somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপরবাস্তব

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৯:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
এমন একটা আবিষ্কারের পর খুব স্বাভাবিক ভাবেই পুরো পৃথিবীতে হুলস্থুল পড়ে যাবার কথা। অথচ কিমের আবিষ্কারের ক্ষেত্রে তার কিছুই হলো না। উল্টো সবাই ব্যাপারটা চেপে গেলো। বিজ্ঞান একাডেমীতে সে যখন তার আবিষ্কারের পেপারটা পড়লো, তখন সবাই নিশ্চুপ হয়েছিলো। কিছু কিছু সত্য মনে হয় আবিষ্কার করতে নেই।কিছু কিছু রহস্য মনে হয় রহস্যই থাকা ভালো। কিমেরও খুব খারাপ লেগেছিলো, সে যখন সত্যটা উপলব্ধি করলো। একটা নতুন জিনিসের আবিষ্কার যেখানে বিশাল আনন্দ আর গৌরবের ব্যাপার হওয়ার কথা , সেখানে তার এই একটা গবেষনাই পুরো মানব জতিকে হয়তো ঠেলে দিলো চরম হতাশায়।

ঘটনাটার শুরু আজ থেকে তিন বছর আগে। যখন কিম সেন্ট্রাল ল্যাবরেটরীতে একটা পরাবাস্তব জগৎ তৈরীতে কাজ করছিলো। তার প্রজেক্টের ধরন ছিলো এমন একটা জগৎ তৈরী, যেখানে তার মতোই মানুষের সিমুলেশন থাকবে।তাদেরও একটা জগৎ থাকবে। সেখানে আকাশ থাকবে, নদী থাকবে,পাহাড় থাকবে। সত্যি কথা বলতে ঠিক পৃথিবীর মতো একটা সিমুলেটেড জগৎ বলা চলে। দেড় বছরের মাথায় সে এরকম একটা সিমুলেটেড জগৎ তৈরীও করে ফেললো। কিন্তু ছোট্ট একটা বাগ ছিলো সেই প্রোগ্রামে। যে কারনে পুরো পরাবাস্তব জগৎটাই সিমুলেশনের তিন দিনের মাথায় ধ্বংস হয়ে যায়। তখনই তার মাথায় চিন্তাটা খেলে গেলো। হঠাৎ করে মনে হয়, আমাদের চারপশের এই জগৎটাও এমন কোন বুদ্ধিমান কম্পিউটারের প্রোগ্রাম নয় তো। সেই থেকে সে তার প্রজেক্টের সব কাজ বাদ দিয়ে চেষ্টা করতে থাকে প্রমান করতে যে আমাদের চারপাশের জগৎটা কোন সিমুলেশন নয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে ব্যার্থ হয়। খুব হতাশার সাথে সে আবিষ্কার করে , তার আশে পাশের পুরো এই জগৎটাই কোন একটা উচ্চমানের রিয়াল লাইফ সিমুলেশন ছাড়া আর কিছুই নয়।

কোয়ার্টজ কাচের জানালা দিয়ে বিষন্ন চোখে বাইরে তাকায় কিম। তার ভাবতেও অবাক লাগে, এই আকাশ যেটাকে সে ছোট বেলা থেকে একই রকম দেখে আসছে, যেখানে সারা রাত জেগে নক্ষত্র পতন দেখেছে, দিগন্ত বিস্তৃত ধান ক্ষেত, সমুদ্র সব কিছুই একটা অতি ক্ষমতাশালী কম্পিউটারের গননা। তার স্ত্রী নীরা, দশ বছরের ছেলে আয়মান, সবাই আর কিছুই না, কেবল একটা কম্পিউটারের প্রোগ্রামে তৈরী। আলতো করে নিজের হাতে চিমটি কাটে কিম। কই, সেতো ব্যাথা পাচ্ছে, এই ব্যাথা পাওয়াটাও আর কিছু নয়, কেবল একটা সুন্দর রিয়াল লাইফ সিমুলেশন। পুরো সত্যটা উপলব্ধি করে তার বুকের মাঝে যে খা খা হতাশার জন্ম হচ্ছে সেটাও আর কিছু না, স্রেফ একটা কম্পিউটার সিমুলেশন!


২.
বিজ্ঞার একাডেমীর প্রধান কিমের অপর পাশে চেয়ারে বসে আছে। হঠাৎ করে ইমার্জেন্সী মিটিং এর কথা বলে তাকে নিয়ে আসা হয়েছে এখানে। ঘরটা আধো অন্ধকার। খুব ভালোভাবে তাকালে বোঝা যায় বিজ্ঞান একাডেমীর প্রধান যেখানে বসেছেন, তার পেছনে বসে আছে একাডেমীর আর সব মহামান্য সদস্যরাও। কিন্তু যেহেতু একাডেমীর প্রধানই কথা বলবেন, তাই তাকে সামনের দিকে আসন দেয়া হয়েছে।

- বিজ্ঞানী কিম, আপনি যে আবিস্কারটি করেছেন, সেটার প্রতিক্রিয়া কি বুঝতে পারছেন?
কোন রকম সূচনা না করেই শুরু করলেন বিজ্ঞান একাডেমীর প্রধান জুহু।
কিম কি বলবে বুঝতে পারছিলো না।
- তারপরও আপনার গবেষনাকে আমরা শ্রদ্ধা করি। এবং আপনাকেও । এবং যেহেতু এটা প্রমানিত হয়েই গেছে, যে আমরা কেবল একটা সিমুলেটেড জগৎ, বাস্তব কিছু নই, তাহলে কেন আমরা আমাদের সুখ,শান্তি, ভাগ্য এসবকে নিয়ন্ত্রন করছি না? কেন একটা কম্পিউটার প্রোগ্রাম নির্ধারন করবে আমরা কিভাবে থাকবো, কতটা সুখী হবো, কখন কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ এসে আমাদের সাজানো সবকিছু ধ্বংস করে দেবে, সেটা কেন একটা কম্পিউটার প্রোগ্রাম নির্ধারন করবে?
জুহু ঠিক কি বলতে চাইছে কিম তা বুঝতে পারলো না। নিজে থেকেই জানতে চাইলো,
-তাহলে আমরা কি করবো?
-আমরা খুঁজে বের করবো কিভাবে আমরা সেই প্রোগ্রামের সাথে যোগাযোগ করতে পারি, তারপর আমরা সেই প্রোগ্রামকে আমাদের সুবিধামতো করে পরিবর্তন করবো।আর এ জন্য আমরা আপনার সাহায্য চাই।

কিভাবে এই জগৎটাকে নিয়ন্ত্রনকারী প্রোগ্রামটাকে পরিবর্তন করবে সে সম্পর্কে কোন ধারনা ছাড়াই কিম রাজী হয়ে গেলো। যদিও সে জানতো না তার ফলাফল হবে বয়াবহ।


৩.
মূল প্রোগ্রামের সাথে সংযোগকারী ইন্টারফেসটাতে প্রাইম নাম্বার জেনারেটকারী প্রোগ্রামটি যুক্ত করে তীক্ষ্ণ চোখে পর্যবেক্ষন করতে লাগলো কিম। এর আগেরবারো সে এভাবেই মূল প্রোগ্রামের ফায়ারওয়াল ভেঙ্গেছিলো। মূল প্রোগ্রামের সাথে যোগাযোগের একটা ব্যাকগ্রাউন্ড প্রসেস সম্ভবত সবসময় চলতে থাকে সবসময় যেটা প্যারামিটার হিসেবে র্যাযন্ডমলি একটা প্রাইম সংখ্যাকে গ্রহন করে ইন্টারফেসটির উম্মুক্ত করে। তারপর খুব সহজেই সেটার সাথে যোহাযোগ করা যায় প্রয়োজনীয় কমান্ড পাঠিয়ে। খুব সম্ভবত প্রোগ্রামটি যারা তৈরী করেছিলো, তারাই ডেমো সিস্টেমর জন্য এই প্রোগ্রামটি চালিয়েছিলো।

মূল সিস্টেমটিকে পরিবর্তনের জন্য কিছু মডিফায়ার কোড পাঠাতে হবে। পৃথিবীর বড় বড় সব প্রোগ্রামারদেন সাহায্যে যেগুলো তৈরী করা হয়েছে। একটার পর একটা ফায়ার ওয়াল ভেঙ্গে যেটা মূল প্রোগ্রামের অনেক বৈশিষ্ট্যই করে তুলবে এই পরাসাবাস্তব জগতের বাসিন্দাদের নিয়ন্ত্রনযোগ্য। এরপর এই পৃথিবী বা বলা যেতে পারে এই পরাবাস্তব জগতে আর থাকবে না কোন দুঃখ, দারিদ্র, দুর্যোগ।

চারশ তিরানব্বই তম প্রাইম নাম্বার হলো তিন হাজার পাঁচশ উনত্রিশ। এই সিকোয়েন্সের জন্য প্রোগ্রামটি অবশেষে সাড়া দিলো। পরবর্তী ত্রিশ মিনিটে পরবর্তী ফায়ারওয়াল গুলো ভেঙ্গে কিম বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানীদের তৈরী প্রোগ্রামটি আপলোড করে দিলো। এর ঠিক তিন মিনিট পরই প্রোগ্রামটি চালু হলো।

প্রোগ্রামটি চালু হবার পর কিম লক্ষ করলো তার চারপাশের জগৎ সংকুচিত হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে পুরো বিশ্বকে কেউ দু’পাশ থেকে চেপ্টে ধরছে। বুকের মাঝে হাহাকার করা এক নিঃসঙ্গতা অনুভব করে কিম। সেটা তার স্ত্রী নীরা আর একমাত্র ছেলে আয়মানের জন্য। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রোগ্রামারদের তৈরী প্রোগ্রামটি যে এই পরাবাস্তব জগতের কোডের সাথে খাপ খায় নি এটা বুঝতে সমস্যা হয় না কিমের ।পুরো প্রসেসটাকে রোলব্যাক করার আর উপায় নেই। একমাত্র ভবিষ্যত পুরো পরাবাস্তব জগৎটাই ধ্বংস হয়ে যাওয়া।

আর, হয়তো আর কয়েক মিনেটের মাঝেই তা ঘটবে।








বি.দ্র. গল্পের নামটি সামহোয়্যার ইন থেকে প্রতি বছর প্রকাশিত ব্লগ লেখা সংকলন ‘অপরবাস্তব’-এর নাম থেকে ধার নিলাম। আশা করি ব্লগ কতৃপক্ষ এটাকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ১০:২৪
৩৬টি মন্তব্য ৩৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×