somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রেম কাহন ৩

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(১)
ছোট একটি গলিতে কয়েকজন অস্ত্রধারী লোক এক ২৪-২৫ বছরের ছেলেকে ধাওয়া করছিল । “ধর শালাকে ধর” পেছন থেকে আওয়াজ আসছিল । তাদের সামনে দৌড়াচ্ছিলো কবির । দেওয়াল বেয়ে একটি প্রাইমারী স্কুলের ভিতরে ঢুকে পড়ল সে । ধাওয়াকারীরা অন্য দিকে চলে গেল । কবির হাপাতে হাপাতে দেখলো প্রায় ওর বয়সী খুব সুন্দর একটি মেয়ে স্কুলের উপরতলা থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব দেখছে । মেয়েটার দিকে চেয়ে কবির মুচকি হাসলো । মেয়েটি চেহারায় বিরক্তির ভাব দেখিয়ে সেখান থেকে চলে গেল । মেয়েটি চলে যাবার পর কবির সেখান থেকে বাইরের দিকে হাটতে লাগলো।

কবির ঢাকার ছোটখাট একটি গ্যাঙের সদস্য । নেতাদের কাজে যাওয়া একে মারপিট করা, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করাই ছিলো এসব গ্যাঙের কাজ । কবিরকে যারা ধাওয়া করছিলো তারা ছিলো তার গ্যাঙেরই লোক! কারনটা হল একবার তার দলে সে একটা হেরফের করেছিল । আর এটা কবিরই করেছিল সেটা সবাই জেনে গিয়েছিল । মা-বাবা কেউ নেই । ছোট বেলা থেকেই এসবের মাঝে দূর সম্পর্কের এক চাচার কাছে বড় হয়েছে সে । বেশী পড়ালেখা করেনি । চাচার মৃত্যুর পর সে আর তার চাচাতো ভাই রাজু বিভিন্ন গ্যাং এর হয়ে কাজ করতে থাকে । রাজু তার বন্ধুর মতই ছিলো ।

কবির হাঁটতে হাঁটতে স্কুলের বাইরে আসার পর দেখল সেখানে রাজু । সে দৌড়ে গিয়ে রাজুর কলারে ধরল । - কিরে শালা ! ঐখানে ওরা আমাকে কুরবানি দিতে ব্যস্ত ছিলো আর তুই কই ছিলি - আরে বেটা তকে আমি বাচানোর জন্যই আসতেসিলাম ততক্ষনে শুনলাম তুই নাকি দৌড়ে ব্যস্ত । এইভাবে কথা বলতে বলতে রাজু কবির নতুন একটি গ্যাং এর কথা বললো, ঐ গ্যাং এ নাকি তাদের প্রয়োজন । গ্যাংটা একটি সন্ত্রাসী গ্যাং । কবির কোনো কিছু না ভেবেই রাজি হয়ে গেলো । রাজুর সাথে গিয়ে নতুন গ্যাং এর সবার সাথে পরিচিত হল সে । সন্ধায় যখন সে বাসায় ফিরছিল তখন দেখলো সেই মেয়েটি রিকশায় চড়ে কোথাও যাচ্ছে । মেয়েটির দিকে সে কিছুক্ষন চেয়ে থাকলো । চেয়ে চেয়ে কবির যেনো সেই মেয়েটিতে বিভোর হয়ে যাচ্ছিলো । সে নিজেও জানতো না কেন এমন হচ্ছে । এর আগেও অনেক সুন্দর মেয়ে সে দেখেছে । কিন্তু এই মেয়েটার মধ্যে এমনকি যা বারবার তাকে প্রেমের এক জগতে হারিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ।

(২)
পরের দিন কবির আর রাজু রাস্তায় গল্প করে করে হাটছিলো । রাজু তখন বললো কবিরকে বললো - দোস্ত কতদিন ভাল খাবার খাইনা, আজ চল কোথাও খেয়ে আসি । কবির একটু বিরক্তির ভাব এনে বললো “পকেটে নাই দুইটাকার একটা নোট আবার ভাল খাবার খাইবা, তুমার আব্বা কি তুমার নামে কি কোনো হোটেল রাইখা গেছিলো নাকি যে ঐখানে ফ্রিতে ভাল খাবার খাইবা” তারপর বিড়বিড় করে কিছু বললো রাজু কিছু একটা ভেবে বললো “একটা বুদ্ধি পাইছি, আমাদের পাশের ঘরের সিরাজ আছে না, সে আইজ এক বিয়াতে গান-বাজনার দলের লোক হইয়া যাইব, ওর সাথে মিল্লা দুই ভাই যায়া পেট ভইরা খায়া আসুম” । কিন্তু কবির রাজি হল না । তবে রাজুকে যাবার জন্য বললো । কিন্তু রাজু কিছুতেই মানছেনা, অনেক কষ্টে রাজি করালো কবিরকে ।

সন্ধায় বিয়েতে কবির আর রাজু হাজির । বিয়েতে কবিরের ভাল লাগছিল না । হটাৎ তার এই ভাল না লাগা ভাল লাগায় পরিবর্তন হয়ে গেল । তার চোখ মূখ আনন্দে ভরে উঠলো । কারন সেই মেয়েটি এখানেও আছে । মেহেদী রঙের শাড়িতে খুব সুন্দর লাগছিলো ওকে । ঘন চুলে বাঁধা গাজরা ওর সুন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছিলো । মেয়েটির টলটল চোখে ডুবে যেতে চাইছিলো কবির । সে ধিরে ধিরে মেয়েটির পাশে গেলো । মেয়েটিকে বললো “এই যে শুনছেন” -আমাকে কিছু বলছেন ? - জ্বি, আমার নাম কবির । আপনাকে মনে হয় আমি আগেও দেখেছি । আপনি ঐ প্রাইমারী স্কুলটাতে পড়েন তাই না ? মেয়েটি একটু বিরক্ত হয়ে বললো “আমি ঐ স্কুলে পড়াই” । - ওহ দূঃখিত । না মানে আমরা একই এলাকায় থাকি । ২বার দেখাও হয়ে গেলো । আপনার নামটা জানলে ভালো হত । পরিচয় থাকা ভালো । -দূঃখিত আমি অপরিচিত লোকদের আমার নাম বলি না - তাহলে পরিচিত লোকদের নাম বলেন না কি ? যতদুর আমি জানি পরিচিত লোকদের নাম জানতে হয় না । মেয়েটি আর কোনো কথা না বলে সেখান থেকে চলে যাচ্ছিলো তখন তার বান্ধবী সুমি এসে বললো । “কিরে সোহানা কই তুই”

কবির তখন হেসে হেসে তখন সুমিকে উদ্দেশ্য করে বললো “ম্যাডাম ধন্যবাদ আপনাকে” সুমি বললো “ধন্যবাদ ! কিসের ধন্যবাদ ?” কবির বললো নাহ বিয়ের অনুষ্ঠানটা ভালই হয়েছে সেজন্যই বললাম । তখন সোহানা তার বান্ধবী সুমিকে বললো । “চল এখান থেকে” কবির তখনও সোহানা দিকে চেয়ে থাকছিলো । রাজু যখন কবিরকে যাবার কথা বললো তখন কবির তাকে আরও কিছুক্ষন থাকার জন্য বললো । রাজু চিন্তা করলো যে আগে বিয়েতে আসার জন্য না করছিলো এখন বিয়ে থেকে যাবার জন্য না করছে বিষয় কি ? রাতে সোহানার চলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কবির বিয়েতে থাকলো ।

সোহানা ঢাকায় একা থাকতো । একটি প্রাইমারী স্কুলে চাকরি করত সে । টাঙ্গাইলে ওর মা আর ছোট ভাই থাকে ।অনেক আগেই বাবা মারা গেছেন, তাই সোহানাই তার পরিবার চালায় ।

(৩)
সোহানা একদিন স্কুলের সামনে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে ছিল । কবির ও রাজু সেদিক দিয়ে যাচ্ছিলো । সোহানাকে দেখে কবির সামিয়ার কাছে গেল আর সামিয়ার সাথে কথা বলতে লাগলো । সোহানা তখন বিরক্ত হচ্ছিলো । রাস্তার ওপার থেকে সোহানার বান্ধবী তাকে ডাক দিল । সোহানা নিচের দিকে চেয়ে থেকে তরিঘরি করে সেখান থেকে যেতে চাইলো কিন্তু তখনই কবির খুব জোরে সোহানার হাতে ধরে টান দিলো । সাথে সাথে সোহানা কবিরকে একটি থাপ্পড় বসিয়ে দিলো । এবং তখনই গাড়ীর ব্রেকের বিকট আওয়াজ হল । গাড়ী থেকে ড্রাইভার নেমে এসে সোহানাকে উদ্দেশ্য করে বললো “কি ম্যাডাম ? আপনি তো এখন আমাকে জেলে পাঠিয়ে সেরেছিলেন, দেখে রাস্তা পার হতে পারেন না ? আজ এই ছেলেটা না থাকলে তো আপনি পরপারেই চলে গিয়েছিলেন” সাথে সাথে সোহানা কবিরের দিকে যখন ফিরে দেখলো ততক্ষনে কবির সেখান থেকে চলে যাচ্ছিলো ।

রাতে সোহানা ঘুমোতে পারলোনা । নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছিলো । কবিরকে থাপ্পড় মারার সেই দৃশ্যটি তার চোখে বারবার ভেসে উঠছিলো । অন্যদিকে কবিরও ঐ রাতে গালে হাতি বুলিয়ে বুলিয়ে সোহানার কথা ভাবছিলো । পাশে রাজু কবিরকে বলছিলো “কালই মাইয়াডারে তুইলা নিয়া আমু, আমার দোস্তরে থাপ্পড় মারে হ্যা ! আর দোস্ত চিন্তা করিস না তুই এই মাইয়া থেইকাও আরও সুন্দর আর ভালা মাইয়া পাবি” তখন কবির রাজুকে বললো “হুম ঠিক বলছিস তুই ওর থেকে সুন্দর মেয়ে আমি পাবো, ওর থেকে ভাল মেয়েও পাবো, কিন্তু তাতে কি! ওকে তো আর পাবো না” রাজু কবিরের কথা শুনে অবাক হয়ে কবিরের দিকে কিচ্ছুক্ষন চেয়ে থাকলো।

(৪)
একদিন কবির আর সোহানার আবার দেখা হলো । কবির সোহানাকে এড়িয়ে যেতে চাইলো । কিন্তু সোহানা কবির থেকে পেছন থেকে আবার ডাক দিলো । - এই যে শুনছেন । কবির পেছন ফিরে কিচ্ছুক্ষন দাঁড়িয়ে রইল, কোনো কথা বললো না । সোহানা বললো “ঐদিনের ঘটনার জন্য আমি দুঃখিত” । কবির তখন সোহানার দিকে ফিরে হেসে উত্তর দিলো “আরে নাহ ঐদিনের ঘটনা তো আমি ভুলেই গিয়েছিলাম” সোহানাও হেসে বললো “নাহ শুধু ভুলে গেলে হবে না, আমার সাথে এক কাপ কফি খেতে হবে” । কবির বললো আরে কফি আমার জমে না, চা হলে ভালো হয় । সোহানা হেসে বললো “তাহলে চলুন চা-ই খাই” একটি রেস্টুর্যাইন্টে বসে তারা চা খাচ্ছিলো । তখন সোহানা কবিরকে প্রশ্ন করে বসলো “আচ্ছা ঐদিন গুন্ডারা আপনার পিছু নিয়েছিলো কেনো?” কবির কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে ভিষম খেলো, বললো “ইয়ে না মানে আমার বিজনেস আছে তো, তাই মাঝে মাঝে এইসব সমস্যায় পড়তে হয়” কথা পাল্টিয়ে সোহানাকে বললো তোমার বাড়িতে কে কে আছে । সোহানা ওর মা আর ছোট ভাইয়ের কথা বললো । কবিরের কাছে সোহানা একই প্রশ্ন করলো কবির বললো “মা, বাবা কেউ নেই, আমার এক চাচার কাছে বড় হয়েছি আর তিনিও এখন নেই…পৃথিবীতে আপন বলতে আমার বন্ধু রাজুই আছে” । সোহানা কবিরকে বললো “তোমার সেই আপনদের মধ্যে আজ আরেকজন বন্ধুর জন্য কি জায়গা খালি আছে?” কবিরের মন যেনো অসীম আনন্দে ভরে উঠলো । কয়েকদিন কেটে গেলো । কবিরের প্রতি সোহানার আকৃষ্টতা বেড়ে যেতে থাকলো । কবিরের হাসি, গাম্ভির্যতা, রসিকতা সব যেনো ওর ভাল লাগতে শুরু হল । আর অন্যদিকে কবিরও মনে মনে সামিয়াকে পাগলের মতো ভালোবেসে যাচ্ছিলো ।

(৫)
পার্কে হেটে হেটে সোহানা ও কবির কথা বলছিলো । কথা বলার ফাঁকে সোহানা কবিরকে জিজ্ঞেস করল । -আমার সাথে সময় কাটাতে তোমার কেমন লাগে ? কবির অন্যদিকে চেয়ে থেকে বললো -কেমন লাগে জানিনা, তবে বেঁচে থাকার নতুন কারন খোজে পাই । তুমি কি তোমার উপর আমার অধিকার দিবে -জানিনা কতটুকু অধিকার দিতে পারবো, শুধু এটা জানি আমার প্রতিটা নিস্বাশে তোমার অধিকার রয়েছে আমাকে কতটুকু ভালোবাসো ? কবির সোহানার দিকে ফিরে তাকিয়ে বললো -জানিনা কতটুকু ভালোবাসি, পৃথিবীর কোনো কিছুর দোহাই দিয়ে আমার ভালোবাসার পরিমান বোঝাতে পারবনা । -সারা জীবন কি আমার পাশে থাকবে ? কবির তখন সোহানার হাতটা ধরলো, এবং তার বুকে নিলো… বললো “আমার হৃদয়ের কম্পন অনুভব করতে পারছো”? সোহানা মাথা নেড়ে হ্যা সুচক উত্তর দিলো । -যেদিন তোমার পাশে থাকব না, সেদিন একবার এসে এই বুকে হাত দিয়ে দেখো…এই বুকে কোনো কম্পন তুমি অনুভব করবে না । সোহানার চোখ দিয়ে পানি বেয়ে পড়লো । সাথে সাথে জড়িয়ে ধরলো কবিরকে । শুরু হল তাদের প্রেম কাহন । তাতে ছিলনা কোনো বাধা, ছিলনা কোনো বিপত্তি । প্রেম সাগরের আকাশে তারা যেন গাংচিলের মত অবিরাম উড়ছিলো । মাঝিহীন নৌকার মত তারা যেন অজানা কোথাও ভেসে যাচ্ছিলো । তারা হারিয়ে যাচ্ছিলো । তারা হারিয়ে গিয়েছিলো ।

(৬)
একদিন কবির আর রাজু বসে গল্প করছিলো, তখন রাজুর কাছে একটা ফোন আসলো । ফোনে সে জানতে পারলো তাদের গ্যাংলিডার মোস্তফা ভাই ছাড়া পেয়েছে । রাজু কবিরকে কথাটা বলার পর কবিরের মনে আজব একটা ভয়ের সৃষ্টি হল । কবির রাজুকে বললো “আমি এইসব ছেড়ে দিতে চাই, আমি আর এগুলোতে থাকতে চাই না, আমি সোহানাকে আর মিথ্যা বলতে চাই না” রাজু বললো “তুই যদি এইসব ওরে বলিস তাইলে ও তো তোর দিকে ফিইরাও তাকাইবো না” -আমার প্রেম মিথ্যা নয়, আমি চাইনা আমার প্রেমে মিথ্যার কোনো যায়গা থাকুক, আমি জানি সোহানা আমার কথা বুঝবে । এসব ছেড়ে দিয়ে আমি সোহানার সাথে নতুন জীবন শুরু করতে চাই, ওকে একবার লাল শাড়িতে দেখতে চাই, সারাদিন ওর হাসিমাখা মূখ দেখতে চাই, ওর হাসির শব্দ শুনতে চাই, ওর কালো চুলের ছায়া পেতে চাই । রাজু অবাক হয়ে বললো -প্রেম তো দেখি তরে পুরাই বদলায় দিছে ! ঠিকাছে তুই যা ভাল বুঝস তাই কর । এই বলে তারা হাটতে লাগলো । আর তখনই পুলিশ এসে তাদের আটক করল । কারন শহরে সন্দেহভাজনদের পুলিশের ধরপাকর শুরু হয়েছিল । মাসখানেক পর যখন কবির ছাড়া পেলো, সে সোহানার সাথে দেখা করতে ওর স্কুলের সামনে গেলো । দেখল সোহানা বেড়িয়ে ওর দিকেই আসছে । সোহানা কবিরের সামনে এসে কবিরকে বললো -কোথায় ছিলে ? ভয় পেয়ে গেল কবির, না চেয়েও সোহানাকে বললো -দেশের বাড়িতে গিয়েছিলাম -দেশের বাড়িতে তো তোমার কেউ নেই, মোবাইল বন্ধ কেন ? -হারিয়ে গিয়েছিলো । -আর কাকে মেরে জেলে গিয়েছিলে ? কিছুক্ষনের জন্য চুপ হয়ে, সোহানাকে জিজ্ঞেস করলো -তোমাকে এসব কে বলেছে ? -তোমার খোজ করতে করতে তোমার বাসায় গিয়েছিলাম । কবির তার উত্তর পেয়ে গেল । সোহানা কবিরকে বললো তোমাকে নিয়ে কত না স্বপ্ন সাজিয়েছিলাম । সব তুমি তছনছ করে দিলে । তুমি কি এটা আমার দুঃখ নয় । তুমি আমাকে শুধু মিথ্যাই বলেছ এইটা ভাবতেই শুধু কষ্ট হচ্ছে । সারা জীবন কি ? তোমার মত লোক এক সেকেন্ডও কারো পাশে থাকার যোগ্য নয় । এই বলে সোহানা চলে যেতে থাকলে “শোনো সোহানা” বলে কবির সোহানার হাত ধরে টান দিলো । এবং সাথে সাথেই সোহানা কবিরকে থাপ্পড় মারলো । কবির মাথা নিচু করে থাকলো । হটাৎ সে একটা গাড়ির ব্রেকের আওয়াজ শুনলো । চেয়ে দেখলো রাস্তার মাঝখানে লোকজন জড়ো হয়ে আছে । কবির দৌড়ে গিয়ে দেখল সেখানে সোহানা রক্তাক্ত হয়ে পড়ে আছে । সোহানা বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো সে ।

(৭)
সোহানা এখন হাসপাতেলের আই.সি.ইউ তে । সোহানার ব্রেনে ফ্রেকচার হয়েছে । দুই লাখ টাকার মত লাগবে । কবিরের কাছে কিছুই নেই, এমনকি নিজেকেও সে বিক্রি করে দুই লাখ টাকা পাবে না । হটাৎ কবিরের বন্ধু রাজু এসে বললো টাকার ব্যবস্থা হয়েগেছে, কিন্তু তার আগে তাকে মোস্তফা ভাইয়ের সাথে দেখা করতে হবে । কবির যেতে চাইলো না । কিন্তু সে যখন আই.সি.ইউ রুমে সোহানার দিকে দেখল তখন একটু চোখের পানি ফেলে আর কোনো কিছু না বলেই সে চলে গেল । কবির এখন মোস্তফা ভাইয়ের সামনে দাঁড়িয়ে -তোমার নাকি টাকার প্রয়োজন ? কবির মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকল । কোনো কথা বললো না । -আমি তোমাকে টাকা দিব, কিন্তু তার আগে তোমাকে আমার ছোট্ট একটা কাজ করতে হবে মাথা তুলে কবির তখন মোস্তফা ভাইয়ের দিকে দেখল -শুনেছি ঢাকার সব গ্যাঙ এবং তাদের লিডারদের খোজ তোমার কাছে থাকে, কে কোথায় থাকে, কে কোথায় লুকোয় সবই তোমার জানা । রঙ্গা । চেনো হয়তো । এই রঙ্গা আমাকে জেলে পাঠিয়ে আমার রাজ্যে ভাগ বসাতে চেয়েছিলো । তোমাকে তাকে হত্যা করতে হবে । এর বদলে যা চাও তাই পাবে । এই বলে কবিরের হাতে পিস্তল ধরিয়ে দিলো মোস্তফা ভাই ।

(৮)
কবির, রাজু এবং আরও কয়েকজন রঙ্গার লুকানো আড্ডায় এসে পৌছুলো । কবির রঙ্গার দিকে পিস্তল উচিয়ে ধরলো । আর ঠিক তখন পুলিশের একটি দল তাদের ঘিরে ফেলল । কিন্তু হটাৎ তাদের মধ্য থেকে কেউ পুলিশের উপর গুলি চালিয়ে দিল । সাথে সাথেই পুলিশ গুলি ছূড়া শুরু করলো । কবির দেখলো রাজুর মাথায় গুলি লেগে মাটিতে পড়ে আছে । পরক্ষনেই পুলিশের একটি গুলি কবিরের বুকে এসে বিধলো । মাটিতে পড়ে গেলো কবির । কিন্তু সে আবার উঠে দাড়াতে চাইলে আরেকটা গুলি এসে তার মাথায় লাগলো । সব কিছু অন্ধকার হয়ে গেল । কবির সোহানাকে বলেছিলো । যদি সারা জীবন সে সোহানার পাশে না থাকে তাহলে একবার এসে তার বুকে হাত দিয়ে দেখতে, সেখানে কোনো কম্পন থাকবে না , কিন্তু সোহানা হয়তো তাও পারবে না । কারন ঐদিকে সোহানার রক্তচাপ বেড়ে গিয়েছিলো । ডাক্তাররা খুব চেষ্টা করছেন তাকে বাচাতে । আর ধিরে ধিরে লাইফ সাপোর্ট মেশিনের স্ক্রিনের আকাবাকা রেখাটা সমান হয়ে গেলো । শেষ হয়ে গেলো আরেকটি প্রেম কাহন । (১)
ছোট একটি গলিতে কয়েকজন অস্ত্রধারী লোক এক ২৪-২৫ বছরের ছেলেকে ধাওয়া করছিল । “ধর শালাকে ধর” পেছন থেকে আওয়াজ আসছিল । তাদের সামনে দৌড়াচ্ছিলো কবির । দেওয়াল বেয়ে একটি প্রাইমারী স্কুলের ভিতরে ঢুকে পড়ল সে । ধাওয়াকারীরা অন্য দিকে চলে গেল । কবির হাপাতে হাপাতে দেখলো প্রায় ওর বয়সী খুব সুন্দর একটি মেয়ে স্কুলের উপরতলা থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব দেখছে । মেয়েটার দিকে চেয়ে কবির মুচকি হাসলো । মেয়েটি চেহারায় বিরক্তির ভাব দেখিয়ে সেখান থেকে চলে গেল । মেয়েটি চলে যাবার পর কবির সেখান থেকে বাইরের দিকে হাটতে লাগলো।

কবির ঢাকার ছোটখাট একটি গ্যাঙের সদস্য । নেতাদের কাজে যাওয়া একে মারপিট করা, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করাই ছিলো এসব গ্যাঙের কাজ । কবিরকে যারা ধাওয়া করছিলো তারা ছিলো তার গ্যাঙেরই লোক! কারনটা হল একবার তার দলে সে একটা হেরফের করেছিল । আর এটা কবিরই করেছিল সেটা সবাই জেনে গিয়েছিল । মা-বাবা কেউ নেই । ছোট বেলা থেকেই এসবের মাঝে দূর সম্পর্কের এক চাচার কাছে বড় হয়েছে সে । বেশী পড়ালেখা করেনি । চাচার মৃত্যুর পর সে আর তার চাচাতো ভাই রাজু বিভিন্ন গ্যাং এর হয়ে কাজ করতে থাকে । রাজু তার বন্ধুর মতই ছিলো ।

কবির হাঁটতে হাঁটতে স্কুলের বাইরে আসার পর দেখল সেখানে রাজু । সে দৌড়ে গিয়ে রাজুর কলারে ধরল । - কিরে শালা ! ঐখানে ওরা আমাকে কুরবানি দিতে ব্যস্ত ছিলো আর তুই কই ছিলি - আরে বেটা তকে আমি বাচানোর জন্যই আসতেসিলাম ততক্ষনে শুনলাম তুই নাকি দৌড়ে ব্যস্ত । এইভাবে কথা বলতে বলতে রাজু কবির নতুন একটি গ্যাং এর কথা বললো, ঐ গ্যাং এ নাকি তাদের প্রয়োজন । গ্যাংটা একটি সন্ত্রাসী গ্যাং । কবির কোনো কিছু না ভেবেই রাজি হয়ে গেলো । রাজুর সাথে গিয়ে নতুন গ্যাং এর সবার সাথে পরিচিত হল সে । সন্ধায় যখন সে বাসায় ফিরছিল তখন দেখলো সেই মেয়েটি রিকশায় চড়ে কোথাও যাচ্ছে । মেয়েটির দিকে সে কিছুক্ষন চেয়ে থাকলো । চেয়ে চেয়ে কবির যেনো সেই মেয়েটিতে বিভোর হয়ে যাচ্ছিলো । সে নিজেও জানতো না কেন এমন হচ্ছে । এর আগেও অনেক সুন্দর মেয়ে সে দেখেছে । কিন্তু এই মেয়েটার মধ্যে এমনকি যা বারবার তাকে প্রেমের এক জগতে হারিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ।

(২)
পরের দিন কবির আর রাজু রাস্তায় গল্প করে করে হাটছিলো । রাজু তখন বললো কবিরকে বললো - দোস্ত কতদিন ভাল খাবার খাইনা, আজ চল কোথাও খেয়ে আসি । কবির একটু বিরক্তির ভাব এনে বললো “পকেটে নাই দুইটাকার একটা নোট আবার ভাল খাবার খাইবা, তুমার আব্বা কি তুমার নামে কি কোনো হোটেল রাইখা গেছিলো নাকি যে ঐখানে ফ্রিতে ভাল খাবার খাইবা” তারপর বিড়বিড় করে কিছু বললো রাজু কিছু একটা ভেবে বললো “একটা বুদ্ধি পাইছি, আমাদের পাশের ঘরের সিরাজ আছে না, সে আইজ এক বিয়াতে গান-বাজনার দলের লোক হইয়া যাইব, ওর সাথে মিল্লা দুই ভাই যায়া পেট ভইরা খায়া আসুম” । কিন্তু কবির রাজি হল না । তবে রাজুকে যাবার জন্য বললো । কিন্তু রাজু কিছুতেই মানছেনা, অনেক কষ্টে রাজি করালো কবিরকে ।

সন্ধায় বিয়েতে কবির আর রাজু হাজির । বিয়েতে কবিরের ভাল লাগছিল না । হটাৎ তার এই ভাল না লাগা ভাল লাগায় পরিবর্তন হয়ে গেল । তার চোখ মূখ আনন্দে ভরে উঠলো । কারন সেই মেয়েটি এখানেও আছে । মেহেদী রঙের শাড়িতে খুব সুন্দর লাগছিলো ওকে । ঘন চুলে বাঁধা গাজরা ওর সুন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছিলো । মেয়েটির টলটল চোখে ডুবে যেতে চাইছিলো কবির । সে ধিরে ধিরে মেয়েটির পাশে গেলো । মেয়েটিকে বললো “এই যে শুনছেন” -আমাকে কিছু বলছেন ? - জ্বি, আমার নাম কবির । আপনাকে মনে হয় আমি আগেও দেখেছি । আপনি ঐ প্রাইমারী স্কুলটাতে পড়েন তাই না ? মেয়েটি একটু বিরক্ত হয়ে বললো “আমি ঐ স্কুলে পড়াই” । - ওহ দূঃখিত । না মানে আমরা একই এলাকায় থাকি । ২বার দেখাও হয়ে গেলো । আপনার নামটা জানলে ভালো হত । পরিচয় থাকা ভালো । -দূঃখিত আমি অপরিচিত লোকদের আমার নাম বলি না - তাহলে পরিচিত লোকদের নাম বলেন না কি ? যতদুর আমি জানি পরিচিত লোকদের নাম জানতে হয় না । মেয়েটি আর কোনো কথা না বলে সেখান থেকে চলে যাচ্ছিলো তখন তার বান্ধবী সুমি এসে বললো । “কিরে সোহানা কই তুই”

কবির তখন হেসে হেসে তখন সুমিকে উদ্দেশ্য করে বললো “ম্যাডাম ধন্যবাদ আপনাকে” সুমি বললো “ধন্যবাদ ! কিসের ধন্যবাদ ?” কবির বললো নাহ বিয়ের অনুষ্ঠানটা ভালই হয়েছে সেজন্যই বললাম । তখন সোহানা তার বান্ধবী সুমিকে বললো । “চল এখান থেকে” কবির তখনও সোহানা দিকে চেয়ে থাকছিলো । রাজু যখন কবিরকে যাবার কথা বললো তখন কবির তাকে আরও কিছুক্ষন থাকার জন্য বললো । রাজু চিন্তা করলো যে আগে বিয়েতে আসার জন্য না করছিলো এখন বিয়ে থেকে যাবার জন্য না করছে বিষয় কি ? রাতে সোহানার চলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কবির বিয়েতে থাকলো ।

সোহানা ঢাকায় একা থাকতো । একটি প্রাইমারী স্কুলে চাকরি করত সে । টাঙ্গাইলে ওর মা আর ছোট ভাই থাকে ।অনেক আগেই বাবা মারা গেছেন, তাই সোহানাই তার পরিবার চালায় ।

(৩)
সোহানা একদিন স্কুলের সামনে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে ছিল । কবির ও রাজু সেদিক দিয়ে যাচ্ছিলো । সোহানাকে দেখে কবির সামিয়ার কাছে গেল আর সামিয়ার সাথে কথা বলতে লাগলো । সোহানা তখন বিরক্ত হচ্ছিলো । রাস্তার ওপার থেকে সোহানার বান্ধবী তাকে ডাক দিল । সোহানা নিচের দিকে চেয়ে থেকে তরিঘরি করে সেখান থেকে যেতে চাইলো কিন্তু তখনই কবির খুব জোরে সোহানার হাতে ধরে টান দিলো । সাথে সাথে সোহানা কবিরকে একটি থাপ্পড় বসিয়ে দিলো । এবং তখনই গাড়ীর ব্রেকের বিকট আওয়াজ হল । গাড়ী থেকে ড্রাইভার নেমে এসে সোহানাকে উদ্দেশ্য করে বললো “কি ম্যাডাম ? আপনি তো এখন আমাকে জেলে পাঠিয়ে সেরেছিলেন, দেখে রাস্তা পার হতে পারেন না ? আজ এই ছেলেটা না থাকলে তো আপনি পরপারেই চলে গিয়েছিলেন” সাথে সাথে সোহানা কবিরের দিকে যখন ফিরে দেখলো ততক্ষনে কবির সেখান থেকে চলে যাচ্ছিলো ।

রাতে সোহানা ঘুমোতে পারলোনা । নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছিলো । কবিরকে থাপ্পড় মারার সেই দৃশ্যটি তার চোখে বারবার ভেসে উঠছিলো । অন্যদিকে কবিরও ঐ রাতে গালে হাতি বুলিয়ে বুলিয়ে সোহানার কথা ভাবছিলো । পাশে রাজু কবিরকে বলছিলো “কালই মাইয়াডারে তুইলা নিয়া আমু, আমার দোস্তরে থাপ্পড় মারে হ্যা ! আর দোস্ত চিন্তা করিস না তুই এই মাইয়া থেইকাও আরও সুন্দর আর ভালা মাইয়া পাবি” তখন কবির রাজুকে বললো “হুম ঠিক বলছিস তুই ওর থেকে সুন্দর মেয়ে আমি পাবো, ওর থেকে ভাল মেয়েও পাবো, কিন্তু তাতে কি! ওকে তো আর পাবো না” রাজু কবিরের কথা শুনে অবাক হয়ে কবিরের দিকে কিচ্ছুক্ষন চেয়ে থাকলো।

(৪)
একদিন কবির আর সোহানার আবার দেখা হলো । কবির সোহানাকে এড়িয়ে যেতে চাইলো । কিন্তু সোহানা কবির থেকে পেছন থেকে আবার ডাক দিলো । - এই যে শুনছেন । কবির পেছন ফিরে কিচ্ছুক্ষন দাঁড়িয়ে রইল, কোনো কথা বললো না । সোহানা বললো “ঐদিনের ঘটনার জন্য আমি দুঃখিত” । কবির তখন সোহানার দিকে ফিরে হেসে উত্তর দিলো “আরে নাহ ঐদিনের ঘটনা তো আমি ভুলেই গিয়েছিলাম” সোহানাও হেসে বললো “নাহ শুধু ভুলে গেলে হবে না, আমার সাথে এক কাপ কফি খেতে হবে” । কবির বললো আরে কফি আমার জমে না, চা হলে ভালো হয় । সোহানা হেসে বললো “তাহলে চলুন চা-ই খাই” একটি রেস্টুর্যাইন্টে বসে তারা চা খাচ্ছিলো । তখন সোহানা কবিরকে প্রশ্ন করে বসলো “আচ্ছা ঐদিন গুন্ডারা আপনার পিছু নিয়েছিলো কেনো?” কবির কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে ভিষম খেলো, বললো “ইয়ে না মানে আমার বিজনেস আছে তো, তাই মাঝে মাঝে এইসব সমস্যায় পড়তে হয়” কথা পাল্টিয়ে সোহানাকে বললো তোমার বাড়িতে কে কে আছে । সোহানা ওর মা আর ছোট ভাইয়ের কথা বললো । কবিরের কাছে সোহানা একই প্রশ্ন করলো কবির বললো “মা, বাবা কেউ নেই, আমার এক চাচার কাছে বড় হয়েছি আর তিনিও এখন নেই…পৃথিবীতে আপন বলতে আমার বন্ধু রাজুই আছে” । সোহানা কবিরকে বললো “তোমার সেই আপনদের মধ্যে আজ আরেকজন বন্ধুর জন্য কি জায়গা খালি আছে?” কবিরের মন যেনো অসীম আনন্দে ভরে উঠলো । কয়েকদিন কেটে গেলো । কবিরের প্রতি সোহানার আকৃষ্টতা বেড়ে যেতে থাকলো । কবিরের হাসি, গাম্ভির্যতা, রসিকতা সব যেনো ওর ভাল লাগতে শুরু হল । আর অন্যদিকে কবিরও মনে মনে সামিয়াকে পাগলের মতো ভালোবেসে যাচ্ছিলো ।

(৫)
পার্কে হেটে হেটে সোহানা ও কবির কথা বলছিলো । কথা বলার ফাঁকে সোহানা কবিরকে জিজ্ঞেস করল । -আমার সাথে সময় কাটাতে তোমার কেমন লাগে ? কবির অন্যদিকে চেয়ে থেকে বললো -কেমন লাগে জানিনা, তবে বেঁচে থাকার নতুন কারন খোজে পাই । তুমি কি তোমার উপর আমার অধিকার দিবে -জানিনা কতটুকু অধিকার দিতে পারবো, শুধু এটা জানি আমার প্রতিটা নিস্বাশে তোমার অধিকার রয়েছে আমাকে কতটুকু ভালোবাসো ? কবির সোহানার দিকে ফিরে তাকিয়ে বললো -জানিনা কতটুকু ভালোবাসি, পৃথিবীর কোনো কিছুর দোহাই দিয়ে আমার ভালোবাসার পরিমান বোঝাতে পারবনা । -সারা জীবন কি আমার পাশে থাকবে ? কবির তখন সোহানার হাতটা ধরলো, এবং তার বুকে নিলো… বললো “আমার হৃদয়ের কম্পন অনুভব করতে পারছো”? সোহানা মাথা নেড়ে হ্যা সুচক উত্তর দিলো । -যেদিন তোমার পাশে থাকব না, সেদিন একবার এসে এই বুকে হাত দিয়ে দেখো…এই বুকে কোনো কম্পন তুমি অনুভব করবে না । সোহানার চোখ দিয়ে পানি বেয়ে পড়লো । সাথে সাথে জড়িয়ে ধরলো কবিরকে । শুরু হল তাদের প্রেম কাহন । তাতে ছিলনা কোনো বাধা, ছিলনা কোনো বিপত্তি । প্রেম সাগরের আকাশে তারা যেন গাংচিলের মত অবিরাম উড়ছিলো । মাঝিহীন নৌকার মত তারা যেন অজানা কোথাও ভেসে যাচ্ছিলো । তারা হারিয়ে যাচ্ছিলো । তারা হারিয়ে গিয়েছিলো ।

(৬)
একদিন কবির আর রাজু বসে গল্প করছিলো, তখন রাজুর কাছে একটা ফোন আসলো । ফোনে সে জানতে পারলো তাদের গ্যাংলিডার মোস্তফা ভাই ছাড়া পেয়েছে । রাজু কবিরকে কথাটা বলার পর কবিরের মনে আজব একটা ভয়ের সৃষ্টি হল । কবির রাজুকে বললো “আমি এইসব ছেড়ে দিতে চাই, আমি আর এগুলোতে থাকতে চাই না, আমি সোহানাকে আর মিথ্যা বলতে চাই না” রাজু বললো “তুই যদি এইসব ওরে বলিস তাইলে ও তো তোর দিকে ফিইরাও তাকাইবো না” -আমার প্রেম মিথ্যা নয়, আমি চাইনা আমার প্রেমে মিথ্যার কোনো যায়গা থাকুক, আমি জানি সোহানা আমার কথা বুঝবে । এসব ছেড়ে দিয়ে আমি সোহানার সাথে নতুন জীবন শুরু করতে চাই, ওকে একবার লাল শাড়িতে দেখতে চাই, সারাদিন ওর হাসিমাখা মূখ দেখতে চাই, ওর হাসির শব্দ শুনতে চাই, ওর কালো চুলের ছায়া পেতে চাই । রাজু অবাক হয়ে বললো -প্রেম তো দেখি তরে পুরাই বদলায় দিছে ! ঠিকাছে তুই যা ভাল বুঝস তাই কর । এই বলে তারা হাটতে লাগলো । আর তখনই পুলিশ এসে তাদের আটক করল । কারন শহরে সন্দেহভাজনদের পুলিশের ধরপাকর শুরু হয়েছিল । মাসখানেক পর যখন কবির ছাড়া পেলো, সে সোহানার সাথে দেখা করতে ওর স্কুলের সামনে গেলো । দেখল সোহানা বেড়িয়ে ওর দিকেই আসছে । সোহানা কবিরের সামনে এসে কবিরকে বললো -কোথায় ছিলে ? ভয় পেয়ে গেল কবির, না চেয়েও সোহানাকে বললো -দেশের বাড়িতে গিয়েছিলাম -দেশের বাড়িতে তো তোমার কেউ নেই, মোবাইল বন্ধ কেন ? -হারিয়ে গিয়েছিলো । -আর কাকে মেরে জেলে গিয়েছিলে ? কিছুক্ষনের জন্য চুপ হয়ে, সোহানাকে জিজ্ঞেস করলো -তোমাকে এসব কে বলেছে ? -তোমার খোজ করতে করতে তোমার বাসায় গিয়েছিলাম । কবির তার উত্তর পেয়ে গেল । সোহানা কবিরকে বললো তোমাকে নিয়ে কত না স্বপ্ন সাজিয়েছিলাম । সব তুমি তছনছ করে দিলে । তুমি কি এটা আমার দুঃখ নয় । তুমি আমাকে শুধু মিথ্যাই বলেছ এইটা ভাবতেই শুধু কষ্ট হচ্ছে । সারা জীবন কি ? তোমার মত লোক এক সেকেন্ডও কারো পাশে থাকার যোগ্য নয় । এই বলে সোহানা চলে যেতে থাকলে “শোনো সোহানা” বলে কবির সোহানার হাত ধরে টান দিলো । এবং সাথে সাথেই সোহানা কবিরকে থাপ্পড় মারলো । কবির মাথা নিচু করে থাকলো । হটাৎ সে একটা গাড়ির ব্রেকের আওয়াজ শুনলো । চেয়ে দেখলো রাস্তার মাঝখানে লোকজন জড়ো হয়ে আছে । কবির দৌড়ে গিয়ে দেখল সেখানে সোহানা রক্তাক্ত হয়ে পড়ে আছে । সোহানা বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো সে ।

(৭)
সোহানা এখন হাসপাতেলের আই.সি.ইউ তে । সোহানার ব্রেনে ফ্রেকচার হয়েছে । দুই লাখ টাকার মত লাগবে । কবিরের কাছে কিছুই নেই, এমনকি নিজেকেও সে বিক্রি করে দুই লাখ টাকা পাবে না । হটাৎ কবিরের বন্ধু রাজু এসে বললো টাকার ব্যবস্থা হয়েগেছে, কিন্তু তার আগে তাকে মোস্তফা ভাইয়ের সাথে দেখা করতে হবে । কবির যেতে চাইলো না । কিন্তু সে যখন আই.সি.ইউ রুমে সোহানার দিকে দেখল তখন একটু চোখের পানি ফেলে আর কোনো কিছু না বলেই সে চলে গেল । কবির এখন মোস্তফা ভাইয়ের সামনে দাঁড়িয়ে -তোমার নাকি টাকার প্রয়োজন ? কবির মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকল । কোনো কথা বললো না । -আমি তোমাকে টাকা দিব, কিন্তু তার আগে তোমাকে আমার ছোট্ট একটা কাজ করতে হবে মাথা তুলে কবির তখন মোস্তফা ভাইয়ের দিকে দেখল -শুনেছি ঢাকার সব গ্যাঙ এবং তাদের লিডারদের খোজ তোমার কাছে থাকে, কে কোথায় থাকে, কে কোথায় লুকোয় সবই তোমার জানা । রঙ্গা । চেনো হয়তো । এই রঙ্গা আমাকে জেলে পাঠিয়ে আমার রাজ্যে ভাগ বসাতে চেয়েছিলো । তোমাকে তাকে হত্যা করতে হবে । এর বদলে যা চাও তাই পাবে । এই বলে কবিরের হাতে পিস্তল ধরিয়ে দিলো মোস্তফা ভাই ।

(৮)
কবির, রাজু এবং আরও কয়েকজন রঙ্গার লুকানো আড্ডায় এসে পৌছুলো । কবির রঙ্গার দিকে পিস্তল উচিয়ে ধরলো । আর ঠিক তখন পুলিশের একটি দল তাদের ঘিরে ফেলল । কিন্তু হটাৎ তাদের মধ্য থেকে কেউ পুলিশের উপর গুলি চালিয়ে দিল । সাথে সাথেই পুলিশ গুলি ছূড়া শুরু করলো । কবির দেখলো রাজুর মাথায় গুলি লেগে মাটিতে পড়ে আছে । পরক্ষনেই পুলিশের একটি গুলি কবিরের বুকে এসে বিধলো । মাটিতে পড়ে গেলো কবির । কিন্তু সে আবার উঠে দাড়াতে চাইলে আরেকটা গুলি এসে তার মাথায় লাগলো । সব কিছু অন্ধকার হয়ে গেল । কবির সোহানাকে বলেছিলো । যদি সারা জীবন সে সোহানার পাশে না থাকে তাহলে একবার এসে তার বুকে হাত দিয়ে দেখতে, সেখানে কোনো কম্পন থাকবে না , কিন্তু সোহানা হয়তো তাও পারবে না । কারন ঐদিকে সোহানার রক্তচাপ বেড়ে গিয়েছিলো । ডাক্তাররা খুব চেষ্টা করছেন তাকে বাচাতে । আর ধিরে ধিরে লাইফ সাপোর্ট মেশিনের স্ক্রিনের আকাবাকা রেখাটা সমান হয়ে গেলো । শেষ হয়ে গেলো আরেকটি প্রেম কাহন ।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×