somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সীমান্ত প্রধান
যতবার মানুষ হওয়ার চেষ্টা করেছি, ততবারই পুরুষ হয়ে উঠি। তুই শালা একটা ‌‘পুরুষ’ শব্দটি সম্ভবত পৃথিবীর নিকৃষ্ট একটা গালিতে রূপান্তরিত হবে। পুরুষ হিসেবে গর্ব করার কিছু নেই, আমি লজ্জিত, সত্যি লজ্জিত যে আজও মানুষ হতে পারিনি।

লজ্জা নয়, গর্ব করেই বলো ‘আমার মাসিক চলছে’

২২ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


‘পিরিয়ড’ বা ‘ঋতুস্রাব’ অথবা ‘মাসিক’ আর পাঁচটা স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়ার মতোই একটি প্রক্রিয়া। তবুও ঋতুস্রাবের মত স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে ঘিরে এখনো এই সমাজে নানা কুসংস্কার রয়ে গেছে। একজন নারীর ‘পিরিয়ড’ বা ‘ঋতুস্রাব’ অথবা ‘মাসিক’ হলেই তাকে এ সমাজ অশুচির তকমা দিয়ে থাকে! এ সমাজে এমন সংস্কৃতি বহুকাল আগের থেকেই চলমান।

ধরুন একজন নারী প্রতিদিনের মতোই পরের দিনের বেশ কিছু কাজের রুটিন তৈরি করে ঘুমোতে গেলেন। পরেরদিন সকালে উঠে তিনি অনুভব করলেন, তার ইউটেরাসে ব্যথা, তখন কি তার পক্ষে সম্ভব নতুন একটি দিন শুরু করা? কারণ, একই সময় তার শরীরের নানা অংশ ক্র্যাম্প হয়ে যাবে, শুরু হবে ‘ঋতুস্রাব’।

একজন মেয়ের জন্য ‘ঋতুস্রাব’ আনন্দের নয়, উল্লাসের বিষয়ও নয়। আবার কিন্তু লজ্জার বিষয়ও নয়। তবে এই ‘ঋতুস্রাব’ একজন মেয়েকে কতটা কষ্ট দেয়, কতটা যন্ত্রণা দিয়ে থাকে, তা একজন মেয়েই ভালো বলতে পারবে। তবে সব যন্ত্রণা সে নিজেই মুখ বুঝে সহ্য করে যায়। চিৎকার করে কাঁদতেও পারে না। বলতেও পারে না তার যন্ত্রণাটা কোথায়?

‘ঋতুস্রাব’র দিনগুলিতে একজন নারীর মন-মেজাজ এতটাই খারাপ থাকে যে, অনেক সময় সেই রাগ গিয়ে পড়ে সন্তান অথবা কাছে থাকা কোন মানুষের উপর। কিন্তু কেউ বোঝার চেষ্টা করে না, এই নারীর ‘ঋতুস্রাব’ চলছে, এবং এটি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক একটি শারীরিক প্রক্রিয়া।

এ সমাজের অনেকে আবার ‌‘ঋতুস্রাব’ চলাকালীন মেয়েদের অপবিত্র তকমা দিয়ে থাকে। সমাজের একটা বড় অংশ এখনও মনে করেন, একজন মেয়ের ‘ঋতুস্রাব’ হওয়া মানে সে অশুচি, অ-পবিত্র! যার ফলে ‘ঋতুস্রাব’ চলাকালীন মেয়েরা রান্না করতে পারবেন না, মন্দিরে যেতে পারবেন না, আচারে হাত দিলে, তা খারাপ হয়ে যাবে, এছাড়া আরও অনেক কুসংস্কার প্রথা চালু আছে এই ‘ঋতুস্রাব’ নিয়ে।

তবে অবাক করার বিষয় হচ্ছে যে, এখনও বহু নারী বাজারে গিয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে লজ্জা পান! দোকানের লোকও ন্যাপকিন এমনভাবে কাগজে মুড়ে দেন, যেন এগুলো অবৈধ কোন কিছু! যেন, কত গোপন একটা ব্যাপার!

কেন? স্যানিটারি ন্যাপকিন বিক্রি করার সময় একজন দোকানদার এতোটা রাখঢাক করবেন কেন? আর মেয়েটিই বা কেন এতোটা ইতস্তত করে তা গোপন করে কিনবে? ‘ঋতুস্রাব’ হওয়া কি খারাপ?

তাহলে কি একজন নারীর উচিত, এটা লুকিয়ে রাখা? অথচ একজন মেয়ের ‘ঋতুস্রাব’ শুরু হওয়া মানে, ওই মেয়ে আরেকটি প্রাণের জন্ম দিতে পারার শক্তি সঞ্চার করেছে, এমনটাই তো জানান দিয়ে থাকে। এই ‘ঋতুস্রাব’ এর প্রচলন না থাকলে আমার মতো পুরুষগুলোই বা কিভাবে এই পৃথিবীর আলো-বাতাস দেখত?

এছাড়া ‘ঋতুস্রাব’ তো একটা স্বাস্থ্যকর প্রক্রিয়া এটাই বা কেন বুঝতে চাই না আমরা? নিয়মিত ‘ঋতুস্রাব’ হওয়া মানে অনেক রোগ-প্রতিরোধ সহায়ক। তাহলে এ নিয়ে এতোটা নোংরামি কেন? কেন এতোটা রাখঢাক? আর মেয়েরাই বা কেন এ নিয়ে এতটা অস্বস্তিতে ভোগেন?

এখনও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়েরা প্রতি মাসে এক সপ্তাহ করে স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দেয় ‘ঋতুস্রাব’ চালু হলে। কেন না, অন্য কেউ যদি জানে তার ‘ঋতুস্রাব’ চলছে, তাহলে এ নিয়ে তাকে নানা টিটকিরিমুলক কথা শুনতে হবে। যার জন্য সে নিজ থেকেই স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয় লজ্জার হাত থেকে বাঁচার জন্য। আর এই সংস্কৃতির জেরে অনেক মেয়ের পড়াশোনারও ক্ষতি হয়।

কিন্তু না। ‘ঋতুস্রাব’ নিয়ে মানুষের ভুল ধারণা পরিবর্তন করার সময় এসেছে। যতদিন না ‘ঋতুস্রাব’ নিয়ে এসব কুসংস্কার দূর হয় ততদিন পর্যন্ত এ নিয়ে প্রতিটি মেয়েরই লড়াই করা উচিৎ। সেই সাথে দরকার, ‘ঋতুস্রাব’ চলাকালীন সময় যাতে কোন মেয়ে লজ্জা না পায়, লজ্জা ভেঙে যাতে সে বাইরে আসতে পারে, সে জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

মেয়ে, আর নয় মুখ লুকিয়ে কাঁদা, ‘ঋতুস্রাব’ স্বাভাবিক, এ নয় কোন বাধা। জাগো নারী জাগো, ‘ঋতুস্রাব’ নিয়ে কুসংস্কার, লজ্জা ভাঙার সময় এসেছে, জাগো এবার জাগো। লজ্জা নয়, গর্ব করেই বলো ‘আমার মাসিক চলছে’। জয়তু নারী।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:১১
২৮টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×