somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধুত্তোরি ভ্যালেন্টাইন

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকাল থেকেই মেজাজটা খিঁচরে আছে শুভর। পরপর দুইটা দিন তাকে হা পিত্যেশ করে বেড়াতে হবে। আজ পয়লা ফাল্গুন, আর কাল ভ্যালেন্টাইনস ডে। কেন যে এই দুইটা দিন পর পর পরলো! আজ তো বের হলেই দেখা যাবে সুন্দর সুন্দর মেয়েরা হলুদ শাড়ী পড়ে দল বেঁধে ঘুড়ছে। শুভর সব বন্ধু বান্ধব আজ যার যার গার্লফ্রেন্ড নিয়ে বের হবে। আর তাকে আজ মুখ আমসী করে ঘুরতে হবে, না হয় বাসায় বসে থাকতে হবে।কারন এতো বয়স হবার পরও তার কপালে এখনো গার্লফ্রন্ড জুটলো না। বাসায়ও শান্তি নাই। টিভিটাও শান্তিতে দেখা যায় না। সারাক্ষন ভালোবাসা আর ভালোবাসা।

শুভ কিছুক্ষন বই পড়লো। তারপর বসে গেল কম্পিউটারে। ফেইসবুকে ঢুকে মেজাজটা আরো খারাপ হয়ে গেলো। সব কয়টা স্ট্যাটাসে একই কথা। আজ অমুক জায়গায় যাবো,তমুক যায়গায় যাবো। শালার গুগল সার্চও আজকে কি যেন একটা ভালোবাসার ছবি লাগিয়ে রেখেছে। এই দুনিয়ায় মনে হয় ভালোবাসা ছাড়া কোন উপায় নাই। এবার মনে হয় যেভাবেই হোক একটা প্রেম করতেই হবে। না হলে আর উপায় নাই।

দুপুরের দিকে শুভর আম্মা এসে বললেন তিনি আর আব্বা জানি কোথায় যাচ্ছেন। আম্মার গায়ে হলুদ শাড়ী আর আব্বার গায় হলুদ পাঞ্জাবী। যাবার সময় এই বয়সে শুভ কেন এই দিনে রুমে বসে আছে আর বন্ধুদের নিয়ে ঘুড়ছে না সেটা নিয়ে দশ মিনিট লেকচার দিয়ে গেলেন। শুভর মেজাজ চরম মাত্রায় খারাপ হয়ে গেলো এইবার। এই জীবনের আর কি মানে হয়।

শুভ বাথরুমের আয়নার সামনে দাড়িয়ে খুব করে নিজেকে কিছুক্ষন পর্যবেক্ষন করলো। নাহ, তার চেহারা তো খুব একটা খারাপ না। মায়া মায়া একটা ভাব আছে। তারপরও এখনো কেন কোন মেয়ে তাকে পছন্দ করলো না। একবার দুইবার যে সে চেষ্টা করেনি তা না। এইতো মাস খানেক আগে ফরেষ্ট্রির স্নিগ্ধাকে সে প্রায় ভালোই বেসে ফেলেছিলো। কিন্তু প্রপোজ করতে গিয়ে শুনলো সে নাকি বিবাহিত। পুরা রং নাম্বার। এখনো ক্যাম্পাসে দেখা হলে শুভ লজ্জায় মারা যায়। আর একবার গতমাসে সে মোটামুটি ঠিক করে ফেললো যে যেভাবেই হোক এইবার ভ্যালন্টাইনস ডে এর আগে একটা প্রেম করেই ফেলবে। তাই ক্লাশের তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু সোহাগকে দিয়ে অপনাকে একটা খুব সুন্দর প্রেমপত্র লিখে পাঠালো। এমন সুন্দর করে লিখেছিলো, যে যেকোন মেয়ে সেটা পড়ে পাগল হয়ে যাবে। কিন্তু ব্যাপারটা হলো পুরা হিতে বিপরীত। আর ব্যাটা সোহাগও এমন গাঁধা। ব্যাটা জানেই না যে অপনা মনে মনে তাকে ভালোবাসে। চিঠি দিয়ে নাকি এমন ঝাড়ি খেয়েছে যে বাপের নাম ভুলে গেছে। এখন অবশ্য ওরা ক্যাম্পাসের সেরা জুটি। আজ নাকি ওরা সারাদিন ঘুড়বে। আর বেচারা শুভর কপালে কিছুই নাই।

কতক্ষন বই পড়ে আর কিছুক্ষন কম্পিউটার গেম খেলে ত্যাক্ত বিরক্ত হয়ে সন্ধ্যার দিকে টিউশনীতে বের হলো শুভ। অন্তত রাতের আলোতে হাত ধরাধরি করে থাকা প্রেমিক-প্রেমিকা দেখতে হবে না। ভিকারুন্নেসার ইন্টারমেডিয়েটের একটা মেয়েকে পড়ায় সে। সপ্তাহে তিনদিন। সেগুনবাগিচার দিকে বাসা। ছাত্রী ভালোই। খালি বেশী ফাজিল। গতদিন ফিক ফিক করে হেসে তাকে জিজ্ঞেস করলো "স্যার পয়লা ফাল্গুন কাকে নিয়ে ঘুড়বেন?" ফাজিলের ফাজিল। শিক্ষকের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তাও শিখে নাই।

কলিং বেল বাজাতেই দরজা খুলে দিলো লিয়া। শুভর ছাত্রী। মারছে, মেয়ে দেখি আজ হলুদ শাড়ী পড়েছে। মনে হয় সারাদিন ঘুড়াঘুড়ি করেছে। শুভকে দেখেই লম্বা এক সালাম দিলো। ফাজিলটা সালামও দেয় ফাজলামী করে। ছালাম স্যার বা ছ্লামালিকুম স্যার বললেই হয়। তা না, পুরা আস্সালা মালাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ -একদম পুরা বলে।

খাতা কলম নিয়ে আসতে বলে শুভ পড়ার টেবিলে বসলো। মেয়ের দেখি আর উঠার নাম নেই। মনে হয় নতুন কোন ঢং। একটা রাম ধমক দিবে কিনা বুঝে উঠতে পারলো না শুভ।
-স্যার আজকে পড়বো না।
-পড়বা না কেন?
মেজাজ চরম খারাপ হলো শুভর।
-কারন আজ পয়লা ফাল্গুন।
এইখানেও পয়লা ফাল্গুন। কোথায় গিয়ে যে এই যন্ত্রনা থেকে বাঁচা যায়।
-পয়লা ফাল্গুন হলে কি সব বন্ধ? তুমি কি খাওয়া ঘুম সব বাদ দিয়ে দিয়েছো পয়লা ফাল্গুন বলে?
-তা না স্যার। আজ একটা বিশেষ দিন। আর এই বিশেষ দিনে আপনাকে একটা বিশেষ খবর দেবো।
শুভ চশমার উপর দিয়ে তাকালো। নতুন কোন ঢং শুরু হবে বোঝার চেষ্টা করলো।
-বলো শুনি।
লিয়া একটু থেমে কি যেন ভাবলো।
-কথাটা হলো স্যার. .. মানে কথাটা হলো স্যার...আপনি এই এইটা পড়ে দেখুন।
চিঠি? এ আবার নতুন কোন যন্ত্রনা। লিয়ার হাতে একটা খাম। শুভ খামটা নিয়ে খুলতে গেলো। এই মেয়েকি তার প্রেমে পড়লো নাকি?
-এখন না এখন না স্যার।
এবার আর বুঝতে বাকি থাকলো না শুভর। এটা নিশ্চিত প্রেমপত্র।অবশেষ খোদা মুখ তুলে চেয়েছেন। ভালো করে লিয়ার দিকে তাকালো। নাহ , মেয়েটা দেখতে তো দারুন। এই মেয়েটা গার্ল ফ্রেন্ড হলে খারাপ হয় না।খালি ছাত্রী শিক্ষক সম্পর্কটা একটু বদলে নিতে হবে।
শুভ মুচকি হেসে বললো, তাহলে কি করবো?
-বাইরে গিয়ে খুলবেন স্যার
ভিতরে কি আছে তা তো বুঝাই যাচ্ছে। সুতরাং এখন দেখা, আর কিছুক্ষন পর দেখা একই কথা। তাই শুভ আর উচ্চবাচ্য করলো না। 'ঠিক আছে' বলে মুচকি হেসে বাইরে বরে হয়ে এলো। অবশেষে খোদা শুভর দিকে মুখ তুলে চেয়েছে। একটা প্রেম তার হয়েই গেলো। একটু দূর এগিয়ে ল্যাম্পপোষ্টের আলোয় শুভ খাম খুললো।

বিয়ের কার্ড। লিয়ার বিয়ের কার্ড। আরাফাত আনোয়ার মিশু বলে এক আমেরিকা প্রবাসীর সাথে। শুভ সপরিবারে নিমন্ত্রতি।

শুভ কাঁদবে না হাসবে বুঝতে পারলো না। বুকের মাঝে চিন চিনে ব্যাথা হবার কথা। ছ্যাকা খেলে নাকি তাই হয়। তার কিছুই হলো না। ল্যাম্পপোষ্টের আলোর দিকে তাকিয়ে একবার বিরবির করে বললো 'ধূত্তোরি ভ্যালেন্টাইন"
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১২:৫৫
২০টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×