somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হারানো চৈত্রের রাত

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যুবকের দীর্ঘশ্বাস আর চৈত্রের মাতাল পবন মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। কি অদ্ভুত মিল শব্দে আর ছন্দে! এই ধরণী দূরে থাক, যুবক নিজেই বুঝতে পারে না কোনটি তার সৃষ্ট শ্বাস।এ কেবল এই যুবকের বেলাতেই ঘটছে বোধহয়, বিকৃত জীবনের অসহায় অথচ দাম্ভিক যুবক।। শেষ কোন বসন্তে উপভোগ করেছে প্রকৃতি আর নিজের অস্তিত্বকে তা ভুলেই গেছে যুবক। তার হৃৎপিন্ড আর ফুসফুস গলে আজ বসন্ত বায়ু বয়!! কি অদ্ভুত এই জীবন, এই নিয়তি।।
আজ হঠাৎ বড্ড বেশি অভিমানী হতে ইচ্ছে করছে তার, বাসন্তি শাড়ির সেই কিশোরীর প্রতি অভিমান। কি বোকা! সে কবেকার কথা- ঝাপসা এক বসন্তের কিছুক্ষণ। তবু আজ যুবক সেই অচেনা কিশোরীর প্রতি তার সকল অভিমান ঢেলে দিতে চায়। কিন্তু শুষ্ক মনে কোন ভাবেই সেই কিশোরীর কোমল হাসিকে ঠাঁয় দিতে পারছে না। দীর্ঘশ্বাসে উড়ে যাচ্ছে কিশোরীর স্মৃতি।। সবকিছু ধোঁয়া আর বাষ্পে পরিণত হয়ে পড়ছে, ধরাছোয়ার বাইরে...কিছুতেই অভিমান করতে পারছে না যুবক।অভিমান করার ক্ষমতা সে হারিয়ে ফেলেছে, ঠিক কখন তা সে উদ্ধার করার চেষ্টা করল না। হয়ত সেদিন থেকে তিলেতিলে হারিয়ে ফেলেছে, ঠিক যেদিন থেকে নিজের হাতে ক্ষত করেছে নিজের স্বত্ত্বা।।
ভাবতে ভাবতে চোখ বুঁজে ফেলল যুবক। শূণ্যে ঘুড়ে বেড়ালো কিছুক্ষণ। এ এক অন্যরকম শূণ্যতা, এতে অমাবস্যার আঁধার নেই, আবার জোস্ন্যৎনার ঝিলিমিলি চাঁদও নেই। আজকের আধপেটা চাঁদটাও সঙ্গী হয়নি তার।।
চোখ মেলে সেই বিস্বাদ শূণ্যতাকে তাড়ানোর পায়তারা করতে থাকল সে। তার খুব দুঃখী হতে ইচ্ছে করছে, কলেজের পথে প্রতিদিন দেখা সেই অন্ধ বৃদ্ধ ভিক্ষুকের দুঃখে...প্রতিদিন তাকে পথে অতিক্রম করেও যে দুঃখের কমতি হতো না, সেই দুঃখে।। কিন্তু বধির মন দুঃখ প্রলাপ শুনতে পায় না আজ। শত শত কাতর মানুষের গোঙ্গানীও আজ স্পর্শ করে না তাকে। হয়ত সেইদিনই তার মনের বধিরতা চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে যেদিন নির্যাতিতের পেটে লাথি মারার জোর এসেছে পায়ে...

দামি পোশাক পড়া দেহটাকে আর একটু হলেই উড়িয়ে নিত দমকা বাতাস। বেশ অপ্রস্তুত ভাবেই নিজেকে সামলে নিল যুবক, টলতে থাকা মাতালের মতন।। এবার যুবক শেষ চেষ্টা করবে অনুভূতি ফিরে পাবার... এবার একটু আনন্দিত হতে চায় সে। স্মৃতির পাতা উল্টাতে উল্টাতে খুঁজে পেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন এক আড্ডার আসর। কি নির্মল আনন্দ ছিল তাতে! কত পরিচিত মুখ সেই আসরে, কত মুক্তাঝড়ানো হাসিমুখ! যুবক মনে প্রাণে চাইল সেই আনন্দে আজ ভাগিদার হতে।কিন্তু তাতেও সে অপারগ। আনন্দ, উল্লাস...কেমন হয় অনুভূতিগুলো?? সে কোনভাবেই অনুভব করতে পারল না। মনে হল জীবনের সেই আনন্দ ছিল বুঝি মুখস্থ বুলির মতন, সময়ের সাথে সাথে যার শব্দগুলো হারিয়ে যায়। তবে কবে সে তার আনন্দবুলি হারিয়ে ফেলেছিল মনে নেই যুবকের। হয়ত সেদিন, যেদিন বন্ধু অবিশ্বাসী চোখে তাকিয়ে ছিল অপলক, যুবকের বিশ্বাসঘাতকতা দেখে।।

নাহ! যুবকের এই জীবন বড্ড তেঁতো মনে হয় ইদানিং... আবেগহীন, সম্পর্কহীন জীবন। অদ্ভুত ছুটে চলার নেশায় কবে কোথায় সবাইকে, সবকিছুকে হারিয়ে ফেলেছে সে তার সঠিক হিসেব মেলানো ভার! হিসেব মেলানোর প্রয়োজনীয়তাও তেমন নেই আজ, সব হারিয়ে আজ সে নিঃস্ব। বাস্তবতা আজ বড় বেশি ভারি বোঝার মতন লাগে।।
ভাবতে ভাবতে ঝাপসা দৃষ্টিতে নিচে তাকালো যুবক...রাতের ব্যস্ত শহর।। বেশ খানিকটা উঁচুতে এক ওভারব্রিজের উপর কিনারা ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে গন্তব্যহীন যুবক।নিজেকে তার বেশ হালকা মনে হতে লাগলো।মনে হতে লাগল পৃথিবী তাকে তার আদিম আকর্ষণে টানছে। নিমিষেই সে তলিয়ে পড়তে পারে নিচের ব্যস্ত শহরের রাস্তায়, গাড়ি ঘোড়ার ভিরে... পালকের মতন শরীরটাকে ছেড়ে দিল সে।। তবে চৈত্রের হাওয়ায় উড়ে যাক সে, উড়ে যাক তার হারিয়ে যাওয়া ভালবাসা, দুঃখ, ঘৃণা আর আনন্দের সাথে......

চোখ বুঁজে নিজেকে প্রায় ঠেলে ফেলে দিতে গিয়েও আঁকড়ে ধরে ফেলল ওভারব্রিজের রেলিং। হাঁপাতে হাঁপাতে চোখ মেলল সে।। কয়েক সেকেন্ডের জন্য যেন ঘুরে এলো মৃত্যুপুরের দরজা থেকে, কিন্তু তাতে প্রবেশের সাহস হলো না।দরদর করে ঘামতে থাকা শরীরটাকে এত সহজে হারাতে চায় না তার স্থবির মন।ঘন শ্বাস যেন এবার চৈত্রের পবনকেও হার মানাবে।। পকেট থেকে কম্পিত হস্তে রুমাল বের করল যুবক। হতচকিতের মত হঠাৎ জাগ্রত যুবক পলকে দেখতে পেল অন্য এক জীবনের চিত্র। চোখের সামনে ভেসে উঠল মাইলের পর মাইল সবুজ ধানক্ষেত, নির্মেঘ নীল আকাশ, বহতা নদী... খিলখিল করে হাসতে থাকা ছোট বোনের মুখ... যুবক কোন ঠাঁয় খুঁজে পায় না।। জীবন যেন লাস্যে বুঝিয়ে দিয়ে গেল তাকে- নিজেকে হারিয়ে ফেলা সহজ, তবে হারিয়ে যাওয়া সহজ নয়...
যুবক অপরাধী কিশোরের মতন আঝোরে কাঁদতে লাগল। আজ আকে আগলে ধরার কেউ নেই।তবুও যুবক কাঁদতে থাকে... হয়ত কোন এক আত্মীয়ের অপেক্ষায়...
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোকাকোলা সহ সকল কোমল পানীয় বর্জন করুন। তবে সেটা নিজের স্বাস্থ্যের জন্য, অন্য ব্যবসায়ীর মার্কেটিং কৌশলের শিকার হয়ে না।

লিখেছেন নতুন, ১৫ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৬

মার্কেটিং এর ম্যাডাম একবার বলেছিলেন, "No publicity is bad publicity." প্রচারের মূল উদ্দেশ্য হল মানুষের মনে ব্র্যান্ডের নাম ঢুকিয়ে দেওয়া। কিছুদিন পরে মানুষ ভালো কি মন্দ সেটা মনে রাখে না,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওরা আমাদের ঐতিহ্যের পোশাককে নোংরা পোশাক হিসেবে পরিচিত করতে চায়। ওরা আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে গ্রাস করতে চায়।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৫ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০


"লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়ান নি'মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।"

এক মৌলভী পোস্ট দিয়েছেন
"শাড়িকে একটি নোংরা পোশাক বানিয়ে দিয়েন না।
শরীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমূদ্র-সৈকতে - ১৬

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৫ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৫:১৯



ছবি তোলার স্থান : মেরিনড্রাইভ, কক্সবাজার, বাংলাদেশ।
ছবি তোলার তারিখ : পহেলা অক্টোবর ২০২০ খ্রিষ্টাব্দ।

বেড়াবার সবচেয়ে আকর্ষণীয় যায়গাগুলির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সমূদ্র সৈকত। কখনো কখনো আমারও সুযোগ হয় বেড়াতে যাবার।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেইন্ট মার্টিন ও কোক ইস্যু

লিখেছেন নিবারণ, ১৫ ই জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৪

বিগত কয়েকদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় সবচেয়ে চর্চিত বিষয়, কোকের বয়কট ও গত দুই দিন ধরে সেইন্ট মার্টিন মায়ানমার দখল করে নেয়ার খবর।

সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশ্রিভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, মায়ানমার সেইন্ট মার্টিন দখল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে গান গাইলাম (সাময়িক)

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ১৬ ই জুন, ২০২৪ ভোর ৪:০৮

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে আমি আদর করে 'আই' ডাকি। আইকে দিয়ে অনেক কাজই করাতে হয়। এবারে, আমাদের ৫ ভাইদের নিয়ে একটি গান বুনেছি। আমরা ৫ ভাই অনেক দিন একসাথে হই না। আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×