somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তারেক রহমান কেন মায়ের মুমুর্ষ অবস্থায়ও দেশে ফিরতে পারছেন না — একটি রাজনৈতিক বাস্তবতার চিত্র

২৯ শে নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




তারেক রহমান কেন মায়ের মুমুর্ষ অবস্থায়ও দেশে ফিরতে পারছেন না — একটি রাজনৈতিক বাস্তবতার চিত্র
দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রীর জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকা মুহূর্ত—এমন সময়ে একজন সন্তানের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হওয়া উচিত মায়ের পাশে ছুটে আসা। কিন্তু তারেক রহমানের ক্ষেত্রে বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই একটি জটিল রাজনৈতিক, আইনি ও আন্তর্জাতিক বাস্তবতার ঘেরাটোপে আবদ্ধ। এই ঘেরাটোপই আজ মায়ের মুমুর্ষ অবস্থাতেও তাঁর দেশে ফেরা কঠিন করে তুলেছে।

বিগত দেড়–দুই দশক ধরে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে নানা মামলা, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও আদালতের রায় রয়েছে—এটা রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ বহুবার তুলে ধরেছে। অপরদিকে বিএনপি সবসময় দাবি করেছে, এসবই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, এবং আওয়ামী লীগের ‘প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতি’র কারণেই তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারেন না। এই অভিযোগ বহু বছর ধরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক আলোচনার একটি স্থায়ী উপাদান।

কিন্তু সময়ের প্রবাহে একটি নতুন চিত্র সামনে এসেছে—যা বিএনপির প্রচলিত বক্তব্যের সঙ্গে নিজ দলনেতার সাম্প্রতিক মন্তব্যকেই যেন বিরোধে দাঁড় করিয়েছে। তাঁর বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয়েছে, দেশে ফেরা তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে না; বরং আইনি, কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক নানা পর্যায়ের বাধা-বিপত্তি রয়েছে, যেগুলোর সমন্বয় তাঁর একার হাতে নেই। এই স্বীকারোক্তি প্রকাশ করেছে, যে বিষয়টিকে এতদিন এককভাবে সরকারের ওপর চাপানো হয়েছিল, বাস্তবতা আসলে আরও বহুস্তরীয়।

তারেক রহমানের দেশে ফেরা এখন একটি বহু মাত্রিক সংকটের প্রতীক—
একদিকে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে তাঁর অনুপস্থিতি বিএনপির জন্য একটি দীর্ঘস্থায়ী শূন্যতা তৈরি করেছে; অন্যদিকে তাঁর উপস্থিতি দেশের আইনি কাঠামো, আদালতের রায় ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সমীকরণে নতুন অস্থিরতা যোগ করতে পারে—এমন আশঙ্কাও রয়েছে বিভিন্ন মহলে।

মায়ের পাশে ছুটে আসার মানবিক আহ্বান একদিকে যেমন প্রবল, অন্যদিকে তাঁর বিরুদ্ধে চলমান বিচারিক প্রক্রিয়া তাকে দেশে ফিরলেই তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তারের সম্ভাবনা তৈরি করে। লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানের জন্য এটি শুধু রাজনৈতিক ঝুঁকি নয়; তাঁর জীবনযাপন, নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক আশ্রয়ের জটিলতাও এতে জড়িয়ে আছে।

এ অবস্থায় বিএনপির রাজনীতিও একটি দ্বৈত সংকটের মুখে। একদিকে দলকে দেখাতে হয় যে তারা তাদের নেতাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে; অন্যদিকে বাস্তবিক পরিস্থিতি এমন যে সেই ফেরা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে দলীয় বক্তব্য ও বাস্তবতার মাঝে একটি দৃশ্যমান ফাঁক তৈরি হয়েছে—যা এই সংকট মুহূর্তে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

মায়ের জীবন সীমান্তে দাঁড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও সন্তানের দেশে ফিরতে না পারার এই ঘটনাটি একটি বড় রাজনৈতিক প্রতীকে পরিণত হয়েছে। এতে স্পষ্ট হয়েছে—তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে যে বয়ান গড়ে উঠেছিল, সেটি শুধু বিরোধী দলের একপাক্ষিক অভিযোগ ছিল না; বরং বাস্তব পরিস্থিতি বহুলাংশে আইনি, আন্তর্জাতিক ও রাজনৈতিক বহু দেয়ালে আটকে আছে।

এই দৃশ্যপটটাই আজ বাংলাদেশের রাজনৈতিক আলোচনায় নতুন করে প্রশ্ন তুলছে:
বহু বছর ধরে যেই অভিযোগটি আওয়ামী লীগের দিকে তোলা হয়েছিল—তারেক রহমান দেশে ফিরতে না পারার জন্য তারাই দায়ী—সেই অভিযোগের ভিত্তি কতটা টেকসই?

তারেক রহমানের সাম্প্রতিক বক্তব্য সেই প্রশ্নের উত্তরই যেন অজান্তেই দিয়ে দিয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সত্যের পর্দা সরেছে, এবং অন্তত এই অভিযোগে আওয়ামী লীগকে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করতে আর রাজনৈতিক যুক্তির আশ্রয় নিতে হয়নি—ঘটনাই নিজে নিজে সেই সত্যকে সামনে এনেছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৩৫
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×