somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন সাধারন সুপার হিরো

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ৩:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সুপার হিরো হতে কে না চায়। আমিও চাইতাম। ছোটবেলায় সবারই কোন না কোন প্রিয় সুপার হিরো থাকে। আমারো ছিলো। সেই শুরু থান্ডার ক্যাটসের লিয়ন ও থেকে। লিয়ন ও হবার জন্য একটা লাঠির এক মাথায় আর একটা ছোট লাঠি বেঁধে তলোয়ার বানিয়ে মাঠে চড়ে বেড়ানো ছাগলগুলোকে তাড়িয়ে এলাকা ছাড়া করে দিয়ে এসেছি কতবার সেটা গুনে বলা যাবে না। একবার তো লিয়ন ও সেজে দুষ্টের দমন করতে গিয়ে যখন উচু টেবিল থেকে লাফ দিয়ে পুরো আছাড় খেয়ে পড়লাম মেঝেতে। ঠোট টোট ফেটে পুরা রক্তারক্তি। আর তখন আমার কান্না দেখে কে। এরপর অবশ্য বড় ধরনের অপারেশনে যেতাম না। কম উঁচু জায়গা থেকে ছোট খাটো একটা দুটো লাফ দিয়েই দুষ্টের দমন চালিয়ে নিতাম।

এরপর আমার হিরো হয়ে এলো সুপারম্যান। গলার সাথে পেছন দিকে গামছা বেঁধে আমিও সুপারম্যানের মতো উড়ার চেষ্টা করি। নেহাত দু’টো পাখার অভাবে ঠিক মতো উড়তে পারি না। আমার সুপারম্যান হওয়াও বেশীদূর এগুলো না আচমকা ম্যাকগাইভারের আগমনে। তখন আমার কল্পনার জগত জুড়ে কেবল ম্যাকগাইভার। নিজেকে ম্যাকগাইভার বানাতে আমার চেষ্টার অন্ত নেই। আর আমার তৈরী করা নানান রকম ম্যাগাইভারী ফাদে পড়ে বাসার সবার ত্রাহী মধূসুদন আবস্হা। যদিও বেশীর ভাগই খুব ছেলে মানুষী টাইপ ফাঁদ।

ম্যাকগাইভার ও বেশীদিন টিকলো না। এরপর একে একে আরো অনেক সুপার হিরো এলো আর গেলো। সেই স্পাইডার ম্যান থেকে শুরু করে বাকের ভাই পর্যন্ত সবাই ই কল্পনার জগতের বাসিন্দা। বাস্তব জীবনে আমি সুপার হিরোদের খুঁজে বেরাই। যদি তাদের দেখা পাই। খুঁজতে খুঁজতে এক সময় একজন কে পেলাম। যে কিনা সত্যি ই আছেন। এবং কি অদ্ভুত, এই বাংলাদেশে। তিনি একজন লেখিয়ে। চমৎকার গল্প লেখেন। কেবল মাত্র গল্প লেখার জন্য তাকে সুপার হিরো বানিয়ে দেয়াটা ঠিক হবে না। তিনি যে সত্যিই সুপার হিরো সেটা আমি বুঝতে পারলাম যখন দেখলাম তিনি ছোট খাটো অন্যায় নিয়ে বেশ উচ্চকিত। আরো বড় ব্যাপার তিনি একজন আবিষ্কারক। আর যখন জানতে পারলান তিনি আবার ছবিও আঁকতে পারেন তখন আর তাকে সুপার হিরো মানতে আমার কোন আপত্তি থাকলো না। তাই আমি ঘোষনা করে ফেললাম যে আমি সেই সুপার হিরোর সাথে দেখা করতে চলেছি।

কিন্তু চাইলেও তো আর দেখা করা যায় না। তিনি একটা পাঠশালাতে পড়ান। তাই আমি ঠিক করলাম আমি তার সেই পাঠশালায় ছাত্র হবো। তাই যেই আমি কখনো বাসার বাইরে একটা রাত কাটতে ভয় পেতাম সেই আমি পরিবার পরিজন ছেড়ে বাক্স পেটরা নিয়ে হাজির হলাম এক পাহাড় ঘেরা শহরে। সেই পাঠশালায় ভর্তি হতে।

প্রথম দিন যখন তাকে দেখলাম বেশ অবাক হলাম। তিনি খুব সাধারন। আরও অবাক হলাম কয়েকদিন পর যখন তিনি আমাদের সাথে পিকনিকে রওনা হলেন। অবাক হলাম যখন আমরা ফুটবল ম্যাচে জিতবার পর আমাদের সাথে আমাদের ক্লাশের পার্টিতে চাঁদা দিয়ে চলে এলেন। সবচেয়ে অবাক হতাম যখন তিনি একটা সাধারন চপ্পল পড়ে কাঁধে একটা লালচে রংয়ের স্কুল ব্যাগ নিয়ে ক্লাশে আসতেন। না, আমি তাকে কখনো স্পাইডারম্যানের মতো দালানের পাশ বেয়ে উপরে উঠে যেতে দেখিনি, কিংবা আমার সেই ছোট বেলার সুপার হিরো লিয়ন ও এর মতো তলোয়ার নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তেও দেখিনি।

ধীরে ধীরে জেনেছি তিনি আসলে সুপার হিরো নন, তিনি আমারি মতো একজন মানুষ। যিনি খুব সহজে মিশে যেতে পারেন তার ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে। সবচেয়ে বড় কথা স্বপ্ন দেখাতে পারেন। আমাদের এই অস্থির সময়ে চারপাশে যখন ভালো লাগার মতো বা আশা করার মতো একটাও জিনিস খুঁজে পাওয়া যায় না, তখনো তিনি বলতেন স্বপ্নটাকে বাঁচিয়ে রাখো। হয়তো তার ঐ পাঠশালা থেকে কেউ সুপার হিরো হয়ে বের হবে না, কিন্তু আমি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি যে যাদের তিনি তার মতো করে স্বপ্ন দেখাতে শিখিয়েছেন, তারা কোনদিন সেই স্বপ্নটাকে হারাবে না। তাকে দেখেই শিখলাম, সুপারহিরো রা মানুষই হয়।


আমার সেই এক লাফে কল্পনার সুপার হিরো থেকে সাধারন মানুষ হয়ে যাওয়া শিক্ষক মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারকে জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা।


১৬টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×