অফিসে বসে কপি লিখছি। চার পাঁচটা লাইন লেখা হয়েছে সবে। এন্টার দিয়েই মনে হল, এবার একটা কবিতা লেখা দরকার। আমার জন্য দরকার। ঠিক সেই সময় ছোটবেলার একটা কথা মনে পড়ে গেল। কাজেই আর কবিতা লেখা হল না। মনে হয় কবিতারা এইভাবেই আমার কাছ থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছে। অনেক দূরে। আমি হয়ত তার আর নাগাল পাবো না। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কবিতা ছাড়া আর কিছুই আমার লিখতে ভালো লাগে না। আর এখন কবিতাও লিখতে পারছি না। এই দ্বিধা আর জঞ্জাল পেরিয়ে আমি আবার কবে কবিতার মধ্যে দিয়ে হাঁটতে শিখব জানি না।
ছোটবেলার সেই গল্পটার কথা বলি। ক্লাস সিক্স-সেভেনের পর থেকে বাংলা ছাড়া আমার আর কোন বিষয় পড়তে ভালো লাগত না। একটা বিষয় নিয়ে লিখতে লিখতে ঠিক আজকের মতো ঘটনা ঘটেছিল। সেটা ক্লাস সেভেনই হবে। পদার্থ বিজ্ঞান পরীক্ষা হচ্ছে। যথারীতি আমি কিছুই লিখতে পারছি না। কিন্তু এমনি এমনি বসে থাকা তো আর যায় না। তাই পদার্থ বিজ্ঞান ছেড়ে দিয়ে, আমি সুকান্ত ভট্টাচার্যের একটা কবিতা লেখা শুরু করেছিলাম।কবিতাটা ছিল 'দেশ্লাই কাঠি'। আমাদের আবৃত্তি ক্লাসে ওই কবিতাটা শিখিয়ে মুখস্থ করতে বলা হয়েছিল। মুখস্থ হয়েছে কিনা সেটাই যাচাই করছিলাম। পুরো একপাতা লিখে ফেলার পরে সম্বিত ফিরল। বুঝতে পারলাম, খুব বাজে হয়েছে। এদিকে বাবা বারবার বলেছিল, যতটুকু জানিস লিখবি, কিন্তু খাতা পরিষ্কার করে লিখবি। সেইদিন আর খারা পরিষ্কার রাখা হয়নি। ওই পাতাটা খুব হিজিবিজি করে কাটতে হয়েছিল।
আমাদের মিশনে খাতা দেখানো হত। ক্লাসে খাতা দেওয়া হত। আমাকে স্যার আলাদা করে ডেকেছিলেন। বলেছিলেন, তুমি এসব কী লিখেছ খাতায়? বাবাকে কাল নিয়ে আসবে। সেইবার প্রথম একক্লাস বন্ধুদের সামনে খুব কেঁদেছিলাম। স্যারের হাতে পায়ে ধরেছিলাম। বলেছিলাম, যত ইচ্ছে মারুন আমাকে। বাবাঁকে ডাকবেন না। আমাকে মারার জন্য, ছাত্রমারার স্পেশালিস্ট পড়িয়াস্যারকে ডাকা হয়েছিল। করিডরে তুমুল মেরেছিলেন। আমার তাতে খুব একটা অসুবিধা হয়নি। কিন্তু এই খবর যদি বাবার কানে যেত তাহলে হয়ত আরও সাংঘাতিক কিছু হতে পারতো।
তবে আজ আর সেসব হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কপি ছেড়ে হঠাৎ ব্লগ লিখছি দেখেও অফিসে কেউ কিচ্ছু বলবে না। কিন্তু পরিস্থিতি কতটা বদলে গেল। তখন যা লিখতে চেয়েছিলাম লিখেছিলাম। এখন একটা কবিতা লিখতে চাইছিলাম পারলাম না। চারপাশে লোক নেই। কেউ কিচ্ছু বলার নেই। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমিও আর আমার মতো নেই।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:২৯