somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মনের অসুখে হোমিওপ্যাথি, মানসিক রোগী চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি আর অর্গানন অব মেডিসিন

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানসিক রোগী চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথিঃ

হোমিওপ্যাথিতে রোগ বলতে মানুষের জীবনীশক্তি (Vital Force) জীবনবিরোধী কোন উপাদানের প্রভাবে বিশৃংখলিত হলে, মানুষের দেহ ও মনে কিছু কষ্টকর অনুভূতির সৃষ্টি হয় যাহা কিছু লক্ষন ও চিহ্নের সাহায্যে প্রকাশিত হয়, দেহ ও মনে প্রকাশিত সকল কষ্টকর অনুভূতি, লক্ষন ও চিহ্নের সমষ্টিকে বুঝায়।সুতরাং হোমিওপ্যাথিতে দৈহিক বিশৃংখলার পাশাপাশি মানসিক বিশৃংখলাকেও রোগ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়।



হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক জার্মান চিকিৎসাবিজ্ঞানী ডাঃ স্যামুয়েল হ্যানিম্যানই একমাত্র চিকিৎসা বিজ্ঞানী যিনি সর্বপ্রথম মানসিক রোগকে এক ধরণের রোগ বলে ঘোষণা করেছিলেন। তাই তিনি মানসিক রোগীদের প্রতি নির্দয় আচরণ করতে নিষেধ করতেন এবং তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করতে ডাক্তারদেরকে পরামর্শ দিতেন। তিনি আরও বলতেন যে, “যার কান্ডজ্ঞান বা দায়িত্বজ্ঞান আছে, একমাত্র তাকেই কোন অপকর্মের জন্য শাস্তি দেওয়া যায়”। তাই হ্যানিম্যানকে বলা যায় পৃথিবীর প্রথম মনোরোগ বিশেষজ্ঞ (psychiatrist)। আজ থেকে দুইশ বছর পূর্বে হ্যানিম্যানের সময়ের এবং তাঁর পূর্বেকার সমস্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এবং ডাক্তাররা মানসিক রোগকে জ্বীণ-ভূত-প্রেতাত্মা ইত্যাদির আছর বলে মনে করতেন। তাই সেকালের ডাক্তাররা মানসিক রোগীদেরকে প্রহার করা, বেত্রাঘাত করা, শিকল দিয়ে বেধে রাখা, লাঠি দিয়ে খুচিয়ে উত্যক্ত করা, বালতি দিয়ে তাদের গায়ে ঠান্ডা পানি নিক্ষেপ করা ইত্যাদি ইত্যাদি দুর্ব্যবহারের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়াকেই মানসিক রোগের উপযুক্ত চিকিৎসা বলে মনে করতেন। তখনকার দিনে বিভিন্ন আশ্রমে থাকা মানসিক রোগীদের সাথে নানা রকমের বিদ্রুপাত্মক দুর্ব্যবহারের মাধ্যমে সাপ্তাহিক ছুটিতে বেড়াতে আসা লোকদের মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা করা হতো। এমনকি চিকিৎসা বিজ্ঞানের তথাকথিত এই চরম উন্নতির (!) যুগেও মানসিকরোগ বিশেষজ্ঞরা মানসিক রোগীদের ওপর নানানভাবে অত্যাচার-নির্যাতন করে থাকেন ; যেমন- মানসিক রোগের চিকিৎসার নামে মস্তিষ্কের সামনের দিকের নার্ভ (neurotransmitters) কেটে দেওয়া (frontal lobotomies), বিদ্যুতের শক দেওয়া (electroshock therapy), নারীদের যৌন উন্মত্ততার (nymphomaniacs) চিকিৎসার জন্য ডিম্বাশয় কেটে ফেলে দেওয়া (ovarectomies) ইত্যাদি ইত্যাদি। তাই বলা যায়, এখনকার দিনে মনোরোগ চিকিৎসা বিজ্ঞান যে স্ট্যান্ডার্ডে এসে পৌঁছেছে, আজ থেকে দুইশ বছর পূর্বেও হ্যানিম্যানের স্ট্যান্ডার্ড ইহার চাইতে ভালো ছিল এবং মানসিক রোগীরা এখনকার মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের নিকট থেকে যতটুকু সদয় ব্যবহার পেয়ে থাকেন, দুইশ বছর পূর্বেই হ্যানিম্যান তাঁর অনুসারী হোমিও ডাক্তারদেরকে ইহার চাইতেও অধিক সদয় ব্যবহারের শিক্ষা দিয়ে গেছেন। সে যাক, হ্যানিম্যানই প্রথম ঘোষণা করেন যে, অন্যান্য(বিসদৃশ বা অহোমিওপ্যাথি) নানা রকমের কুচিকিৎসার মাধ্যমে শারীরিক রোগকে জোর করে চাপা দেওয়াই (suppression) হলো অধিকাংশ মানসিক রোগের মুল কারণ।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে হ্যানিম্যানের আরেকটি ঐতিহাসিক অবদান হলো, তিনিই প্রথম মানুষের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধকে স্বয়ং সুস্থ মানুষের শরীরে গুণাগুণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার গুরুত্ব উপলব্ধি করেন। এজন্য তিনি একটি পরীক্ষা পদ্ধতি আবিষ্কার করেন এবং এটি বাস্তবে প্রচলন করে যান। পক্ষান্তরে প্রচলিত অন্যান্য চিকিৎসা বিজ্ঞানে ইঁদুর-বিড়াল-বানর-গিনিপিগ-খরগোস ইত্যাদি বোবা জানোয়ারের ওপর ঔষধ পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। বোবা জন্তুরা যেহেতু তাদের কষ্টের কথা বলতে পারে না, ফলে ঔষধ তাদের শরীর-মনে যে-সব রোগ সৃষ্টি করে, তার অনেকগুলোই জানা সম্ভব হয় না। ফলে কোন ঔষধটি মনের ওপর কি কি ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, তা সে-সব পন্থী চিকিৎসকরা জানেন না। কেননা তারা কেবল শরীরিক পরিবর্তন, বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের তাপমাত্রা-আকৃতি-রং ইত্যাদির পরিবর্তন, পায়খানা, প্রস্রাব, রক্ত ইত্যাদির পরিবর্তন ইত্যাদি পরীক্ষা করে ঔষধের একশান-রিয়েকশান জানার চেষ্টা করেন। অন্যদিকে হ্যানিম্যান এবং তাঁর অনুসারী হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা প্রতিটি হোমিও ঔষধ নিজেরা সুস্থ শরীরে দীর্ঘদিন খেয়ে তাদের দেহ-মনে সে-সব ঔষধের গুণাগুণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। হ্যানিম্যান তাঁর জীবনকালে ৯০টি ঔষধ নিজের শরীরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তার বিস্তারিত গুণাগুণ তাঁর রচিত “মেটেরিয়া মেডিকা পিউরা” (Materia Medica Pura) নামক গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করে গেছেন।

হ্যানিম্যানের জীবনকালে এবং তাঁর মৃত্যুর পরে অন্যান্য হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা হ্যানিম্যানের রীতি অনুসারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আরো হাজার হাজার হোমিও ঔষধ আবিষ্কার করে বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে সার্থকভাবে ব্যবহার করে গেছেন।

কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, অধিকাংশ মানুষ মানসিক রোগের চিকিৎসার জন্য হোমিও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের কাছে না গিয়ে বরং মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞদের স্মরণাপন্ন হয়ে থাকেন। মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে আমরা যাদেরকে জানি, তাদের সবাই অহোমিওপ্যাথিক ডাক্তার। ওনারা খুবই মেধাবী, জ্ঞানী, গুণী, সুদীর্ঘ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইত্যাদি ইত্যাদি সবই সত্য। কিন্তু মানসিক রোগের চিকিৎসা করার মতো ঔষধ ওনাদের হাতে নাই। ফলে তাদের দৃষ্টান্ত অনেকটা “ঢাল নাই তলোয়ার নাই, নিধিরাম সরদার”-এর মতো। কেননা তাদের কোন ঔষধই মানুষের মনের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় নাই। ফলে মানসিক রোগীদেরকে তারা কেবল মাথা ঠান্ডা করার ঔষধ (Tranquillizer) অথবা ঘুমের ঔষধ (Hypnotic) দিয়ে যুগের পর যুগ চিকিৎসা চালিয়ে যান। আমাদের শরীরের একটি নিজস্ব শক্তিশালী রোগ নিরাময় ক্ষমতা আছে। এই কারণে অধিকাংশ ছোট-বড় শারীরিক রোগ বিনা চিকিৎসাতেই সেরে যায়। তেমনিভাবে অধিকাংশ মানসিক রোগও শরীরের নিজস্ব রোগ নিরাময় ক্ষমতার (immune system) বদৌলতে বিনা ঔষধেই সেরে যায়। মাঝখানে এসব ঘুমের ঔষধের (Sedative) সুনাম বেড়ে যায় ।

মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা যদিও সামান্য ডান-বাম করে তাদের কিতাবে অগণিত মানসিক রোগের নাম আমদানী করেছেন ; কিন্তু মোটামুটি সকল মানসিক রোগের চিকিৎসায় সম্বল তাদের একটাই আর তা হলো মাথা ঠান্ডা রাখার ঔষধ (tranquillizer/sedative/hypnotic)। তাদের কুড়ি পৃষ্টার রেকর্ডেও উচ্চতা, ওজন, অতীতে কি কি ঔষধ খেয়েছে ইত্যাদি ছাড়া রোগীর ব্যক্তিজীবন সম্পর্কে কোন তথ্য পাবেন না। কিন্তু হোমিওপ্যাথিতে মানসিক রোগের পাশাপাশি রোগীর শারীরিক গঠন (constitution) এবং মানসিক লক্ষন (mental symptom) ও বিবেচনা করা হয়ে থাকে এবং পাশাপাশি উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েদের জীবনের আবেগময় অধ্যায়, প্রেমিক-প্রেমিকার বিচ্ছেদ, পরিবারের কোন সদস্যের মৃত্যু বা তালাক, কোন অতিপ্রিয় পোষা প্রাণীর মৃত্যু, বিদ্যালয় পরিবর্তন করা, শিক্ষক বা অন্য কারো কর্তৃক অপমান-ভৎর্সনা, ব্যবসায়ে ক্ষতি বা চাকুরি হারানো, পরকাল নিয়ে অতিরিক্ত টেনশান ইত্যাদি ইত্যাদিকেও খুবই গুরুত্ব দিয়ে মূল্যায়ন করা হয়। তারপর কয়েক হাজার ঔষধ থেকে বেছে বেছে রোগীর জন্য সর্বাধিক উপযোগী একটি মাত্র ঔষধ নির্বাচন করা হয়। অন্যদিকে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা রোগীদেরকে এক সাথে অনেকগুলি ঔষধ দিয়ে থাকেন। ফলে কোন ঔষধটি কাজ করছে আর কোনটি কাজ করছে না তা তারা বুঝতে পারেন না এবং রোগের অবস্থা ভালোর দিকে যেতে থাকলে কখন ঔষধ বন্ধ করতে হবে এবং কোন ঔষধটি বন্ধ করতে হবে, তা ডাক্তারও জানেন না এবং রোগীও জানেন না । আসলে সে-সব মানসিক রোগের ঔষধ আদৌ বন্ধ করা সম্ভব হয় না ; বরং যত দিন যেতে থাকে ঔষধের মাত্রাও তত বাড়াতে হয় । একমাত্র মৃত্যুছাড়া সে-সব ঔষধ বন্ধ করা হয় না । সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে, যে-সব আত্মহত্যার খবর প্রকাশিত হয় (Reported suicides) তাদের শতকরা ৮০ ভাগই কোন না কোন মানসিক রোগের ঔষধ খেতো এবং শতকরা ৫০ ভাগ বিষন্নতা রোগের ঔষধ (antidepressants) খেতো ।

প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিতে মানসিক রোগ নিরাময়ের জন্য ডাক্তাররা যে ঔষধ দিয়ে থাকেন, অনেক সময় রোগীরা সে-সব (ঘুমের) ঔষধ একসাথে অনেকগুলো খেয়ে আত্মহত্যা করে বসে। কিন্তু হোমিও চিকিৎসায় মানসিক রোগের জন্য ডাক্তাররা যে-সব ঔষধ দেন, সেগুলো একসাথে অনেক বেশী পরিমাণে খেয়েও কোন মানসিক রোগীর পক্ষে আত্মহত্যা করা সম্ভব নয়। মানসিক রোগের প্রচলিত ঔষধগুলো খুবই দামী ; এজন্য অনেককে গর্ব করে বলতে দেখা যায় যে, “জানেন, প্রত্যেক দিন এত এত টাকা ঔষধ খেতে হয় !”। আসলে “চকচক করিলেই সোনা হয় না” এই প্রবাদটি সবারই মনে রাখা উচিত। পক্ষান্তরে মানসিক রোগে ব্যবহৃত হোমিও ঔষধগুলোর মূল্য সেই তুলনায় অনেক অনেক কম ; এতে আপনার চিকিৎসা খরচ কমে যাবে একশ থেকে একহাজার ভাগ । মানসিক রোগের প্রচলিত ঔষধগুলো দীর্ঘদিন খেলে নেশা (drug dependency) হয়ে যায় ; ফলে সেগুলো খাওয়া বাদ দেওয়া যায় না। কারণ সেই ঔষধগুলো খাওয়া ছেড়ে দিলে রোগটি পুনরায় বেড়ে যায় (withdrawal symptoms)। কিন্তু মানসিক রোগের হোমিও ঔষধগুলো দীর্ঘদিন খেলেও নেশা হয় না। মানসিক রোগের প্রচলিত ঔষধগুলোর ক্ষতিকর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া মারাত্মক ; এগুলো আপনার ব্রেন, হার্ট, লিভার, কিডনীর বারোটা বাজিয়ে দিবে। কিন্তু মানসিক রোগের হোমিও ঔষধগুলো শরীরের কোন ক্ষতি তো করেই না বরং একই সাথে শরীরের জন্য ভিটামিনের কাজও করে দেয়। প্রচলিত মাথা ঠান্ডা রাখার ঔষধগুলো (tranquillizer/sedative) মানুষের আবেগ-অনুভূতিকে পযর্ন্ত হত্যা করে তাদেরকে নিছক রোবটে পরিণত করে ফেলে।

হ্যানিম্যান দুইশ বছর পূর্বে যা শিক্ষা দিয়ে গেছেন এবং এ যুগের মনোরোগ বিশেষজ্ঞরাও যা বিশ্বাস করেন, তা হলো “মনেই আছে মানুষের (সকল গুপ্ত ভান্ডারের) চাবি” (mind is the key to man)। মানুষের শারীরিক-মানসিক জৈবিক প্রক্রিয়ার (vital processes) ছন্দময় গতিই হলো সুস্থতা আর এই ছন্দময় গতিতে (harmony) বিপর্যয়ই হলো রোগ। তাই বলা যায়, রোগের প্রথম সুচনা হয় আমাদের মানসিক স্তরে/ আবেগের স্তরে (emotional level)। পরবর্তীতে সেটি শারীরিক স্তরে আগমণ করে শরীরকে বিকৃত করে থাকে (change in body chemistry)। হোমিওপ্যাথিতে রোগটি আবেগের সতরে থাকার সময়ই নির্মুল করে দেওয়া হয় (early intervention) ; ফলে সেটি আর শারীরিক স্তরে আসার সুযোগ পায় না। কাজেই মানসিক রোগের চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথির কর্মকৌশল অনেকটা প্রতিরোধমুলক (preventive medicine)। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, পিতামাতারা অনেক সময় শিশুদের অস্বাভাবিক মেজাজ-মর্জি দেখেই বুঝতে পারেন যে, তার সন্তানের ভেতরে খারাপ কোন পরিবর্তন ঘটেছে এবং হয়ত শীঘ্রই সে কোন রোগে আক্রান্ত হতে যাচ্ছে। হয়ত দেখা গেলো একটি শিশু মায়ের সাথে আঠার মতো লেগে থাকে এবং আরেকটি শিশু কাউকেই সহ্য করতে পারে না, একা একা থাকতে চায় । যদি দুটি শিশুই সর্দি অথবা জ্বরে আক্রান্ত হয়, তবে হোমিওপ্যাথিতে তাদের দেওয়া হবে দুই রকমের ঔষধ । শুধু তাই নয়, (শিশুর মেজাজ-মর্জির প্রাথমিক পরিবর্তনের ওপর ভিত্তি করে যদি) সঠিক ঔষধ দেওয়া যায়, তবে শিশুর দিকে ধেয়ে আসা সেই রোগটি প্রকৃত অর্থে আর সামনে বাড়তে পারবে না, অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যাবে । সত্যিকার অর্থে হোমিওপ্যাথিতে রোগ প্রতিরোধ করার জন্য ঔষধ দেওয়া শুরু হয় শিশু তার মায়ের জরায়ুতে থাকতেই ।

যে-সব হোমিও ঔষধ ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়, দেখা গেছে সে-সব হোমিও ঔষধ দিয়েই আবার পাগলামী (schizophrenia), বুদ্ধিপ্রতিবন্দ্বিত্ব (autism) ইত্যাদি মারাত্মক মারাত্মক মানসিক রোগ নিরাময় করা যায়। এজন্য হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা পাগলামী এবং বুদ্ধিপ্রতিবন্দ্বিত্বকে অভিহিত করেছেন “মনের ক্যান্সার” (mental cancer) হিসেবে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা মানসিক রোগের চিকিৎসায় দক্ষতা দেখাতে পারলেও তার সাথে সম্পর্কিত শারীরিক সমস্যাগুলোর কোন সমাধান করতে পারেন না। যেমন- বারে বারে ফিরে আসা চর্মরোগ, অদ্ভূত ধরনের এলার্জি, পাতলা চুল, বেশী বেশী লবণ খাওয়ার নেশা ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু হোমিওপ্যাথিতে একই ঔষধে মানসিক রোগের পাশাপাশি একই সাথে শারীরিক সমস্যাগুলোকেও সহজেই দূর করা যায়। জটিল রোগের ক্ষেত্রে যেই গুরুত্বপুর্ণ প্রশ্নটি রোগীদের ডাক্তাররা করেন না, তা হলো “আপনার জীবনে কি ঘটেছিল যার পরে আপনি এই রোগে আক্রান্ত হলেন ? কোন ঘটনার মানসিক প্রভাবে এই রোগের সুচনা হলো ?”

মানসিক রোগ হওয়ার পেছনে আরো যে-সব কারণ লুকিয়ে থাকে, তাদের মধ্যে আছে অপমানিত বা লাঞ্ছিত হওয়া (indignation/ humiliation)। এই অপমান মৌখিক (verbal) হতে পারে অথবা কারো আবেগকে (emotion) আঘাত করার মাধ্যমেও হতে পারে কিংবা যৌন নিযার্তন (sexual abuse) বা ধর্ষণের (rape) মাধ্যমেও হতে পারে। এসব ঘটনা মানুষের আত্মমযার্দাকে (dignity) আঘাত করে, তার আত্মবিশ্বাসে (self-confidence) ফাটল ধরিয়ে দেয়, তার ইচ্ছাশক্তিকে (willpower) অবদমিত করে থাকে এবং তার নিজের প্রতি নিজের মনে ঘৃণার সৃষ্টি করে। ইত্যাকার অপমানজনক ঘটনা থেকে অনেক শারীরিক রোগেরও সৃষ্টি হয়ে থাকে ; যেমন- মুত্রথলিতে প্রদাহ (interstitial cystitis), ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া (torticollis), চোখের অঞ্জনি (styes) ইত্যাদি ইত্যাদি। এমনকি অপারেশনের দীর্ঘদিন পরেও সেখানে ব্যথা (/অপমান) থাকতে পারে ; কেননা আমাদের শরীরে যে-কোন ধরনের ছুরি-চাকু চালানোকে (surgical intervention) শরীর মহাশয় তার ওপর এক প্রকার ধর্ষণ হিসাবে গণ্য করে থাকেন। দুঃসংবাদ শ্রবন করা, কোন ব্যাপারে হতাশা, রাগ চেপে রাখা, দুঃখবোধ, হঠাৎ ভয় পাওয়া ইত্যাদি কারণেও অনেক বড় ধরনের শারীরিক-মানসিক রোগের সৃষ্টি হতে পারে ।

হোমিওপ্যাথিতে শারীরিক লক্ষণের চাইতে মানসিক লক্ষণের গুরুত্ব বেশী দিয়ে ঔষধ প্রেসক্রাইব করা হয়। হোমিওপ্যাথির মুলনীতিতে এবং হোমিও ঔষধের গুণাবলী বিশ্লেষণে মানসিক লক্ষণের এতোই ছড়াছড়ি দেখা যায় যে, যে-কোন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ তা অধ্যয়ণ করলে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাবেন। এবং তার মনে হতে পারে যে, হোমিওপ্যাথি বুঝি বা আদতেই একটি মানসিক রোগ বিজ্ঞান ! তাছাড়া হোমিও ঔষধের ব্যবহার বিধিও বেশ আরামদায়ক, মুখে খাওয়ালেই চলে। এমনকি যে-সব মানসিক রোগী ঔষধ খেতে অস্বীকার করে তাদেরকে পানি, দুধ, শরবত, চা, বিস্কিট, ভাত, মুড়ি বা অন্য খাবারের সাথে মিশিয়ে ঔষধ খাওয়াতে পারবেন। হোমিও ঔষধ রোগীকে খাওয়ানো ছাড়াও বিকল্প পদ্ধতিতে যেমনঃ আঘ্রাণ, চামড়ায় মর্দন, Hair Trasmission প্রভিতি পদ্ধতিতে হোমিও ঔষধ প্রয়োগ করতে পারবেন;রোগী জানতেই পারবে না যে তাকে ঔষধ খাওয়ানো হচ্ছে.।
Proshanti Homeo Care & Research Cente


মানষিক চিকিৎসায় অর্গানন অব মেডিসিন সূত্র: ২১০ থেকে ২১৪ঃ

(সুত্র ২১০) পূর্বে যে সকল ব্যাধিকে একতরফা বলিয়া উল্লেখ করিয়াছি তাহাদের প্রায় সকলগুলিই সােরা হইতে উদ্ভূত। একতরফা লক্ষণের জন্য সেগুলিকে নিরাময় করা অপেক্ষাকৃত কঠিন ব্যাপার; একটিমাত্র প্রধান ও সুস্পষ্ট লক্ষণকে সম্মুখে রাখিয়া অন্য সব রোগলক্ষণ যেন অন্তর্হিত হয়। যেগুলিকে মানসিক ব্যাধি বলা হয় সেগুলিও এই ধরনের। অন্য সব ব্যাধি হইতে পৃথক্ করিয়া তাহাদিগকে বিশেষ কোন এক শ্রেণীভুক্ত বলিয়া গণ্য করা হয় না, কারণ তথাকথিত অন্যান্য শারীরিক ব্যাধিগুলিরও সকল ক্ষেত্রে প্রকৃতি ও মনের অবস্থা পরিবর্তিত হয় এবং যে সকল রোগী চিকিৎসার জন্য আসে তাহাদের সকল ক্ষেত্রেই যদি একটি যথার্থ চিত্র অঙ্কিত করিয়া হোমিওপ্যাথিক মতে চিকিৎসা দ্বারা সাফল্য লাভ করিতে হয় তাহা হইলে রোগীর ধাতুপ্রকৃতি ও তৎসহ লক্ষণসমষ্টি বিশেষভাবে লক্ষ্য করিতে হইবে।
(সুত্র ২১১) ইহা এতদূর সত্য যে মুখ্যত রোগীর প্রকৃতিই অনেক সময়ে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ নির্বাচনে নির্দেশ প্রদান করে। কারণ, নিশ্চিতভাবে একটি পরিচারক লক্ষণ বলিয়া তাহা যথার্থ পর্যবেক্ষণকারী চিকিৎসকের নিকট সর্বাপেক্ষা কম লুক্কায়িত থাকিতে পারে।
(সুত্র ২১২) রোগনিরাময়কারী বস্তুসমূহের স্রষ্টা ব্যাধিসমূহের প্রকৃতি ও মনের পরিবর্তনরূপ এই প্রধান বিষয়ের প্রতি বিশেষ মর্যাদা দান করিয়াছেন। কারণ জগতে এমন কোন শক্তিশালী ভেষজ নাই যাহা পরীক্ষণকারী সুস্থ ব্যক্তির প্রকৃতি ও মনের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধন না করিতে পারে। প্রত্যেকটি ঔষধই বিভিন্ন প্রণালীতে তাহা করিয়া থাকে।
(সুত্র ২১৩) অতএব, আমরা কখনই প্রকৃতির অনুগামী হইয়া অর্থাৎ হোমিওপ্যাথিক মতে আরোগ্য সাধন করিতে সমর্থ হইব না যদি আমরা প্রত্যেকটি রোগীর ক্ষেত্রে, এমন কি অচিররোগেও অন্যান্য লক্ষণের সহিত মন ও প্রকৃতির পরিবর্তন সম্পর্কিত লক্ষণ পর্যবেক্ষণ না করি এবং যদি আমরা রোগীর আরোগ্যের জন্য ঔষধাবলীর মধ্য হইতে এমন একটি রোগ উৎপাদিকা শক্তি নির্বাচন না করি যাহা রোগের অন্যান্য লক্ষণের সহিত সদৃশ হওয়া ছাড়াও প্রকৃতি ও মনের ঠিক অনুরূপ অবস্থা উৎপন্ন করিতে পারে।
(সুত্র ২১৪) মানসিক ব্যাধির আরোগ্যবিধান সম্পর্কে আমার যে উপদেশ দিবার আছে তাহা অল্পকথায় বলা যাইতে পারে যে, অন্যান্য রোগের মতোই তাহাদেরও একই প্রকার চিকিৎসাব্যবস্থা যথা, এমন একটি ঔষধ দ্বারা যাহার সুস্থ ব্যক্তির দেহে ও মনে রোগের প্রায় সদৃশ পীড়া উৎপাদন করিবার শক্তি আছে। আর অন্য কোন উপায়েই আরোগ্য সম্ভব নহে।

সূত্র ২১০-২১৪এর ব্যাখ্যাঃ চিকিৎসাক্ষেত্রে মানসিক লক্ষণকে সাধারণ রোগের অবস্থা হইতে পৃথক কিছু বলিয়া ধরা হয় না। সেখানে মানসিক লক্ষণ সাধারণ রোগেরই একটা অংশ মাত্র। কিন্তু হ্যানিম্যান যে মানসিক রোগের কথা এখানে আলোচনা করিতেছেন তাহা একটি বিশেষ অবস্থা, যাহার প্রধানত মানসিক লক্ষণের ভিতর দিয়াই প্রকাশ। এই প্রকার মানসিক রোগ সোরাবীজ হইতে উদ্ভুত এবং তাহা একতরফা লক্ষণরূপে প্রকাশ পায় যাহার অন্যান্য লক্ষণ লুপ্ত থাকে। এখানে পীড়ার মনোলক্ষণ প্রধান হইলেও রোগীর দেহাশ্রিত লক্ষণসমষ্টিকে বিবেচনাধীন করিয়া চিকিৎসা পরিচালনা করিতে হইবে। সুতরাং সাধারণ রোগচিকিৎসার সঙ্গে মনোরোগের চিকিৎসার নীতিগত কোন পার্থক্য নাই, শুধু এইটুকু পার্থক্য যে, মনোরোগের বেলায় রোগীর ধাতুপ্রকৃতি নির্ণয়ের দিকে বিশেষভাবে জোর দেওয়া প্রয়োজন।

মানুষের স্বাভাবিক যে মানসিক প্রবণতা তাহা অসুস্থ অবস্থায় বদলাইয়া যায়। রোগভোগকালে কাহারও দেখা যায় যে সে শান্ত, স্থির ও অত্যন্ত কোমল প্রকৃতির এবং সেইজন্য চিকিৎসকের মনে স্বভাবতঃই তাহার প্রতি একটা শ্রদ্ধার ভাব জাগিয়া উঠে। কিন্তু আরোগ্য হইলে চিকিৎসক সবিস্তারে দেখিতে পান যে তাহার ভিতরে লজ্জাকর কুপ্রবৃত্তিসমূহের আবির্ভাব হইয়াছে, যাহা তাহার রুগ্ন অবস্থায় ছিল না। আবার পূর্বে যহারা মার্জিত ও বিনয়ী ছিল, রোগাবস্থায় তাহারা কামুক ও নির্লজ্জ হইয়া পড়িয়াছে। এই সকল তথ্যও চিকিৎসককে দক্ষতার সহিত আহরণ করিতে হইবে।

রোগপরিচয় লক্ষণসমষ্টির মধ্যে মানুষের মন ও ধাতু-প্রকৃতিগত লক্ষণ শীর্ষস্থানীয়। মানুষের অন্তস্থল দেখা যায় না কিংবা সেখানকার ভাবলোকে যে আলোড়ন ও বিক্ষোভ নিত্য ওঠাপড়া করিতেছে তাহাও জানা সম্ভব নয়। কিন্তু তাহাই তরঙ্গায়িত হইয়া অন্তর হইতে বাহিরের দিকে মানসিক বিকৃতিরূপে এবং প্রকৃতিবৈষম্যের মাধ্যমে প্রতিফলিত হইয়া আমাদের কাছে ধরা দিতেছে। এই স্বাভাবিক ঘটনা লুকান সম্ভব নহে বলিয়া মানসিক লক্ষণের স্থান সর্বশীর্ষে। এই প্রকার লক্ষণের ভিতর দিয়া মানুষের সমগ্র অবচেতন মনের পরিচয় ফুটিয়া উঠে। এই সকল লক্ষণের পরিচয় পাওয়া চিকিৎসকের পক্ষে সহজ নহে কারণ মানুষ স্বভাবতই তাহার নিজের মূলপ্রকৃতির নিগূঢ় ভাবভাবনা, ভালোলাগা না লাগা, প্রেম, ঘৃণা, কুপ্রবৃত্তি, ভূলভ্রান্তি প্রভৃতি বাহিরে প্রকাশ করিতে চায় না। সেইজন্য মনুষ্যপ্রকৃতির অন্তর্নিহিত রহস্যের সঙ্গে পরিচয় লাভ করিতে হইলে চিকিৎসকের চাই অপরিসীম দক্ষতা, সহানুভুতি ও সংবেদনশীল অন্তর।

প্রত্যেকটি মানুষ ধাতুপ্রকৃতিতে যেমন পরস্পর হইতে বিভিন্ন, একজনের সহিত অপরজনের মিল নাই, ভেষজজগতেও ঠিক তেমনি একটি ভেষজের মানসিক লক্ষণ ও প্রকৃতি (পরীক্ষণে প্রাপ্ত) অন্যটির হইতে পৃথক। চিকিৎসাক্ষেত্রে অচির বা চির যাহাই হউক চিকিৎসকের কাজ হইল ভেষজগোষ্ঠীর মধ্য হইতে এমন একটি ভেষজকে খুঁজিয়া বাহির করা যাহার সহিত রোগীর দৈহিক লক্ষণ ছাড়াও মানসিক ও প্রকৃতিগত লক্ষণের মিল আছে। এই বিষয়ে সাবধান করিয়া দিয়া হ্যানিম্যান দৃষ্টান্ত দেখাইয়া বলিতেছেন যে স্থির, শান্ত ও ধীর প্রকৃতির রোগীর ক্ষেত্রে অ্যাকোনাইট উপযুক্ত নহে; মৃদু ও উৎসাহশূন্য প্রকৃতির ক্ষেত্রে নাক্স ভমিকা এবং সুখী, স্ফুর্তিপ্রিয় ও একগুঁয়ে প্রকৃতির ক্ষেত্রে পালসেটিলা একান্তই বেমানান। রোগী ও ভেষজের পরস্পরের ধাতুপ্রকৃতি মিলনে রাজঘোটক সংঘটন করানই হইল চিকিৎসকের একমাত্র উদ্দেশ্য ও প্রচেষ্ট।
অর্গানন অব মেডিসিন(ডা. ত্রিগুণানাথ বন্দোপাধ্যায়)

মনের অসুখে হোমিওপ্যাথিঃ

মন হল আমাদের দেহ জোড়া সুবিশাল স্নায়ুতন্ত্রের ক্রিয়া- প্রতিক্রিয়ার ফল। জন্মের পর ধীরে ধীরে আমাদের দেহের বৃদ্ধি হয়। তৈরি হয় নতুন নতুন দেহকোষ। অবশেষে শরীর পূর্ণতা লাভ করে। সেভাবেই পার্শ্ববর্তী পরিবেশ-পরিস্থিতির সাথে ঘাত- প্রতিঘাত, আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে আমাদের মনোজগৎ। আশা-আকাঙ্খা, প্রাপ্তি- অপ্রাপ্তি, আর্থসামাজিক অবস্থা, চারপাশের মানুষজনের আচার- আচরণের মাধ্যমে তৈরি হয় মনোভূমি। মনই হলো আমাদের সামাজিক ও পারিবারিক কাজ কারবারের চালিকাশক্তি। ঐ যে ডায়না পাড়ের কাশবন মাথা চাড়া দিলে আমাদের বিকাশবাবু রশিদ হাতে দৌড়-ঝাপ শুরু করে দেন, স্বপ্নাদি ব্যস্ত হয়ে পড়েন লেখা সংগ্রহের কাজে এ সবেরই প্রেরণা আসে এক বিশেষ মানসিক গঠন থেকে।
পাঠকবন্ধু, এই যে লেখাটি পড়ছেন এত আমার মনের ভাবনার সাথে মিশেল ঘটছে আপনার কৌতুহলী মনের। এতো কিছুর পরেও আমাদের এই পোড়া দেশে মনোবিজ্ঞানটাই সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত। পুষ্টির অভাব ও বাইরের জীবাণুর আক্রমণে যেমন আমাদের দেহে বিভিন্ন ব্যাধি দেখা দেয়; সেভাবেই মানসিক চাপ, স্নেহ ভালোবাসার অভাব, বৈষম্য ও কার্যকারণ অসঙ্গতির ফলে সৃষ্টি হয় মনোরোগ।
শারীরিক ব্যাধির ক্ষেত্রে আমরা প্রায়ই ডাক্তারবাবুদের কাছে ছুটে যাই। মানসিক রোগের বেলায় তেমন তৎপরতা দেখাই যায় না। প্রথমতঃ এটা যে পেটখারাপ, জ্বর, সর্দ্দিকাশির মতোই একটা অসুখ সে কথা রোগি ও তার পরিবারের লোকজনেরা বুঝতে পারেন না বা বুঝতে চান না। কেউ কেউ আবার বলেন -“ তোমরা কী আমায় পাগল ভেবেছো; যে ঐ সব ফালতু ডাক্তার- ফাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে।”
হ্যাঁ, এটাও এক মস্ত বড় অসুবিধা। আপনার অম্বল হলে আপনি নিজেই টের পান যে শারীরিক গোলযোগ দেখা দিয়েছে। নিজে থেকেই ওষুধের খোঁজ করেন। কিন্তু মনোরোগের ক্ষেত্রে রোগি বুঝতে পারেন না যে তিনি অসুস্থ। তাছাড়া মন তো আর চোখে দেখা যায় না, হাতেও ধরা যায় না। আশেপাশের মানুষজন অসঙ্গতি টের পেলেও, তাকে সহজে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে আসেন না। বরং রোগির আচার- আচরণে বিরক্ত হয়ে তাকে এড়িয়ে চলেন।
এসবের পেছনে অন্য এক কারণও আছে। তা হল আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার গোড়ায় গলদ। মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত পড়াশুনা করলে একজন ছাত্র বা ছাত্রী তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ- তন্ত্র- যন্ত্রের কাজ-কারবার সম্বন্ধে মোটামুটি একটা ধারণা পেতে পারে। কিন্তু মন শরীরের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ না হওয়া সত্বেও এই মনোবিদ্যা নিয়ে কোন আলোচনাই আমাদের পাঠ্যসূচীতে নেই। এরজন্য সাইকোলজি নিয়ে আলাদাভাবে পড়াশুনা করতে হবে। ফলে মনোরোগের ধরন-ধারণ অশিক্ষিত মানুষ তো ছাড়; অনেক শিক্ষিত লোকেই বুঝতে পারে না। এর সাথে আছে কয়েক হাজার বছরের কুসংস্কার ও ভ্রান্তধারণা। মনোরোগিদের লক্ষণ দেখে নিকটজনেরা মনে করেন তার বোধ হয় বাতাস লেগেছে, কেউ বা তাকে বান মেরেছে, সবটাই অশুভ আত্মার কান্ডকারখানা। ডাক্তারের কাছে নয়; তারা ছোটেন মায়ের থানে অথবা ভন্ড মাতাজি-বাবাজিদের পদতলে। জলপড়া, তেলপড়া, কবজ, তাবিজ, মাদুলির রমরমা কারবার চলে। বেশ টু পাইস ইনকাম হয় স্বঘোষিত দৈব পুরুষদের।

অন্যসব রোগ- ব্যাধির মতো মানসিকরোগের ক্ষেত্রেও হোমিওপ্যাথিতে বেশ ভালো ভালো ওষুধ রয়েছে। মনোরোগের ক্ষেত্রে হোমিও ওষুধ ব্যবহারের বেশ কিছু সুবিধা আছে।
প্রথমতঃ ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা সাইড এফেক্ট খুবই কম।
দ্বিতীয়তঃ ওষুধের দাম তুলনামূলকভাবে কম।
তৃতীয়তঃ হোমিওপ্যাথিতে সাইক্রিয়াট্রিক বা মনোরোগ চিকিৎসক বলে আলাদা ডাক্তার তেমনভাবে নেই। সকলেই প্রায় জেনারেল ফিজিসিয়ান। ফলে রোগিকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে তিনি সহজে বুঝতে পারবেন না যে তাকে মনোরোগের চিকিৎসার জন্য আনা হয়েছে।
হোমিওপ্যাথি মূলতঃ লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি। অর্থাৎ রোগের নাম যাই হোক না কেন রোগির মধ্যে প্রকাশিত লক্ষণের ভিত্তিতে ঔষধ নির্বাচন করা হয়। একটি ঔষধের সব লক্ষণ যে একজন রোগির মধ্যে প্রকাশ পাবে এমন কোন কথা নেই; তবে বিশেষ কিছু উপসর্গ মিলে গেলে ওষুধটি প্রয়োগ করা যেতে চলে।

Thuja Occidentalis ঃ রোগি নির্জনে থাকতে ভালোবাসে। বিমর্ষ, জ্ঞানবুদ্ধি কম। মনে করে তার দেহ আত্মা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, সে কোন এক স্বর্গীয় শক্তিদ্বারা পরিচালিত। মাঝে মাঝে আপন মনে কাঁদে। মনে করে উচ্চ সংসর্গে থাকবার পক্ষে সে অযোগ্য। এ ধরনের রোগিদের ক্ষেত্রে থুজা অক্সিডেন্টালিস (Thuja Occidentalis) প্রয়োগ করা যেতে পারে।

Sepia ঃ শান্ত স্বভাবের স্ত্রী, কিন্তু হঠাৎই নিজের সন্তান- স্বামী, প্রিয়জনের প্রতি উদাসীন। সাংসারিক কাজকর্মে অনিচ্ছা। পরিবারের লোকজনের ওপর অকারণে বিরক্ত। অল্পতেই অপমানিত বোধ করে। কোথাও একা থাকতে ভয় পায়। কৃপণ স্বভাব, সহজে পয়সা খরচ করতে চায় না। সন্ধ্যাবেলায় মানসিক লক্ষণগুলি বেশি প্রকাশ পায়। এসব ক্ষেত্রে সিপিয়া (Sepia) প্রয়োগ করবেন। এই ওষুধটি মহিলাদের রোগে যতটা কার্যকরী পুরুষদের ক্ষেত্রে ততটা নয়।

Veratrum Album ঃ একলা থাকতে পারে না, অথচ কারো সাথে বিশেষ কথাও বলে না। বাড়ি থেকে বেরিয়ে লক্ষ্যহীনভাবে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ায়। মাঝে মাঝে দুর্দান্ত হয়ে ওঠে। চিৎকার করে, অভিশাপ দেয়। রোগির মধ্যে জিনিসপত্র কাটবার বা ছিঁড়বার প্রবণতা দেখা দেয়। প্রেম ও ধর্মের বিষয়ে বেশি বকবক করে। রাতের বেলায় উৎপাত বাড়ে। এই ধরনের রোগির ওপর ভিরেট্রাম এলবাম (Veratrum Album) ভালো ফল দেয়।

Arum Metallicum ঃ রোগি আত্মহত্যার কথা চিন্তা করে, মাঝে মাঝে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। আবার এর সাথে মৃত্যুভয়ও থাকে। মনে করে সে যেন বড় পাপ করেছে। জীবনের ওপর বিতৃষ্ণা। কারো সাথে কথা বলার সময় প্রশ্নের ওপর প্রশ্ন করতে থাকে; উত্তরের অপেক্ষা করে না। তার মতের সামান্য প্রতিবাদ করলেই সে তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে। অচেনা মানুষের সাথে মিশতে ভয় পায়। এসব রোগির অনেক ক্ষেত্রে হাই ব্লাড প্রেসার থাকে। অরম মেটালিকাম (Arum Metallicum) এই লক্ষণ গুলিতে খুব কার্যকর। এই ওষুধে বহু ক্ষেত্রে আত্মহত্যা প্রবণ রোগির মানসিকতা পাল্টে দেওয়া যায়।

Medorrhinum ঃ স্মৃতিশক্তি দুর্বল। কথাবার্তার খেই হারিয়ে যায়। নিজের অসুবিধার কথা বলতে কাঁদতে থাকে। রোগির মনে হয় সময় যেন ধীরে ধীরে চলছে। বেলা কাটতেই চায় না। আবার সব কিছুতেই তাড়াহুড়ো করে। ট্রেন আসার একঘন্টা আগেই স্টেশনে হাজির হয়। কোনো কিছুতে গভীর ভাবে মনঃসংযোগ করতে পারে না। অন্ধকারে থাকতে খুব ভয়; মনে করে কে যেন পেছনে পেছনে আছে। মাঝে মাঝে ভাবে সে যেন পাগল হয়ে যাবে। আত্মহত্যার কথা ভাবে। এইসব রোগিকে মেডোরিনাম (Medorrhinum) দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

Aconite Nap ঃ অত্যন্ত ভয় ও উদ্বেগ। রোগি বিশ্বাস করে সে শীঘ্রই মরবে, এমন কী মৃত্যুর তারিখ ও সময় বলে দেয়। ভাবে সে দিব্য দৃষ্টি লাভ করছে। ভবিষ্যতের জন্য ভয়, লোকসমাজে যেতে চায় না। রাস্তা পার হতে বারবার এপাশ ওপাশ দেখতে থাকে। মাঝে মাঝে চমকে ওঠে, গান-বাজনা অসহ্য লাগে। রোগি বিমর্ষ। নিজের হাত-পা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিজের কাছে ভারী মনে হয়। মনে করে সে যা করছে তা যেন স্বপ্নের ঘোরেই করছে। এসব ক্ষেত্রে একোনাইটাম নেপিলস (Aconite Nap) দেবেন।

Hyoscyamus ঃ রোগি কাজে, অঙ্গভঙ্গিতে এবং কথাবার্তায় অশ্লীল ইতর হয়ে পড়ে। অত্যন্ত বাচাল, কাপড় - চোপড় খুলে ফেলে। জননেন্দ্রিয় বের করে দেখায়। অত্যন্ত হিংসুটে। সন্দেহ করে কেউ যেন তার ক্ষতি করতে সবসময় চেষ্টা করছে। প্রলাপে রোগি ছুটে বাইরে যেতে চায়। বাড়ির জিনিসপত্র বিক্রি করার প্রবণতা। আশেপাশের অনেক মানুষের কাজকর্ম সন্দেহের চোখে দ্যাখে। দাঁত দিয়ে কাপড় কাটে বা হাত দিয়ে কিছু না কিছু খুঁটতে থাকে। এই রোগ লক্ষণে হায়াসায়ামস (Hyoscyamus) দেবেন। বদ্ধ উন্মাদের ক্ষেত্রে হায়াসায়ামস ভালো ফল দেয়।

Phosphorus ঃ ঝড়- বৃষ্টি হলে খুব ভয় পায়। ঘরের মধ্যে জড়সড় হয়ে থাকে। মনে করে যেন ঘরের প্রতিটি কোণ থেকে কিছু বের হয়ে তার দিকে আসছে। মাঝে মাঝে চমকে চমকে ওঠে। একা থাকলে মনে করে সে মারা যাবে। স্মৃতিশক্তি কমে যায়। এইসব মানসিক লক্ষণে ফসফরাস (Phosphorus)।

Argentum Nitricum ঃ লোককে কাছে পেলেই নিজের অসুবিধার কথা বলতে শুরু করে। কথা বলার জন্য সবসময় লোক খুঁজে বেড়ায়। তার একনাগাড় বকবকে লোকে যে বিরক্ত হয়; তা সে বুঝতে পারে না। মাঝে মাঝে ভাবে লোকে তাকে ঠিকমতো বুঝতে পারছে না বা এরা সবাই মহামূর্খ। তাকে যোগ্য মূল্যায়ণ করার মতো মানুষ এ তল্লাটে নেই। রোগিকে বয়সের তুলনায় বেশি বুড়ো বুড়ো দেখতে লাগে। এসব ক্ষেত্রে আর্জেন্টাম নাইট্রিকাম (Argentum Nitricum) দেবেন।

এমন আরো বহু ওষুধ রয়েছে যেগুলি মানসিক রোগির ওপর প্রয়োগ করে আশ্চর্যজনক উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে। হোমিওপ্যাথিতে মনোরোগ চিকিৎসার জন্য সেন্টিসিমাল পোটেন্সির পরিবর্তে মিলিসিমাল পাওয়ারের ওষুধ ব্যবহার বিশেষ উপযোগী। এই ওষুধগুলির শক্তি লেখা হয় ০/১, ০/২, ০/৩..... এইভাবে। এতে ওষুধজনীত রোগবৃদ্ধির সম্ভাবনা কম । প্রচলিত সেন্টিসিমাল পোটেন্সি যদি দিতেই হয় তবে তা নিম্নমাত্রায় দেবেন। উচ্চমাত্রার ওষুধ মনোরোগিদের না দেওয়াই ভালো। কতদিন ধরে মানসিক অসঙ্গতি দেখা দিয়েছে? রোগির বয়স কত? স্ত্রী না পুরুষ? মোটা না রোগা? লক্ষণের তীব্রতা কতখানি? আরো বহু কিছু বিচার করে অভিজ্ঞ ডাক্তারবাবুরা ওষুধ ও তার মাত্রা নির্ধারণ করেন। নিজে থেকে কখনই ডাক্তারি করতে যাবেন না। তাতে হীতে বিপরীত হতে পারে। আমরা বাঙ্গালীরা সবাই ডাক্তার। সামান্য কয়েকজন পড়ে; বাকীরা না পড়েই এম.আর.সি.পি(লন্ডন) এফ.আর.সি.এস(এডিনবরা)। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোন সমস্যা শুনতে পারলেই হলো; বিনামূল্যে টক টক করে পরামর্শ দিয়ে দেবেন। যেমন সেদিন আমাদের অজিত মাস্টার- “ বুঝলেন দাদা, আমার খুড় শাশুড়ির বড় ননদের ছোটমেয়ের ঠিক এমনটাই হয়েছিল। দু’বেলা খালি পেটে ঢেকি শাকের রস খেয়ে এখন দিব্যি টন- টনা.. ইত্যাদি.. ইত্যাদি..।” খবরদার! এনাদের পাল্লায় পড়বেন না।। তা হলে সম্মুখে শমন।
মানসিক রোগের চিকিৎসা করার জন্য চিকিৎসকের কাছে আগে গিয়েই রোগির প্রকাশিত লক্ষণগুলি বলে আসতে হবে। পরে ডাক্তারবাবুর পরামর্শ মতো রোগিকে নিয়ে যেতে হবে। এ ধরনের রোগির আরোগ্যের ক্ষেত্রে চিকিৎসক- ওষুধ ছাড়াও রোগির বাড়ির লোকজনের এক বিরাট ভূমিকা থাকে। ডাক্তারবাবুর নির্দেশ অনুসারে চলতে হবে সকলকেই। কারো কোনো ছোট্ট ভুলে মারাত্মক পরিণতি হতে পারে। মনে রাখবেন মনোরোগি হল কাচের বাসনের মতো ‘হ্যান্ডেল উইদ কেয়ার ’।
ডাঃ পার্থপ্রতিম

সংগ্রহঃ https://www.facebook.com/mhthmch/
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ২:০৬
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×