somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চন্দ্রাবতীর প্রেমে পড়লাম লো সই

১৬ ই মে, ২০১৪ রাত ৮:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলার প্রথম মহিলা কবি শ্রীমতি চন্দ্রাবতীকে (১৫৫০-১৬০০ : সন্দিহান) নিয়ে খানিকটা কৌতূহলী হয়ে ওঠেছি।
প্রথম কারণ, তিনি বাংলার প্রথম মহিলা কবি। (যদিও বলা হয়, তার পূর্বে চণ্ডীদাসের প্রেমিকা রজকিনীও কবিতা লিখতেন, তবে এই মত খুব একটা শক্তিশালী নয়।)
দ্বিতীয় কারণ, চন্দ্রাবতীর জীবনে একটা বিরাট প্রেমকাহিনী আছে।
তৃতীয় কারণ, এই মহিলা সর্বপ্রথম বাংলা ভাষায় হিন্দুদের ধর্মীয় গ্রন্থ ‘রামায়ণ’ রচনা করেন।
চতুর্থ এবং উৎসাহিত হবার মূল কারণ, তিনি এবং বাংলার বীরযোদ্ধা ঈসা খাঁ একদম সমসাময়িক ছিলেন। আরও মজার ব্যাপার হলো, তিনি জন্মেছিলেন ১৫৫০ সালে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মাইজখাপন ইউনিয়নের পাতুয়াইর গ্রামে। আর ঈসা খাঁ ১৫৩৭ সালে ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার সরাইল পরগণায় জন্মগ্রহণ করেন। দুজনের সময়কাল এবং বসবাস কাছাকাছি হলেও চন্দ্রাবতীর তেমন কোনো ইতিহাস পাওয়া যায় না। কিন্তু তার ইতিহাস জানাটা আমার জন্য খুবই জরুরি।

প্রেমকাহিনী সংক্ষেপ :
পিতা দ্বিজ বংশী দাস এবং মাতা সুলোচনার একমাত্র কন্যা সুন্দরী চন্দ্রাবতীর সাথে তার বাল্যসখা জয়ানন্দের বন্ধুত্ব গভীর প্রেমে পরিণত হয়। পরিণত বয়সে দুপক্ষের সম্মিতিতে তাদের বিয়ের আয়োজনও সম্পূর্ণ হয়ে যায়।

কিন্তু বিয়ের ঠিক আগ মুহূর্তে হঠাৎ জয়ানন্দ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে ওই এলাকার মুসলমান কাজীর মেয়ে কমলা সুন্দরীর রূপে মুগ্ধ হয়ে তাকেই বিবাহ করে ফেলেন। এই মর্মান্তিক খবরে চন্দ্রাবতী স্তম্ভিত হয়ে নাওয়া খাওয়া ত্যাগ করেন।

কয়েকদিন পর বিরহ কাটিয়ে চন্দ্রাবতী তার পিতার কাছে দুটি জিনিস কামনা করেন। এক. তিনি সারাজীবন চিরকুমারী থাকতে চান। দুই. তার জন্য বাড়ির কাছে ফুলেশ্বরী নদীর তীরে একটি শিবমন্দির তৈরির আবেদন করেন, যেখানে তিনি বাকি জীবন পূজা-অর্চনা করে কাটিয়ে দেবেন। পিতা তার দুটি আবেদনই পূরণ করেন।

ওদিকে কিছুদিন পর জয়ানন্দ অনুতপ্ত হয়ে চন্দ্রাবতীর সঙ্গে তার মন্দিরে দেখা করতে চাইলে চন্দ্রাবতী তার সাথে দেখা করতে অস্বীকৃতি জানান। বহুদিনের ভালোবাসার মানুষের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়ে জয়ানন্দ মন্দিরের দ্বারে চন্দ্রাবতীর উদ্দেশে একটি বিদায় কবিতা লিখে প্রমত্ত ফুলেশ্বরী নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহুতি দেন।

সকালবেলা চন্দ্রাবতী মন্দিরের দ্বার খুলে এই কবিতা দেখতে পান এবং জল আনতে নদীর ঘাটে যান। সেখানেই জয়ানন্দের লাশ ভাসতে দেখেন নদীতে।

এর পরের ইতিহাস নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। অনেকে বলেছেন, প্রেমিকের অস্বাভাবিক মৃত্যু সইতে না পেরে চন্দ্রাবতীও তৎক্ষণাৎ নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহনন করেন। আবার অনেকে বলেছেন, তিনি বাকিজীবন প্রেমিকের এই যন্ত্রণা বুকে আগলে নিয়েই কাব্যরচনা করে গেছেন।

জয়ানন্দ লিখিত শেষ পঙক্তিমালা-
“শৈশবকালের সঙ্গী তুমি যৈবনকালের সাথী।
অপরাধ ক্ষমা কর তুমি চন্দ্রাবতী।।
পাপিষ্ঠ জানিয়া মোরে না হইলা সম্মত।
বিদায় মাগি চন্দ্রাবতী জনমের মত।।”

-মৈমনসিংহ গীতিকা

যা হোক, নেট ঘেঁটে যতটুকু জানতে পারলাম, তা এমনই। কিন্তু আমার জানার কৌতূহল তাতে মিটছে না। আজকে নীলক্ষেতে বইয়ের দোকানে খুঁজে এসেছি। তার সম্পর্কিত তেমন কোনো বই পাইনি। সবাই মৈমনসিংহ গীতিকার কথা বলেন। কিন্তু সেখানে এই এতটুকুই আছে।

কোথায়, কার কাছে, কীভাবে এই নারীকবি সম্পর্কে মোটামুটি বিস্তারিত জানতে পারবো, কেউ জানালে নিদারুণ প্রীত হবো।

*ছবি সংকেত : কিশোরগঞ্জ শহরের কাছেই পাটোয়ারি গ্রামে চন্দ্রাবতীর সেই শিবমন্দির এবং তার পিতার বাড়িটি এখনও অক্ষত আছে।

১২টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×