somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ পুর্নিমার রাত পর্ব ১

২৬ শে মে, ২০১৩ রাত ৮:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জানালার গ্রীল ধরে দাড়িয়ে আছে জুই। সবসময় সে এই রাতটির জন্য অপেক্ষা করে। সে যেখানেই থাকুক না কেন, কোন লেক বা পুকুর পাড়ে বসে সে তাকিয়ে থাকবে পূর্নিমার চাদের দিকে। ক্লাস ফাইবে থাকতে সে প্রথমবারের মত যখন গ্রামের বাড়িতে যায় তখন তার দাদু বলেছিল এই পূর্নিমার রাতে চাদকে কিছু বললে যা তার ইচ্ছা পূরন করে। আদর করে এই কথা বললেও জুই আজও বিশ্বাস করে পুর্নিমার রাতে চাদকে কিছু বললে চাদ তা পূরন করবে।
.
আজ পূর্নিমার রাত
জানালার গ্রীল ধরে বারান্দায় দাড়িয়ে আছে সে। আজ তার মনে হচ্ছে সে হচ্ছে এই দুনিয়ার সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ। আর নারী জাতী হচ্ছে সবচেয়ে নিক্রিষ্ট জাতি। কারন সে দেখেছে নারীদের নিয়ে কটাক্ষতা, ইভটিজিং, নারী নির্যাতন আরও কত কি। জুইর বয়সটাও তো কম হয় নি। সে নিজেও এসবের কম মুখোমুখি হয় নি।
.
কিছুক্ষন পর জুইর মা বারান্দায় আসলেন।
--জুই তোর কি মন খারাপ?
--কই না তো। আর মেয়ে মানুষের মন খারাপ হলে চলে? তাদের সবসময় ভদ্র সমাজের খারাপ মানুষের সাথে বাস করতে হয়।
জুইর দিকে তাকি নিরবে চোখের জন ফেললেন তার মা।
--শোন মা, কাল একটু তোর বান্ধবী শায়লাকে বাসায় আসতে বলবি?
--কেন মা? শায়লাকে কি দরকার?
--নাহ, তোকে সাজাতে হবে না?
--আমাকে সাজাতে হবে কেন? কাল কি মা?
--কাল তোকে দেখতে আসবে যে।
অনেক দিন হাসে না জুই। আজ একটু জোরেই হেসে ফেলল।
--আমাকে আবার কে দেখতে আসবে? আর আসলেই বা কি? আমাকে দেখে যাবে তারপর বলবে আমাকে পছন্দ হয় নি। ভুলে যেও না মা, আমি এখন একটা সমাজের বোঝা।
--কেন সবসময় নিজেকে এতটা ছোট ভাবিস তুই? আমার এই ফুলের মত মেয়েকে কেউ ফিরিয়ে দিতে পারে?
--মা ফুলের পাপড়ি খুলে নিলে কিন্তু আর ফুলের প্রতি কোন আগ্রহ থাকে না। আর ছেলেটাকি আমার সমন্ধে সবকিছু জানে?
--জানি না। সমন্ধটা তোর বাবা ঠিক করেছে।
হঠাৎ বারান্দায় আসলেন বাবা।
--কিরে মা, কেমন আছিস?
--আমি কেমন থাকবো সেটাতো তোমার জানার কথা বাবা।
হাসছে জুই।
--কালকে তোকে দেখতে আসবে। একটু সেজে গুজে থাকিস।
--আচ্ছা বাবা ছেলেটা কি আমার সমন্ধে সবকিছু জানে?
--হ্যা।
--ছেলেটা আমাকে বিয়ে করতে রাজি হল কেন?
এড়িয়ে গেলেন বাবা।
--আচ্ছা মা কফি খাবি? অনেকদিন একত্রে কফি খাই না। যাও তো কফি নিয়ে আসো, আজ আমি তুমি আর জুই একত্রে কফি খাবো।
মা কফি বানাতে গেল। জুইর মাথায় হাত রাখল তার বাবা। তিনি চিন্তা করছেন একটি মাত্র কন্যা তাদের। যেমন মেধাবী তেমন সুন্দরী। যদি না এই ঘটনা ঘটত আজ এই মেয়ের জন্য হয়ত প্রত্যেকদিনইসমন্ধ আসত।
--কি এত চিন্তা করছ বাবা?
--কই না তো।
চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল বাবা।
--আমি জানি তুমি কি চিন্তা করছ বাবা।আমাকে ছাড়া আপাতত আর কি চিন্তা হবে তোমার?
এমন সময় কফি নিয়ে বারান্দায় এলেন মা। কফি খেতে খেতে চিন্তা করছে জুই। আজ সে তার বাবা মায়ের অনেক বড় বোঝা। বিয়ের পর হয়ে যাবে তার স্বামীর বোঝা। নিষ্ঠুর এই সমাজে বেচে থাকতে চায় না সে। আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল অনেকবার কিন্তু তার যেই অবস্থা তা সে আর করতে পারে নি। সে চিন্তা করছে যেই ছেলে কাল তাকে দেখতে আসবে সে কি তার অতীত জানে? নাকি অন্য কোন কারনে বিয়ে করতে চায় জুইকে।
.
রাতে তার ঘুম হয় নি। সকালে সকাল শায়লার ফোন। শায়লা জুইয়ের খুব কাছের বান্ধবী। শায়লা এক প্রকার সুস্থ মানসিক রোগী।
--কিরে জুই ঘুম থেকে উঠলি?
--তোর ফোনে ঘুম ভাঙ্গলি, এত সকাল সকাল কেন ফোন দিলি?
হাসতে হাসতে উত্তর দেয় শায়লা।
--কাল একটা ঘটনা ঘটল। তোকে না বললে তো আমার পেটের ভাত হজম হবে না।
--আচ্ছা বল কি ঘটনা?
--কাল ভার্সিটি থেকে আসার পথে দেখলাম আমার ভাই শাকিল আর একটি মেয়ে একত্রে রিক্সায় করে কোথায় যাচ্ছে। একজন আরেকজনের হাত ধরে ধরে যাচ্ছে।
--তো কি হয়েছে? তোর ভাই শাকিল এবার ইন্টার পরীক্ষা দিচ্ছে। এই বয়সে এগুলো হতেই পারে।
হাসতে হাসতে উত্তর দেয় শায়লা।
--যেটুকু দেখলাম তাতে ওই মেয়েটা আমার চেয়ে সুন্দর বলে মনে হয় না। আর দেখ আজ পর্যন্ত আমার দিকে কেউ একবারের জন্যও তাকাল না। আর যারা তাকাল তারাও তাকাত ইভটিজিং এর চোখে।
আমি স্পষ্ট বুঝলাম, শায়লার এটা হাসি নয়। প্রচন্ড আনন্দে যেমন মানুষ কাদে ঠিক তেমনি অতি দুঃখে মানুষ হাসে। সেই হাসি হাসছে শায়লা।
--শুন শায়লা আজ তোকে একবার আমার বাসায় আসতে হবে।
--কেন রে?
--আয় আগে, আসলেই বুঝবি।
--আগে বল না প্লিজ?
--আজ আমাকে দেখতে আসবে। তুই আমাকে সাজাবি।
--অব্যশই। কথন আসতে হবে?
--সন্ধ্যার কিছু আগে আসিস।
--ওকে মহারানি। আপনার যা মর্জি।
--আর একটা কথা শুন ছোট ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ডের পিছে লাগিস না দয়া করে।
কথা না বলে ফোন কেটে দেয় শায়লা।
.
সন্ধ্যার কিছু আগেই শায়লা বাসায় হাজির। আমাকে সাজিয়ে দিচ্ছে ও। অনেক ভালো সাজাতে পারে শায়লা।
--জানিস আমার ছোট ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ডের নাম কি?
--না।
--ফাহি
--বাহ বেশ সুন্দর নাম তো।
--আমার নামটা কি খারাপ? আমার দিকে কেউ তাকায় না কেন?
কথা শেষ না হতে মা ঘরে ডুকল।
--ওরা এসে গেছে। শায়লা শেষ হল?
--জি আন্টি শেষ। জুই তুই বস। আমি তোর জামাই দেইখা আসি।
মা আমার মাথায় হাত রেখে কান্দছে। এমন সময় বাবাও ডুকল ঘরে।
--আমার জুইকে আজ কত সুন্দর লাগছে। আজ ওরা আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দিতে পারবে না।
এই বলে বাবা কান্দতে লাগলেন।
আর আমি সব কিছু শুধু অনুভব করছি।
.
প্রায় ৫ মিনিট হয়ে গেল। আমি আর সাজ্জাদ যে আমাকে দেখতে এসেছিল একা বসে আছি। সাজ্জাদের মামা এসেছিল সাজ্জাদের সাথে। সাজ্জাদের মামা বললেন বিয়ের আগে ২ জন পরিচিত হয়ে নেওয়ার দরকার আছে। তাহলে পরে আর সমস্যা হয় না। তোমরা কথা বল, চলেন আমরা অন্যরুমে বসি। বাবা মাকে নিয়ে সাজ্জাদের মামা অন্যরুমে গেল। কিন্তু ৫ মিনিট হয়ে গেল সাজ্জাদ চুপ আমিও চুপ। আরও ৫ মিনিট পর সাজ্জাদের মামা ঘরে ডুকে বললেন তোমাদের কথা শেষ তো? পরিচিত হলেতো দুজনে? বাবাকে বললেন জুই মায়ের মোবাইল নাম্বারটা দিয়েন। বিয়ের আগো আরও ভালোভাবে পরিচিত হয়ে নিলে ভালো। পরে তাহলে আর ঝামেলা হবে না। আমি মনে মনে বললাম আমাকে নিয়ে কখনোই ঝামেলা হবেই না। হতে পারেই না।
.
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০১৩ রাত ৯:২৬
২৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×