আজ থেকে প্রায় বছর দেড়েক আগে ওনার প্রথম স্ট্রোক হয়েছিল। কিছুদিন পর থেকে একটু আদ্দু হাঁটাও শুরু করলেন, কিন্তু নিজের যে একটা বেঁচে থাকার ইচ্ছা,সেটা চলে গেছিল।
এই এত কিছু হয়ে যাওয়ার পরেও আরুই দা সিগারেট টা ছাড়তে পারেন নি।শুধু চা আর সিগারেট এই ছিল তার জীবন, আর ছাড়তে পারেননি তার প্রবল দম্ভ।
তা প্রায় বছর পাঁচেক হল চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছিলেন।ভেবেছিলেন চাকরি ছেড়ে দিয়ে বেশ চিন্তামুক্ত হয়ে বাকি জীবন কাটাবেন। কিন্তু ওই এক সমস্যা,ওনার সন্দেহ বাতিক মনভাব ওনাকে শান্তি দেয়নি।
আমি তো মাঝেমধ্যে গিয়ে বোঝাতাম, তখন দেখতাম সারাদিন শুধু চা খে্যে যাচ্ছে আর বাইরের ঘরের জানলার দিকে তাকিয়ে বসে থাকতেন, অদ্ভুত এক জীবন কাটাতেন। সেখান থেকেই depression, না হলে ১০ বছর বাকি থাকতে সরকারি চাকরি কেউ ছেড়ে দেয়..!!অবশ্য চাকরি-বাকরি করতে আরুই দা র কোনদিনও খুব একটা ভালো লাগত না, আমায় প্রায়ই বলতেন, চাকরি টা ছেড়ে দিয়ে ব্যবসা করব, নিজেই নিজের বস হব। যতই অসুস্থতা থাকুক! শেষ মেশ তো major cerebral হয়ে গেল।।
তবে লোকটি ছিল বেশ মজার,ভারী সুন্দর একটা হাসিতে সবাইএর মন জয় করতেন। দেখতেও ছিলেন রাজপুত্রের মত। আমার ছোটবেলাতে আরুই বাবুই আমাকে কলকাতা শহর ঘুরিয়েছেন নিক্কো পার্ক, সায়েন্স সিটি,মিলেনিয়াম পার্ক সব। এইতো ২০০৯ এ শেষ বার পুরী গেলেন, উনি বেড়াতে খুব ভালোবাসতেন।
একটা ছোটবেলার কথা মনে পড়ছে, তখন অঞ্জন দত্তের রঞ্জনা আমি আর আসব না গান টা সবে এসেছে, আমাকে দেখলেই আরুই দা বলতেন রঞ্জনা....আমি বলতাম, আমি আর আসব না..। একবার y2k সমস্যা এই শিরনামে খবরের কাগজ ছেয়ে গেছিল, সেবারেও আমাকে দেখলেই বলতেন y2k আর আমি বলে উঠতাম সমস্যা.........।
------ এই সব বলতে বলতে ভুলেই গেছিলাম যে আমি আরুই বাবুর স্মরণ সভায় বক্তৃতা দিচ্ছি।মাত্র ৫৩ বছর বয়সে ওনার চলে যাওয়াটা কিরম লাগছিল, মনেই হচ্ছে না যে উনি আর নেই আমাদের মধ্যে। মনে হচ্ছে যেন হাসপাতালে ভর্তি আছেন,আবার ফিরবেন। স্মরন্ সভা থেকে ফেরার সময়
মেয়ে দুটো দেখে গেলাম, সেরকম ইয়ার্কিও মারলাম ওদের সাথে, এতটাই শিশু যে কোন বোধই নেই। বোউদির শুধু একটাই কথা বলছিলেন, "এটা মৃত্যু নয়, এটা সুইসাইড।“
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:০৫