প্রথম কারণ, তিনি বাংলার প্রথম মহিলা কবি। (যদিও বলা হয়, তার পূর্বে চণ্ডীদাসের প্রেমিকা রজকিনীও কবিতা লিখতেন, তবে এই মত খুব একটা শক্তিশালী নয়।)
দ্বিতীয় কারণ, চন্দ্রাবতীর জীবনে একটা বিরাট প্রেমকাহিনী আছে।
তৃতীয় কারণ, এই মহিলা সর্বপ্রথম বাংলা ভাষায় হিন্দুদের ধর্মীয় গ্রন্থ ‘রামায়ণ’ রচনা করেন।
চতুর্থ এবং উৎসাহিত হবার মূল কারণ, তিনি এবং বাংলার বীরযোদ্ধা ঈসা খাঁ একদম সমসাময়িক ছিলেন। আরও মজার ব্যাপার হলো, তিনি জন্মেছিলেন ১৫৫০ সালে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মাইজখাপন ইউনিয়নের পাতুয়াইর গ্রামে। আর ঈসা খাঁ ১৫৩৭ সালে ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার সরাইল পরগণায় জন্মগ্রহণ করেন। দুজনের সময়কাল এবং বসবাস কাছাকাছি হলেও চন্দ্রাবতীর তেমন কোনো ইতিহাস পাওয়া যায় না। কিন্তু তার ইতিহাস জানাটা আমার জন্য খুবই জরুরি।
প্রেমকাহিনী সংক্ষেপ :
পিতা দ্বিজ বংশী দাস এবং মাতা সুলোচনার একমাত্র কন্যা সুন্দরী চন্দ্রাবতীর সাথে তার বাল্যসখা জয়ানন্দের বন্ধুত্ব গভীর প্রেমে পরিণত হয়। পরিণত বয়সে দুপক্ষের সম্মিতিতে তাদের বিয়ের আয়োজনও সম্পূর্ণ হয়ে যায়।
কিন্তু বিয়ের ঠিক আগ মুহূর্তে হঠাৎ জয়ানন্দ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে ওই এলাকার মুসলমান কাজীর মেয়ে কমলা সুন্দরীর রূপে মুগ্ধ হয়ে তাকেই বিবাহ করে ফেলেন। এই মর্মান্তিক খবরে চন্দ্রাবতী স্তম্ভিত হয়ে নাওয়া খাওয়া ত্যাগ করেন।
কয়েকদিন পর বিরহ কাটিয়ে চন্দ্রাবতী তার পিতার কাছে দুটি জিনিস কামনা করেন। এক. তিনি সারাজীবন চিরকুমারী থাকতে চান। দুই. তার জন্য বাড়ির কাছে ফুলেশ্বরী নদীর তীরে একটি শিবমন্দির তৈরির আবেদন করেন, যেখানে তিনি বাকি জীবন পূজা-অর্চনা করে কাটিয়ে দেবেন। পিতা তার দুটি আবেদনই পূরণ করেন।
ওদিকে কিছুদিন পর জয়ানন্দ অনুতপ্ত হয়ে চন্দ্রাবতীর সঙ্গে তার মন্দিরে দেখা করতে চাইলে চন্দ্রাবতী তার সাথে দেখা করতে অস্বীকৃতি জানান। বহুদিনের ভালোবাসার মানুষের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়ে জয়ানন্দ মন্দিরের দ্বারে চন্দ্রাবতীর উদ্দেশে একটি বিদায় কবিতা লিখে প্রমত্ত ফুলেশ্বরী নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহুতি দেন।
সকালবেলা চন্দ্রাবতী মন্দিরের দ্বার খুলে এই কবিতা দেখতে পান এবং জল আনতে নদীর ঘাটে যান। সেখানেই জয়ানন্দের লাশ ভাসতে দেখেন নদীতে।
এর পরের ইতিহাস নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। অনেকে বলেছেন, প্রেমিকের অস্বাভাবিক মৃত্যু সইতে না পেরে চন্দ্রাবতীও তৎক্ষণাৎ নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহনন করেন। আবার অনেকে বলেছেন, তিনি বাকিজীবন প্রেমিকের এই যন্ত্রণা বুকে আগলে নিয়েই কাব্যরচনা করে গেছেন।
জয়ানন্দ লিখিত শেষ পঙক্তিমালা-
“শৈশবকালের সঙ্গী তুমি যৈবনকালের সাথী।
অপরাধ ক্ষমা কর তুমি চন্দ্রাবতী।।
পাপিষ্ঠ জানিয়া মোরে না হইলা সম্মত।
বিদায় মাগি চন্দ্রাবতী জনমের মত।।”
-মৈমনসিংহ গীতিকা
যা হোক, নেট ঘেঁটে যতটুকু জানতে পারলাম, তা এমনই। কিন্তু আমার জানার কৌতূহল তাতে মিটছে না। আজকে নীলক্ষেতে বইয়ের দোকানে খুঁজে এসেছি। তার সম্পর্কিত তেমন কোনো বই পাইনি। সবাই মৈমনসিংহ গীতিকার কথা বলেন। কিন্তু সেখানে এই এতটুকুই আছে।
কোথায়, কার কাছে, কীভাবে এই নারীকবি সম্পর্কে মোটামুটি বিস্তারিত জানতে পারবো, কেউ জানালে নিদারুণ প্রীত হবো।
*ছবি সংকেত : কিশোরগঞ্জ শহরের কাছেই পাটোয়ারি গ্রামে চন্দ্রাবতীর সেই শিবমন্দির এবং তার পিতার বাড়িটি এখনও অক্ষত আছে।
![]()
![]()

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


