somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বে-কা-র!

১৪ ই নভেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৩:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগে নাটকে দেখতাম চাকরি না পেয়ে হতাশাগ্রস্ত বেকার যুবক তার সার্টিফিকেটকে নৌকা বানিয়ে রাস্তার জমে থাকা জলে ভাসিয়ে দিচ্ছে। হাঁটতে হাঁটতে নাকি জুতার সুকতলি ক্ষয় হয়ে যায় যুবকের। হাতে যাবতীয় দলিলপত্রাদি নিয়ে তারা অফিস থেকে অফিসে ধরনা দেয় আর কাঁচঘেরা দরজাগুলোর গায়ে লেখা থাকে "no vacancy". যুবক মাথা নিচু করে ফিরে যায়।

বেকার যুবকের গালে থাকে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। হাই তুলতে তুলতে সে বেলা বারোটায় ঘুম থেকে উঠে। সারাজীবন ন্যায়ের পথে চলা মধ্যবিত্ত বাবা হাঁক দেন, "লাটসাহেবের আজ এত ভোরে ঘুম ভাঙলো যে?" সে সারাদিন পথে পথে ঘুরে, আড্ডাবাজি করে, রাত করে বাড়ি ফিরে ঠাণ্ডা ভাত খেয়ে সিগারেট টানতে টানতে বুকের কষ্ট বুকে চেপে আরেকটা দিনের অপেক্ষা করে।

বেকার যুবক প্রেমিকা হারানোর ঝুঁকিতে থাকে কারণ প্রেমিকার বাবা মেয়েকে অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে দিতে উঠেপড়ে লাগেন। বেকারকে কেউ সম্মান করে কথা বলে না। পাড়ার চাচারা অপদার্থ ভাবেন, চাকরি করা বন্ধুবান্ধবরা ধারের ভয়ে এড়িয়ে চলে, বড় ভাই বড় ভাবী থাকলে তারা নানারকম কথা শোনায়।

ইত্যাদি হল স্কুল আমলে বইপুস্তক আর নাটকের কল্যাণে গড়ে উঠা বেকার যুবকের ভাবমূর্তি। বেকারত্বের গ্লানি বলে একটা কথাও আছে। বেকার তকমাটা ছেলেদের গায়ে সেঁটে দেয়া হয়েছে। একটা মেয়ে একই সমান পড়াশোনা করে কাজ না পেলে তাকে সচরাচর কেউ বেকার বলে না মনে হয়। একটা সুবিধা আছে দেখি মেয়ে হওয়ার। কিন্তু আদপে সুবিধা কই? কম হোক বেশি হোক নিজের টাকা পয়সা কার না দরকার? কিন্তু বেকার শব্দটা আমার পছন্দ না। বেকার ছেলে নাকি পরিবারের বোঝা। এমন একটা ভাব, যেন সে যেচে পড়ে বেকার হয়েছে। শব্দটা শুনতেই তো ভাল না। নিজে নিজেকে বলা যায়। অন্যরা কেন বলবে? 'বেকারত্বের অভিশাপ' বললেই মনে হয় যেন অপরাধী।

আমার এত সহানুভূতির কারণ হল আমি কোন স্কুল কলেজ অফিস আদালতে কিছু করি না। ঘরে বসে মাছি মারি। পরীক্ষা শেষ হয়েছে দুই মাসের বেশি। বয়স তো কম হল না। দেখতে শুনতে সেটা ভালই বোঝা যায়। তাই কেউ এখন আর কি পড়ি বা কোথায় পড়ি জিজ্ঞেস করে না, জিজ্ঞেস করে কি করি। আমাকে তখন শেষ হয়ে যাওয়া পরীক্ষাটার রেশ টানতে হয়। কি করি তার উত্তর হয় কবে কি করেছিলাম সেটা। তখন আবার কেউ কেউ বলে কি করার প্ল্যান। আহা যেন আমি প্ল্যান নিয়ে বসে আছি, টেন্ডার নোটিশ দেয়া আছে, প্রপোজাল এল বলে। কিংবা প্রশ্ন থাকে কি করার ইচ্ছা। বলতে মন চায় আমার ইচ্ছা সারাদিন আরাম করব। ঘুমাব বই পড়ব ফেসবুক আর সামুতে ঘুরব এবং এসবের জন্য মাস শেষে 'lucrative amount' ব্যাগে ভরব। কিন্তু সেই কথা বলি না। মামা চাচারা এসব বুঝবে না। বুঝলেও বলা যায় না। তাদেরকে তাই বলতে হয় কোন কোন ধরণের কর্পোরেট অফিস অথবা প্রাইভেট ব্যাংক অথবা ইউনিভার্সিটিতে 'try' করি বা করব। তাদের উপদেশ হল, বিসিএস দাও সম্মানের চাকরি কর। পুলিশে ঢুকো। মহিলা পুলিশদের অনেক দাম। আমি মাথা নাড়তে নাড়তে ভাব করি যেন খুব দামী একটা কথা শুনলাম। বিসিএস তো হাতের মোয়া। জিকে নাই কিছু নাই উনিশ বিশ জ্ঞান নাই আমি পারব বিসিএস! আবার বলে পুলিশ। যাই হোক সেটা কথা না। কথা হচ্ছে আমার কাজ করতে ইচ্ছা করে না। আবার কর্মহীন থাকতেও ভাল লাগে না। আস্ত একটা মানুষ আমি, বেলা বারোটায় আমাকে বাসায় পাওয়া যায়। কেউ ফোন করে কোথায় আছি জানতে চাইলে বাসায় বলতে শান্তি লাগে না। সাধ জাগে চিবিয়ে চিবিয়ে বলি আমি তো অফিসে, একটু বিজি আছি। বন্ধুরা অনেকেই ভালমন্দ চাকরি পেয়ে গেছে। কারো নতুন চাকরি পাওয়ার খবর শুনলে খুশি হবার আগে বুকে দুঃখের শেল বিঁধে। মনে মনে বলি, ওরে তুইও আমারে ছাইড়া গেলি রে?

আব্বাজানের একটা আশ্বাস আছে। যদি হায়াত খুব বেশি না নিয়ে এসে থাকি তাহলে বাকি জীবন হালকার উপর ঝাপসা খেয়ে পরে কাটানোর মত টাকা পয়সা দিতে পারবেন তিনি। কিন্তু কাজের বেলায় কিছু না। পঞ্চাশটা টাকার জন্য কৈফিয়ত দিতে লাগে একশটা। রিকশাভাড়া দেয়ার জন্য আজকাল ব্যাগ হাতড়ানোর পরও কিছু মিলতে চায় না। টুটাফাটা যেই টিউশানিটা ছিল, বাচ্চাকাচ্চার পরীক্ষা শেষ হবে কয়দিন পরে, আমার সাপ্লাই হবে পুরাপুরি বন্ধ। আর আমি যে চাকরি খুঁজব, পারিটা কি? ভাল করে চিন্তা করলে দেখি দিনে দিনে বয়স বাড়লেও কাজের কাজ কিছুই আসলে পারি না। অফিসে মানুষ ফাইলের মধ্যে কি কি সব লিখে, আবার দাগ দেয়, কম্পিউটারে ফটফট কি কি যেন টাইপ করে, এগুলি আমি কোনদিন পারব মনে হয় না। আবার সার্কুলার এর মধ্যে কত কি চায়। আমার শুধু কয়েকটা সার্টিফিকেট আছে, কিছু শিখি নাই।

আমি বর্তমানে একজন বেকার যুবমহিলা। নাহ আফসোস করি না এখনও। আফসোস করার সময় এখনও মনে হয় আসে নাই।
২৫টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×