somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শ্রম-বান্ধব শিল্প-কারখানা তৈরী করবেন যেভাবে

২০ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলাদেশের শিল্প-কারখানা গুলোর দিকে তাকালে এবং বছরের বিশেষ সময়গুলোতে জাতীয় দৈনিক পত্রিকা গুলোতে শ্রম-অসন্তোসের নানা চিত্র আমরাদেখতে পাই। সেগুলো আমাদের দেশের ভাবমূর্তি যেমন ক্রেতাদের কাছে ক্ষুণ্ণ করে, তেমনি দেশের সম্মানিত শুধীজনেরা তীব্র সমালোচনা করে থাকেন। পাশাপাশি এ সকল শিল্প-কারখানায় কর্মরত শ্রমিক-কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারবর্গ তীব্র মানসিক যন্ত্রণা এমনকি আর্থিক নিরাপত্তা-হীনতায়ও ভোগেন। এর সমাধান কোথায়?

আমি মনে করি ‘কর্মী-সন্তুষ্টী’-ই পারে একটি শিল্পকারখানাকে শ্রম-বান্ধব করতে। একটি কারখানাকে তার সকল কর্মীদের প্রিয়তম স্থান করে গড়ে তোলা সম্ভব শুধুমাত্র ‘কর্মী-সন্তুষ্টী’র মাধ্যমে।

অনেকের ধারনা এজন্য অনেক অর্থ প্রয়োজন; যেটা একটা ভুল ধারনা। একজন মানব-সম্পদ কর্মী হিসেবে আমি মনে করি এটা সম্ভব মালিকের স্বদিচ্ছার এবং মধ্যম-সারীতে কর্মরত ব্যবস্থাপকদের পেশাদারীত্ত্বের দক্ষতার উপর।
আমি নীচে কতগুলো বিষয় উল্লেখ করছি, যা যথাযথভাবে অনুসরণ করলে আমাদের শিল্প-কারখানায় কর্মীদের ‘কর্মী-সন্তুষ্টী’ বাড়াবে; তৈরী হবে মালিক-শ্রমিক দের সমন্বয়ে একটি শ্রম-বান্ধব কর্ম-পরিবেশ।

মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে পারস্পারিক যোগাযোগ স্থাপনঃ
o অনেক ক্ষেত্রে মালিক আংশিক সত্যের উপর, অনুমান নির্ভর তথ্যের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেন/দেন। যা অনেক ক্ষেত্রে সঠিক নয়। এর জের হিসেবে কারখানায় শ্রম-অসন্তোসের মত ঘটনার সুত্রপাত ঘটতে পারে। ক্ষেত্র বিশেষে এর মাশুল দিতে হয় সম্পূর্ণ এলাকার কারখানা গুলোকে। সুতরাং মালিক-শ্রমিকদের মধ্যকার যোগাযোগ স্থাপন করা এবং তা নিয়মিত রাখলে কর্মীদের সন্তুষ্টি /অসন্তুষ্টি জানা যায়।

পারস্পারিক বিশ্বাস ও আস্থা স্থাপনঃ
o নিয়মিত শ্রমিক-মালিকদের যোগাযোগ ও তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে উভয় পক্ষের মাঝে একটি হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক তৈরী হয়। এতে পারস্পারিক বিশ্বাস আস্থা বাড়ে যা কর্মী সন্তুষ্টি বৃদ্ধিতে বিশেষ ভুমিকা রাখে।

শ্রমিকদের সম্মান দেখানো তাদের মতামত/ জিজ্ঞাসাকে গুরুত্ত্ব দেয়াঃ
o পারস্পারিক মতামতকে গুরুত্ত্ব দেয়া, শ্রমিকদের যে কোন কথা শোনা, তাদেরকে ঠাণ্ডা মাথায় বোঝানো ইত্যাদি ছোট-খাটো বিষয়ে মধ্যম সারির ব্যাবস্থাপকদের অবস্থানকে শ্রমিকরা সবসময় তাদের জন্য সম্মানজনক বলে মনে করেন। সুতরাং শ্রমিকদের সাথে ভালো ব্যাবহার কর্মী-সন্তুস্টি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।

বিশেষ কোন বার্ষিক অনুষ্ঠানে শ্রমিকদের স্বার্থ অগ্রাধিকার দেয়াঃ
o বেশীরভাগ কারখানা তাদের যে কোন বার্ষিক আয়োজন যেমনঃ বার্ষিক বনভোজন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ব্যাবস্থাপনার সাথে জরিতদের মতামতের ভিত্তিতে ঠিক করে থাকেন। এক্ষেত্রে শ্রমিকদের চাহিদা ও মনবাঞ্ছনার কোন প্রতিফলন থাকে না। এ ধরণের অনুষ্ঠানে শ্রমিকদের মতামতের তথা তাদের স্বার্থ অগ্রাধিকার দিলে তাদের সন্তুস্টি বাড়ে যা প্রতিস্থানের প্রতি আনুগত্য বৃদ্ধিতে বিশেষ সহায়ক ভুমিকা রাখে।

প্রতিষ্ঠানের সামর্থ্য ও শ্রমিকদের চাহিদার সমন্বয় করা
o অনেক ক্ষেত্রে শ্রমিকরা অনেক ধরণের দাবী কর্তৃপক্ষের নিকট করে থাকে যা অবাস্তব বলে মালিক পক্ষ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে থাকেন। এক্ষেত্রে তাদের সাথে, বা তাদের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করে নিজেদের সামর্থ্য উল্লেখ করে শ্রমিকদের চাহিদার সমন্বয় করা উচিত (Win-Win)। তাতে শ্রমিকরা বাস্তবতা বোঝে ও তাদের কর্ম-সন্তুস্টি বাড়ে।

কল্যাণমূলক ব্যবস্থা গুলোকে সত্যিকার অর্থে বাস্তবায়ন করাঃ
o দেশের প্রায় সব কারখানায় শ্রমিক কল্যাণ কর্মকর্তা নিযুক্ত আছেন। বাস্তবতা হল বেশীরভাগ কারখানায় কল্যাণ কর্মকর্তাদের সঠিক ব্যাবহার হয় না। হাতেগোনা কয়েক্তি কাজ তাদের দিয়ে করান হয়। শ্রমিকদের মানব-সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে, কারখানায় আইনগত কল্যাণমূলক ব্যাবস্থা নিশ্চিত করতে, শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার ও অভাব-অভিযোগ আমলে নিতে কল্যাণ কর্মকর্তাদের ভুমিকা অপরিসীম। মালিক-শ্রমিক দের মধ্যকার সেতুবন্ধ, প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সকলের কর্ম-সন্তুস্টি নিশ্চিত করতে কল্যাণ কর্মকর্তা কাজ করেন। মালিক পক্ষ কল্যাণ কর্মকর্তার তথ্যের মাধ্যমে জানতে পারেন কোথায় কি ঘটছে, কী করনীয় ইত্যাদি। তাই সত্যিকার অর্থে কল্যাণমূলক ব্যাবস্থা বাস্তবায়ন করলে কারখানায় কর্মী-সন্তুস্টি বাড়বে।

মধ্যম সারির কর্মকর্তাদের পেশাদারীত্ত্বঃ
o শ্রমিক তত্ত্বাবধানে সকল বিভাগের মধ্যম সারির কর্মকর্তাগণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখেন। কারণ নিয়মিত দায়িত্ব পালনের জন্য শ্রমিকদের সবচেয়ে কাছে থাকেন তারা। তাদের যে কোন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের সুযোগ থাকে ঘটনার শুরু থেকেই। কাজেই তাদের পেশাদারিত্ত্বের দক্ষতা, দূরদর্শিতা যে কোন নেতিবাচক পরিস্থিতি থেকে প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করতে পারে। পাশাপাশি যে কোন ধরণের উদ্দীপনামুলক, কর্মে উৎসাহ বাড়ানোর মটিভেশান ও এই মধ্যম সারির কর্মকর্তাদের কাছ থেকে আসে। সুতরাং কারখানায় কর্মী-সন্তুস্টি বাড়ানো ও শ্রম-বান্ধব শিল্প-কারখানা তৈরিতে মধ্যম সারির কর্মকর্তাদের দক্ষতার কোন বিকল্প নেই।

মানব-সম্পদ উন্নয়নঃ
o কারখানায় কর্মরত বেশিরভাগ শ্রমিক- কর্মচারী- কর্মকর্তা দের দক্ষতা উন্নয়নের পদক্ষেপ বা প্রবনতা আমাদের দেশে খুবই কম। দেশের অনেক বড় প্রতিষ্ঠান আমি ব্যাক্তিগতভাবে জানি তারা মানব-সম্পদ উন্নয়নের কোন পদক্ষেপ নেন না। তাদের ধারনা প্রশিক্ষন দিলে লাভ কি, সে তো কএকদিন পরেই চলে যাবে। আবার এমনটাও দেখা যায় কোন কোন প্রতিষ্ঠান নামী-দামী কনসালটেন্সি ফার্মে নিজের কর্মকর্তা পাঠাচ্ছেন যে প্রশিক্ষন উক্ত ব্যক্তির কর্মক্ষেত্রে আদতেই কোন কাজেই লাগবে না। আবার কেউ কেউ শুধু প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দানে ব্যস্ত অথচ মূল আয়ের উৎস কারখানা। সুতরাং মানব-সম্পদ উন্নয়ন করমী-সন্তুস্টির অন্যতম উপাদান। যখন কোন ব্যক্তি দেখবে যে তার বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার যোগ্যতা অনুযায়ী উপরে উঠার সুযোগ পাচ্ছেন না, অথবা তার দক্ষতা উন্নয়নের কোন সুযোগ এই প্রতিষ্ঠানে নেই তখন সে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। কর্মী-সন্তুস্টির বদলে প্রতিষ্ঠানের প্রতি বিতৃষ্ণা জন্মে। কখনও কখনও আবার মীরজাফরের ভুমিকাও নিলে অবাক হবার কিছু থাকবে না।

Competitive বেতন-কাঠামো অনুসরণ করাঃ
o সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মজূরী কাঠামো অনুসরনের পাশাপাশি শিল্প-সেক্টর অনুযায়ী বেতন-কাঠামোকে যুগোপযোগী করা, প্রতিযোগীতা মুলক (Competitive) বেতন-কাঠামো হলে উক্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মী-সন্তুষ্টি বাড়ে। পাশাপাশি ব্যাক্তি পছন্দের উপর ভিত্তি করে পদোন্নতি না দিয়ে কর্ম-দক্ষতা ও মেধার মূল্যায়ন করে পদোন্নতি দিলে কর্মীদের সন্তুষ্টি বাড়বে।
প্রিয় পাঠক, ‘কর্মী-সন্তুস্টি’ ছাড়াও আরও অনেক ফ্যাক্টর থাকতে পারে শ্রম-বান্ধব শিল্প-কারখানা গড়ে তোলার। আপনার নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনি যদি আপনার কাজের জায়গায় সন্তুষ্ট না থাকেন তাহলে উক্ত প্রতিষ্ঠানের ভাল-মন্দে আপনার কিছু যাবে আসবে !?!? তাই আমার মতে একমাত্র কর্মী-সন্তুস্টি বাড়ালেই একটি শ্রম-বান্ধব শিল্প-কারখানা গড়ে তোলা সম্ভব।
==০==
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×