সকলকে উস্কে দিচ্ছেন। তাঁর বুদ্ধির তুলনা নেই, মাইরি। তাঁকে যে কেউ খেলাচ্ছে না, সে টি নিশ্চিত করে বলা যায় না। এতো খেলার মধ্যে আসল খেলা, যার জন্য এই সরকারের দায়িত্ব নেয়া, শেষ পর্যন- তার আয়োজন হয় কি না, তা নিয়ে ইতোমধ্যেই প্রশ্ন ওঠা শুরু হয়েছে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, সব খেলা আর পশ্চাদদেশ খোঁচানোই ঘটে থাকে জনগণের কল্যাণ ও তাদের রক্ষার নামে। একটি দল ভাঙ্গতে হবে। কেননা, তাদেরকে না ভাঙ্গলে জনগণের ‘মহা বিপদ’ হবে। উক্ত দলটির বন্ধুদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। কেননা, তা না হলে জনগণের পেটের ভাত হজম হবে না। কিন' বাস-বে জনগণের পশ্চাদদেশেই খোঁচাটা লাগে সবথেকে বেশী। এতো বেশী যে তারা দুই হাত দিয়ে যায়গাটা আগলে রেখেও রক্ষা পায় না। তারা বাজারে গিয়ে খোঁচা খায়, পথে বের হলে খোঁচা খায়, চাকরী কিংবা ব্যবসায়ে খোঁচা খায়, খোঁচা খায় সরকারের অফিসে আদালতে গেলে। গণতন্ত্র থাকলেও খোঁচা, না থাকলেও খোঁচা। তাদের পশ্চাদদেশের জন্য হেলমেট জাতীয় কিছু যদি বহুজাতিক কোম্পানীগুলো বানিয়ে জাতিসঙ্ঘের মাধ্যমে বিক্রি করতে পারতো, তাহলে জাতিসঙ্ঘও মানবতার কল্যাণে অবদান রাখতে পারতো, আর আমরাও হাতদুটো পশ্চাদদেশ থেকে সরিয়ে নিয়ে কিছু করে কম্মে খেতে পারতাম।
লেখকঃ ইমতিয়াজ আহমেদ
সূত্রঃ
যায়যায়দিন ও
http://www.sonarbangladesh.com

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



