somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশেষ দিন।

২৬ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১০:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ আমার জন্য বিশেষ একটা দিন।আজকের দিনটা না হলে আমি কখনও বোধ হয় লেখালিখি করতাম না।করলেও পরীক্ষার খাতায় রয়ে যেত চেনা অক্ষরগুলো।আজ থেকে বছর তিনেক আগে প্রেমে পড়ি আমি।সে অনেক কথা।তখন প্রথম কবিতা পড়তে শুরু করি….অনুভূতির প্রতিটা মুহুর্তে তখন শিহরিত হতাম আমি….তখন বৃষ্টি ভাল লাগত খুব…ভাল লাগত রজনীগন্ধার সুঘ্রান….গোলাপের রূপের চেয়ে তখন আমাকে মুগ্ধ করত তার রূপ।কি এক অজানা আশায় সারাটা দিন কেটে যেত তখন।লজ্জায় বলতে হয়…সেইবার ক্যারিয়ার-ফ্যারিয়ার নিয়েও বেশ নিয়ম করে ভাবতাম।কিন্তু সবকিছুই একতরফা …দ্বিতীয় পক্ষ আমার অনুভূতির ধার দিয়েও যেত না।

তার সাথে আমার প্রথম দেখা চিটাগং রেলস্টেশনে।তার ফ্যামিলিকে রিসিভ করতেই আমি গিয়েছিলাম।সাথে আমার আরেক বন্ধুও ছিল।আমাদের দুজনের চরম অনিচ্ছা সত্ত্বেও সেই রাতে স্টেশনে চক্কর কাটতে হয়েছিল দুজনকে।সেদিন ট্রেন লেইট করছিল ভীষন।ঘড়ির কাটার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল রাত।স্টেশনে প্রিয়জনকে নিতে আসা মুখগুলোয় ছিল টেনশনের ছাপ।আর আমার চোখে ছিল রাজ্যের ঘুম…শরীরে আলসেমীর আখড়া…মুখে তাচ্ছিল্য।এমন সময় চরম শব্দে জানান দিল ট্রেন যে তিনি আসছেন।আমরা খোঁজায় ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম।একসময় তাদের পেয়েও গেলাম।ঝিমানোর ঘোরে প্রথমে তাকে খুব-একটা পাত্তা-পুত্তা দিলাম না।তারা সবাই মিলে সংখ্যায় পাঁচ।গাড়িতে উঠতেই লুকিং গ্লাসে চোখ পড়ে আমার।মুহুর্তেই ঘুম আর আলসেমী বোল্টের মত দৌড়ে পালালো।হ্যা…বকের মত ফর্সা নয় সে…উজ্জল রঙের গোলগাল মুখটাতে অদ্ভুত একটা মায়া খেলা করছিল।চুলগুলো ঠিক বোঝা গেল না প্রথমেই…বেনী করে রেখেছিল।চোখ দুটোয় কাজলের ছিটে লক্ষ্যনীয়।ঘুমের ঘোরে চোখ দুটো যেন বুজে এসেছিল তার।মুখে বিরক্তির ভাবটুকুর সবটুকু দিয়ে দিল ট্রেনটাকে।টুকটাক কথা হচ্ছিল …পরিচয় পর্ব যাকে বলে আর কি!!! যা হোক…তাদের নিদিষ্ট বাড়িতে পৌছে দুই বন্ধু যে যার বাসায় চলে এলাম।সেই রাত আমার জীবন প্রথম প্রেমজনিত নির্ঘুম রাত।

সাধারনত আমি সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোয় অনুপস্হিত থাকতেই ভালোবাসি।বিয়ে,গায়ে হলুদ কিংবা বউ-ভাতের মত ব্যাপারগুলো আমার কাছে কোনদিনি তেমন গুরত্ব পায়নি।কিন্তু যে কারনে তিনি ঢাকা হতে ট্রেন ভাগিয়ে এসেছিলেন সেটা হলো বিয়েতে যোগদান।শুনে মর্মাহত হয়েছিলাম।কিন্তু সেবার গিয়েছিলাম ঐ বিয়েটাতে।সন্ধ্যার আড্ডাটুকু সন্ধ্যাতেই শেষ করে যখন বাড়িতে ফিরছিলাম সেদিন অনেক বন্ধু-বান্ধবের মুখে প্রশ্নবোধক চিন্ন ছিল।কিরে সীমান্ত ..কই যাস?? এত তাড়াতাড়ি??? পরীক্ষা নাকি???
মুখে একটা রহস্য-হাসি দিয়ে ফিরে এসেছিলাম।পরিপাটি পোশাক পড়ে…মুখে ক্লিন শেভ নিয়ে সেদিন যেন ভদ্রছেলেটি সেজে গিয়েছিলাম বিয়ের ক্লাবে।চোখ খুঁজেছে শুধু ঐ মায়াবতী মুখখানি।ললনার ছড়াছড়ি…প্রসাধনের উগ্রতা…আর কৃত্রিম সৌজন্যতাবোধে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম।ঠিক তখনি আমার চোখ খুঁজে পায় প্রশান্তি।উগ্র সাঁজ নয়…হালকা পেস্ট কালারের একটা শাড়ি পড়ে…খোলা চুলে তিনি টর্নেডো হয়ে ধেয়ে এসেছিলেন আমার পানে।স্নিগ্ধতা আর মুগ্ধতা…আর কিছু নেই।সেদিনি প্রথম দেখেছিলাম তার চুল কোমড় ছাড়িয়ে নেমে গেছে বহু নিচে।মানুষ এত সুন্দর হয় কেন???

তারপর গল্পের মত এগিয়ে যায় কিছু ঘটনা।যতদিন ছিল ততদিন তার রূপে আর কথায় আমি নতুন করে প্রেমে পড়তাম।আর কিছু লিখব না...

কাকতালীয়ভাবে তার সাথে আমার শেষ দেখাও স্টেশনেই।কিছু অভিমান জমেছিল তখন…আমার মনেও…হয়তো তার মনেও।শেষ দৃশ্যটুকু এখনও প্রায় রাতেই আমার ঘুম ভাঙিয়ে দেয়…চলে যাচ্ছে ট্রেনটা…সে আমার দিকে বিন্দুমাত্র তাকাচ্ছে না…যেন চেনেই না আমাকে…প্ল্যাটফর্মে একা আমি দাঁড়িয়ে আছি তার একটু দৃষ্টির অপেক্ষায়।ট্রেনটা প্ল্যাটফর্মের শেষ প্রান্তে পৌছার একটু পরে জানালা দিয়ে তার একটু উকি।সে কি দেখছিলো আমি চলে গিয়েছি কিনা??

তাকে কনভিন্স করার জন্যই কাক যেমন ময়ূর সাজে আমিও লেখক সেজেছিলাম।প্রেমের কবিতা লেখে…রম্যের লুলামি দিয়ে হাসাতে চেয়েছিলাম তাকে।পারিনি সেটা বলাই বাহুল্য।একটা সময় সে ব্লক করে দেয় আমাকে।এত উপেক্ষা কখনও পাইনি।তবুও তার জন্য কি একটা অনুভূতি খেলা করত মনটাতে…ঠিক বোঝাতে পারব না।আর দেখা হয়নি আমাদের।হয়তো আর কখনও হবেও না…।বিশ্বায়নের যুগে যেখানে যোগাযোগের এত সুযোগ-সুবিধা সেখানে আমি আর কথাই বলতে পারলাম না তার সাথে।আমি তো শুধু বুঝাতে চেয়েছিলাম আমি কতটুকু ভালোবাসি থাকে।

সে হয়তো আর কখনই জানতে পারবে না আমি এখনও সিগেরেট খাই কিনা??? জানবে না এখনও ক্রিকেটের জন্য এত পাগল কিনা আমি??/ হয়তো বিষন্ন সন্ধ্যায় তার ফলিত রসায়নের বইয়ের মাঝে আমার লেখাগুলো তার চোখে ভাসবে না।হয়তো সে জানেও না আমার গল্পের নায়িকার নাম বদলে গেছে কিছুদিন আগে….হয়তো জানবে না এখন সাহিত্যের চেয়ে রাজনীতি নিয়ে বেশি স্ট্যাটাস দেই আমি।হয়তো জানবে না সর্বভূক নাম দিয়ে ব্লগে রম্য লেখার অপচেষ্টা করে যাচ্ছি আমি।
তবু যদি কখনও জানতে ইচ্ছে হয় তবে জেনো এখন সিগেরেটের পরিমান বেড়েছে অনেক বেশী।ক্লীন শেভের আগের সীমান্তকে এখন অনেকটাই জংলী লাগে খোঁচা দাড়িতে।চুল পড়ে ন্যাড়া হচ্ছি দিন দিন।তবু কেন জানি অদ্ভুত ভালো আছি।পিছুটান যে নেই।সিগেরেট খেতে মানা করতে।কমিয়ে দিয়েছিলাম অনেক।গত পরীক্ষা থেকে আবার কেন জানি পরিমান বেড়েছে জ্যামিতিক হারে।ক্যান্সার হয়ে কোনদিন হাসপাতালে থাকলে …আসবে তো আমার দেখতে??? নাকি জানতেও পারবে না??? আমি কোমায় চলে যাবার আগেই চলে এসো…শেষবার দেখতে চাই।

ও…বলতে ভুলেই গিয়েছিলাম…..শুভ জন্মদিন…..অনামিকা।ভালো থেকো হাজার খারাপের ভীড়ে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×