somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্মৃতিকথা : আমার আস্তানাবেলা, শত্রুর ওপর হিসু অতঃপর মায়ের হাতের দশ কেজি ওজনের ধুরুম-ধারুম কিল খাওয়া :(

০১ লা এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৯:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটবেলায় আমার একটা গোপন আস্তানা ছিল। আস্তানাটার অবস্থান ছিল আমাদের বাড়ির উত্তর দিকের দো’চালা ঘরের পেছনের বড় আমগাছটার ডালে। যেখান থেকে কয়েকটা মোটা মোটা ডালা জন্ম নিয়ে ছেয়ে গেছে চারিদিক। এই ডালাগুলোর উৎস যেখানে, সেখানটা ছিলো একটা খুপরির মতো। আর সেখানেই ছিল আমার সাধের আস্তানা। সাঝ হয়ে যাবার অনেক আগেই যখন বিকেল, তখনই আমার আস্তানাটা আবছা অন্ধকারে ছেয়ে যেত। আর যখন ঘনিয়ে আসতো সন্ধ্যা, তখন ঝিঝিপোকাদের একটানা ডাকুনিতে আমার আস্তানাটা হয়ে যেত আরও ভূতুরে। কাচের বোতলে সেভেনআপ গুলোর দাম তখন সাত টাকা। প্রায় প্রতিদিন দুপুরের রোদটা যখন ঝিমিয়ে যেত, তখন আমজাদের দোকান থেকে একটা করে কাচের বোতলে থাকা সেভেনআপ কিনে চলে যেতাম লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা আমার সাধের আস্তানায়। তারপর তিন-চার হাত লম্বা লম্বা তক্তা পাতা আস্তানার মেঝেতে নিঃশব্দে বসতাম। চারিদিক ঘেরা ছিল পাটের ছেড়া-ফাটা ছালায়। আস্তানার ওপরে খেজুর পাতার ছাউনি ছিল। কখনো কখনো বিকেল বেলার নিস্তেজ সূর্য অথবা চাঁদ(চাঁদ বলার কারন হচ্ছে, ছোটোবেলায় আমি চাঁদ আর সূর্যকে গুলিয়ে ফেলতাম। কোনটাকে চাঁদ আর কোনটাকে সূর্য বলে, এইটা আমার মনে থাকতো না) আমার আস্তানার ওপরে থাকা খেজুর পাতার ছাউনি ফুটো করে আলো ঢুকিয়ে দিত। পাইপ দিয়ে সেভেনআপের বোতলে চুমুক দিতাম আর রাজ্যের প্রশান্তি এসে ভর করতো আমার মধ্যে। সেভেনআপের খালি কাচের বোতলগুলো ঝুলিয়ে দিতাম আস্তানার আনাচে-কানাচে। মৃদু বাতাসে একটার সাথে আরেকটার ধাক্কা লেগে টুংটাং আওয়াজ হতো, সে আওয়াজে আমার অজান্তেই আমি খুশিতে আত্মহারা হতাম। কখনো বা উড়ে যাওয়া প্রজাপতিদের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতাম। ধইঞ্চার মাথায় আঠা লাগিয়ে খাঁড়া করে ধরে রাখতাম, তারপর প্রজাপতিরা আঠার মধ্যে এসে বসার পর আঠায় আটকে যেত। তারপর আমার খুশি আর চাহনি দেখে তাঁরা মরে যেত। কখনো বা আস্তানায় বসেই তক্তার ফাক দিয়ে হিসু করে দিতাম। হিসুধারা আছড়ে পড়তো নিচের ঝোপঝাড় আর লতাপাতায়। কলকল শব্দে ঝিঝিপোকাদের ঘুম ভেঙে যেত। তারপর আবার শুরু করতো একটানা ডাকুনি। গ্রামের যত সমবয়সী ছেলেপেলে, তাদের মধ্যে একটা ছিল আমাদের বিপক্ষদল। একদিন হলো কি, বিপক্ষ অথবা বিরোধীদলের এক ছেলে এসে আমার আস্তানার নিচে কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করলো। সম্ভবত টুনটুনি পাখিদের বাসা খুঁজছিলো। শালার সাহস দেখে আমি হয়ে গেলাম অগ্নিমানব। আমার আস্তানার নিচে এসে আমার আওতার টুনটুনিদের ছিনতাই! শালার সাহস কত্ত বড়! কিছুক্ষণ চিন্তাভাবনা করলাম। তারপর নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি, ও আমার আস্তানার নিচে দাঁড়িয়ে হিসু করছে। ওর যখন হিসু করা শেষ, তখন হিসু করা শুরু করলাম আমি। আমার হিসুধারার কবলে পড়ে ও হয়ে গেল কাকভেজা। শুরু করলো চিৎকার করে কান্না। ওর কান্নায় আমার আস্তানার আনাচে-কানাচে ঝুলে থাকা কাচের বোতলগুলো কেঁপে কেঁপে উঠলো।
ওর কান্নার আওয়াজে আমার মা বাড়ির ভেতর থেকে ছুটে এল। মা আমার কান্ড দেখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। কি যেন ভাবলো। তারপর আদুরে গলায় বললো, “নেমে আয়!” আমি বাধ্য এবং ভদ্র ছেলের মতো নেমে এলাম আমার আস্তানা থেকে। তারপর মা আবারও বললো, “আরও কাছে আয়!” আমি আরও কাছে আসলাম। এবার মা আমাকে ধুপ করে ধরেই আমার চব্বিশটা বাজানো শুরু করলো। আমার পিঠের ওপরে মায়ের হাতের দশ কেজি ওজনের কিলগুলো ধুরুম-ধারুম আছড়ে পড়ে। কিলের আওয়াজে আমার আস্তানায় ঝুলে থাকা কাচের বোতলেরা কেঁপে কেঁপে ওঠে।
তারপর থেকে সমাপ্তি ঘটলো আমার আস্তানাজীবনের।
হিসুধারার কলকল শব্দে ভাঙলোনা আর কোনো ঝিঝিপোকার ঘুম। কালক্রমে খসে খসে পড়ে গেল আমার আস্তানার তক্তপোষ, খেজুর পাতার ছাউনি আর ছেড়া-ফাটা ছালার তৈরী দেয়াল।
ঝুলে রইলো কাচের বোতলেরা, মৃদু বাতাসে টুংটাং শব্দ করলো বারো বছর।
তারপর একদিন আমগাছটা কেটে ফেলার সাথে সাথে মৃত্যু ঘটলো আমার আস্তানার ধ্বংসাবশেষের।
মৃত্যু ঘটলো একটি আস্তানাবেলার।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৯:১৩
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ইরানের পরমাণু স্থাপনা ধ্বংস করা অসম্ভব: ইসরায়েল

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই জুন, ২০২৫ দুপুর ১:২০




ইসরায়েলের পক্ষে ইরানের ভূগর্ভস্থ পরমাণু স্থাপনা ধ্বংস করা অসম্ভব। এটি করতে পারে একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষেই এটি করা সম্ভব- এমনটা জানালেন ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ইয়েচিয়েল লিটার।

সোমবার ( ১৬ জুন) মেরিট... ...বাকিটুকু পড়ুন

somewherein blog টিম এর দৃষ্টি আকর্ষন করছি।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই জুন, ২০২৫ দুপুর ২:৫৪


ব্লগ ব্যবহারের শর্তাবলী ২খ. যেকোন ধরণের মন্তব্য, যার মর্মার্থ আমাদের কাছে গঠনমূলক না হয়ে সংঘাতপ্রয়াসী / উস্কানীমূলক অথবা সমালোচনামূলক না হয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণ মনে হলে তা নীতিমালা অনুযায়ী সরিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ট্যাবলেট খেলেই নির্মূল হবে রক্তের ক্যানসার? নতুন ওষুধ আসছে দেশে, দাম কত?

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই জুন, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৬





ট্যাবলেট খেলেই আর ক্যানসার ছড়াবে না? রক্তের ক্যানসার নির্মূল করতে নতুন ওষুধ আসতে চলেছে দেশে। গ্লেনমার্ক ফার্মাসিউটিক্যাল ওষুধটি বানিয়েছে। আমেরিকার এই ওষুধ নির্মাতা সংস্থার ওয়ার্কশপ রয়েছে ভারতেও।... ...বাকিটুকু পড়ুন

খোমেনীর স্বৈরশাসনের সূচনা: ধর্মীয় বিপ্লব থেকে রক্তাক্ত দমন

লিখেছেন রাবব১৯৭১, ১৭ ই জুন, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮

খোমেনীর স্বৈরসাশন ও ইরানের কালো ইতিহাস:
============================

১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ইরানে যে 'ধর্মনির্ভর রাষ্ট্রশাসন' প্রতিষ্ঠিত হয়, তার মূল স্থপতি ছিলেন আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনী। ইসলামী প্রজাতন্ত্রের নামে তিনি দেশটিকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সংরক্ষিত নারী আসন: সংস্কারের নামে চাপিয়ে দেওয়া, না কি গোপন এজেন্ডার বাস্তবায়ন?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৭ ই জুন, ২০২৫ রাত ৯:৪৭


বাংলাদেশে সংস্কারের নামে আজ যে কাণ্ড চলছে, তা দেখে পুরনো প্রবাদটি মনে পড়ে—"অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট।" একটি ইন্টেরিম সরকার, যাদের চেয়ারে বসা একটি জটিল ক্ষমতার সমীকরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×