somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালবাসার দাগ

২৫ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সবাই জানে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে উঁচু পদে যারা কাজ করে, তাদের ব্যক্তিগত জীবন বলে কিছু নেই। অথচ ব্যক্তিগত জীবনে স্ত্রী- পুত্র- কন্যা পরিবার- পরিজন নিয়ে সুখে- স্বচ্ছন্দে জীবন- যাপন করবে বলেই কাজ করতে আসা। তার প্রয়োজন না থাকলে কি কেউ বেরুত কাজ করতে? এই বঙ্গদেশেই এক সময় অনেক জমিদার ছিলেন, তাঁরা জীবিকা উপার্জন বলতে যা বোঝায়, তা কখনও করেননি। রাজস্বের টাকা খরচ করে খোশমেজাজে জীবন কাটিয়ে গেছেন।
সে সব দিন আর নেই। এখন সবাইকেই পরিশ্রম করতে হয়। পরিশ্রমের অবশ্য তারতম্য আছে। কেউ কেউ কারখানায় কী আপিসে আট ঘণ্টা কাজ করে, আট ঘণ্টা ঘুমোয় আর বাকি আট ঘণ্টা নিজের ইচ্ছেমত কাটায়। অর্থাৎ জীবনের এক তৃতীয়াংশ সময় বিক্রি করে, সেই অর্থে বাকি দুই তৃতীয়াংশ সময় নিজের জন্য রাখে।
সাত্যকির জীবন সে রকম না। তার সবটা সময়ই মনিবের কাছে বিক্রি হয়ে আছে। যতটুকু বিশ্রাম না করলে নয়, ততটুকুর জন্য বাড়িতে আসা, বাকিটা আপিসের কাজে উৎসৃষ্ট। দিন নেই, রাত নেই, টেলিফোন, লোকজন, ট্যুর, ক্লাব, মিটিং, ঠিকেদার, অধস্তন কর্মচারীদের নিয়ে সে ব্যস্ত। এই ব্যস্ত শব্দটা খুব অর্থপূর্ণ। অরুন্ধতী প্রথম প্রথম জিজ্ঞেস করত, কী এত কাজ তোমার যে, আর কেউ করতে পারে না? আমাদের জন্য খরচ করার সময় নেই! নিজের মা-বাবাকে দেখতে যেতে পার না! আর সকলে ছুটি পায়, তোমার ছুটিও নেই? সাত্যকি বলত, কোম্পানি তো সব পুষিয়ে দিচ্ছে, বাবা। কীসের অভাব আছে তোমার সংসারে?
কাজ-পাগল লোকটাকে বোঝানো যাবে না জেনে ও হাল ছেড়ে দিয়েছে। অভাববোধটাও গেছে দেখে ওর দুঃখ হয়। আজকাল আর দুঃখও হয় না। সয়ে গেছে এই ভোগসর্বস্ব জীবনের দুর্ভোগ।
এই সাত্যকি এক বার ভুবনেশ্বর গেছে ট্যুরে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঘোরাঘুরি। গোটা অঞ্চলটার কাজ-কারবার পরিদর্শন। হাজারো সমস্যার মোকাবিলা। এক দিন রাত্রে হোটেলের ঘরে বসে একা একা হুইস্কি পান করতে করতে ওর মনে ক্ষণিকের জন্য অভাববোধটা জেগে উঠল। মনে পড়ল ছেলেবেলার কথা। বউয়ের কথা। হোস্টেলে থাকা ছেলেমেয়ের কথা। পর দিন সকালে পাছে ভুলে যায়, হোটেলের প্যাডে খশ খশ করে কিছু লিখে কোটের পকেটে ঢুকিয়ে রাখল।
পর দিন স্থানীয় ম্যানেজার সুরেশ মহান্তি আর তার বউকে সঙ্গে নিয়ে অনেক কিছু বাজার করল সাত্যকি। স্যারের চরিত্রে এই বৈপ্লবিক পরিবর্তন দেখে মহান্তি তো অবাক। ওর বউ সাহস করে বলে ফেলল, স্যার, মিসেসের জন্য কিছু কিনবেন না? —কী কেনা যায় বল তো?
—চলুন, এম্পোরিয়ামে যাই। দেখি না—
এই ভাবে, নেহাত কাকতালীয় ভাবে, একখানা দামি কট্কি শাড়ি কিনে এনেছিল সাত্যকি। খুব বেশি বাছাবাছি করে সময় নষ্ট করেনি। দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া ওর অভ্যেস।
সেই শাড়ি পেয়ে হাসতে হাসতে অরুন্ধতী বলেছিল, বাঃ, ভা-রী সুন্দর! এটা বাঁধিয়ে রাখব।
—কেন? পরবে না?
—এই রং আমি পরি? তুমি দেখ না?
—কেন, এ তো চমৎকার রং। পিওর সিল্ক।
—এত ভারী, আমি কোমরে রাখতে পারব না। তুমি একটা সিল্কের বেল্ট কিনলে না কেন এর সঙ্গে?
এক আধদিন স্বামীর মন রাখতে শাড়িটা অঙ্গে তুলেছিল অরুন্ধতী। সেই শেষ। ভাবা যেতে পারে, এই প্রসঙ্গের এইখানেই ইতি। বাড়িভর্তি হাজারটা মূল্যবান আবর্জনার সঙ্গে আর একটা যুক্ত হল। কিন্তু এ-ক্ষেত্রে তা হয়নি। অরুন্ধতীর ছোটমাসির মেয়ে খেয়া এসেছে কলকাতায়। কলেজ-মাস্টারির পরীক্ষা দিতে। তিন-চারটে দিন এক জন কথা বলার লোক পাওয়া যাবে (আর বৈভবও দেখানো যাবে) ভেবে অরুন্ধতী ওকে রেখে দিয়েছে। আর এক মাসির বাড়ি বাঘাযতীনে যেতে দেয়নি। কোন ফাঁকে হঠাৎ সেই কট্কি পিওর সিল্কখানা উঠে এল ওর হাতে। খেয়াকে দিয়ে বলল, এই নে। এটা পরবি। তোকে মানাবে।
খেয়া বলে, ও মা, এত দামি শাড়ি আমি পরি না। কোথায় যাব এ-সব পরে?
অরুন্ধতী বলে, জাহান্নমে যাস।
আর কালবিলম্ব না করে সুশ্রী রোগা-পটকা অল্পবয়সী মেয়েটা সে দিনই সন্ধেবেলা পরে ফেলল শাড়িখানা। সাত্যকি গাড়ি পাঠাবে। দিদি ওকে নিয়ে নিউ মার্কেটে যাবে বলেছে। খেয়া কখনও নিউ মার্কেট দেখেনি।
বসার ঘর সংলগ্ন বিশাল বারান্দা। নানা রকম ফুলের টব দিয়ে ঘেরা। সামনে উঁচু উঁচু ঝাউগাছ। পশ্চিম দিকে বিশাল আকাশ টাটিয়ে লাল হয়ে উঠেছে। মুগ্ধ হয়ে দেখছিল খেয়া রেলিংয়ে বুক চেপে। আর মধুর কোনও দিবাস্বপ্নও দেখছিল হয়তো। না হলে অত বড় গাড়িটা গেট দিয়ে ঢুকল, ও দেখতে পায়নি! গাড়ির দরজা বন্ধ করার শব্দ পায়নি!
অরুন্ধতী বাথরুমে। ওদের বাথরুমের পাশে এক প্রশস্ত ড্রেসিংরুম আছে তিন দিকে আয়না দেওয়া। সেখানে ওর নানাবিধ সাজগোজের সরঞ্জাম। সাজতে একটু সময় লাগে অরুন্ধতীর। গাদা গাদা শাড়ির পাহাড় থেকে উপযুক্ত একখানা শাড়ি বাছা এক ঝকমারি। তার সঙ্গে মিলিয়ে জামা ঠিক করা। মুখ, চুল তৈরি করা— কাজ তো অল্প নয়। তার পর ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নিজেকে দেখা। খটকা লাগলে আবার সব কিছু বদলানো। হলই বা একঘণ্টা-দু’ঘণ্টার জন্যে। যা-তা ভাবে তো বাড়ি থেকে বেরুনো যায় না। চেনা লোকের সঙ্গে দেখা হয়ে গেলে ভাববে কী? দোকানিরাই বা খাতির করবে কেন? লোকে যদি এক বার অবাক হয়ে তাকিয়ে না দেখল, তো নারীজন্মই বৃথা।
খালি গাড়িখানা বাড়িতে না পাঠিয়ে, কী ভেবে সাত্যকিও চলে এসেছে সে দিন। খামখেয়ালের বাসনা, বউকে অবাক করে দেবে। খুব মজা হবে। বিকেলে একটা মিটিং ছিল ক্লাবে। হালকা চালে কিছু প্ল্যান-পরিকল্পনার আলোচনা হয়েছে সেখানে। সফলতার পরিবেশে। দু-এক পাত্র করে সরেস পানীয় পড়েছে পেটে। মোট কথা, সাত্যকি বেশ খুশমেজাজে বাড়ি ফিরল। আকাশে তখনও আলো আছে।
বসার ঘরে ঢুকে দেখে উজ্জ্বল পেতলের থালায় জয়পুরী ফুলদানির ওপর একগুচ্ছ টাটকা ফুলের ঝাড় চার দিক আলো করে রয়েছে। আর, একটু দূরে বারান্দায় চেনা-চেনা, কে আবার! মাঠের মতো কার্পেট মাড়িয়ে ও অগ্রসর হয়। খেয়া প্রথমটা কিছুই বুঝতে পারেনি। পেছন থেকে কেউ ওকে জাপটে ধরেছে। বুকের ওপর ঘষছে দু’খানা হাত। ঘাড়ের ওপর চুকচুক করে শব্দ হচ্ছে আদরের। হঠাৎ ওর মুখখানা ঘুরিয়ে সেই হাত একটা পুরুষ-মুখের ওপর চেপে ধরল। এক দুই মুহূর্তের বিভ্রম। আচ্ছন্ন ভাব কাটতেই খেয়া বুঝল, সাত্যকিদা। মুখে মদের গন্ধ। লালচে চোখ!
—এ কী করছেন? ছাড়ুন ছাড়ুন। ছেড়ে দিন। গলা দিয়ে স্বর বেরুচ্ছে না খেয়ার। এক-একটা মেয়ে থাকে না, অনেক বয়েস অবধি অচুম্বিত, অস্পৃষ্ট থাকে, নিজের চার দিকে কল্পিত বেড়া বানিয়ে ঘুরে বেড়ায়, খেয়াও তেমনই। তা ছাড়া, এই এক জন মানুষ, তার রক্ষক, তার কাছ থেকে এমন ব্যবহার ও তো স্বপ্নেও ভাবেনি। ও আর দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে রেলিং আঁকড়ে ধরল।
—ওমা, তুমি!
থাবা দুটো খেয়ার শরীর থেকে আচমকা তুলে নিয়ে সরে দাঁড়াল সাত্যকি। কী কাণ্ড! আমি ভাবলাম—
কাজের জগৎ আর ব্যক্তিগত জীবনের জগৎ একেবারে সম্পর্কহীন ভাবে আলাদা হয়ে গেছে সাত্যকির ক্ষেত্রে। বস্তুত, ব্যক্তিগত বলে কিছু নেই। কাজ থেকে ফাঁক পেলেই এ দিকে ঢুকে একটু সময় কাটিয়ে নেওয়া। সঙ্গী যারা আছে, তাদের মানসিক প্রস্তুতি হয় না, পরস্পরের জন্য প্রতীক্ষার অবকাশ নেই— এ এক অদ্ভুত যান্ত্রিক জীবন। মন নেই এখানে, মন আছে অন্য কোথাও। কোথায়? অর্থ উপার্জনের দিকে? চুপ করে বসে ভাবতে গেলে হাসি পাওয়ার কথা। এত তুচ্ছ, অথচ কী ভীষণ তার প্রতাপ, প্রভাব। যে-প্রতিষ্ঠানে কাজ করে সাত্যকি, তাদের ব্যবসা যন্ত্রপাতির, ছোট ছোট যন্ত্রাংশের। সে সব যন্ত্রাংশ মোটর গাড়ি, ট্রাক, বাস, ট্রাকটর চালাতে কাজে লাগে। পুণায় তার কারখানা আছে। সারা ভারত জুড়ে বিপণনকেন্দ্র। বিদেশেও চালান হয় সেই পণ্য। সাত্যকি সেই প্রতিষ্ঠানের পূর্বভারত অধিকর্তা। ওকে প্রতিযোগীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে থাকতে হয়। নিয়ত যুদ্ধের আবহে সে পর্যুদস্ত। তার কত রকম জটিলতা। কত রকম মানুষকে জড়িয়ে তার টিকে থাকার সংগ্রাম। ওর আপিসঘরে সেই সব পণ্যের ছবি আছে, মাপজোখ আছে, উপযোগিতা বিষয়ে বিস্তর খবর সুন্দর ভাবে তৈরি করা আছে। আর আছে কিছু কাগজ, যোগাযোগের যন্ত্রপাতি। বাতানুকূল পরিবেশ। সুশ্রী কিছু মহিলাকর্মী। নরম আলো, নরম গদি, কাচের দেয়াল। মাস-কাবারে মুঠো মুঠো পারিশ্রমিকের টাকা। সেই অনর্থের অর্থ দিয়ে একটা নয়, দশটা পরিবার স্বচ্ছন্দে প্রতিপালিত হতে পারে। ওর সম্পূর্ণ মনোযোগ কিনে নেবার জন্য এই এলাহি ব্যবস্থা। ওরা যখন ওকে ছেড়ে দেয় দিনের শেষে, তখন সাত্যকির মধ্যে এক বিধ্বস্ত মানুষরূপী পশু ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। সেই পশুটাই কখনও বাড়ি ফেরে, কখনও এখানে-ওখানে আরামের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়।
খেয়া ছুটে তার নির্দিষ্ট ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। প্রচণ্ড কান্না পেল ওর। বালিশে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল।
এ দিকে অরুন্ধতী দাঁতে ধরা আধপরা শাড়ি জড়ানো অবস্থায় বেরিয়ে এসে দেখে সাত্যকি হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে আছে।
—কী হল?
—চলে এলাম।
—আমাদের সঙ্গে যাবে?
—যেতে পারি। যেতে ভাল লাগত। একটা সন্ধে। কিন্তু সব গোলমাল হয়ে গেল।
—গোলমাল? কেন?
—তুমি ওই শাড়িটা, কী নাম যেন, খেয়া, খেয়াকে দিয়ে দিয়েছ, আমি জানব কী করে? আমি ভাবলাম তুমি দাঁড়িয়ে আছ রেলিং ধরে। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরতেই ও চেঁচিয়ে উঠল! কী ভাবল বলো তো!
—ভাবল, তুমি একটা পাষণ্ড। আদিখ্যেতার আর সময় পেলে না।
—শাড়িটা, সেই কট্কি সিল্ক, ওটাই কালপ্রিট। যখন কিনেছিলাম তখনই মিসেস মহান্তি বলেছিল, ওর রং আর নকশার মধ্যে কাম উদ্দীপক ব্যাপার আছে। নিয়ে যান। তুমি নিজে না পরে ওটা দান করে দিলে ওকে। আমি আর কী করব?
—বুঝতে পেরেছি। এখন একটু শান্ত হয়ে বসো। চা-টা খাও। আমি ও-দিকটা দেখছি। শাড়িটা কোমরে গুঁজে অরুন্ধতী খেয়ার ঘরের দিকে অগ্রসর হয়। খানিক লজ্জিত। খানিক গর্বিত। খানিক উদাসীন।
সে দিন খেয়াকে ঘর থেকে বার করা যায়নি। কয়েক বার ডাকাডাকি করে ব্যর্থ হয়ে ওরা নিজেরাই নিউ মার্কেটের দিকে রওনা হয়ে যায়। এমন একটা লটারির মতো পেয়ে যাওয়া সন্ধে বিফলে নষ্ট করা যায় না। খেয়ার সমস্যাটা ক্রমে তুচ্ছ হয়ে আসে ওদের দু’জনেরই মনে।
—আজকালকার মেয়ে। এত কী হয়েছে যে কেঁদে কূল পাচ্ছে না? অরুন্ধতী বলে।
—আমি তো স্বীকার করলাম, ভুল হয়ে গেছে। আমি তো মাফ চাইলাম। আর কী করতে পারি?
ক্রমে বিস্রস্ত অবস্থা কাটিয়ে ওঠায় সাত্যকি বলে, আমি তো রেপ করিনি খেয়াকে। এত আপসেট হবার কী হয়েছে?
—খুব কি ঘষাঘষি করেছ? হাসতে হাসতে জানতে চায় অরুন্ধতী। তোমার উচিত শিক্ষা হয়েছে! কত বার বলেছি, একটু সংযত হও।
—আচ্ছা বল, শেষমেশ সাত্যকি তার বউকে বোঝায়, ও তো আমার সম্পর্কে শ্যালিকা, ওর সঙ্গে একটু ফস্টিনস্টি তো আমি করতেই পারি। পারি না? তার পর বলে, এক ঝলক মনে হয়েছিল তুমি এত রোগা হয়ে গেলে কী করে! এই ভাবে ব্যাপারটা মিটে যায় তখনকার মতো। ঘণ্টা তিনেক বন্ধ ঘরে আকাশ-পাতাল উচাটন করার পর শান্ত হয় খেয়া। কলুষিত দেহখানা শুদ্ধ করে নিতে আর এক বার স্নান করে নেয়। বদলে ফেলে শাড়িটা।
ভুল হয়েছে, বোঝে খেয়াও। ওই শাড়িটাই যত নষ্টের গোড়া। শখ করে আনা জিনিসটা দিদি কেন ব্যবহার করল না। ও বুঝতে পারে না। ভালবাসার মর্যাদা দেওয়ার মন কি ও হারিয়ে ফেলেছে? সাত্যকিদার স্বভাবচরিত্র সম্পর্কে অল্পবিস্তর নিজে শুনেছে ও দিদি অরুন্ধতীর কাছে। সবটা তখন বিশ্বাস করেনি। এখন মনে হচ্ছে, হতেও পারে বা! এত ব্যস্ত মানুষ, এত বড় লোক, খামখেয়ালি হওয়া স্বাভাবিক। অরুন্ধতীকে দেখে তো মনে হয় না, ও খুব দুঃখী। শেষ কথা ও বলেছে খেয়াকে সে দিন রাত্রিবেলা, শুতে যাওয়ার আগে।— ব্যাটাছেলেরা না অমনই হয়। খেয়া কী করে জানবে। এত কাছ থেকে কোনও পুরুষমানুষকে ও আগে দেখেনি। দিন দুয়েক পর। খেয়া চলে যাবে বলে বাক্স গোছাচ্ছে। সকাল এগারোটা। হাওড়ায় ওকে পৌঁছে দিয়ে আসবে বলে একখানা গাড়ি নীচে অপেক্ষমাণ।
অরুন্ধতী ঘরে ঢুকল। কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। তার পর বলল, শাড়িটা ফেরত দিয়ে দে। খেয়া ওর কথায় কান দিল না। বাক্স গোছাতেই থাকল।
—ওটার জন্যেই তুই দুঃখ পেয়ে গেলি। খেয়া বলল, অনেক ভেবে দেখলাম, ওটা আমি রেখেই দেব।
—তোকে অন্য একটা শাড়ি দিচ্ছি। আরও ভাল শাড়ি। এটা তো অপয়া।
এ বার হেসে ফেলল খেয়া।— এক বার দিয়ে কি উপহার ফেরত নেওয়া উচিত দিদি? খেয়া বলল, ওটা আমার কাছেই থাক। ওতে ভালবাসার দাগ আছে। তুমি তো বাতিল করেই দিয়েছিলে। আরও কত শাড়ি আছে তোমার। তাই না?
পুনশ্চ:
অনেক দিন আগে এই গল্পের একটা প্রাথমিক খসড়া লিখে অনুরাগী প্রতিবেশিনীকে শুনিয়েছিলাম। তাতে অরুন্ধতী চরিত্রের জয় হয়েছিল। শাড়িটা ফিরে পেয়ে নষ্ট করে ফেলেছিল সে। গল্পটি শুনে প্রতিবেশিনী বলেছিলেন, এটা অন্য ভাবেও শেষ করা যেত। মেয়েদের মন আপনারা বোঝেন না। এখন পুনর্লিখিত এই রচনাটি তাঁর পছন্দ হবে কি না, কে জানে। সারা জীবন তো মেয়েদের জটিল মনের অলিগলি খুঁজতেই কেটে গেল।

সৌজন্যঃ ABP
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ২:১৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×