প্রথম যেদিন তোমার সাথে সাক্ষাত সেদিনই তোমাকে পছন্দ করেছি। একটা বড়-সড় দূর্বলতা এসে আমাকে সেই যে জাপটে ধরেছিল ওর থেকে আর আমি ছুটতে পারি নি। তোমাকে দেখেছিলাম ঢাকায়। কিন্তু আমাদের থেকে অনেক দূর। পড়া শেষ করে আমি বাড়ি চলে গেলাম। কিন্তু তোমাকে আর ভুলতে পারলাম না। মনের গহীনে খন্দক বানিয়ে তুমি আশ্রয় নিলে। ক্ষতটা আরো বাড়ত লাগলো।
*
প্রথম যেদিন আমি তোমাকে দেখেছিলাম সেদিন যে তুমি আমাকে ভালবাসো এমন কোন কিছুই তোমাতে ছিল না , থাকার কথাও না। তোমার আচরণেও তা প্রকাশ হয় নি। এমনকি কোন দূর্বলতাও তোমার থেকে আসেনি। কিন্তু আমার ভালবাসা যেহেতু তোমার উপর আছর করেছে তাই আমি ভালোবাসার কল্পিত বিভিন্ন রঙিন ফানুস বানিয়েছি। ঘুরি উড়ানোর মত করে আমার স্বপ্নের আকাশে তা উড়িয়েছি। কিন্তু সত্য তো সত্যই। হারিয়ে গেছো তুমি তোমার ঠিকানায়। কিন্তু আমি বসে থাকি নি। আমার ভালোবাসা বসে থাকতে দেয়নি।
*
পরিচয়ের দিন জেনেছিলাম তোমার বাড়ি গাইবান্ধায়। ব্যস, এতটুকুই। কিন্তু এভাবে কি কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়? বা তাকে কি খুজেঁ দেখা উচিৎ? না কখনো নয়। কিন্তু আমার হৃদয় যে সেদিন তোমার মাঝে হারিয়ে গিয়েছিলো তাই আমার দেহটাকে নিয়ে তো আর আমি বসে থাকতে পারি না। আমি তোমার সন্ধানে নেমে পড়লাম। এক সময় তোমার বাবা-মার ঠিকানা যোগাড় করলাম। পেয়ে গেলাম।আসলে সিরিয়াসলী কেউ কোন কিছু প্রত্যাশা করলে সে তা পেয়েই যায়। আল্লাহ তাআলা তাকে সেখানে পৌছেঁ দেয়। তোমাদের ঠিকানা পাবার পর আত্মীয়তার সূত্রও আবিষ্কার করলাম। তোমাদের দুয়ার পর্যন্ত গেলাম। কিন্তু তোমার দেখা পাই নি। তোমার বাবা-মা কি সামনে আসতে দেবে? অসম্ভব!
*
প্রেমে পড়ার জন্য কতবার সাক্ষাত হতে হয় জানি না, তবে তোমাকে প্রথমবার দেখার পর এত বেশি ভালো লেগেছিল যে আমি আর তোমাকে ভুলতেই পারি নি। পড়া-শুনা, ঘুম, জেগে থাকা, আড্ডা দেয়া সর্বত্রই তোমার চেহারা দেখতাম। এটাই মনে হয় প্রেমে পড়া। কেন যেন স্থির বিশ্বাস জন্ম নিয়েছিলো তোমাকে আমার জীবনে খুবই প্রয়োজন এবং তোমাকে ছাড়া আমি সুখী হতে পারবো না। হয়েছেও তাই। আমার সব আনন্দের মূহুর্তগুলো শুকনো হয়ে যেত। তোমার চেহারাটা আমার সামনে আসতেই মনে হতো তুমি ছাড়া এ আনন্দ অর্থহীন। আবার কোন দুঃখ এলে ভাবতাম, তুমি আসলেই আমার এ দুঃখ ঘুচে যাবে। এভাবেই আমি তোমাকে ভাবতে থাকি।
*
তোমার চলার জায়গা, তোমার স্কুল, তোমার স্কুলে আসার রাস্তা, তোমার ব্যবহৃত পোশাক, তোমার বই কেনার লাইব্রেরী, তোমার বাহন রিক্সা, তোমার শহর স-ব আমার ভালো লাগতে লাগলো। যে গাইবান্ধা আমি কোন দিন যাবার স্বপ্ন দেখি , অপছন্দের তালিকার শীর্ষে যে শহরের নাম সে শহরটিও ভালো লাগার শীর্ষে চলে আসলো। দূর থেকে যখন তোমার শহরে যাবার কোন বাস গাড়ি দেখতাম তার গায়ে গাইবান্ধা লেখা আছে সেই বাস গাড়িটিও কেমন যেন আপন আপন মনে হতো। তোমার নামের কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখতাম সেখানে তোমার প্রতিচ্ছবি দেখতাম। নামটিও যেন সব থেকে সেরা নামে ভুষিত হয়ে গেল।
*
এমন ভালো লাগা আর ভালোবাসা যাই বলো সেটাকে স্থায়ী করার জন্য, কাছে থেকে ছুয়েঁ দেখার জন্য, হৃদয়ে উত্তাপ নেবার জন্য আমি হেন কাজ নেই করতে লাগলাম। রাস্তায় অপেক্ষা করা, দুআ করা, তোমাকে বুঝাতে চেষ্টা করা, আমার জানা মতে স-ব করলাম। অবশেষে তোমার বাবার কাছে পারিবারিক প্রস্তাব পাঠালাম। আরো যত পথ-পদ্ধতি আছে আমি সব করলাম। কিন্তু কোন অসম্মানী কাজ কখনই করি নি। ডিস্টার্ব করি নি। লোকে বাঁকা চোখে তাকাবে এমন কোন কাজ করি নি।
*
আমার ও সব ভদ্রতা কাজে লাগে নি। একদিন শুনলাম তোমার বিয়ে হয়ে গেছে । যাকে তুমি ভালো বাসতে তাকে তুমি বিয়ে করেছো। হুম। শুনলাম। কাঁদলাম। অজস্র তীরের আঘাত সইলাম। হৃদয় এ ফোর ও ফোর হলো। কিন্তু পাশাপাশি হাসলাম। খুশি হলাম। কারণ, তুমি তাকেই বিয়ে করেছো যাকে তুমি ভালোবাস। আমি পাই নি তাই কী? তুমি তো পেয়েছো। যাক, তোমার জীবন শুরু হলো। আমি বোবা হয়ে গেলাম। ভাবনাগুলো মরে গেলো। নতুন কোন কিছুই আর জন্ম নিল না।
*
আমার পছন্দের নীল শাড়িটি তোমাকে দিয়ে আসলাম। ফিরিয়ে না দিয়ে কৃজ্ঞতায় আবদ্ধ করেছিলে। নীল শাড়ীতে তোমাকে আসমানিদের মত মনে হবে হয়তো। আমি দেখি নি। তোমার প্রিয় হয়ত দেখেছে । কিন্তু সে না কি এগুলোর স্বাদ পায় না। তুমি আমাকে পরে বলেছো। দূর থেকে তোমার সুখের প্রার্থনা করে করে দিন পার করছিলাম। একদিন আমিও অন্য একজনের জন্য বরাদ্দ হলাম। বিয়ে করে দুঃখ ভুলে যেতে চাইলাম। সাগড় পরিমাণ সঞ্চিত ভালোবাসা শেষে নিজের স্ত্রীকেই দিতে শুরু করলাম। সহজ সরল গ্রাম্য বৌ বাবা মার ভালোবাসা পায়নি। আমার ভালোবাসার ওম নিয়ে সুখি হলো। আমি দিয়ে গেলাম দিনের পর দিন। কাকড়ার মত হৃদয়টা ঝাঝড়া হয়ে গেল। বউ শুধু নিলই আমার যে ভালবাসার পিপাসা আছে তা বুঝলো না।
*
অপরিচিত নাম্বারের ফোন রিসিভ করে কষ্টদায়ক সংবাদ শুনলাম। তুমি.। হুম তুমি ফোন দিয়েছো। নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না। শেষে তোমার কাতর কণ্ঠের আকুতিতে জেগে উঠলো মরে যাওয়া ভালোবাসা। তুমি তোমার সুখ পেতে সাহায্য চাইছো। আশ্চর্য, তবে সত্য। তোমার বাতলানো পথে হেটে তোমার স্বামীকে ম্যানেজ করলাম। এক তালাক হয়ে যাওয়া স্ত্রীকে আবার তার স্বামীর হাতে অর্পন করার কৃতিত্ব অর্জন করলাম। চাইলাম তবুও তোমার সুখ হোক।
*
দেড় যুগ পার হলো। অনেক কিছুর স্বাক্ষী হতে হলো। শেষে আমিই তোমার বেঁচে থাকার অবলম্বন হলাম। আমার ফোন না পেলে তুমি মরে যাবে, আমি পাশে না থাকলে তুমি বাঁচবে না -এমন টা জানার পর আমি তোমার পাশে থাকলাম। আছি। সেদিন তুমি ৪ ঘন্টা কাঁদলে আর তোমার ব্যাথাগুলো আমার হৃদয়ে ট্রান্সফার করে দিলে। ব্লুটুথের মত করে পার হয়ে এলো আমার হৃদয়ে। আমি সব বিষ হজম করে রেখে দিলাম আমার সারা শরীরে। তুমি বেঁচে থাকবে বলে আমি তোমার বিষগুলো টেনে নিলাম। যাক তবুও তুমি বাঁচো।
*
সেদিন তুমি খুউব কষ্ট পেযেছো। তোমার প্রিয় মানুষটি তোমাকে বিয়ে করেছে। তুমি ওর থেকে সুখ চাও। কিন্তু ও নাকি তোমাকে অবহেলা করে। তুমি নিজেকে শেষ করে দিয়েছো। সেদিন মানসিক আঘাতে হসপিটালাইজড হয়েছিলো। আমি তোমার ডানে ছিলাম বামে, সামনে , পেছনে সব দিক থেকেই পাহাড়া দিলাম। তোমার জন্য আমি মানসিক ডাক্তার হলাম, দক্ষ অভিনেতা হতে হলো। সব সামলালাম। তুমি সুস্থ।আমি খুশি, কিন্তু আশ্চর্য হলাম তোমার মার একটি প্রশ্নে। তিনি আমাকে প্রশ্নই করে ফেললেন - আচ্ছা বাবা, তুমি কি 'ওকে' অভিশাপ দিয়েছো??????
... ১৬ বছর পর এমন প্রশ্নে বড্ড হেসেছি। আমি নিজেও উত্তর খুজেঁ পাই নি। আসলে কি আমি তোমাকে অভিশাপ দিয়েছি? প্রশ্নই উঠে না অভিশাপ দেবার তাই না? আমি তো তোমাকে ভালোবাসি। তবে তোমার জীবনটা এমন কেন ?? তাহলে আমার ভালোবাসাটাই কি তোমার জীবনের অভিশাপ??