somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আত্নকাহিনী।

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমার নাম চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।সরকারি অনুদানে চলি বলে আমাকে পাবলিক ইউনিভার্সিটি বলা হয়।আমার অবস্হান জোবরা নামক একটি গ্রামের পাশেই।আমার আয়তন কত তা কোন অ-সাধারন জ্ঞান বইতে আজও পাইনি।বোধ হয় বি.সি.এস টাইপ পরীক্ষাতে আসার অনুপোযোগী বলে কেউ গজ-ফিতা নিয়ে আমাকে মেপে দেখেনি।তবে যেভাবে “অমুক” কবিতায় “আছে” শব্দটি কতবার আছে টাইপ মার্কা প্রশ্নের স্রোত দেখা যাচ্ছে প্রতিবছর আমার আয়তন নিয়ে অবশ্যই অদূর ভবিষ্যতে প্রশ্ন আসবেই।সবুজে ভরা আমার সারা শরীর।বেশ কয়েকটা মনুমেন্টও আছে…স্মৃতিসৌধ,শহীদমিনার,বীরশ্রেষ্ঠ ব্লক ইত্যাদি।আমার জন্ম ষাটের দশকে।খুব একটা বড় ছিলাম না তখন।আজ ২০১৩ তে এসে মানুষের মত আমারও শারীরিক বৃদ্ধি ঘটেছে অনেক।

আমার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে যা বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আর নেই।তার নাম শাটল ট্রেন।এই ট্রেন দিনে কমপক্ষে এক কোটি গালি-গালাজ হজম করে তার ধীরগতি আর স্হানের অপ্রতুলতার কারনে।কিন্তু আমি জানি ছাত্র/ছাত্রীরা এই ট্রেনকেই সবচে বেশী মিস করে তাদের বিদায় বেলায়।হয়তো আজ থেকে দশটি বছর আগে যে আমার কোন এক ফ্যাকাল্টির ছাত্র ছিল সে রেলক্রসিংয়ে আটকে পড়া রিকশায় এই ট্রেন দেখে তার সোনালী দিনগুলোকে মনে করে অফিসে যায়।হয়তো সেও কোন এক বগির ড্রামার ছিল নয়তো ছিল মেইন ভোকালের দায়িত্বে অথবা এও হতে পারে তার কাজ ছিল লিরিক্স মনে করিয়ে দেয়া কিংবা তার গলা মেলানো ভেঙে দিত সব সুর আর তাল।ঝুটত বন্ধুদের হাসি আর ঠাট্রা।কিন্তু শাটল ট্রেন নিয়েও রাজনীতির শেষ নাই।একেকটা বগির দখল নিয়ে কখনও কখনও আমার গায়ে ছিটকে পড়ে রক্তের ফোয়ারা।খারাপ লাগে ভীষন যখন দেখি পড়তে এসে কোন ছাত্র নিহত হয় আরেক ছাত্রের হাতেই।

বিশাল ক্যাম্পাসজুড়ে কলা,বিজ্ঞান,বানিজ্য,সামাজিক বিজ্ঞান, আইনসহ আছে গননাযোগ্য আরও ফ্যাকাল্টী।টাইটেলেই বলেছি এটা একটা তথ্যবিহীন রচনা তাই ডিপার্টমেন্ট,ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা বলতে পারলাম না।

আমি সবসময় মুখরিত থাকি এটা বলা যাবে না।বিকেল চারটার ট্রেন যাবার পরেই আমি যেন মধুসূদনের মহাশ্মশান হয় পড়ি।কিন্তু আমার হলগুলো বেশ মুখর থাকে এমনকি কখনও কখনও মধ্যরাত পর্যন্ত।নানান জেলা,নানান অঞ্চল হতে ছাত্র-ছাত্রীরা আসে হলগুলোতে।বছর পাঁচেক পাশাপাশি থেকে সবার মধ্যে যেন আত্নীয়তা গড়ে ওঠে।বিদায়বেলায় এই আত্নীয়তার বাঁধন ছেঁড়া বড় কষ্টের হয়ে দাড়ায়।হয়তো ছলছল করা চোখ আর আটকে আসা গলার স্বরটুকুই তার তার শেষ স্বাক্ষী হয়ে নির্জনতা খোঁজে।কিন্তু কি আর করা?? জীবন তো এমনই।একটা সময় আসে যখন সবকিছু ছাড়তেই হয়।

আমি বছরে বেশ কয়েক মাস বন্ধ থাকি।দুটো ঈদের বন্ধ,দূর্গা-পূজোর বন্ধ,বৌদ্ধ-পূর্নিমার বন্ধ ইত্যাদি।তবে এগুলো ছাড়াও আরেকটা বন্ধ আছে।সেটি হল মারামারির বন্ধ।যখন দুটো আধিপত্য লোভী দল রক্ত ঝরিয়ে আমাকে দখল করতে চায় তখন পরিস্হিতি ঠান্ডা করতে মাস দুমাসের জন্য আমার দরজায় তালা ঝুলানো হয়।আর আমাকে পরিনত করা হয় পুলিশ ক্যাম্পে।মাঝে মাঝে মনে হয় ছাত্র সংখ্যার চেয়ে আমার জায়গায় পুলিশের সংখ্যাই বেশী।যারা হাতে লাঠি নিয়ে,মাথায় হেলমেট পড়ে এমন বেশে দাঁড়িয়ে থাকে যেন এখুনি বক্সারের যুদ্ধ শুরু হবে।

ছাত্র-ছাত্রীদের আড্ডা দেবার জন্য আমার কাছে জায়গার অভাব নেই।জারুলতলা,হতাশার মোড়,সুনামী গার্ডেন,বোটানিকাল,ঝুপরী,শহীদমিনার প্রাঙ্গন ইত্যাদি অন্যতম।লেডিস হলের সামনের বেঞ্চিগুলো জনপ্রিয় প্রেম করার জন্য।ও…লাইব্রেরীটার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম।আসলে কি বলব ছাত্র-ছাত্রীরা এই দিকটায় এত কম আসে যে আমি ভুলেই যাই এর কথা।ঝুপরী আমার অন্যতম আকর্ষন।এগুলো সারাটা বছর ভরপুর থাকে ক্লাস ফাঁকি দেয়া ছেলেমেয়েতে।গিটার,বাঁশি আর কাঠের টেবিল চাপড়ে বিট তুলে এখানে গাওয়া হয় রবীন্দ্র,নজরুল,ভাওয়াইয়া,লালন আর ব্যান্ড।

একটা ব্যাপার আমার সহে গেছে।তা হলো প্রবীনদের বিদায় দেয়া।প্রতিবছরি নতুনরা এসে জায়গা নিয়ে নেয় প্রবীনদের।তবে আমি জানি পড়ালেখার পাঠ চুকানো ছেলে-মেয়েগুলো আমাকে কতটা মিস করে।যাবার বেলায় সবার মুখে থাকে বিষন্নতার ছাপ।চোখের জল ফেলতে না পারা মুখগুলো হয়ে থাকে নীরবতার প্রতীক হয়ে।শেষবার পথ হাঁটতে হাঁটতে সবাই পেছনে ফেলে আসা দিনগুলোকে মনে আউড়িয়ে নেয়।

এই শহীদমিনারের পাশ দিয়েই হয়তো প্রিয়জনের সাথে হয়েছিল প্রথম দেখা….সেই নীল ড্রেস আর খুলে রাখা ভেজা চুল..আ..হা।এই বুদ্ধিজীবি চত্বরেই যেন লুকিয়ে আছে গ্রুপ স্টাডির ফাঁকে ঝাল মুড়ির স্বাদের চিহ্ন।আবার এমনও আছে এই স্টেশনই তোমার সাথে হয়েছিল শেষ দেখা টাইপের অনেক গল্প।আবার কোন সুন্দরীর নাম আর ডিপার্টমেন্ট খোঁজে পিছু নেবার ঘটনাও নিতান্ত কম নয়।

প্রেম হয় অনেক।প্রায় পঞ্চাশ বছরের ইতিহাসে কত প্রেম আর বিরহের ঘটনা আছে তার সঠিক হিসেব নেই।এদের অনেকেরই বিয়ে হয় আবার অনেকরই হয় না।যাদের হয় তাদের প্রেম স্বার্থক।তারা মাঝে মাঝে আমার কাছে আসে সুখস্মৃতির প্রদীপ জ্বালাতে।আর যারা বিয়ের ফিতা কাটতে পারে না তারা আমাকে ভুলে থাকতে চায় দুঃস্মৃতির ভয়ে।এমনও আছে এক সাথে অনেকদিন মেশার পরও বলতে না পারা নিজের না বলা কথাটি।হয়তো সে জানতে পারে আরও কয়েক বছর অন্য কারও কাছে।

আসলে আমার কাছে গল্পের শেষ নেই।বাংলা সিনেমার হতচ্ছাড়া পরিচালকগুলো নাকি গল্প খুঁজে পায় না।আরে বেটা…এসে ঘুরে যা একবার এখানে।একদিনে কমপক্ষে একশটি গল্প পাবি।

প্রতিবছর প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রী ফেসবুকের মায়া কাটিয়ে,সাকিবের ব্যাটিং বীরত্বের কাহিনী বাদ দিয়ে,ক্যাটরিনার নতুন ছবি দর্শনের লালসা ছুঁড়ে বইয়ের শুকনো পাতাগুলো চিবিয়ে খায় ভর্তি পরীক্ষায় টেকার জন্য।বেশীর ভাগই পারে না।যারা পারে তারা নিঃসন্দেহে ভাগ্যবান।

যাইহোক,আমার ছাত্র-ছাত্রীরা জীবনে সুখে থাকুক,জীবনে প্রতিষ্ঠিত হোক এটাই আমার শেষ চাওয়া।আর একট অনুরোধ….সময় পেলে এসো কিন্তু আমাকে দেখতে।আমি কিন্তু মনে রাখব তোমায়….ইট-কাঠের দালানে প্রান নেই বলে ভুলে যেও না তোমার ফ্যাকাল্টীকে।সুযোগ পেলেই এসো।ভালো থেকো….অনেক ভাল।


১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×