somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তিনা কে...

২৯ শে অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১০:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় তিনা,

জানি অবাক হয়ে যাচ্ছিস আমি চিঠি লিখছি দেখে। প্রায় রোজ যার সাথে দেখা হয়, ফোনে এত কথা হয় সে আবার চিঠি লিখতে বসল কেন তাই ভাবছিস হয়ত। কিংবা মনে করেছিস আমি কিছু একটা মুখে বলতে পারছিনা বলে লিখছি। সে তুই যাই ভেবে নে তোর খুশি। আমি এত সাত পাঁচ চিন্তা করে লিখতে বসিনি। আসলে খুব একা লাগলে তোর কথা এত মনে আসে! তুই ছাড়া আমাকে আর কে এতখানি বুঝতে পারে বল!

ওহো! কেমন আছিস তাই তো জিজ্ঞেস করা হল না। খুব যে জবাব জানার জন্য করছি তা না। এমনি করা। আজো আমার নতুন অর্কিডটা দেখতে আসা হল না তোর। সময় তোর হয়ই না। ইস আমরা কত ব্যস্ত হয়ে গেছি না রে? বড় হয়ে গেছি আমরা। এই তো সেদিন যে বয়সের রজতজয়ন্তীটা পার করে দিলাম তাও তো একবছর হতে চলল। কি করে এতগুলো দিন পার হয়ে গেল বল তো? এই সেদিন না বেণী দুলিয়ে স্কুলে যেতাম? আমাদের প্রথম স্কুলে তোকে যে সবাই হুতুম প্যাঁচা ডাকত আমার কি মনে নেই? চোখ পাকাচ্ছিস নাকি? কাউকে বলব না তো!

জানিস আজকাল এত নিয়তিবাদী আর অতীতবাদী হয়ে গেছি আমি! ফেলে আসা সবগুলো দিন মনে পড়ে আর প্রত্যেকটা মুহূর্তে মনে হয় আমার ভাগ্য যেন পালটে যাচ্ছে। আজ থেকে পাঁচটা বা দশটা বছর পর আমি বেঁচে আছি কিনা, থাকলে ঠিক কি করছি তা যে আমি জানি না বা একটুও ভাবতে পারি না এটাও একটা উত্তেজনা এনে দেয় কখনো কখনো। তিনা তোর কি রিজভীর কথা মনে আছে? সেই শান্ত লাজুক ছেলেটা এখন একেবারে কর্পোরেট হয়ে গেছে। সেদিন মার্কেটে দেখা। পাশ থেকে হাসিমুখে বলে, “আরে মিলি না? আমি রিজভী, চিনতে পেরেছ?” আমি চিনব না? আমার স্মৃতিশক্তি যে ভাল এটা তো তোরাই বলিস। দারুণ হয়েছে দেখতে এখন ও। আচ্ছা তিনা সেই যে বৃষ্টির দুপুরে রিজভী ঠাণ্ডায় নাকি আর কিছুতে কাঁপতে কাঁপতে বলেছিল, “মিলি তোমার সাথে কিছু কথা আছে, একটু শুনবে?” তোরা তো ঠিকই বুঝতে পেরেছিলি ও কি বলতে চায়। শুধু তোরা? আমিও কি বুঝতে পারিনি? সেদিন যদি আমি ওর কথাগুলো শুনতাম, ওর বাড়ানো হাতটা যদি ধরতাম তাহলে এখন কি তোকে ঠিক এই চিঠিটাই লিখতাম?

এ্যাই দরকারী একটা কথা, জলদি মাথায় টুকে নে। তুই যে চাকরি পাবার পর খাওয়াবি বলেছিলি, কোথায় সেটা? তোদের লজ্জা লাগে না রে তিনা? খুব তো চখাচখি একসাথে চাকরি পেয়ে গেলি, নিজেরাই পেটপূজা করে বেড়াচ্ছিস। আমি খেতে চাইলে শুধু আমার ওজন নিয়ে খোঁটা দিস। এভাবে করে পার পাবি ভাবিস তুই? আর তোর বাবুসাহেবকে বলিস, কতবার আন্টির চোখ ফাঁকি দিয়ে ওর মেসেজ তোর কাছে চালান করেছি যেন গুণে নেয়। বাব্বাহ তোরা একেকটা কি অকৃতজ্ঞ রে!

কিছু করার পাচ্ছি না, তাই নেটে বসে এটা সেটা দেখছি। পাশের ঘরে ছোটখালা আর আব্বা আম্মা খেতে বসেছে। গুটগাট গল্পও চলছে। আমি কি করেছি জানিস? কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে গান বাজিয়ে দিয়েছি, যেন ওদের কোন আলোচনা আমার কানে না আসে। কে জানে যদি ওই লম্বুকে নিয়ে কথা বলে? তোদের তো আবার লম্বুকে অনেক পছন্দ। রাজি হয়ে যা মিলু, কি হ্যান্ডসাম, কত সেন্সিবল। উফ তোরা পারিসও। অসহ্য! লম্বুজী আবার সেদিন ফোন করে আমার খোঁজ নেয়। “কেমন আছ মিলি? ইস তোমার ফোনে সমস্যা নাকি? পেতে এতক্ষণ লাগল!” আমিও খুব মিষ্টি করে খুশিমুখে সব কথার জবাব দিয়েছি। অথচ মনে মনে বলছিলাম, “খবরদার! একদম চুপ! আমার নাম্বার কে দিল?” লম্বুকে কি আমি না করে দিব রে তিনা? কেন? সত্যিই যদি না জানিস তো পরে বলব।

আম্মা আমাকে খুব বকে। আমি নাকি একা থাকি। আমি নাকি কথাবার্তা একদম বলি না। আচ্ছা কি কথা বলব আমি বল তো? আমি কি উচ্ছ্বল কিশোরী নাকি যে আমার একগাদা কথা থাকবে? সেজ মামা বললেন কোন কাজ করার নেই দেখেই নাকি আমি চুপচাপ হয়ে থাকি, একটা চাকরি পেলেই ভাল লাগবে। হুঁম খারাপ বলেননি। আসলেই চাকরি দরকার। বাসার কাউকে একদম ভাল লাগে না জানিস? বাবা মা মিহির কাউকে না। মনে হয় সবাই আমাকে জ্বালায়। কেউ যদি একটা কথা বলতে আসে তাতেই আমি বিরক্ত হয়ে যাই। খুব ইচ্ছা করে দূরে কোথাও চলে যাই সব ছেড়েছুড়ে। অন্তত কিছুদিনের জন্য হলেও। তাও কি পারব? আমি তো মেয়ে। বাড়িতে কেউ কোনদিন আমাকে মিহিরের চেয়ে কম কিছু ভাবেনি, ও যা যা পেয়েছে আমিও তাই পেয়েছি, খেলাধুলা পড়াশোনা গানবাজনা সবকিছুর সুযোগ ওর মত করেই ছিল আমার সবসময়। কিন্তু তারপরও একটা মেয়েকে একসময় একটা মেয়েই হয়ে যেতে হয়। তোর একটা কথা আমি মানতাম না কখনো, এখন বুঝি সত্যি কথাই বলিস তুই, ছেলেগুলো ঠিক কেমন কেমন করে যেন ভাল থেকে ফেলে। সব গুছিয়ে ফেলে নিজের মত করে। সততা, নৈতিকতা, অকপটতা এসবের ভক্ত হয়ে পড়ে, কারণ “অনেক হয়েছে, জীবন নিয়ে তো এক্সপেরিমেন্ট চলে না।”

নাহয় আজ তপনদা ভাল থাকত? তুই কি ভুলতে পারবি বীণাদিদি আর তপনদার সাত বছরের ভালবাসার কথা? শুধু একটা দামী চাকরির জন্য তপনদা কেমন করে সব শেষ করে দিয়ে চলে গেল! ঠিকই পুতুলের মত একটা মেয়ে বিয়ে করে সুখে শান্তিতে সংসার করতে করতে এখন হিল্লি দিল্লি ঘুরে বেড়াচ্ছে। অথচ এই ভালটা বীণাদিদি থাকতে পারল না। তপনদা জীবনে যেন খুব জিতে গেল। ক্লাসের সবচেয়ে খারাপ ছাত্রটা যদি নকল করে ফার্স্ট হয়ে যায় আর সেই রেজাল্টটাই যদি সবার কাছে সত্যি হয় তাহলে কেমন লাগে ভাব তো তিনা! মাথা কাজ করে না কেন? সবকিছু ঠিকঠাক মত চলে না কেন বল দেখি। তুই তোর সব কোমলতা নিয়েও চোরাপাঁকে বারবার আটকা পড়ে যাবি, আমি চারদিকে আলো ভেবে আলেয়া দেখব এমন কেন হবে? তোর মত আমারও ভাল না লাগা রোগটা বেড়ে চলেছে।

কেমন একটা শূণ্য শূণ্য লাগে জানিস? ঠিক জানি না কেন। জানলেও হয়ত না জানার ভান করব। আমার সব বন্ধুকে একটা প্রশ্ন করি আমি, চোখের পানি উষ্ণ হয় বলে কি তার থেকে বাষ্প উড়তে থাকে? সবাই বলে, না এমন হয় না। আসলে তোরা কেউ তো আমার মত সারাদিন মোটা ফ্রেমের চশমা ঝুলিয়ে রাখিস না, ঘোলা কাঁচ তোরা চিনবি কি করে? অস্থিরতা চেপে আছে। মাঝে মাঝে খাটে শুয়ে নাটকের নায়িকাদের মত খাটের পাশের টেবিল ল্যাম্পটা একবার জ্বালাই একবার নিভাই, আবার জ্বালাই আবার নিভাই। যেন এটা একটা কাজ হল। যেন এভাবে করে খুব দিন কাটানো যায়। সুইচ এর উপর হাতটা চালু রাখলাম। যতক্ষণ শক্তি আছে অফ অন করতেই থাকলাম। একবার আলো একবার আঁধার আবার আলো আবার আঁধার। একসময় হয়ত ঘুম নেমে আসবে। ঘুমিয়ে পড়ার ঠিক আগটায় কোন অবস্থাটার সৃষ্টি হবে, আলো না আঁধার, সেটাই একটা খেলা। অবশ্য তখন তো আমার চোখই বন্ধ। চোখ বন্ধ করে রাখা মানুষ কি আলো আর আঁধারের পার্থক্য একটুও বুঝতে পারে?

আজ আর লিখতে ইচ্ছা করছে না রে। রাখি। কথা হবে। ভাল থাকিস। আন্টিকে বলিস আমাকে না বকতে, শীগগিরই একদিন আসব, প্রমিজ।

ইতি তোর বোকা বন্ধু,
মিলু।
২১টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×