somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লাল সবুজের স্বপ্ন

২০ শে জুন, ২০১০ বিকাল ৩:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকাল আমার দৈনন্দিন রুটিন একটু পাল্টে গেছে। শুধু আমার কেন, সবারই কিছুটা পাল্টেছে। কারন বিশ্বকাপের রূদ্ধশ্বাস খেলা গুলো সবই প্রায় রাতে। কিছু সাড়ে আটটায়, কিছু রাত সাড়ে বারোটায়। শহর জুড়ে নানান দেশের পতাকা। দেশে বড় কোন সম্মেলন টম্মেলন হলে পথের ধারে নানান দেশের পতাকা টানানো হয়। কিন্তু এটা তা না। প্রায় প্রতিটা ছাদেই বিভিন্ন দেশের পতাকা উড়ছে। আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিলের পতাকা চিনে না এমন লোক মনে হয় বাংলাদেশে কেউ নেই। কয়েকদিন আগে ঢাকার বাইরে গিয়েছিলাম ঘুরতে, সেখানেও দেখি একই অবস্থা। নৌকার মাঝি, যার কিনা আয় খুবই কম, নুন আনতে পান্তা ফুরায়, তারও একটা দল আছে, ছোট্ট নৌকার উপর ব্রাজিল না হয় আর্জেন্টিনার পতাকা উড়ছে। ভালোই লাগে। নিজেদের হুজুগে জাতি মনে হয় না। মনে হয় এটাই তো স্বাভাবিক।

বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে পুরো দেশ মাতোয়ারা। মানুষ খেলা দেখে, আর আমি তাদের দেখি। কাকা,মেসি,রোনালদোরা আজ সবার অতি আপনজন। কে কত ভালো খেলোয়ার তাই নিয়ে তর্ক। হাজার মাইল দূরের আর্জন্টিনা নামের দেশের মানুষগুলকি জানে, কি অপার মমতা নিয়ে এদেশের আকাশ বাতাস আমরা আকাশী করে দিয়েছি তাদের পতাকার রঙে? কিংবা স্বাম্বা জাতি কি জানে সবুজে সবুজে ভরে গেছে এদেশের ছাদগুলো , তাদেরই পতাকায়। না জানলেই কি, তারপরও আমরা এই ভালোবাসা দেখিয়ে যাবো। ফুটবলের প্রতি ভালবাসায়।

আশির দশকে দেখতাম বাবা চাচাদের একদল আবাহনী তো আর একদল মোহামেডান। আবাহনী আর মোহামেডানের খেলা হলে কথাই নেই। তখন তো আর ঘরে ঘরে টেলিভিশন ছিলো না, তাই রাস্তার মোড়ে মোড়ে মানুষ জড়ো হতো রেডিওতে খেলার ধারাভাষ্য শোনার জন্য। পাড়ায় মহল্লায় মিছিল হতো তাদের দল জিতলে। এখন আর হয় না। অনেকেই বলে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তাই এর কারন। কিন্তু আমার মত সে দায়টা যতটা না ক্রিকেটের, তার চেয়ে অনেক বেশী ফুটবল কর্মকর্তাদের। তারা আজ ফিফার দেয়া টিকেটে বিশ্বকাপ দেখতে চলে যান দক্ষিণ আফ্রিকায়। টিভিতে, পেপারে বিশ্লেষণী সাক্ষাৎকার দেন কোন দল কেমন খেললো। সেসব দেখে মনে হয় এক একজন দুঙ্গা বা ম্যারাডোনার চেয়েও বেশী বুঝেন ফুটবলটাকে। এর চেয়ে একটু কম বুঝেও যদি তারা একটু মনোযোগী হতেন আমাদের ফুটবলের প্রতি, তাহলে কি আর আমাদের বিশ্বকাপ বাছাইয়ের বাছাই পর্ব থেকেই ফিরতে হয়?

কোনদিন ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনার খেলা থাকলে দেখা যায় এক পক্ষকে আর এক পক্ষ ক্ষেপাচ্ছে, টিটকারী দিচ্ছে। আমরা কি জাতি হিসেবেই একটু দলবাজ টাইপের? স্কুলে আবিরের একদল তো নোমানের আর একটা দল। মাঝে মাঝেই তাদের মাঝে এক হাত হয়ে যায়। অফিসে করিম সাহেবের দল আর হাফিজ সাহেবের দল থাকে, রাজনীতিতে একদল বিএনপি তো আর একদল আওয়ামী লীগ আর ফুটবলে তেমনি আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিল। বেশ কিছু বছর আগে যখন বাংলাদেশ তখনো বিশ্বকাপ ক্রিকেটে সুযোগ পায় নি, তখন দেখতাম একদল ভারত আর একদল পাকিস্তান। আজকাল আর তা দেখি না। এখন সবাই বাংলাদেশ। আশরাফুল একের পর এক ডাক মারলেও সবার মনের ভেতর একটাই পতাকা । বাংলাদেশ। ফুটবলে সে সুযোগ নেই। তাই আমরা একদল আর্জেন্টিনা হয়ে যাই আর একদল হয়ে যাই ব্রাজিল।

তাই পথের রিক্সাওয়ালাটিও যখন দশটাকা দিয়ে আর্জেন্টিনা বা ব্রাজিলের একটা ছোট্ট পতাকা কিনে তার রিক্সার হ্যান্ডেল উড়িয়ে বেড়ায় তখন খারাপ লাগে না। মনে হয় নিশ্চয় ক্রিকেটের মতো একদিন ফুটবলেও এমন হবে। কেউ আর্জেন্টিনার পতাকায় পথঘাট আকাশী নীলে ভরিয়ে দেবে না, আমাদের ছাদগুলো ব্রাজিলের পতাকার সবুজের সবুজ হবে না, সেখানে সবুজের সাথে লালও থাকবে আমাদের পতাকা হয়ে। বিশ্বকাপ ফুটবলের সেই আসরে আমরাও থাকবো। আমাদের অজান্তেই হাজার মাইল দূরের কোন দেশের ছাদগুলো লাল সবুজে ভরে উঠবে।
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×