মোটর-সাইকেলের ব্যাপক স্পীড আছে অথচ বডি প্রোটেকশন নেই। তাই এ ভিকেল সবচেয়ে মারাত্নক। অ্যাকসিডেন্ট হলে জীবন যাবে অথবা সারা জীবনের জন্য পঙ্গু। কতগুলো বিষয়ে সতর্ক হতে পারলে অ্যাকসিডেন্ট এরিয়ে চলা যেতে পারে। তারপর ভাগ্য.....।
১. বেপরোয়া চালনা ঃ বেশি স্পিডে বা বেপরোয়া মোটর সাইকেল চালানো রীতিমত বোকামি। এটা কোন বীবত্বের কাজ নয়। খুবই সহজ কাজ। বরং খুব ধীরে চালানো কঠিন কাজ। খুব দ্রুত -বিকট আওয়াজে চালালে সবাই গালি দেয়। বিরক্ত, অতিষ্ট হয়ে- অভিশম্পাত করে। বলে, এরা অ্যাকসিডেন্ট করে না ! মরে না ! ইত্যাদি।
২. ১ সেকেন্ড ভুল ঃ মোটর সাইকেলের অ্যাকসিডেন্ট মানেই বুঝতে হবে মারাত্নক দূর্ঘটনা। সামান্য ভুলের কারণে মৃত্যুবরণ। মাত্র ১ সেকেন্ড। ভুলটি হয়ত অন্য কেউও করবে কিন্তু মৃত্যু হবে আপনার।
৩. অধিক সতর্কতা ঃ আমাদের দেশে প্রায় সকল রাস্তাতেই ভ্যান, রিক্সা, সিএনসি, ভটভটি(লছিমন), ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা প্রভূতি চলে। এই সকল যানবাহনের চালক কেউ’ই প্রশিক্ষিত নয়। ট্রাফিক আইন বা রাস্তায় চলাচলের নিয়ম কানুন কিচ্ছু জানে না। গিয়ার দেয়া, স্টিয়ারিং ধরা-শিক্ষা বলতে এটুকুই। ওদের ভুলের কারণে অন্য মানুষের মৃত্যু হতে পারে-শিশু সন্তান এতিম অনাথ হবে-এ ভাবনা ওরা ভাবে না। নিজেরও মৃত্যু হতে পারে-এ চেতনাটুকুও ওদের মধ্যে খুব একটা কাজ করে না। ওরা নিয়ম মেনে রাস্তায় চলবে-এমনটি আশা করা যায় না। দেখা যায় হঠাৎ ডানে বা বামে ঘুরে গেছে। কোন সিগনাল বা ইশারা পর্যন্ত দেয় না। এমন কি ডানে সিগনাল দিয়ে বামে ঘোরে। সেজন্য নিজে যত বেশি সতর্ক হয়ে চলা যায়,ততই মঙ্গল। মোটর-সাইকেল একটু আস্তে বা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চালালে ব্রেক চেপে অ্যাকসিডেন্ট থেকে বাঁচা যায়।
৪. একটা ভুল ধারনা ঃ অনেকে মনে করেন দ্রুত চালালে খুব তাড়াতাড়ি গন্তব্যে পৌঁছা যায়। আপাত দৃষ্টিতে এটা সত্য। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে একদম ভুল।। কারণ-ভদ্রভাবে চালিয়েও পাঁচ-সাত মিনিটে অনেক দূর যাওয়া যায়। ত্রিশ-চল্লিশ কিলো. পথ অতিক্রম করতে খুব বেশি সময়ের হেরফের হয় না। ভদ্রভাবে চালিয়ে যে সময় লাগবে, পাগলের মতো ছুটলে হয়ত তার চেয়ে ৫-৭ মিনিট কম লাগবে। এই সময়টুকু মাত্র! এটাকে দ্রুত পোঁছা বলা যায় না। একটা জীবনের জন্য এ সময় একদম তুচ্ছ। প্রতিদিন মিছেমিছি কত সময় আমরা নষ্ট করছি। আর রাস্তায় উঠলে মিনিটের হিসেব কষছি পাই- টু-পাই।
৫. সর্বপ্রথম কাজ ঃ বাসা থেকে বের হওয়ার সময় দুই চাকাতে কোন সমস্যা আছে কিনা দেখে নিতে হয়।
৬. নিয়ন্ত্রণ রাখাঃ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চললে যে কোন সমস্যা আগেই বুঝা যায়। ফলে বড় রকমের কোন দূর্ঘটনা থেকে বাঁচা যায়।
৭. হাইরোড ঃ বিশ্বরোড বা যে সকল রোডে ভারী যানবাহন বেশি চলাচল করে, সে সকল রোডে মোটর সাইকেল চালানো উচিত নয়।
৮. রিক্সার বিকল্প ঃ লং রুটের জন্য মোটর সাইকেল ব্যবহার না করে, শহরের মধ্যে এখানে-সেখানে চলাচলের জন্য রিক্সা বা টাউন সার্ভিসের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা উচিত।
৯. হেলমেট পরিধানঃ অবশ্য অবশ্যই হেলমেট পড়ে চালানো উচিত। হেলমেট ব্যবহার অনেকের কাছে বিরক্তিকর। তবে হেলমেট মাথায় দিয়ে অনেক দূরে গেলেও মনে হয় ফ্রেসই আছি। খুব একটা ক্লান্তি বোধ হয় না। আর দূর্ঘনা ঘটলে অন্তত জীবনে বাঁচা যায়। মাথাটা দেহের অন্যান্য অঙ্গের তুলনায় অনেক ভারী। তাই অ্যাকসিডেন্ট হলে, বিশেষ করে পড়ে গেলে মাথাটাই আগে রাস্তার আছড়ে পড়ে। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মাথায় আঘাত লাগে। মাথায় খুব সাধারণ আঘাতেও মারা যায়। দেহের অন্য কোথাও এতো সাধারণ আঘাতে মৃত্যু হয় না। তাই হেলমেট পড়ে মাথাটা নিরাপদে রাখতে পারলে অনেক ক্ষেত্রে জীবন রক্ষা পেতে পারে। আর মৃত্যু লেখা থাকলে হবে। সেটা অন্য বিষয়। এ নিয়ে গোঁরামী বা বিতর্ক করা মুর্খতা বটে।
১০. মোবাইল ব্যবহার ঃ মোবাইলে কথাবলা মোটেও উচিত নয়। দূর্ঘটনা ঘটার দুই মুহূর্ত আগেও কেউ বুঝতে পারে না। যে মুহূর্তে বুঝতে পারা যায় সে মুহূর্তে করার কিছুই থাকে না। হয়ত মনে হতে পারে অনেক দিন মোবাইলে কথা বলেছি কিছুই হয়নি। হয়নি বলে হবে না-এমন ভাবনা আপনাকে ভয়ংকর সাহসী করে তুলতে পারে। এক সময় জীবন দিয়ে সেই অতি সাহসীকতার মূল্য পরিশোধ করতে হতে পারে। কাজেই আগে থেকে সাবধান হওয়ার মধ্যে কল্যাণ আছে।
১১. ওভারটেক ঃ চালানোর সময় কেউ ওভারটেক করে সামনে গেলে তাকে ওভারটেক করে সামনে ওঠার চেষ্টা করা উচিত নয়। এ ধরনের মানসিকতা নিতানই ছেলেমি। তবে স্বাভাবিক গতিতে যদি কাউকে ওভাটেক করতে হয় তা করা যাবে।
১২. সামনের গাড়ি ঃ যে কোন ধরনের মোটর বা গাড়ির কাছাকাছি পিছনে পিছনে যাওয়া ঠিক নয়। এমনও হতে পারে সামনের গাড়ি কোন সিগনাল না দিয়েই ইউটার্ন করেছে। এরূপ ক্ষেত্রে যেন নিজেকে রক্ষা করা যায় এতটুকু দূরত্ব বজায় রেখে চলা উচিত। বিশেষ করে রিকসা, ভ্যান, মোটর সাইকেল, সাইকেল চালকেরা প্রাই ইউটার্ন করে।
১৩. পিছনের গাড়ি ঃ নিজের মোটর সাইকেলের পিছনে অন্য কোন মোটরযান থাকা যাবে না। পিছনে পিছনে কোন মোটরযান আসলে তাকে সাইড দিয়ে সামনে দিতে হবে। তাতে অনেক লাভ আছে। কোন কারণে কোথাও টোকা লেগে ছোটখাট দূর্ঘটনার কারণে আপনি বা আপনার মোটর-সাইকেল থেকে কেউ রাস্তার উপড়ে পড়ে গেলে ওই পিছনের মোটর দেহের উপর দিয়ে চলে যাবে। ফলে দেহটি ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে। বাঁচার কোন সম্ভাবনাও থাকবে না।
১৪. আরোহী সংখ্যা ঃ মোটর সাইকেলে দুই জনের বেশি অরোহন করা উচিত নয়। যদি কোন কারণে জরুরী হয়েই যায় তবে খুব সতর্কতার সাথে চালানো উচিত। কাছাকাছি চলাচল করা যেতে পারে। লং রুটের জন্য একদম করা যাবে না।
১৫. অন্ধবাঁক ঃ অন্ধবাঁকে খুব আস্তে চালানো উচিত। যে বাঁকে সামনে কে আসছে বা যাচ্ছে দেখা যায় না তাকে অন্ধবাঁক বলে। তা না হলে বিপরীত দিক থেকে উদ্ভট কোন পাগল ধরনের চালক দ্রুত বেগে এসে আপনার মোটর সাইকেলের উপর উঠে পড়তে পারে। আপনি বুঝতেই পারবেন না কি হ’ল। শুধু শুধুই জীবন দিতে হতে পারে আপনাকে।
১৬. ব্রেক চাপা ঃ যে কোন ধরনের বাঁকে পিছনের ব্রেক চাপা উচিত নয়। এতে করে পিছনের চাকা সামনে গিয়ে প্রায় ৯০ থেকে ১৬০ ডিগ্রি কোণে ঘুরে যেতে পারে। এবং দূঘটানা মাস্ট। সে জন্য সামনে কোন বাঁক আসলেই বাঁকের মাত্রা অনুযায়ী আগেই স্লো করতে হবে। এবং প্রয়োজনে আস্তে করে সামনের ব্রেক চাপতে হবে। তাহলেই মোটর-সাইকেল নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আসবে। এটা এক রকম নিশ্চিত করে বলা যায় যে দ্রুত বেগে থাকা অবস্থায় পিছনের ব্রেক চাপলে অবশ্যই মোটর-সাইকেল উল্টে যাবে। তবে হঠাৎ করে যদি বে-খেয়ালে থাকা অবস্থায় কোন বাঁক এসে পড়ে তবে ক্লাচ, সামনে ব্রেক, পিছন ব্রেক সাবধানে একসাথে চেপে মোটর-সাইকেল নিয়ন্ত্রণে আনা যেতে পারে। এক্ষেত্রে চালককে প্রশিক্ষিত ও এক্সপার্ট হতে হয়।
১৭. মনোযোগ ঃ চালানো অবস্থায় কথা বলা বা মনে মনে কোন অংক কষা, টাকা-পয়সা বা অন্য কিছুর হিসেব নিকেশ করা বা কোন দুঃশ্চিন্তা বা সুখের চিন্তা করা উচিত নয়।
১৮. আনন্দ ঃ বেশি আনন্দিত অবস্থায় চালানো ঠিক নয়।
১৯. হাত ছেড়ে দেয়া ঃ রাস্তায় চালানোর সময় দু’হাত ছেড়ে দিয়ে পরীক্ষা করা উচিত নয় যে, দুই হাত ছেড়ে দিয়ে চালাতে পারেন কি’না। হয়ত এমন দেখে থাকতে পারে না যে, অন্যদের অনেকেই পারে। এমনটি করতে যদি ইচ্ছেই হয় তবে কোন খেলার মাঠে অত্যন্ত সাবধানে প্র্যাকটিস করতে পারেন। আর এভাবে চালাতে শেখার মধ্যে বিশেষ কোন গৌরব নেই।
শেষ কথা ঃ অ্যাকসিডেন্ট এমন একটি ঘটনা যা সিচ্যুয়েশন সৃষ্টি হওয়ার এক মুহূর্তের মধ্যে সংঘটিত হয়। এখানে কারো করার কিছুই থাকে না। আমরা যত বুদ্ধিই খাটাই না কেন সিচ্যুয়েশন সৃষ্টি হলে তা রোধ করা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। তবুও সেই সিচ্যুয়েশন যাতে সৃষ্টি না হয় তার জন্য আমরা সতর্ক হতে পারি মাত্র। তারপর আল্লাহ্.........।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১১:৪৪