somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘুম ঘুম এই ব্যস্ত শহর..

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ৯:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোট্ট একটা শহর।

শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীটাও ছোট।

জানালা দিয়ে তাকালে চোখে পড়ে ছোট্ট একটা চৌকো আকাশ।

কিন্তু সে তুলনায় বড্ড ঘিঞ্জি, আর ব্যস্ত শহরটা।

শহরের আকাশে যতক্ষণ আলোর গোল চাকতিটা দেখা যায়, রাস্তায় ছুটে চলা যন্ত্রদানবগুলো পাঁয়তারা করে কিভাবে ওটাকে কালো ধোঁয়ায় বেশ করে ঢেকেঢুকে দেয়া যায়।

আর সে রাস্তা ধরে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে চলা মানুষগুলোর জীবন চালাতে গিয়ে আর সে হতচ্ছাড়া জীবনটার মানে খুঁজে বের করার ফুরসত মেলে না।

তারপর, একসময় দানবগুলোর সাধ মেটাতেই হয়তো, আলোর চাকতিটা কোথায় যেন টুপ করে লুকিয়ে পড়ে, আর আকাশটা নিজেকে মুড়ে নেয় কালো চাদরে।

তখন একদল মানুষ ব্যস্তসমস্ত হয়ে ঘরে ফেরে, সবাই না অবশ্য, যাদের ঘরে সান্ধ্য আইন জারি আছে, তারা শুধু।

রাত যত বাড়ে, রাস্তাগুলোর জটলা ততই কমতে থাকে, ভরে ওঠে ছোট ছোট ঘরগুলো। শেষে একসময় যখন একে একে বাতিগুলো সব নিভে যেতে শুরু করে, তখনই শুরু হয় আমাদের গল্পের।

ঐ দূরে যে ঘরটাতে এখনো আলো নেভেনি, ওখানে টেবিল-চেয়ারে বসে মগ্ন হয়ে পড়ছে এক ছেলে। কাল পরীক্ষা ওর।

পাশের বস্তিতেই তখন দু'মাসের বাচ্চাটার কান্না থামাতে ব্যস্ত এক মা। ছেঁড়া কাপড়টা দিয়ে ওর শীত কমানোর চেষ্টা করছে সে।

দূরে কোথাও অনবরত ডেকে চলেছে একটা কুকুর, রোজই ডাকে।

ওহ্‌হ্‌, আর ঐ যে গানের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে, ঐ লোকটা প্রতিরাতেই ছাদে বসে গান ধরে, সুখভর্তি বোতলটা থাকে সাথে। ওর বৌ-বাচ্চা তখন ঘরে গভীর ঘুমে অচেতন।

ঠিক তখনি খটমটে বাঁধানো ফুটপাথে পাশ ফিরে শোয় হাড্ডিসার ক্ষয়ে যাওয়া শরীরটা। ওর ঘুমও গভীর, সারাদিন খাটুনি তো কম যায়নি!

ও বাড়ির ছোট্ট মেয়েটা এখন বালিশে মুখ গুঁজে সমানে কেঁদে চলেছে। না পারছে চোখের পানি আটকাতে, না পারছে শব্দ করে কাঁদতে, পাশে ঘুমিয়ে থাকা দাদুটা যদি টের পেয়ে যায়! আমার কি দোষ, গাল ফুলিয়ে ভাবে মেয়েটা, আমি যাদের ভালবাসি তারা সব এমন হয়ে যায় কেন? ওর আবার বড্ড অভিমান!

পাশের ফ্ল্যাটের চল্লিশোর্ধ্ব প্রফেসরেরও ঘুম আসছে না তখন। ঘুমন্ত স্ত্রীর পাশে শুয়ে এপাশ-ওপাশ করছেন, ক্ষণিকের তন্দ্রায় চোখ একটু বুজে এলেই মনে পড়ে যাচ্ছে ক্লাসে আসা নতুন মেয়েটার কথা। আহা, মুখটা বড্ড...

রাতজাগা পাখিটা তখনো একই স্বরে ডেকে চলছে। প্রতিদিন এ সময়েই কি যেন হয় ওর।

নয়তলার ওপরে তখন গণকযন্ত্রের সামনে বসে আছে সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকা ছেলেটা। ওর চঞ্চল চোখদুটো এখন নিষিদ্ধ আনন্দ উপভোগে ব্যস্ত।

তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তে ওঠা এক বাবা একটা বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে; স্তব্ধ, চুপচাপ। ওপাশে ফিসফিস শব্দ, চাপা খিলখিল হাসির আওয়াজ। কড়া নাড়তে গিয়েও হাত নামিয়ে নিয়ে আস্তে আস্তে ফিরে আসলেন তিনি ক্লান্ত পায়ে। মেয়েটার যে কি হবে, দীর্ঘশ্বাস পড়লো একটা।

রাস্তা দিয়ে হঠাৎ হুড়োহুড়ি করে দৌড়ে যাওয়ার শব্দ। আরেকটা ছিনতাই হল বোধহয়।

শালটা গায়ে জড়িয়ে হোস্টেল থেকে বেরিয়ে গেল একটা ছেলে। নাহ্‌, আজ রাতে আর ঘুম হবে না। সিগারেটে সুখটান দিয়ে গান ধরলো ও। হাঁটতে হাঁটতে কতদূর যে চলে এলো...জীবনটাকে বড় শূন্য আর একঘেয়ে লাগে হঠাৎ।

তখন জানালায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে ডুবে যাওয়া চাঁদটার কথা ভাবে এক নৈরাশ্যবাদী, সাথে নিজের বদলে যাওয়া জীবনটার কথা। নাহ্‌, জীবনটা অত খারাপ না!

আস্তে আস্তে জ্বলে থাকা বাতিগুলোও নিভতে শুরু করে একটু পর, আর ছোট শহরটা তার গল্পে ভরা শরীরটাকে নিয়ে নিকষ আঁধারে ডুবে যায়।

ঘুম ঘুম এই ব্যস্ত শহরটা নীরবতার আড়ালেও তার মুখরতা হারায় না।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:৩০
১৫টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×