somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাঠ প্রতিক্রিয়া **** বকুল (নজরুল ইসলাম) : আমার ভালোলাগার সাতকাহন

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




বকুল পড়লাম। ভালো লাগলো। শুধু ভালো নয় বেশ ভালো লাগলো। অনেক ছোটো বেলায় যখন প্রথম ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়ের নাম শুনেছিলাম। কিছু কিছু লেখা পড়ছি। তখন লেখককে মেয়ে ভাবতাম। বড় হয়ে অনেক হেসেছি নিজের অজ্ঞতার কারণে। আসলে নজরুল ইসলামের ‘বকুল’ উপন্যাসটা যখন পড়িনি তখন ভেবেছিলাম নামটা হয়তো কোনো মেয়ের হবে। কারণ বকুল নামটা মেয়েদেরই হতে দেখেছি। উপন্যাসটা পড়া শুরু করতে দেখলাম বকুল পুলিশ অফিসার। এবং পুরুষ।

বকুল আই.পি.এস. অফিসার। খুবই গরীব ঘর থেকে উঠে আসা একটি ছেলে। যেখানে তার বাড়ির সকলের আত্মীয় স্বজন সক্কলেরই এই প্রফেসনে আসার ব্যাপারে আপত্তি ছিল। তার এক শিক্ষক তাকে এই প্রফেসনে আসার ব্যাপারে উৎসাহ যোগান। যেখানে পুরো সিস্টেমটাই ক্রমে ক্রমে কোরাপ্টেড হয়ে যাচ্ছে। সেখানে যদি বকুলের মতো মানুষেরা গঙ্গা বয়ে না আনে তাহলে এই সমাজটাই পুরো বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে যাবে।

চান্দা সাহেবের ইচ্ছাক্রমে তার পোস্টিং হয় বৈকুণ্ঠপুরে। কিন্তু অন্য প্রফেসনের সঙ্গে পুলিশ কিম্বা আর্মির প্রফেশনের অনেক পার্থক্য আছে। পদাধিকার বলে যিনি উচ্চে আছেন তার কথা মানতে হয় ইচ্ছেতে বা অনিচ্ছেতে। নতুন পদে যোগদানের ক্ষেত্রে তারই সম্মুখীন হয় বকুল। নতুন পদে অতিসত্ত্বর যোগদান করতে বলা হয়। অথচ বর্তমান জায়গা থেকে তাকে রিলিজের ব্যাপারে ঢিলেমি করা হয়। উপর থেকে জানতে চাওয়া হয় সে কেন নির্দেশ অনুযায়ী কেন দ্রুত কাজে যোগদান করছে না। যেখানে সে পোস্টিং পেয়েছে সেখান থেকে কয়েক সপ্তাহ দুয়েক পরের তারিখে যোগদান করানো হবে বলে জানানো হয়।

যাই হোক উপর থেকে ধমক ধামক খেয়ে সে চলে যায় বৈকুণ্ঠপুরে কাজে যোগদান করতে। পরে সে বুঝতে পারে ওখান থেকে তাকে যোগদান করাতে দেরী করানো হচ্ছিল সেখানকার অফিসার বদলি হবার আগে ভাগবাটোয়ারীর অংশ নেবেন বলে। যদিও সেই অফিসারকে ওখান থেকে ভাগ না নিয়েই চলে যেতে হয় এবং সে জন্যেই সে ঘুষের কাণ্ডকারখানা ধরতে পেরেছিল।

বকুল ভেবেছিল বৈকুণ্ঠপুরে জয়েন করার আগে রোজি অর্থাৎ তার স্ত্রীকে কিছু না জানিয়ে বাড়ি ফিরে চমকে দেবে। কিন্তু বাড়িতে ফিরে বিছানায় অন্যের সঙ্গে স্ত্রীকে আবিষ্কার করে। তখনই বাড়ি থেকে ফিরে কর্মস্থানের দিকে এগিয়ে চলে।

বৈকুণ্ঠপুরের দায়িত্ব নিয়ে বকুল পাহাড়ের অস্থিরতার সম্মুখীন হয়। সেখানে রুলিং লাল পার্টি , কেন্দ্রের নীল পার্টি, আনন্দপার্টি, অতিলালপার্টি সব মিলে এক জগাখিচুড়ি অবস্থা। তবে রুলিং লাল পার্টি ও সেন্ট্রালের নীলপার্টির ভিতরে এক অদ্ভুত যোগাযোগ। এরা মানুষের সরকার হিসাবে নিজেদের পরিচয় দেয়। এরা খেটে খাওয়া মানুষের সরকার। আর তলেতলে খেটে খাওয়া মানুষের সর্বস্বান্ত করতে ও সর্বনাশ করতেই বেশি উৎসাহী। এদের সবচেয়ে ভালো খেতে লাগে ‘গরীবের রক্ত।’

এটা যে শুধু পার্টির ব্যাপার তাই নয়। পুলিশের বেশির ভাগ অংশই তাদের সঙ্গে জড়িত। বকুলের এসব পছন্দ হয় না। কিন্তু একা সে কতটুকু করতে পারে! সে চেষ্টা করে এইসব মানুষদের পাশে দাঁড়াতে, অন্যায় থেকে বাঁচাতে, অন্যায় করা থেকে রুখতে।
মানুষ আর কিছু না বুঝুক ভালোবাসা বোঝে। মানুষ বকুলকে ভালোবাসতে শুরু করে। যে পুলিশের পরিচয় -ঘুষ খাওয়া, অন্যায় করা, সেখানে বকুল এক স্বতন্ত্র পরিচয় গড়ে তুলতে সমর্থ হয়। পাহাড়ে ও সন্নিহিত অঞ্চলে অপরাধ,স্মাগলিং, ইভটিজিঙের মতো ঘটনা কমতে শুরু করে।

যার ফলস্বরূপ তাকে খুনের প্রচেষ্টা শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত তাকে পানিশমেন্ট পোস্টিং বলে পরিচিত ব্যাটেলিয়ন পোস্টিং দেওয়া হয়।
পুলিশ এবং ওকালতিকে পেশা হিসাবে নেওয়ায় আমার পরিবারের আপত্তি ছিল বা আছে। অনেক পরিবারেই আছে। কিন্তু পুলিশ রাও আমাদের মতোই মানুষ। তাদের মধ্যেও আমাদের মতো ন্যায় নীতিবোধ কাজ করে। পরিস্থিতি তাদেরকে হয়তো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে। আবেগতাড়িত হয় তারা আমাদের মতোই। রোজিকে বকুল ছাড়তে চায়নি। রোজিকে বকুল স্বাধীনতা দিয়েছিল। রোজি স্বাধীনতা বুঝেছিল। বকুলের ভালোবাসা বুঝতে পারেনি। ফুলঝুরি অজান্তেই ভালোবেসেছিল। বকুলের সঙ্গে তার মানসিক সম্পর্কটুকু গড়ে উঠেছিল। সেই হিসাবে বকুল কোনোভাবেই ফুলকে ঠকায় নি। কিন্তু ফুল যখন জানতে পারে বকুল বিবাহিত তখন ফুলের মতে অনেক দেরী হয়ে গেছে। কিন্তু সে নিজেকেও এই স্রোত থেকে দূরে সরাতে চায়নি। কিছু না দিয়েও ফুল সবকিছু দিয়ে বসে আছে। একেই তো বলে ‘জেনে শুনে বিষ’ পান করা। সরস্বতী বাংলার কলেজ শিক্ষিকা। বিগত একদিনের পরিচয়ে সে এসে হাজির হয় বকুলের কোয়ার্টারে। একরকম জোর করেই সে থেকে যায় কোয়ার্টারে। পরের দিন সকলে তার ট্রেন। সরস্বতীর নিজের ছলনাতেই হোক বা ভয় পেয়েই হোক বসার ঘরের বিছানা থেকে সে চলে আসে বকুলের ঘরে। ঘিয়ে আর আগুনে কি ঠেকানো যায়?

উপন্যাসটি মোট তেত্রিশটি অধ্যায়ে, ২৮৬ পাতায়। কোনো ঘটনাই অতিরঞ্জিত মনে হয় নি। কারণ ঔপন্যাসিক নিজেই পুলিশের চাকরি করতেন। ফলত তাকেই অনুভব করেছি সারাটা উপন্যাস জুড়ে। পড়তে পড়তে কখনো ক্লান্তি আসেনি। সারাটা রাত জেগেই পড়েছি। এবং এই দিনটা স্কুল কামাই করেছি। যেমনটা করেছিলাম অ্যান্থনি ম্যাসকারেনহাস এর ‘বাংলাদেশ: রক্তের ঋণ’ পড়বার দিন।
আগেই বলেছিলাম মনের মধ্যে বকুলের নামটি নিয়ে প্রশ্ন জেগেছিল। পড়বার সময় অনুভব করার চেষ্টা করেছিলাম। নামটির মধ্যে নারীত্বের অনুভব মেলে। প্রকৃতপক্ষে বকুলের মধ্যে মমতা অনুভব করেছি। সেই ভালোবাসা না থাকলে এত মানুষ যারা নিজেদের কে অস্তিত্বহীন বলে ভাবা শুরু করেছিল তারা তার এত আপনার হতে পারত না।

উপন্যাসের ভূমিকাতে বলা আছে চরিত্র কাল্পনিক। কোনো বাস্তব ঘটনার সঙ্গে এর মিল নেই। এটা আইন বাঁচানো কথা বলেই মনে হয়। উপন্যাসে লালপার্টি, নীলপার্টি, আনন্দপার্টি আসলে কোন পার্টি বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না। তবে সরাসরি বললেই বা কি ক্ষতি ছিল? অতিলালবাড়ি আর নকশালবাড়ি যে আসলে একই সেটা তো পাঠক বুঝতেই পারে। সুতরাং জায়গা বা পার্টির নাম নিলেই বা কী ক্ষতি ছিল? অবশ্য আতে কাহিনী কোনো অংশেই রসক্ষুণ্ণ হয় নি।

বকুল ফুল সম্পর্কে উইকিপিডিয়াতে কিছু তথ্য পেয়েছি।এই ফুল শুকিয়ে গেলেও অনেকদিন পর্যন্ত এর সুবাস থাকে। বকুল চলে গেলেও বৈকুণ্ঠপুরে বহুদিন তার সুবাস থেকে যাবে। বকুল ফুল, ফল, পাকা ফল, পাতা, গাছের ছাল, কাণ্ড, কাঠ সব কিছুই কাজে লাগে। বকুলের সমতস্ত কার্যকলাপ অপরাধের বিরুদ্ধে কাজ করা সামাজিক উন্নয়ণের প্রচেষ্টা, অপরাধ জগতের মানুষকে মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা কোনো প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়নি। পুলিশ অফিসার কিম্বা মানুষ হিসাবে বকুল ঔষধির মতোই কাজ করেছে। সমাজকে পচনের হাত থেকে রক্ষা করতে চেয়েছে।

( উইকিতে কি পেয়েছি দেখে নিতে পারেন - এখানে ক্লিক করুন
বকুল ফুল, ফল, পাতা, কাণ্ড দিয়ে বিভিন্ন অসুখ নিরাময়ের নানারকম আয়ুর্বেদিক ব্যবহার রয়েছে।
• ফুল - ফুলের রস হৃদযন্ত্রের অসুখ, leucorrhoea, menorrhagia নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়।
• শুকনা ফুলের গুঁড়া দিয়ে তৈরী ঔষধ "আহওয়া" নামক এক ধরনের কঠিন জ্বর, মাথা ব্যথা এবং ঘার, কাঁধ ও শরীরের বিভিন্ন অংশে সৃষ্ট ব্যাথার নিরাময়ে ব্যবহার হয়।
• শুকনা ফুলের গুঁড়া মাথা ঠান্ডা রাখে ও মেধা বাড়াতে উপকারী।
• শুকনো বকুল ফুলের গুঁড়া নাক দিয়ে নিঃশ্বাসের সাথে টেনে নিলে মাথা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
• বকুল গাছের ছাল - গাছের ছাল দিয়ে কাটা ছেঁড়ার ক্ষত পরিষ্কার করা যায়। এছাড়াও বকুল গাছের ছাল ও তেঁতুল গাছের ছাল সিদ্ধ করে পাচনের মাধ্যমে তৈরি তরল ঔষধ ত্বকের নানারকম রোগ সারাতে ব্যবহৃত হয়।
• বকুলের কাণ্ড - গাছের কাণ্ড থেকে পাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এক ধরনের ঔষধ তৈরি করা যা দাঁতের সমস্যা নিরাময়ে অনেক উপকারী। এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় ফিলিপাইনে। এছাড়াও এই ঔষধ জ্বর ও ডায়রিয়া থেকে আরোগ্য লাভের জন্যে ব্যবহার করে ফিলিপাইনের অধিবাসীরা। স্থানিয় লোকেরা এই তরল পানি দিয়ে গার্গল করে গলার অসুখের নিরাময়ের জন্যে। মুখ ধোয়ার তরল প্রতিষেধক হিসেবেও কাজ করে এই তরল ঔষধ যা মাড়ি শক্ত করে।
• বকুলের পাতা সিদ্ধ করে মাথায় দিলে মাথা ব্যাথা কমে যায়। পাতার রস চোখের জন্যেও উপকারী।
• কাঁচা বকুলের ফল প্রতিদিন ২-৩ টি করে চিবিয়ে খেলে দাঁতের গোড়া শক্ত হয়।)


আপনারা কেউ কখনো বকুল ফল দেখেছেন কিনা জানি না। আমি দেখি নি। বকুল ফলকে অনেকটা বুলেটের মতো দেখতে। হয়তো এজন্যই এর ইংরেজি নাম Bullet wood. হয়তো এই সব কারণের জন্যেই উপন্যাসিকের মনে বকুল নামটি কাজ করে থাকবে। অবশ্য সবটাই আমার অনুমান নির্ভর।


(বকুল ফল)


**************************************************************************************************************************************************************************************************************************************************
অত:পরঃ "শেষ হয়ে হইল না শেষ"

ফেসবুকে এই পাঠ প্রতিক্রিয়া লিখেছিলাম। যেহেতু এই ধরণের পাঠ প্রতিক্রিয়া প্রথম লিখেছি সুতরাং তা বিভিন্ন দিক থেকে সীমাবদ্ধ। সেখানে আমার এক বন্ধুর কিছু কিছু প্রশ্ন ছিল যা আসলে আমার লেখার অসম্পূর্ণতার কারণ থেকে উঠে এসেছিল, সেই কথোপকথনের কিছু অংশ সংযুক্ত করলাম। মনে হয় এর ফলে অসম্পূর্ণতা কিছুটা লঘু হবে।

**********
আমার বন্ধু
**********


বকুল পড়িনি কিন্তু আলোচনাটি পড়লাম।
তবে একটি জিজ্ঞাস্য আছে। রোজির পরকীয়ার উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে রোজি স্বাধীনতা বুঝেছিল, ভালবাসা বোঝেনি! এখানে একটা ক্ষোভ ধরা পড়েছে। স্বাভাবিক! কিন্তু বকুল ও সরস্বতীর মিলন কে বলা হয়েছে, ঘি আর আগুনের বিক্রিয়া। অর্থাৎ, এই মিলন স্বাভাবিক, তীব্র ও অবিসম্ভাবী! উপরন্তু সরস্বতীই নাকি জোর করে এই সম্পর্ক তৈরি করে! এই দুরকম ভাবনা কি নিতান্তই পুরুষ মানুষিকতা সঞ্জাত নয়? যে পুলিশ অফিসার গঙ্গা আবাহনে পাপ সাফ করবেন, তার মানসিক ও চারিত্রিক জোর কি এতই কম যে সরস্বতী এক দিনের পরিচয়ে অভিসারে চলে আসেন? রাতে থেকে যান বকুলের ঘরে? আসলে এ কি বকুলের কোন অনায্য ইচ্ছে কে ঘুরপথে স্বীকৃতি দেওয়ার ইচ্ছে থেকে রচিত?

নজরুল ইসলামের বই আমি পড়িনি কিন্তু নজরুলের প্রথম স্ত্রী যে তাকে ছেড়ে যান সেটা আমি জানি। তাই মনে একটা প্রশ্ন জাগে, বকুলের পরকীয়া কে স্বীকৃতি দিতেই কি রোজিকে কৃতঘ্ন দেখানো হয়ছে?
এটা নেহাতই আমার কৌতুহল! মানব মন বিচিত্র, সে তার অপরাধ ঢাকতে বিবিধ আছিলার আশ্রয় নেয়!



********
আমি
********


ব্যক্তিগত জীবনের সঙ্গে উপন্যাস কে মিলিয়ে ফেললে মনে হয় কাজ টি ঠিক হবে না৷ উপন্যাসিক নিজেও সে দাবি করেন নি। আর উপন্যাসের নায়ক কে কলঙ্কমুক্ত হতে হবে এমনটা নয়৷ তার মননের টানাপোড়েনটা বিবেচ্য।

সরস্বতীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠাতে বকুল ধোয়া তুলসী পাতা তা নয়। সে নিজেও তা বলেনি। অপরাধবোধ তার মনকে দংশন করতে ছাড়েনি।
তবে আপনি যেটা বলেছেন সেটা আমার পাঠ প্রতিক্রিয়ার নিরিখে। উপন্যাসটি পড়লে হয়তো আপনার দৃষ্টি ভঙ্গী পালটে যাবে।


***********
আমার বন্ধু
***********


না, নজরুল ইসলামের ব্যাক্তিগত প্রসঙ্গ উল্লেখ করলাম যেহেতু বকুল ও একজন পুলিশ, তাই!
যদি শুধু উপন্যাসটির কথাই ধরি, তবে বকুল এখানে কি ভাবছে সেটা গুরুত্বপূর্ন। বকুল যদি ব্যাথিত হয়, তবে একরকম। আর সে যদি ঘি-আগুন এর অজুহাত দেয়, তবে আরেকরকম!
আর, কোনো নায়ক কে যে কলঙ্কমুক্ত হতেই হবে, এমনটা নয়। সমরেশ বসুর প্রজাপতির নায়ক সুখেনও অশ্লীল গুন্ডা! কিন্তু লেখক তার নায়কের চরিত্রকে কীভাবে কীভাবে ডিফেন্ড করছেন, তার মধ্যে দিয়ে লেখকের নিজস্ব ভাবনার দিক নির্ণয় করা যেতে পারে।


**********
আমি
**********


আমার বোঝানোর সীমাবদ্ধতার কারণে আপনি হয়তো উপন্যাসটা সম্পর্কে ভুল ধারণা করেছেন।
আসলে আমি উপন্যাস থেকে কোনো কোট করিনি। এখানে যা লিখেছি তার সবটাই আমার মন্তব্য। উপন্যাসিক কিম্বা বকুল কেউই ঘি-আগুনের দোহাই দেয় নি। ওটা নেহাতই আমার বক্তব্য। পড়তে গিয়ে আমার মনে হয়েছে উপন্যাসের মূল লক্ষ্য পুলিশ সমাজবিরোধী দের সঙ্গে বকুলের লড়াই। সে কাজে বকুলের সাফল্য প্রশ্নাতীত। কিন্তু কর্মজীবনে সাফল্য লাভ করলেও সে যে পারিবারিক জীবনেও সফল হবে এর কোনো মানে নেই। কষ্টটাও এখানে। কর্মে সফল ব্যক্তি পারিবারিক ভাবে চূড়ান্ত অসফল। নির্মম পরিহাস।
রোজি বিয়ের আগে থেকেই এইরকমই। যদি ধরে নিই রোজির এই চরিত্র বকুলকে ডিফেন্ড করতেই । তাও ব্যর্থতা বকুলের উপরেই বর্তায়- সে কেমন পুরুষ মানুষ ! কেন সে নিজেকে রোজির কাছে লোভনীয় করতে পারে না। শারীরিক কিম্বা মানসিক ভাবে। কেন সে বিয়ের আগেই জানতে পেরেও রোজির চরিত্র সম্পর্কে জানতে পেরেও রোজিকে বিয়ে করলো? ভবিষ্যতে যাতে সে এই অন্যায়টা নিজে করতে পারে সে জন্যে? এই যুক্তিটা ঠিক যথাযথ মনে হয় না।
কোনো মানসিক সান্নিধ্যের অভাব থেকেই ফুলঝুরির সঙ্গে বকুলের মানসিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। উপন্যাসিক যদি ফুলঝুরির সঙ্গে যদি শারীরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠা দেখাতেন সেটা হয়তো বকুলকে সাপোর্ট করতো। যদি বকুলেকে ডিফেন্ড করা লেখকের লক্ষ্য হত তবে লেখক সেটা করতেন। কিন্তু সরস্বতীর সঙ্গে তার দৈহিক সম্পর্ক দেখিয়ে লেখক নিশ্চয়ই তাকে ডিফেন্ড করেন নি। বকুলের দ্বিতীয় পর্ব আমি এখনো পড়িনি। সরস্বতী সম্পর্কিত কোনো কথা বলতে গেলে ওখানে দেখতে হবে এটা নিয়ে কিছু আছে কিনা। যদি না থেকে থাকে তবে এটা অবশ্যই বলা যায় বকুলের মতো তথা নজরুল ইসলামের মতো পুলিশ অফিসারের হয়তো এমনটা দেখানো উচিত হয় নি। হয়তো বললাম এই কারণে মাথায় মধুসূদনের ব্রজাঙ্গনা কাব্য ও সেই সময়ের কিছু কথা মনে পড়ে গেল।

আমি আসলে একজন সফল পুলিশ অফিসার ও একজন অসফল স্বামীর ট্রাজেডিটাই দেখতে পেয়েছি।



সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৫০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×