somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উন্নত শিল্প-সম্পর্ক, উন্নয়নশীল প্রতিষ্ঠান

২২ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উন্নত শিল্প-সম্পর্ক, উন্নয়নশীল প্রতিষ্ঠান (পর্ব-১)
[Written on IR issue of RMG Sector in Bangladesh, Personal Blog]

ভাল শিল্প সম্পর্ক স্থাপনের জন্য আমাদের পোশাক কারখানায় নিয়মিত যোগাযোগ চ্যানেলগুলো কিভাবে কাজ করে??
আমরা কী বুঝি শিল্প-সম্পর্ক কী? এর গুরুত্বইবা কতটুকু? [Industrial Relation/IR]
প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন কী? কিভাবে এটা করা যায়? [Organizational Development/OD]

আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি বেশীরভাগ কারখানায় মালিক-শ্রমিক দের মাঝে নিয়মিত যোগাযোগের মাধ্যমগুলো শুধুমাত্র বিভিন্ন কমপ্লায়ান্স অডিটের জন্য দায়সারাভাবে নথিবদ্ধ করা হয়। এগুলোকে তেমন কোন কাজে লাগানো যায় না।
দায়সারা, বানোয়াট, তথ্য-বিভ্রাট, সত্য-লুকানোর চোর-পুলিশ খেলা’র এই রিপোর্টগুলো কখনও প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে না।
আমি হলফ করে বলতে, পারি শতকরা ৯৮% মানব-সম্পদ ও কমপ্লায়ান্স পেশাজীবীদেরও পরিস্কার ধারনা নাই এই তথ্যগুলো দিয়ে আসলেই কী করা যায়?? কিভাবে কি করতে হয়?

অথচ একটু যত্নবান হলেই এই আভ্যন্তরীণ যোগাযোগ মাধ্যমগুলো আপনাকে প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য কী করতে হবে----- কখন করতে হবে------- কিভাবে করতে হবে------- সেই ডায়াগনসিস রিপোর্ট দিবে।
চিকিৎসকের কাছে যখন রোগী'র সম্পূর্ন ডায়াগনসিস/টেস্ট রিপোর্ট থাকে তখন চিকিৎসা করা অনেক সহজ কাজ।
দেখুন তো নীচের চিত্রে আপনার প্রতিষ্ঠানের মালিক-শ্রমিকের সাথে নিয়মিত যোগাযোগের মাধ্যম গুলো আছে কি না?? কোন কোন প্রতিষ্ঠানে আবার এরচেয়ে আরও বেশী যোগাযোগ মাধ্যম থাকতে পারে।
আমি ধারাবাহিকভাবে মোট ৮টি পর্বে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব। সবগুলো পর্ব বুঝতে পারলে আপনি নিজেই আপনার প্রতিষ্ঠানে Training Needs Assessment / Development Areas identify করতে পারবেন।
শুধুমাত্র এই লেখার সাথে প্রাসংগিক যে কোন প্রশ্ন, মন্তব্য, মতামত ও সমালোচনা'র জবাব আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে যতটুকু কুলায় দেবার চেষ্টা করবো।
(চলবে)
ছবিঃ নিজের তৈরী ফ্লিপ চার্ট


উন্নত শিল্প-সম্পর্ক, উন্নয়নশীল প্রতিষ্ঠান (পর্ব-২)
==========================
অনুপস্থিতির কারণঃ

কর্মস্থলে কর্মীর অনুমতিবিহীন অনুপস্থিতি হলো কর্মীর অসুন্তুস্টি প্রকাশের প্রথম ধাপ। আপনার প্রতিষ্ঠানে কর্মীর অনুযোগ ব্যবস্থাপনার (Grievance Handling) একটি সূচক হলো অনুমতিবিহীন অনুপস্থিতির দৈনিক শতকরা হার (%)।
সাধারনত সরাসরি তার সুপারভাইজারের/বসের/উর্ধতনের কাছে কর্মীরা তার ছুটির প্রয়োজনীয়তার কথা জানান। উক্ত বস win-win strategy তে দরকষাকষির মাধ্যমে/বোঝাপড়ার মাধ্যমে উক্ত কর্মীর ছুটির দাবীটি মিমাংসা করে থাকেন। এক্ষেত্রে বসের দক্ষতা, কর্মীর সাথে তার সম্পর্কের অবস্থান, বসের সীদ্ধান্ত গ্রহনের সক্ষমতার পরিধি ইত্যাদি বিষয় বিবেচ্য।

বিনা-অনুমতিতে অনুপস্থিতির হার কমলে সরাসরি উৎপাদন বাড়াতে সহায়ক হয়। শ্রমঘন শিল্প-কারখানায় ১০০% কর্মীর উপস্থিতি প্রোডাকশন লাইনের ব্যালান্সিং, ক্রিটিক্যাল প্রোসেস ম্যানেজমেন্ট করার জন্য একজন দ্বায়িত্বশীল সুপারভাইজার অনেক বেশী সুবিধাজনক অবস্থানে থাকেন। প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উপস্থিতির হার এভাবেই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য পুরনে সরাসরি ভুমিকা রাখে।
সবাই আমরা বুঝি যে বিনা অনুপস্থিতির ফলাফল খারাপ, আর বলা বাহুল্য এই ধরনের আচরণ একজন কর্মীর প্রতিষ্ঠান ছেড়ে চলে যাওয়ার/ঝরে পড়া’র অশনি সংকেত।

কেন এই অনুমতিবিহীন অনুপস্থিতি? কারণ গুলো কী? দেখা যাক উত্তরগুলো কেমন হয়!
---ছুটি চেয়ে পাই না… তাই এ্যবসেন্ট করেছি…
---১দিন ছুটি চেয়েছিলাম ১ সপ্তাহ আগে… তখন বলেছিল দিবে……নির্ধারিত দিনে ছুটি চেয়ে সারা-দিন ঘুরিয়ে… ছুটি দেয় নাই… এই কারনে ২ দিন এ্যবসেন্ট করে এসেছি…
--- ছুটি চাইলে আমাকে কখনোই ছুটি দেয় না… খুব খারাপ ভাষায় গালি দেয়… তাই দরকার হলে এ্যবসেন্ট করি…
--- বস আমার কাছে টাকা ধার চাইছিল… দিতে পারি নাই… তাই আমার নামে সুযোগ পাইলেই এ্যডমিনে (এইচ আর) এ বিচার দেয়… উনি আমাকে ছুটি দেয় না… তাই দরকার পড়লেই এ্যবসেন্ট করি…
--- বসে ২দিন ছুটি দিয়েছিল…আমার কাজ শেষ না হওয়াতে আরো ১ দিন এ্যবসেন্ট হয়ে গেছে… গ্রামে জমি-জমা সংক্রান্ত সমস্যা ছিল।

মোটামুটি উপরোক্ত এক বা একাধিক কারণে শ্রমিকরা কর্মস্থলে বিনা অনুমোতিতে অনুপস্থিত থাকেন।
এবার বসদের/সুপাইভাইজারদের কাছে জানা যাক যে কেন তার অধঃস্তন শ্রমিকরা বিনা অমুমোতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন??
--স্যার এইটা হলো (শ্রমিক) নাটকবাজ অপারেটর/হেল্পার, কাজ-কাম ঠিক-ঠাক করে না… আবার প্রতি মাসেই তার ছুটি লাগে… না দিলেই এ্যবসেন্ট কইরা আসে…
--এই পোলারে/ মাইয়ারে অসুস্থ্য বলে ছুটি দিছিলাম… পরে খবর পাইছি…দাওয়াত খাইতে গেছে… এই জন্য এইবার ওর ১দিনের ছুটি আমি পাস করি নাই… আজ ৩দিন পরে আইছে…
--আর্জেন্ট শিপমেন্টের চাপে আছি… কোনভাবেই ছুটি দেয়া সম্ভব না… তাই ছুটি দেই নাই…
--আমি ১দিন ছুটি চাওয়াতে ওর ছুটি পাস করেছিলাম, আমার বসে দেয় নাই…ওকে জিজ্ঞাসা করেন……… আমার কথা সত্য কিনা…
---স্যার ছুটি লাগলে দেয়া উচিত…কিন্তু আমার লাইনে এ্যবসেন্ট এত বেশী… যে ওকে ছুটি দিলে আমার লাইন চালানো কষ্টকর।
---- সুপারভাইজার হিসাবে আমার ছুটি দেয়ার এখতিয়ার নাই…আমার বসে (PM) দেয়।

এমনই হাজারো, আরো কত শত ইত্যাদি গল্প/ঘটনা আপনার কারখানায়ও ঘটছে। আপনি কয়টা জানেন? জানলেও কয়টি মনে রাখছেন? কতজন শ্রমিক কে কোন কারনে অনুপস্থিত থাকে? কি করলে এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে? আপনার করনীয় কী? আপনি কাদের দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে এটা কমাবেন? টপ ম্যনেজমেন্টের কাছে কোন ধরনের প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিবেন বলে অনুমোদন নিবেন? আপনার প্রস্তাবের স্বপক্ষে তথ্য-উপাত্ত কী?

সঠিক পদ্ধতি হলো অনুপস্থিতির কারনগুলোর তথ্য নথিবদ্ধ করা। যতটা সম্ভব সত্য কারন গুলো জানার চেষ্টা করা। মাসিক রিপোর্ট আকারে বিভিন্নভাবে সেগুলোকে বিশ্লেষন করে দেখা। পরবর্তী করনীয় ঠিক করা, দ্বায়িত্বশীলদের সাথে শেয়ার করে তাদের মতামত নেয়া ও সম্মিলিতভাবে করণীয় কাজগুলো বাস্তবায়ন করা।
আপনার প্রতিকার পদ্ধতি কমেন্টে শেয়ার করুন। আমরা সবাই শিখতে চাই।

(চলবে)

উন্নত শিল্প-সম্পর্ক, উন্নয়নশীল প্রতিষ্ঠান (পর্ব-৩)
===============================
Daily Counselling/ দৈনিক কাউন্সেলিং

Daily Counselling / প্রাত্যহিক / দৈনিক কাউন্সেলিং গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে একটি নিয়মিত/রুটিন কাজ। দিনের একটা বড় অংশই আমাদের মানব-সম্পদ বিভাগের কর্মীদের অন্যান্য বিভাগের সহ-কর্মীদের সাথে বিভিন্ন ধরনের বিচার-আচার করেই কাটে। কি ধরনের বিচার আচার?

প্রোডাকশন/কোয়ালিটি ঠিক নাই, ছুটি চেয়ে ছুটি পাই নাই, কেউ কাউকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে, অমুকের নজর খারাপ, কেউ কারো কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছে এখনও দেয় নাই। ওর বেতন আর আমার বেতন সমান ছিল -এখন কিভাবে ওর বেতন আমার থেকে বেশি হল? কথায় কথায় লাইন সুপারভাইজার আমাকে নতুন নতুন প্রোসেসে বসায়, টার্গেট হয়না বলে প্রায়ই বকা দেয়। এমন নানা রকম নালিশ-বিচার-আচার মানব-সম্পদ কর্মীদের কাছে প্রতিদিনই করতে হয়।

ভাবছেন এটা আবার নতুন কি? এর সাথে শিল্প-সম্পর্কের এর সম্পর্কটাই বা কি? আপনার প্রতিষ্ঠানে সুপারভাইজারী কর্তাদের ব্যবস্থাপনা এবং মানব-সম্পদ কর্মীদের দক্ষতার উপরে বাদি-বিবাদী উভয়ের সন্তুষ্টি/অসুন্তুষ্টি নির্ভর করে।
বাদি-বিবাদি উভয়পক্ষকে সন্তুষ্ট করা এ ক্ষেত্রে অনেকটা কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং কাজ। তারপরও আমরা প্রতিদিন-ই প্রতিনিয়ত-ই প্রাত্যহিক কাজের এর অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে এই কাজগুলো করে যাচ্ছি। মানব-সম্পদ বিভাগের শ্রমিক কল্যাণ কর্মকর্তা অথবা ওয়েলফেয়ার অফিসার সব থেকে বেশি এ ধরনের শ্রমিক কাউন্সেলিং এর কাজের সাথে জড়িত থাকেন। প্রয়োজন ভেদে তিনি অন্যান্য সহকর্মীদের সহায়তা নিয়ে থাকেন। তাই এই কল্যান কর্মকর্তা/ওয়েলফেয়ার অফিসারদের দক্ষতা, আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্বের উপর সামগ্রিক কাউন্সিলিং এর বিষয়টির সফলতা বা ব্যর্থতা নির্ভর করে।

দুঃখজনক সত্যিটা হলো অপেক্ষাকৃত কম মেধাবী, কম বেতনের এবং অনেকটা অবহেলিত অথচ এই শিল্পে খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদবী হল ওয়েলফেয়ার অফিসার/শ্রমিক কল্যান কর্মকর্তা। বেশিরভাগ মানব-সম্পদ কর্তাব্যক্তিরা এই পদে মেধাবী কর্মী নিয়োগ বা এদেরকে চৌকসভাবে তৈরি করতে অনীহা প্রকাশ করেন।

মোটামুটি গতানগতিক পদ্ধতি হলো যখন শ্রমিকের কোন বিচার / নালিশ আমাদের কাছে আসে সেগুলো আমরা বিচার-আচার করি এবং জাস্ট পরেরদিনই ভুলে যাই। অনেক সময় রেজিস্টারে বা ডাইরিতে ঘটনাটি লিখতেও ভুলে যাই বা ইচ্ছে করেই লিখিনা। ফলে যখন ওই একই শ্রমিক এক মাস বা দুই মাস পর আবার যখন নতুন কোন সমস্যার বিচার নিয়ে আসে তখন আগে যে তাকে দু-একবার আপনি/আপনার কোন সহকর্মী তার সাথে কথা বলেছিলেন তার কোনো হিস্ট্রি/প্রমান আপনার কাছে না থাকায় উক্ত ব্যক্তির যথাযথ ন্যায় বিচার করতে আপনি ব্যর্থ হন।

এমতাবস্থায়, কোন কল্যাণ কর্মকর্তা/ওয়েলফেয়ার অফিসার চলে গেলে বা একজনের অনুপস্থিতিতে আরেকজনের ফ্লোরের কাজ তাকে দেয়া হলে সেক্ষেত্রে সেখানকার প্রত্যেকটা শ্রমিকের ইতিহাস না জানার কারণে তিনি কাজ করতে নানারকম অসুবিধায় পড়েন। দেখা যাচ্ছে একই বিচার বারবার করতে হচ্ছে এবং শ্রমিকদের সাথে কর্তৃপক্ষের কাউন্সেলিং প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে ।

এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার জন্য কি ধরনের পদ্ধতি আপনারা অনুসরণ করেন?
প্রতিটা মুহূর্ত আমাদের কাছে মূল্যবান, সেক্ষেত্রে দৈনিক প্রায় চার থেকে পাঁচ কর্মঘন্টা সময় এই দৈনিক কাউন্সিলিংয়ের কাজে ব্যয় করার পরেও তার থেকে কোন ফলাফল যদি না পাই তাহলে এমন পন্ডশ্রম এবং সময় নষ্ট করে আমাদের কী লাভ?
ফলাফল শূন্য কোন কাজই আপনার জন্য স্থায়ী উন্নয়নের ভীত হতে পারে না। আপনি যদি প্রাত্যহিক কাউন্সেলিং এর ফলাফলের উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নিতে না পারেন, স্থায়ী সমাধান দিতে না পারেন, তাহলে আপনার এই ধরনের কাউন্সিলিং এবং এর পেছনে ব্যয় করার সময়, শ্রম আপনার ব্যর্থতার পাল্লাই ভারী করবে।

দৈনিক কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে আমরা দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন এর ব্যবস্থা করতে পারি।
কিভাবে?
মাত্র ৬ মাস যত ধরনের কাউন্সিলিং হবে, সেটা ওয়েলফেয়ার অফিসার করুক, পে-রোল অফিসার করুক, রিক্রুটমেন্ট অফিসার করুক বা আপনার ম্যানেজার করুক; তাদের প্রত্যেকটা ডাটা আপনি একটা এক্সেল ফাইলে নথিবদ্ধ করেন। কোনরকম ফিল্টারিং করবেন না, একেবারে raw information এমনকি প্রোডাকশনের লোক যদি গালিও দেয় তার নাম আইডি নম্বর সহ সরাসরি এক্সেল ফাইলে সেটা’র উল্লেখ থাকতে হবে, Case/সমস্যা কোন অদল-বদল বা বাছ-বিচার করা যাবে না। উক্ত ঘটনায় আপনি/আপনার কর্মকর্তা যে সমাধানটা দিইয়েছেন সেটাও বিস্তারিত তারিখসহ উল্লেখ থাকবে। এরপর একটা ছোট্ট কাজ করতে হবে আপনাকে, ঘটনাগুলোকে কয়েকটি ক্যাটাগরির মধ্যে ভাগ করে যে বিষয়টা যে ক্যাটাগরিতে পড়বে সেটাকে সেই ক্যাটাগরিতে ফেলতে হবে।

কী রকম ক্যাটাগরি?
ধরুন একজন অপারেটরের টার্গেট অর্জিত না হওয়ায় তাকে আপনি কাউন্সিলিং করলেন। জানলেন যে উক্ত অপারেটর অনেক পুরাতন হলেও নালিশ নিয়ে আসা প্রোসেসটি তার জন্য একেবারেই নতুন। মাত্র ২ ঘণ্টা হলো তাকে নতুন এই কাযে বসানো হয়েছে । বিস্তারিত অনুসন্ধানে জানতে পারলেন তার কাছে টাকা ধার চেয়ে না পেয়ে সুপাভাইজার উক্ত অপারেটরের উপরে ক্ষুদ্ধ ছিলেন। ফলে উক্ত অপারেটরকে বিচারের মুখোমুখি করে হয়ারনী’র চেষ্টা। ঘটনাটা বিবরনে উক্ত শ্রমিক ও সুপারভাইজারের নাম আইডি সহ আপনার আলোচ্য এ্যক্সেল ফাইলে উল্লেখ করবেন। এই ঘটনাটি Harassment/ হয়রানী ক্যাটাগরীতে নথিবদ্ধ/এ্যন্ট্রি হবে।
এভাবে যদি ছুটি’র এ্যন্ট্রি ভুল করার কারণে কোন শ্রমিকের মাসিক বেতন কম আসে সেটা Compensation & Benefit ক্যাটাগরিতে নথিবদ্ধ করুন। এভাবে প্রতিটি কাউন্সিলিং আপনার ডাটাবেইজকে সমৃদ্ধ করবে।

মাত্র ৬ মাস যদি এভাবে ডাটা এ্যন্ট্রি করতে থাকেন তাহলে একটি ডাটাবেজ তৈরি হয়ে যাবে। এতে প্রতিষ্ঠানের বর্তমান অবস্থা কি? শ্রমিকদের সাথে কর্মকর্তাদের সম্পর্ক কেমন? এই বিষয়গুলো সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা পেয়ে যাবেন। যখন আপনার কাছে সমস্যাগুলো স্পষ্ট, তখন সমাধানের রাস্তাটাও বের করা সহজ কাজ। প্রকৃত অর্থে মানব-সম্পদ কর্মী থেকে শুরু করে প্রত্যেকেই যদি শ্রমিকদের প্রতি আন্তরিক ব্যবহার করেন, তাহলে শ্রমিকদের মনে কর্তৃপক্ষের প্রতি আস্থা তৈরি হয়। যা শিল্প-সম্পর্ক উন্নয়ন তথা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে খুবই জরুরী বলে আমি বিশ্বাস করি।

এই ডাটাবেজ কোন শ্রমিক/কর্মচারী’র পুরস্কার/তিরস্কার/মূল্যায়ন ও সংশোধনের কাজে একটি প্রামান্য ব্যবহারযোগ্য দলিল হিসাবে কাজে দিবে। প্রোডাকশন ফ্লোর স্টাফদের আচরনের সীমাবদ্ধতাগুলোও শুধরে দিতে এটা কাজে লাগবে। আমার অভিজ্ঞতায় সুফল পেয়েছি, আপনিও পাবেন।

আমাদের দেশে সাধারণত হেল্পার থেকে অপারেটর অপারেটর, অপারেটর থেকে সুপারভাইজার, সুপারভাইজার থেকে ফ্লোর ইনচার্জ, ফ্লোর ইনচার্জ থেকে এপিএম/পিএম এবং পিএম থেকে জিএম যারা হয়েছেন; উনাদের আচার-আচরনে এখনো ব্যবস্থাপনার তথা শিল্প-সম্পর্কের মত বিষয় ফুটে উঠে না। নেপথ্যে আছে উনারা চাকুরীজীবনে দুর্ব্যবহার পেয়েছেন বলেই এখন এদের অনেকেই নিজের জীবনের ঘটনার পুরাবৃত্তি করেন। দুর্ব্যবহারকারী উক্ত কর্মকর্তাদের প্রতি শ্রমিকদের আস্থা না থাকায় যে কোন ঠুনকো ঘটনায় কারখানায় শ্রম অসন্তোষের উনারা শারীরিক লাঞ্ছনার প্রথম সারির লক্ষ্য বস্তু থাকেন।

আমাদের মত মানব-সম্পদকর্মীদের উচিত উনাদের নিয়ে কাজ করা। একটি কারখানার সবচেয়ে বেশি মানুষের দ্বায়িত্ব যাদের হাতে তাদেরকে দক্ষতা না বাড়ালে শিল্প-সম্পর্ক কখন-ই মজবুত হবে না।
সুতরাং, কার্যকর প্রত্যহিক কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক এবং মালিক পক্ষের মধ্যে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ এবং আস্থার সম্পর্ক তৈরি করতে পারি। আর প্রতিদিনকার কাউন্সিলিং কার্যবিবরণীর লিপিবদ্ধকরনও খুবই জরুরী বলে আমি বিশ্বাস করি ।
(চলবে)


উন্নত শিল্প-সম্পর্ক, উন্নয়নশীল প্রতিষ্ঠান (পর্ব-৪)
=============================
অংশগ্রহণকারী কমিটি/পিসি কমিটি’র এজেন্ডাঃ

এদেশের শিল্প কল-কারখানায় বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এর ধারা ২০৫, ২০৬, ২০৭ ও ২০৮ অনুযায়ী অংশগ্রহণকারী কমিটি সম্পর্কে বলা হয়েছে। এই অংশগ্রহণকারী কমিটি এদেশের শিল্প-কারখানাগুলোতে আইন অনুযায়ী Collective Bargaining Agent (CBA)/যৌথ দরকষাকষি প্রতিনিধি হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করে থাকে।

পাঠকদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ কোন মালিক/শ্রমিক কোন একপক্ষের জন্য নয়, এটা মালিক-শ্রমিকের উভয়ের জন্য একটি ‘সন্ধি-পত্র’। এর বাইরে কারও এদেশের শিল্প-কারখানায় কোন আচরন করার অধিকার নেই। আর শিক্ষিত মালিক-শ্রেনী’র প্রতিনিধি হিসাবে মানব-সম্পদ কর্মীদের আদি-যুগের মত কুলীন পুরুত/পাদ্রী/মৌলভী ভাবার কোন কারণ নেই। কারণ আপনিও একজন বুদ্ধি-বৃত্তিক / মেধা-শ্রমিক মাত্র কিছুই নন।

অংশগ্রহণকারী কমিটি কমিটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শ্রমিকদের চাকুরী’র শর্ত ও তাদের কারখানা’র সুযোগ-সুবিধা সংবলিত বিষয়/এজেন্ডাগুলো মালিকপক্ষের সামনে উপস্থাপন করেন। মালিকপক্ষ উক্ত বিষয় গুলোর প্রতি নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। আর এভাবেই যৌথ দরকষাকষির মাধ্যম হিসাবে অংশগ্রহণকারী কমিটি ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই শিল্প-সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারী কমিটি’র এজেন্ডাগুলো অন্যতম উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

সেটা কিভাবে?
আচ্ছা ধরুন, আপনার প্রতিষ্ঠান ঈদের পূর্বে-ই অতিরিক্ত বন্ধ সহ ঈদের সময় মোট কয়দিন বন্ধ হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন। এক্ষেত্রে আপনার কারখানার গত দুই/তিন বছরের অংশগ্রহণকারী কমিটি’র ঈদ-পূর্ব সভার এজেন্ডাগুলো থেকে আপনার কোন ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে, কয়দিন বন্ধ দেয়া উচিত ইত্যাদি বিষয়ে একধাপ এগিয়ে যেতে পারবেন । আর যদি নতুন প্রতিষ্ঠান হয় তাহলে ইন্ডাস্ট্রি ট্রেন্ড/ শিল্পের প্রথা মোতাবেক ছুটি দেয়ার প্রস্তুতি নিতে পারবেন। অর্থাৎ একজন মানব-সম্পদ ব্যাবস্থাপক ইচ্ছে করলেই উক্ত প্রতিষ্ঠানের পুরাতন এজেন্ডা গুলো থেকে একটা ধারণা পেতে পারেন। যার মাধ্যমে তিনি একটি যুক্তিযুক্ত খসড়া সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করতে পারেন।

এমন অনেক বিষয় যেমনঃ বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির হার; ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন; বার্ষিক বনভোজন; ক্যান্টিনের খাবারের মান; শীতকালীন/গ্রীষ্মকালীন ঠান্ডা/গরমে করনীয়; বার্ষিক উৎসব ছুটি নির্ধারণ সহ নানা নানা বিষয়ে কী কী এ্যজেন্ডা আসে তা আগে থেকেই বিবেচনায় নিয়ে অগ্রসর ভিত্তিক কাজ করলে শিল্প-সম্পর্ক ভাল হতে সহায়ক হবে বলে আমি মনে করি।

একজন মানব-সম্পদ ব্যবস্থাপকের শ্রমিকদের সাথে মিটিংয়ে দক্ষতার সাথে মিটিং পরিচালনা করা ও মিটিং-পূর্ববর্তী কর্তৃপক্ষের সাথে এ্যজেন্ডাগুলো রিভিউ করে মিটিংয়ে সীদ্ধান্ত কী হওয়া উচিত তা পূর্ব-নির্ধারন করে নেয়া উচিত। স্পর্শকাতর বিষয় হলে সময় নিয়ে উর্ধতনের পরামর্শ নিয়ে সীদ্ধান্ত দেয়া উচিত।

বেশিরভাগ কারখানাতে ক্রেতাগন/বায়ার অংশগ্রহণকারী কমিটি’র সদস্যদের শুধুমাত্র শ্রমিকপক্ষের লোকের দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়ে থাকেন। যেটা আমার কাছে বড্ড একচোখা বলে মনে হয়। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই আমি দেখেছি মালিকপক্ষের অনেক সদস্যই কিভাবে মিটিং পরিচালনা ও সীদ্ধান্ত নিতে হয় সেটা সঠিকভাবে জানেন না। অংশগ্রহণকারী কমিটিতে উভয়পক্ষ মিলে সম্মিলিতভাবে কারখানার সমস্যাগুলো/সুযোগ-সুবিধাগুলো নিয়ে যৌথভাবে সীদ্ধান্ত নেয়ার কথা। এতে দুই-পক্ষকে একইভাবে সুদক্ষ হওয়া জরুরী বলে আমি মনে করি।

অলিখিত মৌখিক এজেন্ডা নিয়েও এযুগে এখনো অংশগ্রহণকারী কমিটি’র মিটিং করা হয়। আমার নিজের অভিজ্ঞতায় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে আমি-ই প্রথম লিখিত এ্যজেন্ডা’র মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী কমিটি’র সভা করেছি। লিখিত এ্যজেন্ডায় সভার সময় ও সদস্যদের আলোচনা নিয়ন্ত্রন করা সহজ হয়। আর প্রত্যেকটি সিদ্ধান্ত-ই অংশগ্রহণমূলক হয় সেটাই কাস্টমারের মূল চাওয়া।

অংশগ্রহণকারী কমিটি কিভাবে গঠন করা উচিত, কিভাবে এটাকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা উচিত, সীদ্ধান্ত গ্রহনের প্রক্রিয়া কেমন হওয়া উচিত, ইত্যাদি বিষয়ে আমি এই পোস্টে আর কিছু লিখছি না। শুধু-বলব অংশগ্রহণকারী কমিটি এদেশের কারখানা গুলোতে শিল্প-সম্পর্ক ও শিল্প-বিরোধ নিস্পত্তি’র একমাত্র আইনগত প্লাটফর্ম। তাই এই কমিটির সক্ষমতা তৈরী ও তাকে কার্যকর করার মাধ্যমে শিল্প সম্পর্ক উন্নয়ন করার কোন বিকল্প নেই।

তাই আমার মতে আপনি যদি বিগত পাঁচ বছরের অংশগ্রহণকারী কমিটি’র এজেন্ডা গুলোকে সংকলন করেন, সেগুলোকে ধরন অনুযায়ী গ্রুপিং করেন তাহলেই আপনি শিল্প-সম্পর্ক উন্নয়নের অনেক করনীয় কাজ পেয়ে যাবেন। যার অনুসরনের মাধ্যমে আপনি সার্বিক প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।

(চলবে)

উন্নত শিল্প-সম্পর্ক, উন্নয়নশীল প্রতিষ্ঠান (পর্ব-৫)
==============================
অভিযোগ ও পরামর্শ বাক্সঃ

মানব সমাজের শ্রেনী-বিভাজনের শুরুটা শ্রম-বিভাজনের মাধ্যমে। আদি কালের চাষী, মুজুর, মুচি, কামার,কুমার, জেলে, যোদ্ধা, কোতোয়াল, জমিদার, রাজা-বাদশা এই উপাধী/পদবীগুলো সৃষ্টি হয়েছিল কাজের ধরণ অনুযায়ী। কৃষি/চাষাবাদ ভিত্তিক সামাজিক কাঠামোতেও নালিশ / বিচার / অভিযোগ দায়ের ও তার নিস্পত্তি করা হত।

সম-মর্যাদার/ উচু-নিচু মানুষের কাছ থেকে আসা অভিযোগের বিচারেও বৈষম্য ছিল। সেই যুগের সামাজিক মর্যাদা বিবেচনায়, উচু- নীচু শ্রেনীর মানুষের অভিযোগ আমলে আনলেও অভিযোগকারীকে উচ্চ বর্নের কর্তারা আড়চোখে দেখতেন। নেতিবাচক ফলাফলও যেমন একঘরে করে রাখা, সামাজিক বয়কট, প্রতিহিংসার আগুনে পুড়ে অভিযোগ দাতার নাজেহাল হওয়ার ঘটনা এখনও চলমান । এই আধুনিক সময়ে মুখে যে যাই বলুক, গা’য়ে লাগলে নিজের ‘চন্ডাল’রূপ দেখাতে কেউ ছাড় দেয় না।

শিল্প-বিপ্লবের সুবাদে আমাদের সমাজিক শ্রেনী-বৈষমের ধারা কর্মস্থলে বহমান। এখানেও অভিযোগের নিস্পত্তি হয়। শিল্প-কারখানায় অভিযুক্তকে উর্ধতনের প্রতিহিংসা থেকে বাচাতে প্রায় সব কারখানাতেই ‘অভিযোগ ও পরামর্শ বাক্স’ দেয়া আছে। যিনি-ই এই পর্দা/আড়াল রাখার কৌশলটা’র প্রবর্তক তার কাছে আমরা সকলেই কৃতজ্ঞতা। কর্মরত সবাই স্বীয় পরিচয় গোপন রেখে শুধুমাত্র সমস্যাটি গোপনীয়তার সাথে এই বাক্সের মধ্যে দিয়ে থাকেন।

কারখানায় মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে সম্পর্ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা কেমন (!) তা এই বাক্সে আগত সমস্যাগুলো আপনাকে বুঝতে সহযোগিতা করবে। আমরা বেশিরভাগ কারখানাতে অভিযোগ এবং পরামর্শ বাক্স খুব বেশি কার্যকর ভাবে ব্যবহার হতে দেখি না। এর কারণ খুঁজলে দেখা যাবে যে-
 এটা প্রতি সপ্তাহে নিয়মিত খোলা হয় না;
 অথবা, ওখান থেকে পাওয়া তথ্যগুলো কে কার্যকর ভাবে ব্যবহার করা হয় না;
 অথবা, প্রাপ্ত তথ্যগুলো বাছাই করে নথিবদ্ধ করা, সমস্যগুলোকে আমলে না নেয়া;
 আথবা, এই মাধ্যমকে প্রতিহিংসামূলক কাউকে হয়রানি’র উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা;
 অথবা, এই মাধ্যমে পাওয়া সমস্যার সমাধান প্রকাশ্যে জানানোর ব্যবস্থা করা;

আমাদের আলোচ্য শিল্প-সম্পর্কে উন্নয়নে এই মাধ্যমের সঠিক ও কার্যকর ব্যবহার খুব জরুরী। যেমনঃ আপনি যদি উক্ত বাক্সে কোন অভিযোগই না পেয়ে থাকেন তাহলে বুঝতে হবে আপনার শ্রমিকেরা এই মাধ্যমের ব্যবহার জানেন না / এই মাধ্যমের প্রতি শ্রমিকদের কোন আস্থা নেই।

অথবা, আপনি নিয়মিত বাক্সে অভিযোগ/পরামর্শ পাচ্ছেন এবং আপনি কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী সমস্যা গুলির সমাধান দিয়ে যাচ্ছেন; তাহলে বুঝতে হবে আপনার প্রতিষ্ঠানে এই মাধ্যমটি কার্যকর আছেসঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করলে বোঝা যাবে যে অভিযোগ / সাজেশন বক্সে ব্যবহার প্রতিষ্ঠান শিল্প সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে কী না।

যে কোন কাস্টমার/বায়ার/কমপ্লায়ান্স অডিট অভিযোগ ও পরামর্শ বাক্সে তথ্যগুলো কি এবং কিভাবে সেগুলোর নিস্পত্তি হয়েছে সে বিষয়ক নথি/রেজিস্টার দেখতে চান। কাস্টমারের উদ্দেশ্য হলো আপনার কারখানায় উক্ত যোগাযোগ মাধ্যমের সঠিক ও কার্যকরী ব্যবহার হচ্ছে কী না তা নিরূপণ করা।

আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, যদি কোনো অভিযোগ গুরুতর হয় যেমন- কোন যৌন হয়রানি, উর্ধতনের কোন অন্যায় আচরন, খারাপ ব্যবহার ইত্যাদি গুরুতর অভিযোগগুলো বাদ দিয়ে শুধু সাধারণ বিষয়গুলো নথিভুক্ত করা হয়। এতে এই মাধ্যমের কার্যকরীতা কমে যায় ও শ্রমিকরা আস্থা হারিয়ে ফেলেন।

মালিক-শ্রমিকের যোগাযোগ মাধ্যমগুলো উন্মুক্ত রাখলে শিল্প-সম্পর্ক উন্নত হতে সহায়ক ভুমিকা পালন করে। আর উল্টোদিকে লুকোচুরি অনাস্থা তৈরী করে এবং সহসাই ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র বিষয়ে শিল্প-বিরোধ শ্রমসন্তোষে রূপ নেয় যা কোন প্রতিষ্ঠানেই কাম্য নয়।

এখন প্রশ্ন হলো কেন এই মাধ্যমকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয় না?
 দুঃখজনক হলেও সত্যি আমাদের বেশির ভাগ কারখানায় কাগুজে কমপ্লায়েন্স বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হয়। তাই বেশিরভাগ কারখানাতেই অভিযোগ ও পরামর্শ বক্সগুলো কার্যকর ভাবে ব্যবহার করা হয় না।

এটাকে কিভাবে ব্যবহার করতে হয়?
 শ্রমিকদের সাথে যোগাযোগের যতগুলো মাধ্যম আছে সেগুলোর মাধ্যমে এটা জানাতে হবে যে তোমাদের অভিযোগ ও পরামর্শ বাক্সগুলো ব্যবহার করা উচিত। তাদেরকে এতোটুকু আশ্বস্ত করতে হবে যে, উক্ত বক্সে প্রাপ্ত প্রতিটি অভিযোগ এবং পরামর্শ কর্তৃপক্ষের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আর কর্তৃপক্ষ সে গুলোকে সমাধান করার জন্য আন্তরিক।

শুরুটা যেভাবে করতে পারেন-
বিগত ছয় মাসে অভিযোগ ও পরামর্শ বাক্সে প্রাপ্ত সমস্যাগুলোকে একত্রিত করে একে একে সবগুলোর সমাধান বের করা ও সেটা নোটিশ বোর্ডে ফলাও করে প্রচার করার ব্যবস্থা করা। এর মাধ্যমে শ্রমিকদের অভিযোগ ও পরামর্শ বক্সের প্রতি আস্থাটা ফিরে আসবে। মনে রাখতে হবে এই বক্স থেকে প্রাপ্ত সমস্যাগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ, কে ওই বাক্সে অভিযোগটি জানালো সেটার চেয়ে ‘অভিযোগটি’ গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ‘কে’ এই অভিযোগটা করতে পারে সে বিষয়ে যতটুকু সময় নষ্ট করি, তার চেয়ে স্বল্পসময় আমরা সমস্যাটা সমাধান করার পেছনে কাজে লাগাই । এর ফলে হয়রানী’র ভয়ে শ্রমিকরা এই মাধ্যমটির ব্যাবহারের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেন।

এখান থেকে প্রাপ্ত তথ্য গুলো কিভাবে সংকলন করতে হয়?
--একেক ফ্যাক্টরিতে একেকভাবে এই তথ্যগুলো সংকলন করা হয়। আমি যেভাবে এটাকে ব্যবহার করি তা সবার সাথে শেয়ার করতে পারি। আমি প্রতি সপ্তাহে বক্স গুলো খুলে সেখানে প্রাপ্ত তথ্য গুলোকে এক জায়গায় সংকলন করি। এক্ষেত্রে এটা রাখবো না, ওটা রাখবো এই ধরনের কোনো রকম বাছ-বিচার করি না । আমি সরাসরি যা এসেছে সেটাই সংরক্ষন ও সংকলন করার পক্ষে। এরপর প্রাপ্ত তথ্যগুলোকে যাচাই বাছাই করি, যেমন কোনো স্টাফের বিরুদ্ধে কোনো হয়রানির অভিযোগ আসলো/খারাপ ব্যবহারের অভিযোগ আসলো-এগুলো বিভিন্নভাবে নিশ্চিত হই এবং এরপর সেটা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করি। অনেক সময় কাউকে প্রতিহিংসার ফলে হয়রানির উদ্দেশ্যে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ চিরকুট আকারে লিখে ওই বাক্সের মধ্যে দেয়া হয়। এভাবে প্রাপ্ত সমস্যাগুলো যাচাইকরণের মাধ্যমে আমরা প্রকৃত অভিযোগ এবং বিদ্বেষমূলক অভিযোগকে আলাদা করতে পারি এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করি। সময়োপযোগী সীদ্ধান্ত এক্ষেত্রে সমস্যাটি সমাধান এবং মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য একটি ইতিবাচক উদ্যোগ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
শিল্প সম্পর্ক উন্নয়নে এর ভূমিকা কতটুকু?
----শিল্প সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মালিক এবং শ্রমিকদের মধ্যে উন্মুক্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং পারস্পরিক অভাব-অভিযোগের নিস্পত্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অভিযোগ ও পরামর্শ বক্স এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্মুক্ত মাধ্যম । এমনকি আপনার কারখানাটি যে জায়গায় অবস্থিত সেই কমিউনিটি আপনার কারখানার ব্যাপারে কোন অভাব অভিযোগ করছেন কিনা সেটাও আমরা কমিউনিটি অভিযোগ ও পরামর্শ বাক্সের মাধ্যমে আমরা পেয়ে থাকি। কমিউনিটিতে আপনার প্রতিষ্ঠানটি কতটুকু কমিউনিটি বান্ধব !সোশ্যাল অর্গানাইজেশন হিসাবে আপনাকে কমিউনিটি থেকে আগত সমস্যাগুলো সমাধানের ব্যাপারে যত্নবান হতে হবে। আমাদের দেশের শ্রমঘন কারখানাতে কর্মরত বেশিরভাগ শ্রমিকরাই কারখানার আশপাশের লোকালয়ে বসবাস করে থাকেন। সেখানকার সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন দোকান-পাট, বাজার, মসজিদ/মন্দির, স্থায়ী প্রতিবেশী, বাড়ির মালিক, স্কুল-কলেজ ইত্যাদি এই শ্রমিকদের সাথে মিলেমিশে সামাজিক জীবন যাপন করে থাকেন। এক্ষেত্রে যদি কোন শ্রমিক কোন সামাজিক অপরাধ করে থাকে সেক্ষেত্রে কমিউনিটি কমপ্লেন বক্স এর মাধ্যমে/কর্তৃপক্ষের কাছে উক্ত অভাব-অভিযোগ গুলো সমাধানের জন্য এসে থাকে।

সুতরাং শিল্প-সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অভিযোগ ও পরামর্শবক্সের গুরুত্ব আমরা কিছুতেই অস্বীকার করতে পারি না। এই মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই এবং তাকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রাত্যহিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে-ই শ্রমবান্ধব শিল্প-সম্পর্ক আমাদের প্রতিষ্ঠানে তৈরী করতে পারি। তাই আমার মতে শিল্প-সম্পর্ক উন্নয়নে ‘অভিযোগ ও পরামর্শ বাক্স’ / ‘কমপ্লেইন ও সাজেশন বক্স’ একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ মাধ্যম।
(চলবে)

উন্নত শিল্প-সম্পর্ক, উন্নয়নশীল প্রতিষ্ঠান (পর্ব-৬)
==========================
এমপ্লয়ি টার্ন ওভার / কর্মী ঝরে পড়াঃ

কর্মক্ষেত্রে বেশীরভাগ কর্মী-ই তাদের বস পালটায়, প্রতিষ্ঠান নয়। তাই আমি শিল্প-সম্পর্ক উন্নয়নে বসের সাথে অধঃস্তনের সম্পর্কের উন্নয়নের কোন বিকল্প দেখি না। বস শুধুই একক কোন স্বত্তা নন, এদেশের প্রতিষ্ঠানে বসের মাধ্যমেই অধঃস্থন কর্মী কোম্পানী/প্রতিষ্ঠানের নানা সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। তাই কর্মী ঝরে পড়ার বিষয়টি উক্ত কর্মীর ব্যক্তিগত সন্তুষ্টি/অসুন্তুষ্টি উপর নির্ভর করে।

কোন কারখানা/প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীবৃ্ন্দ কতটুকু সন্তুষ্ট, তা কর্মীর ঝরে পড়ার হার/এমপ্লুয়ী টার্নওভার রেট/চাকুরী ছেড়ে চলে যাওয়া কর্মী’র শতকরা হার থেকে জানতে পারি। এটা হলো প্রতিষ্ঠানের প্রতি কর্মী’র চুড়ান্ত নেতিবাচক আচরনের একটি বহিঃপ্রকাশ।

কর্মী’র ঝরে পড়ার/চাকুরী ছেড়ে/বদলের যে কয়েকটি কারণ সচারচর সামনে আসে তা হলোঃ
 অপেক্ষাকৃত উচু পদবীতে অন্য কোথাও চাকুরী’র সুযোগ;
 বর্তমানের চেয়ে বেশী বেতন;
 পেশাগত উৎকর্ষের/দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ;
 কর্ম-পরিবেশ ও উন্নত কর্পোরট কালচার;
 রিপোর্টিং সুপারভাইজার/বসের সাথে সম্পর্ক;
 কোম্পানীর সুনাম সহ ইত্যাদি;

এখানে শিল্প-সম্পর্ক বিষয়ক এই আলোচনায় কর্মকর্তাদের চেয়ে শ্রমিকদের বিষয়টি বেশী গুরুত্ব দিব। পোষাক-শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের শিল্প-কেন্দ্রিক ঘুর্ণন/ Industry based job rotation স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এটা কখনো শিল্প এলাকা/জোন ভিত্তিক হয় আবার পারিবারিক পুনঃগঠনের জন্যও হয়ে থাকে। এই দুই ধরনের চাকুরী পরিবর্তনের বাইরে বড় একটা কারণ হল শ্রমিক তার বর্তমান কর্মস্থলের প্রতি অসন্তুষ্ট থাকায় সে চাকুরী বদল করে থাকে।

একজন পোষাক শ্রমিকের প্রথম চাকুরী শুরু হয় তার কোন না কোন স্বজনের হাত ধরে। আর সেই আত্নীয় বন্ধুদের মাধ্যমেই সে অন্যান্য কারখানা’র সুযোগ-সুবিধা, কর্ম-পরিবেশ, বেতন কাঠামো সম্পর্কে জানতে পারে। ধীরে ধীরে তুলনা করতে শেখে আর এভাবেই সে সীদ্ধান্ত নিতে শেখে। তাই আমরা বেশীরভাগ শ্রমিকের চাকুরী ছেড়ে চলে যাওয়ার নেপথ্য কারণ হিসাবে ‘ব্যক্তিগত ও পারিবারিক’ কারণ উল্লেখ থাকে। পোশাক-শিল্পে এই শব্দ দুটোর নেপথ্যে প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান আমরা ৯৯% মানব-সম্পদ কর্মী’ই করতে চাই না; অথবা কেঁচো খুড়তে সাপ বের হতে পারে বলেই হয়ত নীরব থাকি। তাই কর্মীদের এহেন ঝরে পড়া/প্রস্থানের সাথে আমরা শিল্প-সম্পর্ক এর কোন সম্পর্ক খোজার আগ্রহ খুজে পাই না।

আপনি বিগত এক বছরে ঝরে পড়া শ্রমিকদের চলে যাওয়ার কারন-গুলো খুজে বের করেন! দেখতে পাবেন এই তথ্যগুলো আপনার শ্রমিক ধরে রাখার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার প্রতিষ্ঠানে যদি ১০০০ শ্রমিক থাকে আর গত এক বছরে প্রায় মাসিক ৫০ জন করে হলেও বছরে মোট ৬০০ জন শ্রমিক ঝরে পড়ে তাহলেই আপনি বুঝবেন এই লোকবলের পুনঃস্থাপন ও নবাগতদের কাছ থেকে ঝরে যাওয়া দক্ষ শ্রমিকের মত কাজ পেতে কতটুকু বেগ পেতে হয়।

উক্ত ৬০০ জনের বেশিরভাগ শ্রমিকের তাদের বসের/প্রতিষ্ঠানের প্রতি সন্তুষ্টির হার কম। অথচ বেশিরভাগ কারখানাতেই শ্রমিকদের গড় মজুরি হার অনেকটাই খুবই কাছাকাছি হওয়ার পরেও নূন্যতম ৫% শ্রমিক প্রতিমাসেই ঝরে যাচ্ছে। যদি নেপথ্য কারণ অনুসন্ধান করেন, দেখবেন তারা যে সকল কারণে কর্মস্থল ত্যাগ করেছেন তার বেশিরভাগই শিল্প-সম্পর্কের সাথে সম্পর্কিত। যেমনঃ কর্মস্থলের পরিবেশ ভালো না, উর্ধতন বস গালাগালি করেন, দক্ষতার চেয়ে স্বজনপ্রীতি বেশি, দক্ষতা অনুযায়ী মজুরি নির্ধারণ হয় না, আইনগত সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায় না, ছুটি চাইলে ছুটি পায় না, অসুস্থ থাকলে/পারিবারিক জরুরী প্রয়োজন সময়মত জানালেও নানারকম হয়রানির শিকার হতে হয় ইত্যাদি। এজন্যই তারা কর্মস্থল পরিবর্তন করেছেন।

মনে রাখতে হবে একটি শ্রমিক বা কর্মকর্তা-কর্মচারী একটি প্রতিষ্ঠান ছেড়ে যাওয়ার নেপথ্যে যে কারণগুলো থাকে তার বেশিরভাগই শিল্প সম্পর্কের সাথে সম্পৃক্ত। দক্ষতা অনুযায়ী মূল্যায়ন পাওয়ার অধিকার প্রত্যেকটি শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর আছে। এক্ষেত্রে শ্রমিকদের সাথে সরাসরি তাদের বসের যে সম্পর্ক সেটাই বেশি গুরুত্বপূর্ন। কারণ আমরা দেখেছি পোশাক শিল্পে সুপারভাইজারদের সাথে তাদের শ্রমিকদের সম্পর্কের উপর শ্রমিকদের ঝরে পড়ার হার অনেকাংশে নির্ভর করে। তারা তাদের বসের ভালো ব্যবহার এবং আন্তরিকতা প্রত্যাশা করেন। তাদের সমস্যাগুলোতে তাদের উর্ধতনের সহ-মর্মিতা বিশেষভাবে প্রত্যাশা করে থাকেন। তাই একটি প্রতিষ্ঠানেরও নানা সীমাবদ্ধতা থাকার পরেও আমি শিল্প-সম্পর্কের বিষয়টা কর্মীর ঝরে পড়ার ক্ষেত্রে বেশী গুরুত্ব দিব।

তাই কোম্পানির ছেড়ে দেওয়া কর্মীদের চলে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান এবং সেই কারণগুলো সমাধানের মাধ্যমে আমরা পরবর্তীতে একই কারনে চলে যেতে উদ্যত কর্মীদের হার কমাতে পারি। এক্ষেত্রে যদি কোন উর্ধতনের দুর্বব্যবহার করার অভ্যাস থাকে তাহলে উক্ত ব্যক্তিকে শোধরানোর মাধ্যমে তার দুর্ব্যবহার মাত্রা আমরা কমাতে পারি এবং এর মাধমে সম্ভাবনাময় দক্ষ কর্মশক্তিকে কারখানায় ধরে রাখতে পারি। এক্ষেত্রে চলে যাওয়ায় এমপ্লয়ীদের চলে যাওয়ার কারণ জানার জন্য এক্সিট ইন্টারভিউ ফর্ম চালু করতে পারেন। সত্যিকারের কারণটি লিপিবদ্ধ করে তার সমাধানের পথ বের করতে পারেন।

মনে রাখা জরুরী যে এমপ্লয়ি টার্নওভার/কর্মী ঝরে পড়া একটা খরচ, মানবসম্পদ কর্মীসহ উর্ধতন সকলের এটা উপলব্ধি জরুরী। রিপ্লেসমেন্ট/স্থলাভিষিক্ত হিসাবে নতুন কর্মী নিয়োগ করলেও ঝরেপড়া কর্মীদের মত দক্ষতা অর্জন করার জন্য যে সময় প্রয়োজন এবং সে সময় পর্যন্ত প্রতিদিন যে প্রডাক্টিভিটি কম হবে তার আর্থিক মূল্য অনেক। এক্ষেত্রে দেখা যায় ঝরে পড়াদের ধরে রাখলেই প্রতিষ্ঠানের জন্য লাভজনক হত।

এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের উচু-স্তরে /ম্যনেজমেন্ট লেভেলে পারস্পারিক ইগো/আত্ম-অহম অনেক ক্ষেত্রেই সহকর্মীদের সাথে বিনয়ী হতে বাধা দেয়। ফলে সংঘাত-পূর্ন প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্কের করনে প্রাতিষ্ঠানিক ঐক্যে ভাঙ্গন ধরে এবং আমরা অনেক দক্ষ সহকর্মীদের হারাই। অনেক ক্ষেত্রে উর্ধতন কর্তাব্যক্তিরা অধঃস্তনদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করেন না। এর ফলেও প্রতিষ্ঠান দক্ষ কর্মী হারায়। তাই ঝরে পড়া’র নেপথ্য কারণগুলো অনুসন্ধানের মাধ্যমে আমরা আমাদের শিল্পের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো চিহ্নিত ও তার সমাধান করতে পারি এবং কর্মীদের ধরে রাখতে পারি। বলাই বাহুল্য এর মাধ্যমে আমাদের শিল্প-সম্পর্ক উন্নত হবে যা প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নের জন্য খুবই জরুরী।

কেন আমরা দক্ষ কর্মী প্রতিষ্ঠানে ধরে রাখতে ব্যর্থ হই? কোন ধরনের পদক্ষেপ আমাদের প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের দীর্ঘমেয়াদে কাজ করতে উৎসাহিত করবে? কী করনীয়? দক্ষ কর্মী চলে গেলে প্রতিষ্ঠানের আর্থীক ক্ষতির পরিমান কেমন? একজন কর্মী / শ্রমিকের রিপ্লেসমেন্ট/প্রতিস্থাপন খরচ কত?
এমন সাধারন বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের দ্বায়িত্বশীলদের যথাযথ জ্ঞান থাকা জরুরি । সবাই যদি শ্রমিকদের সাথে যত্নবান আচরণ করেন / হয়রানি মূলক আচরন বন্ধ করেন তাহলে কর্মী ঝরে যাওয়ার হার কমে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

আমি ইতিপূর্বের পর্বগুলোতে শিল্প-সম্পর্ক উন্নয়নের যে বিষয়গুলো করণীয় বলে উল্লেখ করেছি সেগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে কর্মী ঝরে যাওয়ার হার কমে যাবে বলে বিশ্বাস করি।
(চলবে)


উন্নত শিল্প-সম্পর্ক, উন্নয়নশীল প্রতিষ্ঠান (পর্ব-৭)
=============================
যোগাযোগ কার্যাবলী সমুহের নথিবদ্ধ করণঃ

এই লেখার প্রথম পর্বে একটি ফ্লিপ-চার্ট দিয়েছিলাম। মনে আছে কী? চার্টের ধারাবাহিকতা অনুযায়ী পর্বগুলোতে উন্নত শিল্প-সম্পর্ক কিভাবে প্রাতিষ্ঠানিক অগ্রযাত্রায় ভুমিকা রাখে তা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি।
নিচের ছকে একটি প্রতিষ্ঠানের এক বছরের নথিবদ্ধ তথ্য দেয়া হলো।
যেখানে তথ্যগুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে নথিবদ্ধ করা হয়েছে। যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের দুর্বল জায়গাগুলো সহজেই চিহ্নিত করা যায়। সে অনুযায়ী শিল্প-সম্পর্ক উন্নয়নে পরবর্তী কর্ম-পরিকল্পনা সাজানো সহজ হয় ।

উপস্থাপিত তথ্য বিশ্লেষণের জন্য বিষয়গুলোর প্রকারভেদ ইংরেজীতে রাখা হয়েছে। একটা সাদামাঠা এক্সেল ফাইলে রাখা তথ্যগুলো আপনাকে কোন কর্মীর ব্যপারে সহজে যুক্তিযুক্ত সীদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে। এই তথ্য ভাণ্ডার প্রতিদিনই সমৃদ্ধ হবে প্রতিদিন মাত্র ১ ঘন্টা সারাদিনের কাজগুলোকে নথিবদ্ধ করলেই।

নিচের বিষয়বস্তুর ধরণ ও তার বিবরনগুলো দেখলেই আপনি সহজে বুঝতে পারবেন কিভাবে ছকে’র তথ্যগুলো নথিবদ্ধ করা হয়েছে। ইংরেজীতে রেকর্ড করা হয়েছে এক্সেলে বিশ্লেষন/এ্যানালাইসিস সহজে করার জন্য।

Harassment: Behavioral abuse, Misbehave, Shouting, cruelty, indecent attitude, Insulting, illegal proposal, Creating unnecessary Stress, intentional pressure, objectionable physical touch.

Discrimination: Discrimination on Race, Religion, Color, Gender, Locality, Jealousy, Age, favoritism, Disability, Pay, Screwing, Refused, Biasness, Nepotisms,

Health & Safety: Any types of Sickness, Mask, Ear Plug, Gloves, Uniform, Shoe, Claim related Food & Drinking Water, Toilet Issue, Hygiene related issue, any types of Physical Injury.

Compensation: Any type of Payroll Related Issue. Such as: Employee Grade, Gross, Incentive, OT, Extra OT, Allowances, deduction, Leave, Full & Final Settlement, Maternity Benefits, etc which is/are directly related to Take Home Pay (Total Income).

System & Facility: Any types of Official Decisions like Office time, Eid Holiday, Office circulars, Transport issues, etc.

Productivity: Productivity Related issues like Low efficiency, Slow Work, Quality Issues, Process change, Target achievement, etc.

Family & Personal Problem: Any types of family issue, Personal issue & Mindset problem.
এখন নিচের চিত্র আর ফ্লিপ-চার্ট দেখে কিভাবে আপনার করনীয় ঠিক করবেন? ধরুন এই তথ্যগুলো আপনার প্রতিষ্ঠানের। এক্ষেত্রে আপনি আপনার প্রতিশ্তহানের শিল্প-সম্পর্ক উন্নয়নে এগুলোকে কিভাবে কাজে লাগাবেন?
(চলবে)


উন্নত শিল্প-সম্পর্ক, উন্নয়নশীল প্রতিষ্ঠান (পর্ব-৮ ও শেষ পর্ব)
====================================
প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য করণীয় নির্ধারণঃ

আমাদের আলোচ্য শিরনাম অনুযায়ী শিল্প-সম্পর্কের উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ঘটানোর করণীয় নির্ধারন করতে পারি। Organizational Development (OD) এর দুটি পদ্ধতি আছে, তাহলে (১) Digonosis OD আরেকটি (২) Diogonestic OD । আপনি কোনটি’র মাধ্যমে আপনার প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নিবেন সেটা আপনার নিজস্ব পছন্দের বিষয়।

প্রতিষ্ঠানের Development Needs Assessment / OD Project / Training Needs Assessment এর কাজ যারা আগে কখনই করেন নাই তাদেরকে জন্য এই পর্বটি এবিষয়গুলো সম্পর্কে একটি ধারনা পেতে সাহায্য করবে। এখানে প্রকৃত অবস্থানুযায়ী কি কি ধরনের কার্যক্রম হাতে নেয়া উচিত সে বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত মতামত থাকবে। যারা এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ তারা নিজেদের মূল্যবান মতামত দিলে আমি কৃতজ্ঞ থাকব।

আমি বিশ্বাস করি সঠিক ঔষধ প্রয়োগ না করলে আরোগ্য লাভ সম্ভব নয়। আবার কোন গাছের কাঠ দিয়ে যদি আসবাবপত্র তৈরী করতে চান, তাহলেও কাঠের অনেক অংশই উচ্ছিষ্ট হিসাবে বাদ হয়ে যাবে। প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নিলেও আপনাকে অনেক উচ্ছিষ্ট কার্যাবলী/অভ্যাস বাতিল করতে হবে। আর বলাই বাহুল্য যে আমাদের বেশীরভাগ প্রতিষ্ঠানের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ নিজেদের কোন উচ্ছিষ্ট/অপ্রয়োজনীয় কাজ/বদভ্যাস ছাড়তে রাজি নন। “এতদিন কোম্পানী চলে নাই!’ আপনার এসব প্রস্তাব রাখেন তো, হাউজ-কিপিং ঠিক করেন।” এমন সংলাপ অনেক প্রগতিশীল মানব-সম্পদ কর্মীকেই শুনতে হয়। আফসোস + দুর্ভাগ্য আমাদের। এইজন্যই এদেশে প্রতিষ্ঠানের লাইফ লাইন/ টিকে থাকার মেয়াদ বিদেশী প্রতিষ্ঠানের চেয়ে অনেক কম।

যা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল; আগের পর্বের চিত্রটি আরেকবার মনে করে দেখুন। ছকে আমরা দেখেছি ১টি কারখানায় মাত্র ১ বছরে বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে মোট ২৭,৬৩৫ টি তথ্য নথিবদ্ধ করা হয়েছে। যার মাধ্যমে শীর্ষ ৫ টি ক্যটাগরি এখন আপনার হাতে। এখন এগুলো নিয়ে আপনার দক্ষতা দিয়ে স্বল্প/দীর্ঘ মেয়াদি করণীয় ঠিক করতে আপনার বেশী বেগ পাওয়ার কথা নয় ।

ছকে উল্লেখ্য সমস্যাগুলো ও সম্ভাব্য সমাধান আমার মতে যেমন হতে পারে তা দিয়েছি। সাধারণ ইংরেজী শিরোনাম গুলো বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কি বোঝাতে চেয়েছি সেটা পাঠক বুঝলেই আমি স্বার্থক।

চ্যলেঞ্জঃ Without Information
সমাধানঃ Effective Communication System [কার্যকর অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন]
 Functional Communication Channel (Daily Counseling, Absent Counseling, Floor Staff, C&S Box, Hot Line, PC Agenda)
 More Careful about Data Recording
 Strong Informal Relationship

চ্যলেঞ্জঃ Family & Personal Problem
সমাধানঃ Work Life Balancing [কর্মজীবন ও ব্যক্তিগত+পারিবারিক জীবনের ভারসাম্যের কৌশল]
 Improve Capacity for effective dealing Daily life issues
 Improve ability Problem Solving & Decision Making (PSDM)

চ্যলেঞ্জঃ System & Facility
সমাধানঃ Culture Building/Corporate Culture [প্রাতিষ্ঠানিক নিজস্ব সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা]
 Corporate Value Nursing for Establish Common Behavioral
 Promote Core Value Campaign Value

চ্যলেঞ্জঃ Health & Safety
সমাধানঃ Increase Health & Safety Awareness [কর্মীদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিষয়ে সচেতন করে তোলা ]
 Review Health & Safety Data
 Take Initiative for improving Seasonal diseases

চ্যলেঞ্জঃ Others
সমাধানঃ Apply SOP as Per Cases [প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব লিখিত নীতিমালা নিরপেক্ষভাবে বাস্তবায়ন]
 Strictly apply Company SOP on any ZERO Tolerance Issue

এভাবেই সমস্য চিহ্নিত করে আপনি Diogonestic OD প্রোজেক্ট হাতে নিতে পারেন। আমাদের আলোচ্য পর্বগুলোতে শিল্প-সম্পর্ক উন্নয়ন কৌশল ও প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন কিভাবে সম্ভব সে বিষয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করেছি। ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন বলে আশা করছি। আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করেছি কিতাবি বিষয়গুলোর বদলে এদেশের পোশাক কারখানায় বাস্তবতাভিত্তিক দৈনন্দিন কাজের মাধ্যমে আমরা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন পরিকল্পনা করতে পারি।

কারও পেশাগত জীবনে এই লেখাগুলো উপকারে আসলে আমার এই পরিশ্রম স্বার্থক হবে। এটা আমার ব্যক্তিগত সামাজিক দ্বায়বদ্ধতা থেকেই এই উদ্যোগ। এই সেক্টরে কর্মরত আমার চেয়ে আরও অভিজ্ঞ সবাইকে অনুরোধ করবো আপুনারাও জুনিয়রদের জন্য ‘বিষয়ভিত্তিক’ ধারাবাহিক লিখতে পারেন । তাতে সঠিকভাবে অনুজেরা কাজ করতে পারবেন, প্রতিষ্ঠানের মংগল হবে।
প্রিয় সুহৃদ, আমাকে সঙ্গ ও উৎসাহ দেয়ার জন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আগামীতে আবার কোন নতুন বিষয় নিয়ে লেখার ইচ্ছে আছে। উল্লেখ্য, এই লেখাগুলো আমার LinkedIn + Facebook (Sheik Kamal Hossain) ও Twitter (skmukul2) একযোগে দেখতে পাবেন।
ভাল থাকবেন, সুস্থ্য ও নিরাপদ থাকবেন।

==০==

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১১:৩৭
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×