somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অশোকনামা

২৮ শে জুলাই, ২০১১ দুপুর ১২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পর্ব এক – বিদায় পিতামহ


১।
অশোক অবাক হয়ে লোকটির দিকে তাকিয়ে আছে সে যতবার এই লোকটিকে দেখে ততবারই অবাক হয় এই লোকটির মাথায় তিনটি সবুজাভ নীল বিন্দু আছে কোন মানুষের মাথায় নীল বিন্দু সে কখনও দেখেনি । প্রকৃতি কি অদ্ভূত !
লোকটি হাত নেড়ে তাকে ও তার ভ্রাতাদের কাছে ডাকলেন । অশোক সহ তার ভ্রাতারা লোকটির কাছে এগিয়ে গেল । অশোক জানে এই লোকটির নাম বিন্দুসার মৌর্য্য এবং তিনিই তাদের পিতা ।
বিন্দুসার তার আসন ত্যাগ করে দুবাহু মেলে তার পুত্রদের জড়িয়ে ধরে আনন্দিত কন্ঠে বললেন, “পুত্ররা আমি খুব শিঘ্র সম্রাট হচ্ছি”
বিন্দুসারের পুত্র সংখ্যা অনেক তাদের সকলকে তার দুবাহুতে আবদ্ধ করা সম্ভব নয় তাই কয়েক জন পুত্র তাদের পিতার প্রসারিত স্নেহের হাতের বাইরে থেকে গেল অশোক সেই দূর্ভাগাদের একজন ।
তবে পিতার সম্রাট হবার কথায় অশোক অন্য সকল ভ্রাতার মত আনন্দিত হয়ে উঠল ।
অন্যরা যখন পিতাকে নিয়ে ব্যাস্ত অশোক গুটি গুটি পায়ে পিতার কক্ষ থেকে পালিয়ে এল, তার লক্ষ্য পিতামহের দর্শন ।
অশোক সমস্ত রাজগৃহ খুঁজতে খুঁজতে পিতামহকে পেল নন্দন কাননে । পিতামহ ময়ূরদের অন্নদান করছেন ।
অশোক পিতামহকে দেখে দৌড়ে তার কাছে গেল ।
পিতামহ?
ওহ অশোক । কি ? ময়ূর খাওয়াবে ?
না । আপনি নাকি পিতাকে সম্রাট করছেন ?
আমার রাজ্য তো আমার পুত্রেরই প্রাপ্য । কেন ? তুমি রাজ্য চাও ?
না আমি সম্রাট হতে চাই ।
হা হা রাজত্ব ছাড়া সম্রাট কি করে হবে ?
তাতো জানি না ? তবে আমি সম্রাট হতে চাইই চাই ।
হা হা রাজত্ব আমিতো দান করে দিয়েছি তাই তোমাকে দিতে পারলাম না আর এমন কিছু কি আছে যা তুমি আমার কাছে চাও ? আমি অবশ্যই তা তোমাকে দান করবো ।
হ্যা ।
কি ?
আপনার অসি ।
মৌর্য্য সম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা এতক্ষন শিশুর চাপল্যে আনন্দ পেয়ে হাসছিলেন এবার থমকে গেলেন ।
অশোক তোমার বয়স কত?
এই বসন্তে ষষ্ঠ বর্ষিয়ান হয়েছি পিতামহ ।
আমার বিংশ বর্ষের সময়ই গুরুদেব চাণক্যের মন্ত্রণা ও অসির জোরে আমি নন্দ সম্রাজ্য জয় করে তাকে মৌর্য্য সম্রাজ্যের নাম দিয়েছিলাম, অসির জোরে আমি সম্রাট হয়েছিলাম সত্য কিন্তু অসি সম্রাটের প্রকৃত শস্ত্র নয় এটা বুঝেছি অনেক পরে এই বয়সে এসে । আমি যখন কথা দিয়েছি তখন আমার অসি আমি তোমাকে দান করবো নিশ্চিত, তবে তুমি যদি এর ব্যবহার না কর আমার চেয়ে বেশি প্রীত আর কেউ হবে না । এ জগতে সম্রাট বড় একা, তার মিত্র বলে কেউ নেই তার পরম আপন স্ত্রী-পুত্র সকলই তার শত্রু কাউকে সে বিশ্বাস করতে পারে না সর্বদা মৃত্যু ভয়ে ভীত থাকে ।
তাহলে সকলে সম্রাট হতে চাই কেন ? অশোকের সরল প্রশ্ন
এসো আমার সাথে ।
কোথায় ?
ওই টিলার উপর ।
সেতো বেশ পথ পিতামহ ?
এসো তোমাকে বিচিত্র বস্তু দেখাব ।
সত্যি ?
চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য আশোকের কথার উত্তর না দিয়ে টিলা আভিমূখে যাত্রা শুরু করলেন অশোকও তার পশ্চাৎ ধাবন করলো ।

২।
তারা যখন টিলার উপর উপবিষ্ট হল তখন দুজনেই ক্লান্ত এবং শ্রান্ত ।
কোথায় সেই বিচিত্র বস্তু পিতামহ ? অশোক শ্রান্ত হলেও তার উৎসাহ দমেনি
তোমার পায়ের কাছে ।
অশোক অনেক খুঁজেও তার পায়ের আসে পাশে কোন বিচিত্র বস্তুর দেখা পেলনা ।
কোথায় পিতামহ ?
চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য অশোকের পায়ের কাছথেকে একটি বুনো ঘাসফুল ছিড়ে নিয়ে বললেন, “এই সেই বিচিত্র বস্তু ।”
আশোক বড় হতাশ হয়ে গেল, “এতো সামান্য বুনো ফুল ।”
এই সামান্য বস্তুই তোমার কাছে আকর্ষনীয় ছিল যখন তুমি তাকে বিচিত্র বস্তু ভেবেছিলে । সম্রাট এই ঘাসফুলের মত, তাকে দূর থেকে বিচিত্র লাগে আসলে সে অতি সাধারন বরং সাধারন মানুষের চেয়েও বেশি সাধারন । মজার ও দুঃখের ব্যাপার হল এই কথা একমাত্র সম্রাট ছাড়া দ্বিতীয় ব্যক্তি বোঝে না ।
তাহলে কি আমি সম্রাট হব না ?
তা কেন ? তোমার যা ইচ্ছে তাই তুমি হবে, তবে নিজেকে নিঃস্ব ও রিক্ত করে নয় ।
মৌর্য রাজ আরো কিছু হয়তো বলতেন কিন্তু অঙ্গরক্ষী এসে ব্যঘাত ঘটালো , “সম্রাট আমি ক্ষমা প্রার্থী কিন্তু আপনার সুযোগ্য সন্তান বিন্দুসার চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য আপনার পথ চেয়ে অপেক্ষা করছেন আজ দ্বিপ্রহরে তার সাথে আপনার সাক্ষাত করবার কথা । আমাকে স্মরণ করিয়ে দেবার আজ্ঞা হয়েছিল ।”
ঠিক আছে, চলো অশোক তোমার পিতার দর্শন করে আসি ।
দুজনে রাজগৃহের দিকে যাত্রা শুর করলো
যাত্র পথে হঠাৎ আশোক তার পিতামহকে প্রশ্ন করলো, “আচ্ছা পিতামহ , আমার পিতার মাথায় এমন নীল বিন্দু কি করে হল ?”
তুমি জানতে চাও ?
অশোক মস্তক নেড়ে তার সম্মতি জানাল ।
তোমার পিতার জন্মকালের কিছু পূর্বে আমি প্রবল প্রাণ সংশয়ের আতঙ্কে ভুগতাম কোন কক্ষে আমি দ্বিতীয়বার শয়ন করতাম না এক প্রহরে প্রায় একাধিক বার কক্ষ বদলাতাম । আমার আহার দাসীরা বিষ মুক্ততা নিশ্চিত করলেই আমি গ্রহণ করতাম । এমনই একদিনে আমি আহারে বসেছি আমার সকল আহার নিশ্চিত করছেন তোমার মাতামহী দুধারা তিনি তখন নয় মাসের অন্তসত্ত্বা ছিলেন ; হঠাৎ একটি পদের এক গ্রাস মুখে দেবা মাত্র তার চেহারা রক্তশূন্য হয়ে গেল খাবার ছিল বিষ যুক্ত । বিষক্রিয়া খুব দ্রুত শুরু হয়ে গেল, মুখে শ্বেত লালা জমাট বাঁধতে শুরু করলো । রাজ বৈদ্যি জানাল সে অপারগ এ বড় জটিল বিষ । হঠাৎ গুরুদেব কৌটিল্য কক্ষে প্রবেশ করলেন ।
পিতামহ কৌটিল্য কে ?
গুরুদেব চানক্য এর রাজকার্য সম্পাদনের উপযুক্ত নাম ছিল কৌটিল্য ।
ও আচ্ছা, তারপর কি হল পিতামহ ?
গুরুদেব কক্ষে প্রবেশ করেই আমার কাছে জানতে চাইলেন মাতার জীবন রাখা আর যেহেতু সম্ভব নয় আমি আমার অভূমিষ্ঠ সন্তানের জীবন রক্ষা করতে চাই কি না ?
সেই মূহুর্তে আমার সম্মতি ভিন্ন পথ ছিল না ।
গুরুদেব আমার সম্মতি মাত্র দুধারার উদর বিদীর্ন করে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দিলেন । দুধারা উদর বিদীর্ন করবার পূর্বেই মারা যান কিন্তু আশ্চর্য হলেও সত্যি প্রকৃতির কোন এক বিচিত্র খেয়ালে পুত্র জীবিত থেকে যায় কিন্তু এ ঘটনার প্রমান রাখতেই যেন পুত্রের কপালে বিষের প্রভাবে সৃষ্ট হয় নীলাভ তিনটি বিন্দু । এই নীলাভ বিন্দু দেখেই গুরুদেব পুত্রের নাম রাখেন বিন্দুসার চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্য ।

৩।
যুবরাজ বিন্দুসার তার পুত্র অশোককে পিতার সঙ্গে দেখে বেশ বিরক্ত হলেন ।
বিন্দুসার তার পুত্রদের মধ্যে অশোককে সর্বাপেক্ষা অপছন্দ করেন কারন তার অন্যান্য পুত্রদের মত অশোকের দৈহিক কাঠামো ও মুখের গড়ন সুন্দর হলেও আপরাপর পুত্রদের মত মসৃণ ত্বক সে অধিকার করেনি । রুক্ষ ত্বকের যে কোন মানুষ বিন্দুসারের বড় অপছন্দ ।
কিন্তু তার পিতা চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য পৌত্রাদিদের মধ্যে অশোককে কেন যেন সর্বাপেক্ষা স্নেহ করেন !


পুত্র তোমার কি কিছু বলবার আছে ? চন্দ্রগুপ্ত প্রশ্ন করলেন
আমি আসলে জানতে চাইছিলাম আপনি রাজ্য ত্যাগ করবেন কবে ? আমি সাড়ম্বরে আপনাকে বিদায় জানাতে চাই পিতা ?
তুমি কি আসলেই আমাকে বিদায় জানাতে চাও নাকি তোমার রজ্যাভিষেক নিয়ে চিন্তিত হয়ে উঠেছ ?
একি বলছেন পিতা ? আমি কি আপনাকে সম্মান করি না , ভালবাসি না ?
সে কথা এক্ষেত্রে অবান্তর । তবুও বলি তুমি যদি সত্যিই রাজ্যাভিষেক নিয়ে চিন্তিত হয়ে থাক তবে তোমার সে চিন্তা যুক্তিযুক্ত নয়, তোমার রাজ্যাভিষেক নিয়ে চিন্তিত হবার বিশেষ কোন কারন আমি দেখি না, কারন এ সম্রাজ্য আমি তোমাকে ইতমধ্যে দান করেছি ; আর তুমি ভাল করেই জান আমি যে বস্তু দান করি তা পুনরায় গ্রহণের অভিরুচি রাখি না । আমি এখন মহামতি ভদ্রবাহুর জন্য অপেক্ষা করছি, তিনি আমাকে তার সঙ্গে নিয়ে যাবেন বলে স্থির হয়েছে । তিনি এলেই আমি বিদায় নেব । ভাল কথা, শুনছি তুমি নাকি জৈন ধর্মের দীক্ষা ছেড়ে অজীবক ধর্ম মতে বিশ্বাসী হয়ে উঠেছ ?
বিন্দুসার ভীত হল, সে তার পিতার মত জৈন ধর্ম মতে বিশ্বাসী নয় একথা তিনি বেশ কিছুদিন ধরে গোপন রেখছেন । পিতার তার ধর্ম পরিবর্তন সম্পর্কে জানবার কথা নয় তিনি ব্যাপারটি সকলের কাছথেকে অত্যন্ত গোপন রেখেছন । পিতা জেনে যাওয়ায় আর গোপনীয়তার আবশ্যকতা নেই বলেই তার মনে হল ।
তাই সাহস সঞ্চয় করে বললেন, “পিতা এ কথা সত্য ।”
পুত্র, আমার কাছে তোমার এ কথা গোপন রাখবার প্রয়োজন ছিল না , তুমি জান আমি কারো ধর্ম বিশ্বাসে আঘাত করি না । তবে একটাই দুঃখ ওই ক্রিতদাস মংখ (চারণ কবি/চিত্রকর) এর পুত্রের ধর্মমত ছাড়া আর কোন ধর্ম তুমি পেলে না ?

গোশাল মংখলিপুত্রের উপর জৈন ও বৌদ্ধরা যে ক্ষিপ্ত তা বিন্দুসার জানেন । দীর্ঘ ছয় বৎসরকাল জৈন ধর্মগুরু মহাবীরের সহচর ছিলেন অজীবক ধর্মগুরু গোসাল, তারপর বিরোধ বাধলে তিনি মহাবীরের সাহচর্য ত্যাগ করেন তাই জৈনরা গোশালের নামে কুৎসা রটাতে পিছপা হয় না । তবে মহাবীরের নগ্নতা যে গোসালের প্রভাব একথা সবাই জানে । জৈন ধর্মের উপদল জৈন দিগম্বরও তার প্রভাবে সৃষ্ট এ কথাও সর্বজন বিদিত ।
বিন্দুসার সব জানেন তবুও চুপ থাকলেন কারন পিতার বিরুদ্ধাচরন তার স্বভাব নয় ।
চন্দ্রগুপ্ত বুঝলেন তার পুত্র আর মুখ খুলবে না তাই তিনি আলাপচারিতার ইতি টানতে চাইলেন, “তোমার রাজ্যাভিষেক নিয়ে চিন্তিত হয়ো না পুত্র , আর আমার বিদায় বেলায় সাড়ম্বরের কোন বাহুল্য না রাখলেই আমি বরং বেশী প্রীত হব; আমার মনে হয় ভাবি সম্রাটের কাছ থেকে এতটুকু সাহায্য আমি আশা করতেই পারি । আর কোন আলোচনার আবশ্যকতা নেই বলেই আমার বোধ হয় ? তোমার কল্যাণ হোক । এসো অশোক আমরা যাই ।”
যুবরাজ বিন্দুসার তার পিতা এবং পুত্রের বিদায় চেয়ে চেয়ে দেখলেন ।
তার পিতা বিচক্ষন এটা তিনি জানতেন কিন্তু এতটা বিচক্ষন এটা তার জানা ছিল না । আর তার পিতার চোখ ও কান ( গুপ্তচর ) এতটা ক্ষমতাশালী তাও তার জানা ছিল না । পিতার প্রতি তার শ্রদ্ধা আরেকটু বেড়ে গেল ।
তবে যুবরাজ বিন্দুসার এখন নিশ্চিত জানেন এ রাজ্য এই মাসের শেষেই নতুন সম্রাট পেতে যাচ্ছে এবং সেই নতুন সম্রাটের নাম অবশ্যই বিন্দুসার চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্য ।
৪।
বিন্দুসারের রাজ্যাভিষেক ইতমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে । সিংহাসনে বসেই তিনি নতুন নাম নিয়েছেন “অমিত্রঘাত”, যে সকল রাজ্য তার মিত্রতা স্বীকার করবে না তাদের তিনি ধ্বংস করে দেবেন এক কথায় শত্রুনিধনকারী হবেন বলেই তার এমন নাম নেওয়া ।

তিনি ছোট বেলায় গুরুদেব কৌটিল্যের কাছে শিখেছিলেন কোন রাজ্যের মধ্যে স্থায়ী শান্তি অবাস্তব । শক্তিশালি রাজা মাত্রই যুদ্ধ করবেন । একমাত্র শক্তিই যে কোন দুটি রাজ্যে বা দুই রাজার মধ্যে শান্তি বজায় রাখতে পারে । তিনি গুরুদেব কৌটিল্যের চার নীতি- সাম (সন্ধি ও বন্ধুত্ব) , দান (অর্থদান/সাহায্যদান) , দণ্ড (সেনা আক্রমণ বা শস্তিপ্রদান) , ভেদ (শত্রুভাবাপন্ন রাজ্যে বিভেদের সৃষ্টিকরা) বহু পূর্বেই আত্মস্থ করেছেন এখন শুধু মাত্র প্রয়োগের অপেক্ষা ।
অবশ্য অপেক্ষা দীর্ঘায়িত হবার কোন কারন নেই, আর অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই তার পিতা বিদায় নেবেন । তখন তিনিই সর্বেসর্বা ।


বিন্দুসার আজ তার পিতার ইচ্ছেনুযায়ি বিদায়বেলায় আড়ম্বরের কোন বাহুল্য রাখেননি তবে তার পরিবারবর্গ নিয়ে এসেছেন তার পিতাকে বিদায় জানাতে ।
সম্রাট বিন্দুসার পূর্ন চন্দ্রের আলোয় দিগম্বর ভদ্রবাহুকে দেখতে পেলেন, সম্ভূত বিজয়ের মৃত্যুর পর এই ভদ্রবাহুই জৈনদের অধ্যক্ষ পদে অধিষ্টিত হয়েছেন, প্রথম জৈন মহাসম্মেলনের পর জৈনদের ভেতর শ্বেতাম্বর ও দিগম্বর বিভেদ সৃষ্টি হলেও দিগম্বর হোক বা শ্বেতাম্বর তিনি আজও সর্বজৈন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব । ইনিই পাটালিপুত্রে প্রবল মহামারির ভবিষ্যৎ বাণী করেছেন তাই তিনি মহামারি এড়াতে তার শীষ্যদের নিয়ে দক্ষিণাত্যের পথে যাত্রা শুরু করেছেন । তার পিতাও মহামতি ভদ্রবাহুর সাথে আজ যাত্রা করবেন ।
বিন্দুসার আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর তার পিতার দর্শন পেল; তার পিতা এখনও ভদ্রবাহুর মত দিগম্বর হননি বরং শ্বেতাম্বর পন্থীদের মত এক খণ্ড সাদা কাপড় দ্বারা শরীর ঢেকেছেন । আজ পিতাকে দেখে বিন্দুসার হতবাক হয়ে গেল । চন্দ্রের রুপালী আলোয় তার সৌম্যদর্শী পিতাকে কোন দেবদূত বলে ভ্রম হচ্ছিল তার ।
“পুত্র, তোমার আসবার আবশ্যকতা ছিল না ।’’ পিতার ভরাট কন্ঠে বিন্দুসারের ভ্রম কেটে গেল
পিতা আপনাকে বিদায় জানাতে আমি উপস্থিত হব না তাকি হয় ?
শুনে প্রীত হলাম , তবে সকল বন্ধন ত্যাগ করবার নিমিত্তেই যেহেতু আমি পথে নামছি তাই তোমাকে আর জীবনের বাকিটা সময় না দেখলে আমি আনন্দিত হব; আমি চাই না আর কোন পিছুটান আমার রয়ে যাক ।
আপনার ইচ্ছে আমার আদেশ পিতা ।
তোমার পুত্র অশোক কোথায় ? শুধু তাকেইতো আসতে বলেছিলাম ।
অশোক ? বিন্দুসার বিরক্ত কন্ঠে ডাক দিল
অশোক ভ্রাতাদের ত্যাগ করে সামনে এগিয়ে এল
এসো অশোক আমার সামনে এস ।
পিতামহের কথামত অশোক তার সামনে গিয়ে দাড়াল ।
চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য তার সাদা পোশাকের ভেতর হাত ঢুকিয়ে একটি কারুকার্যময় খাপ বদ্ধ অসি বের করে আনলেন ।
“নাও, তুমি যা চেয়েছিলে তা তোমাকে দান করলাম । তবে এই অসি নামক অসুরকে তুমি যদি কক্ষনো খাপ মুক্ত না কর তবেই আমি বেশী আনন্দিত হব ।” কথা শেষ করে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য তার ফিরতি পথ ধরলেন
অশোক পিতামহের অসি নিয়ে ব্যস্ত থাকায় তা লক্ষ্য করলো না ।
সম্রাট বিন্দুসার ভেবেছিলেন তার পিতা তার অসি তাকে অথবা তার প্রীয় পুত্র সুসীমকে দান করবেন কিন্তু অশোক পাওয়ায় তিনি মনে মনে অশোকের উপর রুষ্ঠ হলেন ।
কিন্তু পিতাকে ফিরতি পথে চলে যেতে দেখে সে কথা ভুলে আপনা আপনি বলে উঠলেন, “বিদায় পিতাশ্রী ।”
বিদায় পুত্র । তোমার কল্যাণ হোক ।
অশোকের সকল ভ্রাতারা একসাথে বলে উঠলো, “ বিদায় পিতামহ । ”
তাদের পিতামহ প্রত্যুত্তরে বললেন, “ সুখী হও সকলে।”
ভ্রাতারা থেমে গেলে অশোক চিৎকার করে বলল, “ ধন্যবাদ পিতামহ ।”
চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য পিছনে না তাকিয়ে সৌম্য কন্ঠে বললেন, “ অসির জোরে নয় মানুষের হৃদয়ের সম্রাট হও অশোক । তোমার কল্যাণ হোক । বিদায় পৌত্র ”
অশোকের কন্ঠে ধ্বনিত হল, “ বিদায় পিতামহ ।”

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১:১৬
৩৯টি মন্তব্য ৩৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×