★★★ বেশ কিছুদিন যাবত নতুন কিছু লিখছি না। কিছুটা ব্যস্ততা আর বাকিটা আলসেমিও, লেখার নতুন আইডিয়া এলেও মন বলছে আজ না হয় থাক, কালই লিখব। দেখতে দেখতে মাহে রমজান শেষ হয়ে গেল। রহমাত, মাগফেরাত ও নাযাতের মাস মাহে রমজান। বিতর্কটা চলছে বেশ কয়েক বছর ধরে। মোবাইল ও ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারনেই বোধহয় এটা হালে পানি পেতে শুরু করেছে। কিছু জ্ঞানপাপীদের কমন ডায়লগ এই যে, একবিংশ শতাব্দীর ডিজিটাল যুগেও কেন আমরা মুসলিম উম্মাহ রোজা রাখা ও ঈদ পালনে ঐক্যমতে পৌছতে পারলাম না? অর্থাৎ সমগ্র বিশ্বে একই দিনে রোজা শুরু ও ঈদ কেন হচ্ছে না?
★★★ সারা পৃথিবীতে সময়ের ভিন্নতার জন্য আমরা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে আমাদের দৈনন্দিন কাজগুলো করে থাকি। বাংলাদেশের কেউ কি সৌদি আরবের সাথে একই সময়ে ফজরের নামায আদায় করতে চান? কিংবা পাশ্চাত্য দেশ যুক্তরাজ্য অথবা দূর প্রাচ্য অস্ট্রেলিয়ার সাথে? এটা সম্ভব নয়, কারন ইসলামের রুকনগুলো আবহাওয়ার (সূর্য ও চাঁদ) সাথে সামঞ্জস্য রেখেই তৈরি করা। ভৌগোলিক অবস্থানের ভিন্নতার কারনে আমাদের দৈহিক আকার আকৃতি থেকে শুরু করে সামাজিকতা এবং চিন্তা-দর্শনেও ভিন্নতা রয়েছে। সুতরাং শুধুমাত্র রোজা শুরু আর ঈদের ঐক্যমতের দাবী করা নিতান্তই মূর্খতা ও ঘাউরামী ছাড়া আর কিছু নয়।
★★★ তবে আমি সাধারন মানুষ, তাই কোরআন হাদীসের বিস্তারিত ব্যাখ্যায় যাচ্ছি না। সাধারন চিন্তা থেকেই বলছি, পৃথিবীতে সময় পার্থক্যের জন্যই আমরা একেক দেশ ও জাতি একেক সময়ে সালাত আদায় করি যা আগেই উল্লেখ করেছি। সালাত আদায়ের জন্য আমরা সূর্যের অবস্থানকে বিবেচনায় নেই আবার সাওমের ক্ষেত্রে চাঁদের উপস্থিতিকে মানদন্ড হিসেবে ধরে নেই। এ উভয় ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট ভূখন্ডের সাপেক্ষে আমরা সূর্য ও চাঁদের অবস্থানকে বিবেচনা করি। এটাই ইসলামী শরীয়াহ্ নির্দেশিত পন্থা।
★★★ অনেকেই একই দিনে সাওম ও ঈদ পালন করতে চান কিন্তু তারা একই সাথে কেন সেহেরী খেতে চান না আবার ইফতারও কেন একই সাথে করতে চান না, তা আমার বোধগম্য নয়।।
★★★ আর একটু বিস্তারিত ব্যাখ্যায় যদি যাই তাহলে বিষয়টা এরকম দাড়ায়, সৌদি আরবের সাথে বাংলাদেশের সময়ের ব্যবধান তিন ঘন্টা। অর্থাৎ গতকালকে ৩০ তম রোজায় ঢাকায় সেহেরীর শেষ সময় ছিল ভোর ০৩:৪২ মিনিট আর ইফতারের সময় সন্ধ্যা ০৬ঃ৪২ মিনিট। সুতরাং কেউ যদি সৌদীর সাথে সেহেরী ও ইফতার করতে চায় তাহলে সে সেহেরীর জন্য সময় পাবেন সকাল ০৬ঃ৪২ মিনিট পর্যন্ত আবার সৌদীর সাথে মিলিয়ে রাত ০৯ঃ৪২ মিনিটে ইফতার করতে হবে। ভাবুন তো বিষয়টা কেমন হবে, সূর্যোদয়ের পরেও প্রায় দেড় ঘন্টা অবধি কেউ একজন সেহেরী খেতেই থাকল আবার ইফতারের জন্য ইশার সালাত অবধি (রাত ০৯ঃ৪২ পর্যন্ত) অপেক্ষা করতে হবে।।
★★★ এসব কারনে কেউ নামায ও রোজা পালনে একতার কথা বলে না, গায়ের যুক্তিতে শুধু রোজা শুরু ও ঈদই একই দিনে করতে চান, এটা আসলেই একটা বাটপারি চিন্তা।
★★★ পরিশেষে, উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি, একই দিনে রোজা শুরু ও ঈদ পালনে এরকম অনেক জটিলতা তৈরি হবে। উম্মাহর ঐক্যমতের চেয়ে বিশৃঙ্খলাই বেশি হবে বলে মনে করি।।
বিঃদ্রঃ ইহা একান্তই নিজস্ব মতামত। কোরআন ও হাদীসের বিস্তারিত ব্যখ্যা দেখার জন্য গুগল করুন অথবা হক্কানী আলেমদের নিকট থেকে জেনে নিবেন।