৩০ মার্চ ২০১২ইং দিনটি ছিল শুক্রবার। সকাল সাড়ে ৫ টায় ঘুম থেকে জাগলাম। মোবাইলটা হাতে নিলাম একটু ফেইসবুক লগইন করব বলে। হাতে নিয়ে দেখলাম তিনটা মেসেজ এসেছে। দুইটা রবি কাস্টমার কেয়ার থেকে। আর একটা অপরিচিত নাম্বার। নাম্বারটা ছিল 01817***826 এমন। শুধু একটা লাইন লিখাঃ Hi, i am Najmin
আমার একটা ফেইক ফেইসবুক আইডি ছিল (অবশ্য ছেলে আইডি, মেয়ে আইডি নয়)। একাউন্টা অনেক আগেই খুলেছিলাম তবে ব্যবহার করা হতো না। তেমন বেশি কিছু জানতাম না ও বলা চলে। তাই মোবাইল নাম্বারও এড করা ছিল। স্ট্যাটাস দিতাম Hi, Hello, How are you friendz? etc এবং বন্ধুদের সাথে চ্যাট করতাম।
তখন আমি কম্পিউটার হার্ডওয়ারের টুকিটাকি কাজ করতাম। বিকালে আরিফ ভাই (আপন ভাই নয়, এমনি দেখা সাক্ষাৎতে পরিচিত) ফোন দিল। বলল ল্যাপটপে কি যেন প্রবলেম করছে। গেলাম তার বাসায়। দেখে সমস্যা গুলো সলভ করে দিলাম। নাস্তা করলাম তারপর মাগরিবের আযান দিল। আমি বাসা থেকে বের হতে যাব এমন সময় মোবাইলটা বেজে উঠল। পর পর তিনটা মিসকল। প্রথমে নাম্বার চিনতে পারি নাই। যদিও আমার এই বয়সের ছেলেরা নতুন নাম্বার পেলেই কল ব্যাক করে। কিন্তু আমার সেই স্বভাবটা ছিল না। কারণ এই অল্প বয়সেই আমি অনেক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত। তাই আমার নাম্বার এবিলএবল হয়ে গেছে। সুতরাং কাউকে ফোন ব্যাক করতাম না। অনেক কলই তো আসে। (ভাব নয় আসলে যারা এরকম কয়েকটা প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত তারা জানে বিরক্তি জিনিসটা কি!)
এরপর দেখি আবার কল। এবার একটু লম্বা করে দিল তাই রিসিভ করলাম। কিন্তু কথা বলে না। চুপ করে আছে। বিরক্ত হয়ে কেটে দিলাম। আবার কল.... 8-) এবার রিসিভ করে ঝাড়ি দিলাম। কে মিয়া কথা বলেন না ফোন দেন কেন? এই জাতীয় কিছু।
হঠাৎ কি যেন মনে করে মেসেজের ইনবক্সে গেলাম। এর আগের দিন সকালের মেসেজটা চোখে পড়ল। তার পর দেখলাম ঐ নাম্বারটাই। চিন্তা করলাম এমন কি দরকার এত্ত মিসকল দিতাছে। তখন ফোন ব্যাক করলাম।
নাজমিনঃ হেলো....
আমিঃ আপনি কে?
নাজমিনঃ আপনি কে? (পাল্টা প্রশ্ন )
আমিঃ আমি অর্ণব! (ছদ্ম নাম) আপনি কে?
নাজমিনঃ নামের বাকী অংশটা কয় গেলো?
আামিঃ সব কিছুর পুরো নাম মুখে বলতে হয় না কিছুটা ভাবেও বুঝে নিতে হয়। এভাবে আরো কথা হল। এক পর্যায়ে পরিচিত হলাম। -_-
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে কমার্স গ্রুপ, ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়ে। বাড়ি চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা। কিছুক্ষণ কথা হওয়ার পর বলল এখন রাখি আম্মু দেখলে বকবে!
এর পর আবার রাত ৮ টার দিকে কল! কি করছি জানতে চাইল। একটু পর কেটে দিল। এভাবে শুরু হল কথা বলা। এর আগে কখনো কোন মেয়ের সাথে কথা বলিনি। তাই নতুন নতুন ভালই লাগছিল। কিন্তু এভাবে কথা বলতে বলতে আমি তার প্রতি দূর্বল হয়ে গেলাম। তার ফোন ওয়েটিং দেখলেই মাথা চরম খারাপ হত! একবার খুব বকেছিলাম। মাইয়া তো দেখি কাইন্দা দিছে!
সব কথায় একে অপরকে শেয়ার করতাম। কত বছর আগে যেন পরিচিত। মজার কথা হল এতদিনেও তার সাথে দেখা করা হয়ে ওঠেনি। এরপর একদিন বিয়ের জন্য কোথা থেকে যেন ছেলে আসবে বলেছিল আর তাই পলায়ন করল নানুর বাড়ি। ভয়ে বাড়িতেও আসে না। এরপর বুঝিয়ে এক সপ্তাহ পর বাড়িতে আনল তার মা।
এরি মাঝে H.S.C ফাইনাল পরীক্ষা সময় হয়ে এসেছে। টেস্ট পরীক্ষা শেষ। সারাদিন মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকে। কথা বলে না তেমন তবুও সারাদিন মিসকল দেই। ১০০+ মেসেজ করে। আমিও কাজের ফাঁকে ফাঁকে রেসপন্স করতাম। তার এই অবস্থা দেখে তার মা তাকে হোস্টেলে পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু সে মোটেও রাজি নয়। কারন সেখানে মোবাইল ব্যবহার করতে পারবে না। মানে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারবে না। যাবার সময় বেচারি কেদে দিল।
চলে গেল হোস্টেলে। প্রায় শুক্রবারে বাসায় চলে আসত। আর আসার সাথে সাথে আগে মোবাইল নিয়ে আমাকে মেসেজ দিবে অথবা ফোন দিবে। কেমন আছি জানতে চাইবে, কি করছি, পড়ালেখা কেমন চলছে, ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করি কিনা! আর আসতে না পারলে তার ছোট বোনের মা্ধ্যমে আমার খোজ নিত।
হোস্টেল থেকে ২ মাস পর একদিন বাড়ি ফেরার পথে এক্সিডেন্ট করল সি.এন.জি তে! দুই হাত প্রায় থেতলে গেছে। প্রচন্ড ব্যাথা পেয়েছে। তার বড় আপু খবরটা আমাকে জানিয়ে ছিল। মনের অজান্তে চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেল। খুবি কষ্ট পেয়েছিলাম। :'( :'( :'( সবচেয়ে বেশি কষ্ট লেগেছিল পরীক্ষা দিতে পারবে না সেটা ভেবে। পরে অবশ্য ডান হাত মোটামোটি ভাল হয়েছিল। পরীক্ষা দিয়েছিল। রেজাল্টও হয়েছে মোটামোটি।
এরপর বাড়িতে থেকে কিছুদিন চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু ডান হাত ভাল হলেও বাম হাতের কোন পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। তাই তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় মামার বাসায় রেখে চিকিৎসা করানো হচ্ছে বলে জানতে পেরেছিলাম তার বড় আপুর কাছ থেকে। এখনো পুরোপুরি সুস্হ হয়নি। শেষ বার কথা হয়েছিল গত রোজার আগে। জানি না এখন কেমন আছে!
যেখানে যেভাবে থাক, ভাল থেকো...................
(লেখাটা লিখেছিলামঃ ১৫/১০/২০১৩)৩০ মার্চ ২০১২ইং দিনটি ছিল শুক্রবার। সকাল সাড়ে ৫ টায় ঘুম থেকে জাগলাম। মোবাইলটা হাতে নিলাম একটু ফেইসবুক লগইন করব বলে। হাতে নিয়ে দেখলাম তিনটা মেসেজ এসেছে। দুইটা রবি কাস্টমার কেয়ার থেকে। আর একটা অপরিচিত নাম্বার। নাম্বারটা ছিল 01817***826 এমন। শুধু একটা লাইন লিখাঃ Hi, i am Najmin
আমার একটা ফেইক ফেইসবুক আইডি ছিল (অবশ্য ছেলে আইডি, মেয়ে আইডি নয়)। একাউন্টা অনেক আগেই খুলেছিলাম তবে ব্যবহার করা হতো না। তেমন বেশি কিছু জানতাম না ও বলা চলে। তাই মোবাইল নাম্বারও এড করা ছিল। স্ট্যাটাস দিতাম Hi, Hello, How are you friendz? etc এবং বন্ধুদের সাথে চ্যাট করতাম।
তখন আমি কম্পিউটার হার্ডওয়ারের টুকিটাকি কাজ করতাম। বিকালে আরিফ ভাই (আপন ভাই নয়, এমনি দেখা সাক্ষাৎতে পরিচিত) ফোন দিল। বলল ল্যাপটপে কি যেন প্রবলেম করছে। গেলাম তার বাসায়। দেখে সমস্যা গুলো সলভ করে দিলাম। নাস্তা করলাম তারপর মাগরিবের আযান দিল। আমি বাসা থেকে বের হতে যাব এমন সময় মোবাইলটা বেজে উঠল। পর পর তিনটা মিসকল। প্রথমে নাম্বার চিনতে পারি নাই। যদিও আমার এই বয়সের ছেলেরা নতুন নাম্বার পেলেই কল ব্যাক করে। কিন্তু আমার সেই স্বভাবটা ছিল না। কারণ এই অল্প বয়সেই আমি অনেক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত। তাই আমার নাম্বার এবিলএবল হয়ে গেছে। সুতরাং কাউকে ফোন ব্যাক করতাম না। অনেক কলই তো আসে। (ভাব নয় আসলে যারা এরকম কয়েকটা প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত তারা জানে বিরক্তি জিনিসটা কি!)
এরপর দেখি আবার কল। এবার একটু লম্বা করে দিল তাই রিসিভ করলাম। কিন্তু কথা বলে না। চুপ করে আছে। বিরক্ত হয়ে কেটে দিলাম। আবার কল.... 8-) এবার রিসিভ করে ঝাড়ি দিলাম। কে মিয়া কথা বলেন না ফোন দেন কেন? এই জাতীয় কিছু।
হঠাৎ কি যেন মনে করে মেসেজের ইনবক্সে গেলাম। এর আগের দিন সকালের মেসেজটা চোখে পড়ল। তার পর দেখলাম ঐ নাম্বারটাই। চিন্তা করলাম এমন কি দরকার এত্ত মিসকল দিতাছে। তখন ফোন ব্যাক করলাম।
নাজমিনঃ হেলো....
আমিঃ আপনি কে?
নাজমিনঃ আপনি কে? (পাল্টা প্রশ্ন )
আমিঃ আমি অর্ণব! (ছদ্ম নাম) আপনি কে?
নাজমিনঃ নামের বাকী অংশটা কয় গেলো?
আামিঃ সব কিছুর পুরো নাম মুখে বলতে হয় না কিছুটা ভাবেও বুঝে নিতে হয়। এভাবে আরো কথা হল। এক পর্যায়ে পরিচিত হলাম। -_-
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে কমার্স গ্রুপ, ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়ে। বাড়ি চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা। কিছুক্ষণ কথা হওয়ার পর বলল এখন রাখি আম্মু দেখলে বকবে!
এর পর আবার রাত ৮ টার দিকে কল! কি করছি জানতে চাইল। একটু পর কেটে দিল। এভাবে শুরু হল কথা বলা। এর আগে কখনো কোন মেয়ের সাথে কথা বলিনি। তাই নতুন নতুন ভালই লাগছিল। কিন্তু এভাবে কথা বলতে বলতে আমি তার প্রতি দূর্বল হয়ে গেলাম। তার ফোন ওয়েটিং দেখলেই মাথা চরম খারাপ হত! একবার খুব বকেছিলাম। মাইয়া তো দেখি কাইন্দা দিছে!
সব কথায় একে অপরকে শেয়ার করতাম। কত বছর আগে যেন পরিচিত। মজার কথা হল এতদিনেও তার সাথে দেখা করা হয়ে ওঠেনি। এরপর একদিন বিয়ের জন্য কোথা থেকে যেন ছেলে আসবে বলেছিল আর তাই পলায়ন করল নানুর বাড়ি। ভয়ে বাড়িতেও আসে না। এরপর বুঝিয়ে এক সপ্তাহ পর বাড়িতে আনল তার মা।
এরি মাঝে H.S.C ফাইনাল পরীক্ষা সময় হয়ে এসেছে। টেস্ট পরীক্ষা শেষ। সারাদিন মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকে। কথা বলে না তেমন তবুও সারাদিন মিসকল দেই। ১০০+ মেসেজ করে। আমিও কাজের ফাঁকে ফাঁকে রেসপন্স করতাম। তার এই অবস্থা দেখে তার মা তাকে হোস্টেলে পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু সে মোটেও রাজি নয়। কারন সেখানে মোবাইল ব্যবহার করতে পারবে না। মানে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারবে না। যাবার সময় বেচারি কেদে দিল।
চলে গেল হোস্টেলে। প্রায় শুক্রবারে বাসায় চলে আসত। আর আসার সাথে সাথে আগে মোবাইল নিয়ে আমাকে মেসেজ দিবে অথবা ফোন দিবে। কেমন আছি জানতে চাইবে, কি করছি, পড়ালেখা কেমন চলছে, ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করি কিনা! আর আসতে না পারলে তার ছোট বোনের মা্ধ্যমে আমার খোজ নিত।
হোস্টেল থেকে ২ মাস পর একদিন বাড়ি ফেরার পথে এক্সিডেন্ট করল সি.এন.জি তে! দুই হাত প্রায় থেতলে গেছে। প্রচন্ড ব্যাথা পেয়েছে। তার বড় আপু খবরটা আমাকে জানিয়ে ছিল। মনের অজান্তে চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেল। খুবি কষ্ট পেয়েছিলাম। :'(:'(:'( সবচেয়ে বেশি কষ্ট লেগেছিল পরীক্ষা দিতে পারবে না সেটা ভেবে। পরে অবশ্য ডান হাত মোটামোটি ভাল হয়েছিল। পরীক্ষা দিয়েছিল। রেজাল্টও হয়েছে মোটামোটি।
এরপর বাড়িতে থেকে কিছুদিন চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু ডান হাত ভাল হলেও বাম হাতের কোন পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। তাই তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় মামার বাসায় রেখে চিকিৎসা করানো হচ্ছে বলে জানতে পেরেছিলাম তার বড় আপুর কাছ থেকে। এখনো পুরোপুরি সুস্হ হয়নি। শেষ বার কথা হয়েছিল গত রোজার আগে। জানি না এখন কেমন আছে!
যেখানে যেভাবে থাক, ভাল থেকো...................
(লেখাটা লিখেছিলামঃ ১৫/১০/২০১৩)
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:২৩