somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

করোনা ভাইরাস বনাম পৃথিবীর আত্নরক্ষা

০৩ রা এপ্রিল, ২০২০ রাত ২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

করোনা ভাইরাসের কারনে আজ ২এপ্রিল ২০২০ পর্যন্ত অন্ততঃ ১০লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এবং ৫০হাজার মানুষ মারা গেছেন। এজন্য সারা বিশ্বে একটি আতংক সৃষ্টি হয়েছে এবং পুরো বিশ্ব লকডাউন করা হয়েছে। সবাই কাজ কর্ম ছেড়ে ঘরে বসে জীবন পার করছে। চারিদিকে নিঃস্তদ্ধতা আর শুন্যতা।
কেন ও কিভাবে করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি ও বিস্তৃতি তাহা নিয়ে আলোচনা নাই করলাম। বরং এই করোনা ভাইরাসের ফলে প্রকৃতির কি কি উপকার হলো সেটা নিয়ে বরং আলোচনা করতে চেষ্টা করি।

১। গ্রীন হাউস ইফেক্ট বা কার্বন নিঃস্বরন প্রায় শুন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। এতবছর বিজ্ঞানীরা বার বার সাবধান করছিলেন এই কার্বন নিঃস্বরন কমানোর জন্য কিন্তু তারা সফল হন নাই তাই প্রকৃতি নিজেই এই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে। উল্লেখ্য এই মাত্রাতিরিক্ত কার্বনের ফলে পৃথিবীর ওজনস্তর অস্বাভাবিক উত্তপ্ত হয়ে গিয়েছিল। যা বর্তমানে স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে এসেছে। যা পৃথিবীর জন্য একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল।

২। প্রাকৃতিক আবহাওয়া দুষন বিতারন এবং বিশুদ্ধতা আনয়ন। প্রতিটি বড় বড় শহর অস্বাভাবিক মাত্রায় দুষিত হয়ে পড়েছিল। বাতাসে সীসার পরিমান অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছিল। কারন প্রচন্ডরকম দ্রুতগামী যান্তিক যানবাহনের ব্যবহার। যা ব্যবহারের হার বর্তমানে অস্বাভাবিক ভাবে কমে গেছে এবং এখন প্রতিটি শহর বন্দর ঝকঝকে তকতকে নির্মল হয়ে গেছে। প্রকৃতির দম নিয়ে হয়তো কষ্ট হচ্ছিল করোনা ভাইরাস তাকে সুস্থভাবে শ্বাস নিতে সাহায্য করছে।

৩। খাল-বিল, নদ-নদী, সমুদ্র তথা সকল প্রকার পানির বিশুদ্ধতা নিশ্চিতকরণ। বিভিন্ন নদ-নদী, সমদ্রতট যেন হয়ে উঠিছিল এক একটি ডাষ্টবিন। যার যেমন যেভাবে ইচ্ছা বিভিন্ন প্রকার পলিব্যাগ(চিপস, বিস্কুট, পানির বোতল ইত্যাদি) ও ময়লা আবর্জনা ফেলা যেন অভ্যাসে পরিনত হয়েছিল। কিন্তু আজ? আহ পানিতে বসবাসকারী মৎসকুমারীরা হয়তো আজ মনে মনে চাইছে সারা বছরেই যেন পৃথিবীতে করোনা ভাইরাস থাকে। আর এরকম বিশুদ্ধ পানিতে তারা বসবাস করতে পারে। প্রকৃতি তাদের দোয়া কবুল করেছে এবং আপনি আর কিছুদিন পর নিশ্চিন্তে যে কোন স্থানের পানি বিশুদ্ধ না করেই পান করতে পারবেন। প্রকৃতিই পানির সকল উৎস বিশুদ্ধ করে ফেলেছে।

৪। অতিরিক্ত তৈল উৎপাদন এবং এর ব্যবহার সীমিতকরন। বর্তমানে চেয়ে দেখুন। তেল কোম্পানীগুলো মৃতপ্রায়। সকল দেশেই তেল উত্তোলন অস্বাভাবিকভাবে নেমে গেছে। পরিবহন ও বিক্রয়ের অপ্রাচুর্যতা হেতু তেলের দাম অস্বাভাবিক হারে কমে গেছে। এই অতিরিক্ত তেলের ব্যবহারের জন্য আবহাওয়া প্রচন্ত দুষিত হচ্ছিল। কিন্তু বর্তমানে পৃথিবী যেন ২০০বছরের আগের যৌবন ফেরত পেয়েছে।

৫। মানুষের কর্মচাঞ্চল্যতা হ্রাসকরন। পৃথিবীর মানুষ যেন যান্তিক হয়ে যাচ্ছিল। কাজ আর অর্থ উপার্জন ছাড়া তাদের আর কোন যেন জীবনের মানে ছিল না। কিন্তু তারা আজ ঘরে বন্দী হয়ে পরিবার নিয়ে বসবাস করছে। পারিবারিক বন্ধন শক্ত ও জোড়ালো হচ্ছে।

৬। খারাপ কাজ রহিতকরণ। মানুষ খুন-জখম, হানাহানি-মারামারিতে লিপ্ত ছিল। প্রতিদিনই খবরের কাগজ খুললে দেখা যেত হত্যা মৃত্যু আর দুঃসংবাদ। যা আজ সম্পূর্ন অনুপস্থিত। এখন করোনা ছাড়া আর অন্য কোন মৃত্যু সংবাদ শোনা যায় না। সবকিছু ঠিক করতে যা যা করতে হয় প্রকৃতি যেন শুধুমাত্র সকল ক্ষমতা করোনাকে দিয়ে দিয়েছে ।

৭। ধার্মিকতা পুনরুদ্ধার। মানুষ ধর্ম-কর্ম ছেড়ে দিয়ে যেন এক অস্বাভাবিক শয়তানের উপাসনায় মত্ত ছিল। কিন্তু দেখুন আজ। সকল বার, নাইটক্লাব, পতিতালয়সহ সকলপ্রকার অসামাজিক কর্মস্থল বন্ধ। সবাই এসকল থেকে সরে গিয়ে তৃপ্তিসহকারে ঘরে অবস্থান করছে। এবং প্রায় সকলেই মনে মনে সৃষ্টিকর্তাকে উপলদ্ধি করতে পারছে। আর চাইছে তার অনুগ্রহ।

৮। দেশে দেশে যুদ্ধ আর সাম্রাজ্যবাদের বিলুপ্তিকরণ। আহ কি শান্তি, নেই কোন যুদ্ধ বিগ্রহ। নেই হুমকি-ধামকি আর হুংকার। নেই বোমারু বিমানের শব্দ আর এক দেশের লোকের অন্য দেশ লন্ঠনের অপচেষ্টা। করোনা এইসকল হীনতা থেকে মানুষ জাতীকে মুক্তি দিয়েছে।

৯। মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ববোধের বৃ্দ্ধিকরন। মানুষ মানুষে যে অবিশ্বাস, ঘৃনা, হানাহানি, কাটাকাটি ছিল আজ তা থেকে সবাই যেন সরে এসেছে এক ঝটকায়। মানুষের বিবেক আজ সর্বোচ্চ পর্যায়ে অবস্থান করছে। যারা ধনী তারা গরীবদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে। সরকার গরীবদের রক্ষায় নানা কর্মসুচী হাতে নিয়েছে। সবাই মিলিতভাবে যেন এই যুদ্ধের মোকাবিলা করছে। এটা বিশাল একটা অর্জন পৃথিবীবাসীর জন্য। যা করোনা ভাইরাস তাদের উপহার দিয়েছে।

১০। কোলাহলমুক্ত শান্তির স্তব্দ জীবন আজ পৃথিবীর প্রতিটি কোনায় কোনায়। এমনটা কল্পনাও করা যেতনা যদি না করোনা আজ পৃথিবীতে আশির্বাদ হয়ে আসতো। পুরাতন-জরাজীর্ন মানুষদের পৃথিবী থেকে সরিয়ে আজ নতুনদের নিয়ে পৃথিবী আবার তার যাত্রা শুরু করেছে। সাধুবাদ জানাই তাই এই করোনা ভাইরাসকে।

আজ সারা বিশ্বের পরাশক্তিরা অবদমিত আর লাঞ্চিত। পৃথিবী থেকে হানাহানি, কাটাকাটি, মারামারি, ঘুষ, দুর্নীতি, ব্যভিচার, অসামজিকতা, কুটনৈতিক নোংরামীতা আর বিভেদ সকল দুরিভূত হয়েছে। পৃথিবী পেয়েছে এক অন্যরকম নতুনত্ব। জানিনা আমরা এটা থেকে শিখে আগামীর পথগুলো সুন্দর করতে পারবো কিনা। নয়তো প্রকৃতি আবার নতুন কোন পদ্ধতি নিয়ে মানুষের উপর ঝাপিয়ে পড়ে আমাদের শান্ত করবে।

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০২০ রাত ২:৩৬
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×