ফিলিস্তিনে নির্বাচারে বিমান থেকে গোলা হামলার এ পর্যন্ত ১৭২ জন নিরাপদ মানুষ প্রাণ দিয়েছে। আহত হয়েছেন হাজারেরও বেশি। যাদের অনেকেই হয়তো মৃতের তালিকায় নাম লেখাতে বাধ্য হবে। ইসরায়েলী সেনাদের এই বর্বরোচিত হামলায় বিশ্ব বিবেক সোচ্চার হয়েছে। দেশে দেশে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হচ্ছে কিন্তু এ নিয়ে ভূক্ষ্রেপ নেই ইসরায়েলের। কারণ তারা জানে তাদের গুরু ও অস্ত্রের যোগানদাতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই হামলায় টু শব্দটিও করেনি। তারা মুখে কুলুপ এটে বসে আছে। যেমন নিরবতা পালন করেছে সৌদি আরব, কাতার, ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। তাই ইসরায়েলের গুলিতে ফিলিস্তিনের যত শিশুই রক্তাক্ত হোক না কেন, নিরাপরাধ মানুষ মরুক না কেন তাতে কিছুই হবে না তাদের। তারা হামলা চালিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দেবে। হামলা চালাতে চালাতে এক পর্যায়ে অতীতের মতো বিরতি দেবে।এবারও সেই যুদ্ধবিরতির কথা জানিয়েছেন ইসরায়েল।
প্রথমত: এটা যুদ্ধ নয়। তাই যুদ্ধ বিরতির সুযোগ নেই। এটা আগ্রাসন। আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে। যেমন হয়েছিল ইরাকে-আফগানিস্তানে। আর এই ঘটনায় ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়াতে হবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে একজন মানুষ হিসেবে। কোন জাতি গোষ্ঠির পক্ষে বিপক্ষে নয়। কারণ ধর্ম-জাতি-গোষ্ঠীতে বিভক্ত করা যুদ্ধবাজদের বড় কৌশল। যেমন নাইজেরিয়ায় বোকো হারামকে দিয়ে চলছে সন্ত্রাসী কার্যক্রম। গোলার হামলা ও চুষে ছিবড়ে করে ফেলা ইরাকে এখন শিয়া সুন্নীর সংঘর্ষ বাধানো হয়েছে। পাকিস্তানেও তাই। আফগানে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। তাই এসব বিষয়ে আমাদের সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরী।
মোদ্দা কথা, ইসরায়েলে বছরের পর বছর ফিলিস্তিনে আগ্রাসন চলানোর সাহস ও শক্তি পাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে। তাদের অত্যাধুনিক অস্ত্র বিক্রির বড় বাজার ইসরায়েল। একদিকে অস্ত্রের যোগান অন্যদিকে ইসরায়েলকে দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশে দেশে চলছে সাম্রাজ্যবাদের মোড়লীপনা। যাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নিজেদের রাজতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে সদাব্যস্ত সৌদি আরব, ওমান, কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের শাসকরা। এখানে সবাই দেখছে নিজেদের উইন উইন সিচুয়েশন! তাই প্রতিবাদ নৈব্যত্তিকভাবে করতে হবে। সাম্রাজ্যবাদীদের চরিত্র না বুঝে শুধু শুধু ইহুদীদের দোষ দিলে সম্যাসার সমাধান মিলবে না। ইসরায়েলে ইহুদীর জায়গায় অন্যরা থাকলেও ঘটনার ফলাফল একই হতো। অস্ত্র নির্মাতা এবং সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর কাছে একমাত্র চাওয়া মুনাফা। তা শত শত শিশুর রক্তে হোক, হাজার হাজার মানুষের প্রাণের বিনিময়ে হোক। অস্ত্র ব্যবসা পৃথিবীর সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা। একে টিকিয়ে রাখতে হলে চাই অস্ত্রের বাজার। বাজার না পেলে গুলি খরচ হবে কোথায়-কেনা বোম গুলো ফুটবে কোথায়? এজন্যই দেশে দেশে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা জিইয়ে রাখতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অস্ত্র উতপাদনকারী দেশগুলো। যে পরিস্থিতি খারাপ সেটাকে আরও বাড়িয়ে দেয়া এবং যেখানে নেই সেখানে বিরোধ উস্কে দেয়া হলো তাদের ধর্ম। সে কারণে প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি সাম্রজ্যবাদী চক্রান্ত-কূটকৌশল সর্ম্পকে সচেতন থাকতে হবে গণতান্ত্রিক শুভবুদ্ধির চেতনা সম্পূর্ন প্রগতিশীল মানুষদের। যতই সময় লাগুক, যতই কঠিন হোক এ পথের বিকল্প নেই।