somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবিকা

২১ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৩:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উঁচু বিল্ডিংটার সামনে দাড়িয়ে কিমি বেশ নার্ভাস বোধ করলো। এটা তার নতুন অফিস। নতুন চাকরীতে যোগ দেবার আগে আর সবার যেমন ভয় ভয় লাগে কিমি’র ও তাই হলো।কে জানে কেমন হবে নতুন জায়গা। হয়তো দেখা যাবে বসটা মহা বদমেজাজী। যাদের সাথে তাকে কাজ করতে হবে তারাই বা কেমন হবে। তবে আর যাই হোক কিমি’র এই চাকরীটার বেতন আর অন্যান্য সুবিধা বেশ ভালো। ছয়মাসে একটা বোনাস পাবে।পুরো মাসে দশ দিনের জন্য ছুটি পাবে। তখন সে ফিরে যেতে পারবে তার বাসায়। মা-বাবার সাথে সে সময়টা সে কাটাতে পারবে। আগের চাকরীগুলোর মতো সে এই চাকরীটাতেও সে ঠিকই মানিয়ে নেবে। হাজার হোক মাস শেষে এতোগুলো ইউনিট বেতন তো আর কম কিছু নয়।

রিসিপশনে বসা মেয়েটি কিমি কে হাসি মুখে অভ্যর্থনা জানালো। ইন্টারভিউ আর হেলথ চেকআপের দিন এই হাসি খুসি মেয়েটার সাথে ভালোই সখ্য গড়ে উঠেছিলো কিমির। ঝা চকচকে অফিসটাও বেশ ভালো লেগেছে তার। তবে অফিসটা খুব ছোট। অফিস এডমিনের জন্য অল্প কয়েকজনের বসার জায়গা করে অফিসের প্রায় পুরোটা জুড়েই ল্যাবরেটরী। যেখানে কিমিকে কাজ করতে হবে। ল্যাবরেটরীটা কিমি ইন্টার ভিউ এর সময়ই দেখে এসেছিলো। হাজার হোক যেখানে তাকে কাজ করতে হবে সেই জায়গাটা কেমন না দেখে কোথাও জয়েন করা যায় না।

ল্যাবরিটরীটা খুব সুন্দর ভাবে সাজানো। একপাশে সারি সারি সার্ভার। এটাই ডাটা সেন্টার।কত হাজারটা গবেষনার তথ্য না জানি এখানে রাখা আছে। দেশের বড় বড় সবগুলো গবেষণার ডাটা এখানে প্রসেসিং করা হয়। সেন্ট্রাল নিউক্লিয়ার সেন্টার, জাতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র, ডিফেন্স সিকিউরিটি, এয়াপোর্ট সহ সব গুলো প্রতিষ্ঠানের প্রসেসিং এর কাজ করে থাকে এই প্রতিষ্ঠানটি। স্বাভাবিকভাবেই অনেক কাজের চাপ।

ল্যাবেরটরী ধরে আর একটু এগুনোর পড়েই সে দেখলো তার সহকর্মীদের। এদের সাথেই তাকে কাটাতে হবে মাসের বিশটা দিন। এদের সাথেই তাকে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। কে জানে কেমন হবে তারা। কিন্তু নতুন জায়গায় সবার সাথে মিলেমিশে কাজ করার অভিজ্ঞতা অনেক হয়েছে কিমি’র। এটা তার চতুর্দশ চাকরী। আগেও সে একই ধরনের কাজ করতো। কিন্তু আগের কোন কোম্পানীই এই কোম্পানীর মতো এতো বড় ছিলো না। এতো সুযোগ সুবিধাও কোথাও ছিলো না। তাই এই চাকরী পাওয়াটা কিমি’র ক্যারিয়ারের একটা বড় অর্জন বলা যায়।

কিমি এগিয়ে গেলো তার সহকর্মীদের দিকে। সবাই এক একটা হেলানো ধরনের আসনে শুয়ে আছেন। চোখ বন্ধ। যে কেউ দেখলে বলবে তারা পরম শান্তিতে ঘুমুচ্ছেন। কিন্ত কিমি জানে, এরা কেউ ঘুমুচ্ছেন না। প্রত্যেকেই এক মনে কাজ করছেন। প্রত্যেকের মাথার দুইপাশে হালকা নীলচে রং এর টিউব ঢুকানো আছে। টিউবগুলো একটা ব্রেইন ইন্টারফেসিং সুইচের সাথে যুক্ত। এখানে প্রত্যেকের মস্তিষ্কের লক্ষ কোটি নিউরন এক একটা অতি শক্তিশালী মাইক্রোপ্রসেসর হিসেবে কাজ করছে।অনেক মানুষের নিউরন গুলোকে একই নেটওয়ার্কের অধীনে এনে এখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রসেসিং এর কাজ গুলো করে দেয়া হয়। মানুষের মস্তিষ্কের চেয়ে বড় প্রসেসিং মেশিন এই ত্রয়বিংশ শতাব্দীতেও মানুষ আবিষ্কার করতে পারেনি। তাই এই যুগে মানুষের একটা অন্যতম জীবিকা হয়ে দাড়িয়েছে নিজেদের নিউরনগুলোকে ভাড়া দেয়া। আদিম যুগে নাকি মানুষ নিজের শরীরের রক্ত বিক্রী করে জীবিকা নির্বাহ করতো। আর আজ অনেক মানুষই এরকম প্রসেসিং প্রতিষ্ঠানে মোটা বেতনে নিজেদের মস্তিষ্ককে ভাড়া দিয়ে বেঁচে থাকে।

আর একটু এগিয়ে কিমি তার নিজের জন্য রাখা আসনটিতে বসলো। নিজের মাথার পেছনের ইন্টারফেসিং টিউবটা বের করলো। প্রথম যখন সে এই পেশায় আসে তখনই ছোট্ট একটা অপারেশ করে তার মাথায় এই ইন্টারফেসিংটা লাগানো হয়েছিলো। তার জন্য বরাদ্দ রাখা নেটওয়ার্ক টিউবটা সেখানে লাগিয়ে সে তার নতুন অফিসে জয়েন করলো।

নিজের আসনে চোখ বুঁজে আধশোয়া কিমিকে দেখে কে বলবে যে সে মন দিয়ে কাজ করছে।
৪৬টি মন্তব্য ৪৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×