somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামী রাজনীতি/ইসলামী রাষ্ট্র বিহীন ইসলাম কোন ইসলামই নয় : পর্ব-৪৩ - এসলামের প্রকৃত আকীদা

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৬:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই দীনের সমস্ত আলেম ও ফকিহদের অভিমত হোচ্ছে এই যে আকীদা সঠিক না হোলে ঈমানের কোন দাম নেই৷ অতি গুরুত্বপূর্ণ কথা সন্দেহ নেই, কারণ যে জিনিসটি সঠিক না হোলে, ভুল হোলে, ঈমানের কোন দাম নেই- সেই জিনিসটি অবশ্যই অতি গুরুত্বপূর্ণ৷ নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত, ইত্যাদি এবং তাছাড়াও আরও হাজারো রকমের এবাদতের মূলে হোচ্ছে ঈমান৷ কিসের ওপর ঈমান? আল্লাহ(Allah)র, তাঁর রসুলদের, মালায়েকদের, হাশরের দিনের বিচারের, জান্নাত, জাহান্নাম, তকদীর ইত্যাদির ওপর ঈমান৷ এই ঈমান অর্থহীন হোয়ে গেলে স্বভাবতঃই এই নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত এবং অন্যান্য সমস্ত রকমের এবাদতও অর্থহীন৷ যে জিনিস সঠিক না হোলে ঈমান এবং ঈমান ভিত্তিক সমস্ত এবাদত অর্থহীন সেই মহাগুরুত্বপূর্ণ আকীদা কী?


আকীদা হোচ্ছে কোন জিনিস বা ব্যাপার সম্বন্ধে সঠিক ও সম্যক ধারণা অর্থাত্‍ Comprehensive Concept৷ কোন জিনিস বা ব্যাপার, তা সে যে কোন জিনিস হোক না কেন, সেটা দিয়ে কি হয়, সেটার উদ্দেশ্য কি সে সম্বন্ধে সম্যক ধারণা বা Comprehensive Concept হোচ্ছে আকীদা৷ যে কোন জিনিস বা ব্যাপার সম্বন্ধে এই ধারণা পূর্ণ ও সঠিক না হোলে সেই জিনিসটি অর্থহীন৷ আল্লাহ(Allah) তাঁর রসুলদের (আঃ) মাধ্যমে মানবজাতিকে দীন অর্থাত্‍ জীবন-ব্যবস্থা দিয়েছেন৷ তিনি কি কোন উদ্দেশ্য ছাড়াই এই দীন দিয়েছেন? অবশ্যই নয়৷ নিশ্চয়ই কোন উদ্দেশ্য আছে৷ যদি আমরা সেই উদ্দেশ্য না বুঝি বা যদি সেই উদ্দেশ্য সম্বন্ধে ভুল ধারণা কোরি, তবে ঐ দীন অর্থহীন হোয়ে যাবে৷ এ জন্যই ফকিহরা, এমামরা সকলেই একমত যে আকীদা অর্থাত্‍ উদ্দেশ্য সম্বন্ধে ধারণা সঠিক না হোলে ঈমান ও সমস্ত এবাদত নিষ্ফল৷ একটা উদাহরণ দিচ্ছি৷ মনে করুন কেউ আপনাকে একটি মটর গাড়ি উপহার দিলেন৷ মনে করুন এই মটর গাড়িটি এসলাম(Islam)- আল্লাহ(Allah) মানব জাতিকে যা উপহার দিয়েছেন৷ যিনি গাড়িটি উপহার দিলেন তিনি ঐ সঙ্গে গাড়িটির রক্ষণাবেক্ষণ কেমন কোরে কোরতে হবে সেই নিয়মাবলীর একটি বইও দিলেন, যাকে বলা হয় Maintenance Book৷ মনে করুন এই বই কোর'আন ও সহীহ হাদীস৷ গাড়ির উদ্দেশ্য কি? উদ্দেশ্য হোচ্ছে ওটাতে চোড়ে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া৷ এটাই হোচ্ছে গাড়িটির আসল উদ্দেশ্য৷ ওটাকে তৈরীই করা হোয়েছে ঐ উদ্দেশ্যে৷ কিন্তু ঐ সঙ্গে আরামে বসার জন্য তার ভিতরে গদীর আসন তৈরী করা হোয়েছে, খবর, সঙ্গীত শোনার জন্য রেডিও ক্যাসেট প্লেয়ার লাগানো হোয়েছে, গাড়িটিকে সুন্দর দেখাবার জন্য চকচকে রং করা হোয়েছে৷ গাড়িটির সঙ্গে যে Maintenance বই আপনাকে দেয়া হোয়েছে তাতে বলা আছে গাড়িটিতে কোন্ ধরনের পেট্রোল দিতে হবে, কত নম্বর মবিল দিতে হবে৷ কোথায় কোথায় চর্বি (Grease) দিতে হবে ইত্যাদি৷ শুধু তাই নয় দেখতেও যেন গাড়িটি সুন্দর হয় সেজন্য কোথাও রং খারাপ হোয়ে গেলে কেমন রং কেমন ভাবে লাগালে গাড়ি সুন্দর দেখাবে তাও সব কিছু আছে৷ ঐ Maintenance বইয়ে এত সব কিছু লেখা থাকলেও মূল সত্য হোচ্ছে এই যে ঐ গাড়ি তৈরীর উদ্দেশ্য যে ওটা আপনাকে আপনার প্রয়োজনীয় গন্তব্যস্থানে নিয়ে যাবে৷ বাকি সব ঐ উদ্দেশ্যের পরিপূরক৷ এখন আপনি যদি না জানেন ঐ গাড়িটি দিয়ে কি হয়, ওটাকে কি উদ্দেশ্যে তৈরী করা হোয়েছে তবে আপনাকে ঐ গাড়িটি উপহার দেয়া নিষ্ফল, অর্থহীন৷ ঐ গাড়িটির উদ্দেশ্য আপনাকে প্রয়োজন মোতাবেক ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুর নিয়ে যাওয়া৷ আপনি যদি সেটাই না বোঝেন তবে আপনি কি কোরবেন? আরামের গদি দেখে ভাববেন এই গাড়িটিকে তৈরী করার উদ্দেশ্য হোচ্ছে এই গদিতে বসে আরাম করার জন্য৷ কিম্বা ভাববেন এটা তৈরীর উদ্দেশ্য হোচ্ছে রেডিও শোনার জন্য, ক্যাসেটে সঙ্গীত শোনার জন্য৷ আর তাই মনে কোরে আপনি গাড়িটির আরামের সিটে বসে রেডিও, ক্যাসেট বাজাবেন৷


এই হোলে আপনার আকীদার ভুল হোল৷ আপনাকে গাড়িটি উপহার দেয়া অর্থহীন হোল কারণ ওটার আসল উদ্দেশ্যই আপনি বুঝলেন না৷ আপনি যদি গাড়ির Maintenance বই দেখে দেখে অতি সতর্কতার সাথে যথাস্থানে চর্বি লাগান, মবিল দেন, চাকায় পাম্প দেন, গাড়ির ট্যাংকে তেল দেন, গাড়ির রং পালিশ করেন, তবুও সবই অর্থহীন যদি আপনি না জানেন যে গাড়িটির আসল উদ্দেশ্য কি৷ অর্থহীনতা ছাড়াও আরও একটি ব্যাপার হবে৷ সেটা হোল আপনার অগ্রাধিকারের (Priority) ধারণাও ভুল হোয়ে যাবে৷ তখন আপনার কাছে গাড়ির ইঞ্জিনের চেয়েও প্রয়োজনীয় ব্যাপার হোয়ে দাঁড়াবে গাড়ির রেডিও, ক্যাসেট, গাড়ির রং ইত্যাদি৷ অর্থাত্‍ অগ্রাধিকার ওলট-পালট হোয়ে গিয়ে অতি প্রয়োজনীয় ব্যাপার হোয়ে যাবে অতি সামান্য বা একেবারে বাদ যাবে আর অপ্রয়োজনীয় ব্যাপার হোয়ে দাঁড়াবে মহা প্রয়োজনীয়৷ এ জন্যই সমস্ত আলেম, ফকিহ, এমামরা একমত হোয়েই বোলেছেন যে আকীদা অর্থাত্‍ কোন ব্যাপার বা জিনিস সম্বন্ধে পূর্ণ ধারণা না হোলে বা ওটার উদ্দেশ্য সম্বন্ধে ভুল ধারণা হোলে সম্পুর্ণ জিনিসটাই অর্থহীন- ঈমান এবং অন্যান্য এবাদতও অর্থহীন৷


আল্লাহ(Allah) আমাদের এসলাম(Islam) বোলে যে দীন, জীবন-বিধান দিয়েছেন সেটার উদ্দেশ্য কী, সেই আকীদা আমাদের বহু পূর্বেই বিকৃতি হোয়ে ঐ গাড়ির মালিকের মত হোয়ে গেছে- যে গাড়ির উদ্দেশ্যই জানে না৷ ঐ মালিকের মত আমরা Maintenance বই, অর্থাত্‍ কোর'আন-হাদীস দেখে দেখে অতি সতর্কতার সাথে গাড়ির পরিচর্য্যা কোরছি- কিন্তু ওটাতে চড়ি না, ওটা চালিয়ে আমাদের প্রয়োজনীয় গন্তব্যস্থানে যাই না, গ্যারেজে রেখে দিয়েছি- কারণ ওটার আসল উদ্দেশ্যই আমরা জানি না বা যেটা মনে কোরি তা ভুল বা বিকৃত৷ কাজেই আমাদের অগ্রাধিকারও (Priority) ওলট-পালট হোয়ে গেছে৷ প্রকৃত উদ্দেশ্যই অর্থাত্‍ তওহীদ ও তা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম আমরা ত্যাগ কোরেছি, কিন্তু গাড়ির রং, পালিশ, অর্থাত্‍ দাড়ি, টুপি, পাগড়ী, আলখাল্লা সম্বন্ধে আমরা অতি সতর্ক৷ আকীদার বিকৃতি ও তার ফলে অগ্রাধিকারের ওলট-পালটের পরিণাম এই হোয়েছে যে আল্লাহ(Allah) আমাদের ত্যাগ কোরেছেন, আমরা তাঁর গযবের ও লানতের পাত্রে পরিণত হোয়েছি৷ আমরা আজ পৃথিবীর নিকৃষ্টতম জাতিতে পরিণত হোয়েছি৷ অন্য সমস্ত জাতি, পৃথিবীর সর্বত্র আমাদের গণহত্যা কোরছে, আমাদের বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে, আমাদের পর্দানশিন মা-বোনদের উলংগ কোরে ধর্ষণ করে গর্ভবতী কোরছে, হাজারে হাজারে আমাদের মসজিদ ধ্বংস কোরে দিচ্ছে৷


বর্ত্তমানে আকীদা ও ঈমানকে একই জিনিস বোলে মনে করা হয়৷ এই ধারণা ভুল৷ প্রথমতঃ ঈমান শব্দের অর্থ হোল বিশ্বাস আর আকীদা শব্দটি এসেছে আক্‌দ শব্দ থেকে যার মানে গ্রন্থি, গিঁঠ বা গেরো৷ আমরা এই শব্দটি বিয়েতে ব্যবহার কোরি৷ আক্‌দ করানো অর্থ বিয়ে করানো, দু'টি মানুষকে গিঁঠ বা গেরো দিয়ে দেওয়া৷ ঐ আক্‌দ থেকে আকীদা৷ অর্থাত্‍ ঈমান ও আকীদা দু'টি সম্পুর্ণ আলাদা শব্দ এবং সম্পুর্ণ আলাদা অর্থ৷ দ্বিতীয়তঃ আকীদা ভুল হোলে ঈমান অর্থহীন- এ কথাতেই তো পরিষ্কার হয় যে ঐ দু'টো এক জিনিস নয়৷ একটা ভুল হোলে অন্যটি অর্থহীন অর্থাত্‍ এক নম্বর ভুল হোলে দুই নম্বর অর্থহীন- কাজেই এ দু'টো বিষয় একই বিষয় হওয়া অসম্ভব৷ অথচ এই ভুল ধারণা আজ সর্বব্যাপী৷ এটা হোয়েছে এই জন্য যে এসলামের(Islam) প্রকৃত আকীদা আজ অদৃশ্য হোয়ে গেছে, হারিয়ে গেছে, তাই ওটাকে ঈমানের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া হোয়েছে- যদিও এ দু'টো সম্পুর্ণ আলাদা ব্যাপার৷


এই দীনের সঠিক আকীদা এ রকম:


১৷ সর্বশক্তিমান আল্লাহ(Allah) তাঁর এই বিরাট বিশাল মখলুক সৃষ্টি কোরলেন এবং তা রক্ষণাবেক্ষণের ও পরিচালনার জন্য অসংখ্য মালায়েক বা ফেরেশতা সৃষ্টি কোরলেন৷ এই সৃষ্টির (মখলুকের) বা ঐ মালায়েকদের কোন স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি ছিলো না এবং নেই৷ যাকে যে কাজের জন্য আল্লাহ(Allah) সৃষ্টি কোরলেন বা যে কাজের দায়িত্ব দিলেন তারা নিখুঁতভাবে সেই কাজ কোরে চললো, যার সামান্যতম বিচ্যুতি নেই৷


২৷ আল্লাহ(Allah)র ইচ্ছা হোল এমন এক সৃষ্টি কোরতে যে সৃষ্টির স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি থাকবে, যে ইচ্ছা কোরলে আল্লাহ(Allah)র দেয়া নিয়ম ও দায়িত্ব মোতাবেক চোলবে, ইচ্ছা কোরলে তা অমান্য কোরতে পারবে৷


৩৷ তাই আল্লাহ(Allah) আদম অর্থাত্‍ মানুষ সৃষ্টি কোরলেন৷ আদমের মধ্যে আল্লাহ(Allah) তাঁর নিজের আত্মা (রূহ্) থেকে ফুঁকে দিলেন (সুরা হেজর ২৯) অর্থাত্‍ আদমের মধ্যে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি, যা আল্লাহ(Allah) ছাড়া আর কারও নেই, তা এবং আল্লাহ(Allah)র অন্যান্য সকল সিফত্ বা গুণ প্রবেশ কোরিয়ে দিলেন৷ কাজেই এই নতুন অসাধারণ সৃষ্টির নাম দিলেন আল্লাহ(Allah)র খলিফা অর্থাত্‍ প্রতিনিধি৷


৪৷ একটা বিরুদ্ধশক্তি না থাকলে কোন পরীক্ষা (Test) সম্ভব নয় তাই এবলিস বা শয়তানকে এই খলিফার বিরুদ্ধে দাড় করালেন এবং ঐ পরীক্ষার জন্য এবলিসকে মানুষের দেহ মনের মধ্যে প্রবেশ ও তাকে প্রভাবিত করার অনুমতি ও শক্তি দিলেন (সুরা বাকারা ৩০)৷


৫৷ এবলিস আল্লাহ(Allah)কে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আহবান (Challenge) কোরলো এই বোলে যে তোমার এই খলিফাকে আমি ফাসাদ অর্থাত্‍ অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার এবং সাফাকুদ্দিমা অর্থাত্‍ যুদ্ধ-বিগ্রহ রক্তপাতের মধ্যে পতিত কোরবো৷ আল্লাহ(Allah) এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে গ্রহণ কোরে বোললেন- আমি আমার প্রেরিত নবী-রসুলদের এবং হাদীদের মাধ্যমে আমার খলিফা মানুষদের জন্য এমন জীবন-ব্যবস্থা, দীন পাঠাব যে জীবন ব্যবস্থা অনুযায়ী ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাষ্ট্রীয় অর্থাত্‍ সমষ্টিগত জীবন পরিচালিত কোরলে তারা ঐ ফাসাদ এবং সাফাকুদ্দিমায় পতিত হবে না, অর্থাত্‍ ন্যায় বিচার ও শান্তিতে (এসলাম শব্দের আক্ষরিক অর্থই শান্তি) পৃথিবীতে বাস কোরতে পারবে৷ এখানে এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, এবলিস আল্লাহ(Allah)কে এ চ্যালেঞ্জ দিলো নাযে তোমার খলিফা, প্রতিনিধিকে আমি মসজিদে, গির্জায়, মন্দিরে, সিনাগগে, প্যাগোডায় যেতে বাধা দেব, তাদের হজ্ব কোরতে, রোযা রাখতে, যাকাত দিতে, দান-খয়রাত কোরতে বা অন্য যে কোন পুণ্য কাজে, সওয়াবের কাজে বাধা দেব৷ সে এই চ্যালেঞ্জ দিলো যে মানুষকে সে ফাসাদ এবং সাফাকুদ্দিমায় পতিত কোরবে৷ অন্যায়, অবিচার, অশান্তি এবং যুদ্ধ-বিগ্রহ রক্তপাত, এ দু'টোই সমষ্টিগত ব্যাপার এবং ঠিক এ দু'টোই মানুষ সৃষ্টির প্রথম থেকে আজ পর্য্যন্ত মানব জাতির সর্বপ্রধান সমস্যা হোয়ে আছে যার সমাধান আজ পর্য্যন্ত করা যায় নি৷


৬৷ মানুষ জাতিকে তাঁর দেয়া জীবন-বিধান পাঠিয়ে আল্লাহ(Allah) মানুষকে বোললেন- এবলিস, শয়তান আমাকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছে যে সে তোমাদের দিয়ে আমাকে অস্বীকার করাবে, অর্থাত্‍ আমার পাঠানো জীবন-ব্যবস্থাকে বাদ দিয়ে তোমাদের নিজেদের দিয়ে জীবন-ব্যবস্থা তৈরী কোরিয়ে সেই মত তোমাদের সমষ্টিগত, অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় জীবন পরিচালিত করাবে, যার ফলে তোমরা সেই ফাসাদ এবং সাফাকুদ্দিমায় পতিত হবে৷ তোমরা এবলিসের প্ররোচনায় না পোড়ে আমাকে একমাত্র জীবন-বিধাতা বোলে গ্রহণ করো অর্থাত্‍ নবী-রসুলদের মাধ্যমে আমি যে জীবন-বিধান পাঠিয়েছি তা গ্রহণ ও সামগ্রিক জীবনে প্রয়োগ করো, তাহোলে তোমাদের জীবন থেকে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, অর্থনৈতিক ইত্যাদি সমস্ত অন্যায়-অবিচার চোলে যাবে এবং তোমাদের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহ, রক্তপাত হবে না অর্থাত্‍ তোমরা পূর্ণ শান্তিতে (এসলামে) বাস কোরতে পারবে৷ আমি সর্বশক্তিমান- আমি ইচ্ছা কোরলেই সমস্ত মানবজাতি এবলিসকে অস্বীকার কোরে আমার পাঠানো দীনকে গ্রহণ কোরে শান্তিতে বাস কোরবে (কোর'আন- সুরা আনআম- ৩৫, সুরা ইউনুস- ১০০)৷ কিন্তু আমি তা কোরবো না কারণ আমার স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি আমি তোমাদের দিয়েছি পরীক্ষা করার জন্য যে তোমরা কি করো (কোরান- সুরা মোহাম্মদ- ৪)৷ তোমরা শয়তানের প্ররোচনায় পতিত না হোয়ে আমাকে একমাত্র জীবন-বিধাতা বোলে গ্রহণ কোরলে তার ফলস্বরূপ এ পৃথিবীতে যেমন শান্তিতে (এসলামে) বাস কোরবে, তেমনি পরজীবনেও আমি তোমাদের জান্নাতে স্থান দেবো৷ তোমাদের ব্যক্তিগত সমস্ত গোনাহ আমি মাফ কোরে দেবো কারণ তাহোলে এবলিসের চ্যালেঞ্জে তোমরা আমাকে জয়ী করালে৷ আর যদি শয়তানের প্ররোচনায় আমার দেওয়া জীবন-বিধানকে অস্বীকার কোরে নিজেরা জীবন-ব্যবস্থা তৈরী কোরে নাও তবে তার ফলস্বরূপ তোমরা সর্বপ্রকার অন্যায় অবিচার আর রক্তপাতে ডুবে তো থাকবেই তার ওপর মৃত্যুর পর পরজীবনে আমি তোমাদের জাহান্নামের কঠিন শাস্তির মধ্যে পতিত কোরবো৷ তোমাদের ব্যক্তিগত লক্ষ কোটি সওয়াব পুণ্যের দিকে আমি চেয়েও দেখবো না৷ কারণ তাহোলে এবলিসের চ্যালেঞ্জে তোমরা আমাকে পরাজিত কোরে দিলে৷ এটা আমার প্রতিশ্রুতি৷


৭৷ তাহোলে দেখা যাচ্ছে মানব জাতির সম্মুখে মাত্র দু'টি পথ৷ একটি হোচ্ছে নবী-রসুলদের মাধ্যমে পাঠানো জীবন-ব্যবস্থা গ্রহণ করা, অর্থাত্‍ আল্লাহ(Allah)কে একমাত্র এলাহ বোলে স্বীকার করা, অন্যটি হোচ্ছে ঐ জীবন-বিধান প্রত্যাখ্যান কোরে নিজেরা জীবন-ব্যবস্থা তৈরী কোরে তাই মেনে চলা৷ মানবজাতিকে এই দুই পথের একটাকে গ্রহণ কোরতে হবে, তৃতীয় কোন পথ নেই৷ আল্লাহ(Allah) বোললেন, যে বা যারা প্রথমটি গ্রহণ কোরবে এবং তা থেকে বিচু্যত হবে না তাদের কোন ব্যক্তিগত গোনাহ, পাপ তিনি দেখবেন না, তাদের জান্নাতে স্থান দেবেন৷ আর যে বা যারা নবী-রসুলদের মাধ্যমে পাঠানো জীবন-বিধান অস্বীকার কোরে নিজেরা জীবন ব্যবস্থা তৈরী কোরে নেবে তাদের ব্যক্তিগত কোন সওয়াব, পুন্য তিনি গ্রহণ কোরবেন না, তাদের জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন৷ এই যে সমষ্টিগতভাবে জীবন বিধানকে গ্রহণ ও প্রত্যাখ্যানের প্রশ্নে ব্যক্তিগত জীবনকে দাম না দেয়া, এর কারণ হোচ্ছে, সমষ্টিগতভাবে আল্লাহ(Allah)র দেয়া জীবন বিধান কার্য্যকর কোরলে সমাজ থেকে সবরকম অন্যায়-অবিচার, দুঃখ, যুদ্ধ ও রক্তপাত বিলুপ্ত হোয়ে যাবে এবং ব্যক্তিগত অন্যায় প্রায় লোপ পাবে৷ আর মানুষের নিজের তৈরী জীবন-ব্যবস্থা চালু কোরলে, ব্যক্তিগতভাবে মানুষ যতো ভালো থাকার চেষ্টা করুক না কেন সমাজ সব রকম অন্যায়, অবিচার, অশান্তি ও রক্তপাতের মধ্যে পতিত হবে৷ উদাহরণ- বর্ত্তমান সময়৷


৮৷ আল্লাহ(Allah)কে একমাত্র এলাহ অর্থাত্‍ আদেশদাতা বোলে গ্রহণ করা অর্থ জীবনের প্রতি বিভাগে, প্রতি স্তরে অর্থাত্‍ ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, অর্থনৈতিক, শিক্ষা, আইন-কানুন, দণ্ডবিধি ইত্যাদি প্রত্যেক অঙ্গনে গ্রহণ করা৷ এটাই হোল তওহীদ, সেরাতুল মুস্তাকীম, দীনুল কাইয়েমা৷ যে বা যারা এর উপর অনড় থাকবে, বিচ্যুত হবে না, তার এবং তাদের ব্যক্তিগত সমস্ত গোনাহ মাফ কোরে আল্লাহ(Allah) তাঁর জন্য জান্নাত নিশ্চিত কোরে দিয়েছেন৷
বিশ্বনবী এ কথাটি পরিষ্কার কোরে দিয়েছেন এই বোলে যে, আল্লাহ(Allah)র সাথে তাঁর বান্দার চুক্তি (Contract) এই যে, বান্দা তাঁর পক্ষ থেকে যদি এই শর্ত্ত পালন করে যে, সে আল্লাহ(Allah) ছাড়া আর কাউকে এলাহ অর্থাত্‍ বিধাতা বোলে স্বীকার কোরবে না- তবে আল্লাহ(Allah)ও তাঁর পক্ষ থেকে এই শর্ত্ত পালন কোরবেন যে, তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন [হাদীস- মুয়ায (রাঃ) থেকে বোখারী, মোসলেম(Muslim) মেশকাত]৷ এখানে অন্য কোন কাজের শর্ত্ত নেই৷ এই একটি শর্ত্ত পালন কোরলে আর কোন গোনাহই তাকে জান্নাত থেকে ফেরাতে পারবে না; এমনকি মহানবীর উল্লেখিত ব্যভিচার ও চুরির মত কবীরা গোনাহও না৷ একদিকে যেমন আল্লাহ(Allah) তাঁর সৃষ্ট বান্দার সঙ্গে এই চুক্তি কোরছেন, তেমনি এ কথাও পরিষ্কার কোরে বোলে দিচ্ছেন যে, জীবনের যে কোন অঙ্গনে, যে কোন বিভাগে তাঁর আইন অস্বীকার কোরলে অর্থাত্‍ শের্ক কোরলে তিনি তা ক্ষমা কোরবেন না, লক্ষ লক্ষ সওয়াবের কাজ কোরলেও না, সারারাত্র তাহাজ্জুদ নামায পোড়লেও না, সারা বছর রোযা কোরলেও না (কোর'আন_ সুরা নেসা ৪৮, ১১৬)৷


৯৷ আল্লাহ(Allah) তাঁর নবী-রসুলদের মাধ্যমে যুগে যুগে পৃথিবীর প্রতি স্থানে, প্রতি জনপদে তাঁর সৃষ্ট জীবন-বিধান অর্থাত্‍ দীন পাঠিয়ে দিলেন এবং মানব জাতি যখন উপযুক্ত হোল তখন সমস্ত পৃথিবী ও মানব জাতির জন্য জীবন-বিধানের শেষ সংস্করণ দিয়ে তাঁর শেষ রসুল মুহাম্মদ (দঃ) কে পাঠালেন৷ এখন কথা হোচ্ছে বিধান, সংবিধান, দীন শুধু পাঠালেই কি কাজ শেষ হোয়ে গেল? অবশ্যই নয়, কারণ এটা যদি গৃহীত না হয়, শয়তানের প্ররোচনায় যদি ঐ দীন প্রত্যাখ্যাত হয়, যদি তা প্রয়োগ ও কার্য্যকর না করা হয় তবে ঐ দীন পৃথিবীতে আসা না আসা সমান কথা৷ তাই আল্লাহ(Allah) ওটাকে প্রয়োগ ও কার্য্যকর করারও বন্দোবস্ত কোরলেন৷ দীনকে প্রয়োগ ও প্রতিষ্ঠা করার উপায়, পদ্ধতি তিনি স্থির কোরলেন জেহাদ ও কেতাল- অর্থাত্‍ সংগ্রাম ও সশস্ত্র সংগ্রাম (সুরা বাকারা-২১৬)৷ অর্থাত্‍ জেহাদকে তিনি নীতি হিসাবে নির্দিষ্ট কোরলেন৷ আল্লাহ(Allah)র সার্বভৌমত্ব, অর্থাত্‍ সর্বব্যাপী তওহীদ ও ঐ তওহীদ ভিত্তিক দীন, জীবন-ব্যবস্থা মানবজীবনে সমষ্টিগত ও ব্যক্তিগতভাবে প্রতিষ্ঠা- এই দুই হোল এই দীনের মূলমন্ত্র৷ এবং মূলমন্ত্র বোলেই তওহীদে যিনি অবিচল তার মহাপাপও (গুনাহে কবীরা) হিসাবে ধরা হবে না এবং জেহাদে যিনি প্রাণ দিয়েছেন তার তো কথাই নেই, যিনি জেহাদের অভিযানে বের হোয়ে অর্দ্ধেক রাত্রি শিবির পাহারা দিয়েছেন তারও সারা জীবনের মহাপাপ ও কোন সওয়াবের কাজ না করাকেও উপেক্ষা কোরে তাকে সরাসরি জান্নাতে স্থান দেয়া হবে [হাদীস- ইবনে আ'য়েয (রাঃ) থেকে- বায়হাকী, মেশকাত]৷ এই দুই মূলমন্ত্র বাদে এ দীনে আর যা আছে সব এই দুই-এর পরিপূরক৷ এই দুই মূলমন্ত্র যদি মূলমন্ত্র, মূলনীতি হিসাবে না থাকে তবে বাকি আর যা কিছু আছে সবই বৃথা, অর্থহীন৷ এই জন্যই যার মাধ্যমে এই দীন পৃথিবীতে এসেছে সেই বিশ্বনবী বোলেছেন- ভবিষ্যতে এমন সময় আসবে যখন মানুষের রোযা রাখা হবে না খেয়ে থাকা, উপবাস হবে, রোযা হবে না; আর গভীর রাত্রে উঠে তাহাজ্জুদ নামায পড়া ঘুম নষ্ট করা হবে, নামায হবে না [হাদীস- মেশকাত]৷


১০৷ নামায ঐ জেহাদের জন্য চরিত্র সৃষ্টির অনুশীলন (Training, Practice)৷ সংগ্রামের মাধ্যমে সমস্ত পৃথিবীতে এই জীবন-বিধানকে প্রতিষ্ঠা কোরতে যে অসাধারণ চরিত্রের মানুষ প্রয়োজন, সেই অসাধারণ মানুষের শারীরিক, চারিত্রিক ও আধ্যাত্মিক গঠনের জন্য প্রশিক্ষণ হোল নামায৷ কিন্তু উদ্দেশ্য হোল সেই সংগ্রাম৷ একটি বাসস্থানের সবচেয়ে জরুরী, সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসটি হোল ছাদ৷ ওটা না থাকলে বাসস্থান অর্থহীন৷ সোনা, হীরা-জহরত দিয়ে তৈরী কোরলেও ওটা অর্থহীন, ওতে বাস করা যাবে না; এবং ঐ ছাদকে ওপরে ধরে রাখার জন্য থাম বা খুঁটি ছাড়াও চোলবে না৷ তাই আল্লাহ(Allah)র রসুল বোলেছেন- এসলাম(Islam) (অর্থাত্‍ দীন) একটি ঘর, নামায তার থাম, খুঁটি, আর জেহাদ তার ছাদ [হাদীস- মু'য়ায (রাঃ) থেকে আহমদ, তিরমিযি, ইবনে মাজাহ, মেশকাত]৷ ছাদ না থাকলে যেমন থামের কোনও দাম নেই, প্রয়োজন নেই, তেমনি জেহাদ, সংগ্রাম না থাকলে নামাযেরও কোন দাম নেই৷


১১৷ কোন মহত্‍ বিরাট উদ্দেশ্য অর্জন কোরতে গেলে চারটি বিষয় অপরিহার্য্য৷ জেহাদ অর্থাত্‍ সংগ্রামের মাধ্যমে সমস্ত পৃথিবীতে দীন প্রতিষ্ঠার মত বিরাট বিশাল কাজে সফলকাম হোতে গেলে ঐ চারটির যে কোন একটিতে ব্যর্থতা বা ত্রুটি হোলেই আর সে কাজে সফলতা আসবে না৷ সে কয়টি হোচ্ছে_
(ক) উদ্দেশ্য, লক্ষ্য সম্বন্ধে পরিষ্কার ধারণা অর্থাত্‍ আকীদা৷ এ লক্ষ্য থেকে যদি বিচ্যুতি আসে বা ঐ লক্ষ্য সামনে থেকে অদৃশ্য হোয়ে যায়, হারিয়ে যায় বা বিকৃত হোয়ে যায় তবে ঐখানেই সব শেষ হোয়ে গেলো৷


(খ) ঐক্য:- ঐক্যই শক্তি৷ যদি ঐক্য না থাকে তবে পরাজয়, ব্যর্থতা অবশ্যম্ভাবী৷ তাই আল্লাহ(Allah) তাঁর কোর'আনে ঐক্য সম্বন্ধে বার বার সাবধান কোরে দিয়েছেন৷ মতভেদ হোচ্ছে ঐক্যভঙ্গের প্রথম সোপান, তাই মহানবী মতভেদকে কুফর বোলে আখ্যায়িত কোরেছেন- এমন কি কোর'আনের আয়াতের অর্থ নিয়ে মতভেদ ও তর্ককে কুফর বোলেছেন এবং সমাধান হিসেবে বোলেছেন- মতভেদের কোন প্রশ্ন উঠলেই চুপ হোয়ে যাবে এবং ঐ প্রশ্ন আল্লাহ(Allah)র হাতে ছেড়ে দেবে [হাদীস- আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) থেকে মোসলেম(Muslim), মেশকাত]৷ নিজেদের মধ্যে মারামারি অর্থাত্‍ অনৈক্যকে তিনি পরিষ্কার ভাষায় কুফর বোলে আখ্যায়িত কোরেছেন (বিদায় হজ্বের ভাষণ)৷


(গ) প্রশিক্ষণ:- উদ্দেশ্য (ক) ও ঐক্য (খ) সুদৃঢ় হোলেও লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে না যদি জাতির যোদ্ধাদের চরিত্র ঐ মহাকঠিন লক্ষ্য অর্জনের জন্য যথেষ্ট না হয়৷ সেই মহান চরিত্র গঠনের প্রশিক্ষণ হোচ্ছে নামায৷ দিনে পাঁচবার ঐক্যের, সময়নিষ্ঠতার (Punctuality), নিয়মানুবর্ত্তিতার, শৃংখলার ও বহু রকমের চারিত্রিক, শারীরিক ও আধ্যাত্মিক গঠনের প্রশিক্ষণ৷ এ প্রশিক্ষণের আকিদা (উদ্দেশ্য) হোচ্ছে সর্বাত্মক সংগ্রাম কোরে তওহীদকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা কোরে এবলিসের চ্যালেঞ্জে আল্লাহ(Allah)কে জয়ী করানো৷ এ উদ্দেশ্য ভুলে যেয়ে যদি শুধু প্রশিক্ষণই নেয়া হয় বা প্রশিক্ষণকেই উদ্দেশ্য হিসাবে নেয়া হয় তবে তা সম্পুর্ণ অর্থহীন৷


(ঘ) দীন নিয়ে বাড়াবাড়ি না করা৷ যেখানে মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যই হোচ্ছে দীনকে মানব জীবনে প্রতিষ্ঠিত করা, সেখানে সেই প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ছেড়ে দিয়ে খুঁটিনাটি জিনিস নিয়ে ব্যস্ত হোয়ে পোড়লে সবই বরবাদ হোয়ে গেল৷ এই জন্যই দীনের খুঁটিনাটি ব্যাপারে বিশ্বনবীকে প্রশ্ন কোরলে তিনি রেগে আগুন হোয়ে যেতেন৷ যেখানে প্রকৃত তওহীদ ও সংগ্রামই কোন মানুষকে বিনা বিচারে জান্নাতে নিয়ে যাবার জন্য যথেষ্ট- সেখানে সেই প্রকৃত তওহীদ ও সংগ্রাম বাদ দিয়ে হাজারো খুঁটিনাটি কাজের সওয়াব কামানোর চেষ্টা সম্পুর্ণ নিরর্থক৷ সওয়াব কামানোর যতো কিছু এই দীনে আছে সে সবকিছুরই পূর্বশর্ত্ত (Precondition) হোচ্ছে প্রকৃত তওহীদ-ঐ প্রকৃত তওহীদকে বাদ দিয়ে অর্থাত্‍ ওটাকে ব্যক্তি জীবনে সীমাবদ্ধ রেখে, লক্ষ সওয়াবের কাজ এক ফোটাও সওয়াব লেখাবে না৷ ঐ প্রকৃত তওহীদ আজ পৃথিবীর কোথাও নেই৷ দীনের খুঁটিনাটি মসলা-মাসায়েলে জড়িয়ে পোড়লে মানুষ ঐ সহজ-সরল মূল তওহীদ অর্থাত্‍ সেরাতুল মুস্তাকীম থেকে বিচ্ছিন্ন হোয়ে যায়৷ তাই মহানবী অতি প্রয়োজনীয় মূল সংক্রান্ত প্রশ্ন ছাড়া তাকে অতিরিক্ত কোন প্রশ্ন কোরলেই অত্যন্ত রেগে যেতেন, বোলতেন- আমি তোমাদের যতোটুকু কোরতে বোলেছি ততটুকু কোরতে চেষ্টা করো, তার বেশী আমাকে প্রশ্ন কোর না৷ তোমাদের পূর্ববর্ত্তী নবীদেরও তাদের উম্মাহর লোকজন এই রকম খুঁটিনাটি মসলা-মাসায়েল নিয়ে প্রশ্ন কোরতো এবং তারপর তাই নিয়ে নিজেদের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি হোয়ে তারা ধ্বংস হোয়ে গেছে (হাদীস)৷ আমরা আমাদের নবীর সতর্কবাণী শুনি নি, তাঁর রাগেরও তোয়াক্কা কোরি নি৷ আমরা মূল লক্ষ্য ছেড়ে দিয়ে দীনের মসলা-মাসায়েলের এমন চুলচেরা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ কোরেছি যে পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোন জাতি তা কোরতে পারে নি৷ পরিণামও তাই হোয়েছে যা আমাদের নবী ভয় কোরেছিলেন - আমরা বাহাত্তর ফেরকায় বিচ্ছিন্ন হোয়ে ধ্বংস হোয়ে গেছি৷


১২৷ ব্যক্তি ও সমষ্টি:- আল্লাহ(Allah)র খলিফা মানুষ তৈরীর বিপক্ষে মালায়েকেরা অর্থাত্‍ ফেরেশতারা যে যুক্তি দেখিয়েছিলো তা হোল এই যে- হে আল্লাহ(Allah) তোমার এই সৃষ্টি, এই খলিফা পৃথিবীতে ফাসাদ (অন্যায়, অবিচার, অশান্তি) ও সাফাকুদ্দিমা (মারামারি, রক্তপাত, যুদ্ধ-বিগ্রহ) কোরবে৷ মালায়েকেরা যে দুটি শব্দ ব্যবহার কোরলো সে দু'টোই সমষ্টিগত, ব্যক্তিগত নয়৷ অর্থাত্‍ মূল প্রশ্ন, মূল সমস্যাই সমষ্টিগত৷ এ মূল সমস্যার সমাধান আল্লাহ(Allah) দিলেন- দীনুল এসলাম(Islam), এটাও সমষ্টিগত৷ ব্যক্তির স্থান এখানে নগণ্য৷ ব্যক্তির মূল্য শুধু এটুকুই যে ব্যক্তি দিয়েই সমাজ, জাতি গঠিত, ব্যক্তি জাতির একটি একক (Unit), এর বেশী নয়৷ সমষ্টির এই একক হিসাবে ব্যক্তির যেমন মূল্য আছে, তেমনি সমষ্টির বাইরে এর কোন দাম নেই৷ উদাহরণ হিসাবে একটি সামরিক বাহিনীকে নেয়া যায়৷ একটি একটি সৈনিক নিয়েই বাহিনীটি গঠিত৷ ব্যক্তিগতভাবে প্রতিটি সৈন্য যতো ভালো যোদ্ধা হবে, বাহিনীর জন্য তত ভালো৷ সেনাপতি চেষ্টা কোরবেন যাতে তার বাহিনীর প্রতিটি সৈনিক দক্ষ যোদ্ধা হয়, যদি তিনি দেখেন যে কয়েকটি সৈনিক তেমন ভালো কোরছে না, তবে স্বভাবতই তিনি তাদের প্রশিক্ষণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেবেন, তাদের শিক্ষার ওপর বিশেষ চাপ দেবেন৷ এমনকি যদি তিনি একটি মাত্র সৈন্যকেও দেখেন যে তার রাইফেলের গুলি লক্ষ্যস্থলে লাগছে না, তাহোলে তাকে আরো ভালো কোরে শেখাবেন কেমন কোরে গুলি কোরলে লক্ষ্যস্থলে লাগবে, অভ্যাস করার জন্য আরও গুলি সরবরাহ কোরবেন৷ কিন্তু ঐ বাহিনীর বাইরে ঐ একক সৈন্যের কোন মূল্য নেই৷ ঐ সামরিক বাহিনী যদি ঐক্যবদ্ধ, শৃংখলাবদ্ধ হোয়ে, সেনাপতির পরিকল্পনা অনুযায়ী যুদ্ধ না কোরে সৈন্যরা এককভাবে যুদ্ধ শুরু করে তবে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই ঐ বাহিনী শত্রুর আক্রমণের সম্মুখে অবশ্যই ধ্বংস হোয়ে যাবে৷ প্রতিটি সৈন্য যদি অতি দক্ষ যোদ্ধাও হয় তবুও তাই হবে৷


সুতরাং এ দীনেও ব্যক্তির মূল্য ঐ সেনাবাহিনীর একটি সৈনিকের চেয়ে বেশী নয়৷ যে পাঁচটি স্তম্ভের (ফরদে আইন) ওপর এই দীন স্থাপিত তার চারটিই সমষ্টিগত, জাতিগত৷ তওহীদ, (ফরদ) নামায, যাকাত, হজ্ব এই চারটিই সমষ্টিগত, জাতিগত; শুধুমাত্র রোযা ব্যক্তিগত৷ বর্ত্তমানে বিকৃত, বিপরীতমুখী যে দীন আমরা মেনে চোলেছি তাতে তওহীদকে সমষ্টিগতভাবে বুঝা অনেকের পক্ষে অসুবিধাকর হোতে পারে৷ তাদের বুঝার জন্য সংক্ষেপে বোলছি- আল্লাহ(Allah) যে তওহীদকে স্বীকৃতি দেবেন, গ্রহণ কোরবেন, সে তওহীদ সর্বব্যাপী, মানুষের জীবনের সর্বস্তরের সমস্ত অঙ্গনের তওহীদ, তার ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, আইন, দণ্ডবিধি, শিক্ষা, অর্থনীতি ইত্যাদি সমস্ত কিছুর উপর তওহীদ; অর্থাত্‍ সমষ্টিগত তওহীদ৷ জীবনের ক্ষুদ্রতম কোন বিষয়ও তা থেকে বাদ থাকবে না৷ এর নিচে কোন তওহীদ সেই সর্বশক্তিমান স্রষ্টা গ্রহণ কোরবেন না৷ বর্ত্তমানে আমাদের তওহীদ জীবনের শুধু ব্যক্তিগত ভাগে ছাড়া আর কোথাও নেই৷ এই আংশিক ও ক্ষুদ্র তওহীদ আল্লাহ(Allah)র পক্ষে গ্রহণ করার কোন প্রশ্নই ওঠে না৷ প্রকৃত তওহীদ সমষ্টিগত, জাতিগত৷ আল্লাহ(Allah) কোর'আনে বার বার বোলেছেন- আসমান ও যমিনের সার্বভৌমত্ব আল্লাহ(Allah)র৷ তিনি মানব জাতির ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, অর্থনৈতিক জীবন পরিচালনার জন্য যে সংবিধান (কোর'আন) ও ঐ সংবিধানের ওপর ভিত্তি কোরে যে আইন-কানুন, দণ্ডবিধি দিলেন সেটার সার্বভৌমত্ব হোল আল্লাহ(Allah)র৷ বৃহত্তর ও সমষ্টিগত জীবনে গায়রুল্লাহর সার্বভৌমত্বকে স্বীকার ও গ্রহণ কোরে নিয়ে শুধুমাত্র ব্যক্তিজীবনের সার্বভৌমত্বটুকু আমরা আল্লাহ(Allah)র জন্য রেখেছি৷ সেই জাল্লে-জালাল, আযিজুল জব্বার, স্রষ্টা ভিক্ষুক নন যে তিনি এই ক্ষুদ্র তওহীদ গ্রহণ কোরবেন৷ তাছাড়া ওটা তওহীদই নয়, ওটা শের্ক ও কুফর৷ রাজতন্ত্রের সার্বভৌমত্ব হোচ্ছে রাজার, বাদশাহ্র; ফ্যাসিবাদের সার্বভৌমত্ব হোচ্ছে ডিক্টেটরের অর্থাত্‍ একনায়কের; সমাজতন্ত্র ও কমিউনিজমের সার্বভৌমত্ব হোচ্ছে সমাজের একটি বিশেষ শ্রেণীর ডিক্টেটরশিপ; গণতন্ত্রের সার্বভৌমত্ব হোচ্ছে জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠতার; আর এই দীনুল এসলামে(Islam)র সার্বভৌমত্ব হোচ্ছে- স্বয়ং আল্লাহ(Allah)র, এতে কোথাও কোন আপোষের স্থান নেই৷ একথা যার ঈমান নয়, সে মোসলেম(Muslim)ও নয়, মো'মেনও নয় উম্মতে মোহাম্মদী তো দুরের কথা৷ তারা সারা বছর রোযা রাখলেও, সারারাত্রি নামায পোড়লেও নয়৷ এই তওহীদই হোচ্ছে সেরাতুল মুস্তাকীম- সহজ, সরল সোজা পথ৷ মরুভুমির বালির ওপর সোজা একটি লাইন টেনে বিশ্বনবী বোললেন- এই হোচ্ছে সেরাতুল মুস্তাকীম, তারপর সেই লাইন থেকে ডাইনে, বামে আড়াআড়ি কতকগুলি লাইন টেনে বোললেন- শয়তান এমনি কোরে মানুষকে এই সেরাতুল মুস্তাকীম থেকে বিচ্যুত কোরতে ডাকবে৷ এই বোলে তিনি কোর'আন থেকে পোড়লেন- (আল্লাহ(Allah) বোলেছেন) "নিশ্চয়ই এই হোচ্ছে আমার সেরাতুল মুস্তাকীম৷ কাজেই এই পথে চলো, অন্য পথ অনুসরণ কোরো না; (কোরলে) তা তোমাদের তাঁর এই মহান পথ থেকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন কোরে দেবে (সুরা আন'আম ১৫৩)৷ ঐ সেরাতুল মুস্তাকীম, সহজ-সরল পথ হোচ্ছে প্রকৃত তওহীদ, জীবনের কোন বিভাগে, কোন অঙ্গনে এক আল্লাহ(Allah) ছাড়া আর কাউকে মানি না এবং কারো এবাদত কোরি না- এই সহজ সরল কথা৷ আমরা এই সেরাতুল মুস্তাকীমে গত কয়েকশ' বছর থেকেই নেই৷ আমরা যে দীনকে আঁকড়ে ধোরে আছি, যেটাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে মেনে চোলতে চেষ্টা কোরছি সেটা বহু মযহাবে, ফেরকায় বিচ্ছিন্ন একটি অতি জটিল পথ, সেটা আর যাই হোক আল্লাহ(Allah)র দেয়া সেরাতুল মুস্তাকীম, সহজ সরল পথ নয়৷ সেরাতুল মুস্তাকিমের সহজ-সরল লাইন থেকে যে আড়াআড়ি লাইনগুলো মহানবী টেনে ছিলেন এবং বোলেছিলেন এগুলো শয়তানের লাইন, আমরা বিভিন্ন মযহাব, ফেরকার ও তরিকার ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন লোকেরা সেই লাইনগুলিতে আছি৷


তাহোলে দেখা যাচ্ছে- সর্বাত্মক সংগ্রামের মাধ্যমে সমস্ত পৃথিবীতে আল্লাহ(Allah)র তওহীদ প্রতিষ্ঠা করার মত বিরাট, বিশাল ও কঠিন লক্ষ্য অর্জনের জন্য যে চারটি অত্যাবশ্যক শর্ত্ত পেছনে উল্লেখ কোরে এসেছি, আজ আমাদের মধ্যে তার একটিও নেই৷ প্রথম শর্ত্ত আকীদা শুধু বিকৃত নয়, বর্ত্তমানে আকীদাই নেই, ঈমানকেই আকীদা বোলে নেয়া হোচ্ছে৷ দ্বিতীয় শর্ত্ত ঐক্যের কথা না বলাই ভালো; প্রায় পঞ্চাশটির মত ভৌগলিক রাষ্ট্র, তেহাত্তরটি মযহাব-ফেরকায়, বহু তরিকায় ও নানানভাবে বিভক্ত ও বিচ্ছিন্ন হোয়ে আছি এবং প্রায়ই নিজেদের মধ্যে মারামারি কোরছি৷ তৃতীয় শর্ত্ত শৃংখলার তো প্রশ্নই ওঠে না, কারণ যেখানে ঐক্যই নেই সেখানে শৃংখলার অস্তিত্ব কোথা থেকে আসবে? তারপর চতুর্থ শর্ত্ত দীন নিয়ে বাড়াবাড়ি ব্যাপারে, যে বাড়াবাড়ির চিহ্ন দেখলে আল্লাহ(Allah)র রসুল রেগে লাল হোয়ে যেতেন, বোলতেন- দীন নিয়ে বাড়াবাড়ি কোরে তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মাহগুলি ধ্বংস হোয়ে গেছে, সেই বাড়াবাড়িকে আমরা অতি সওয়াবের কাজ মোনে কোরে দারুণ উত্‍সাহের সাথে কোরে যাচ্ছি৷ চূড়ান্ত তাক্ওয়ার সাথে জাহান্নামের পথে চোলছি আর জান্নাতে স্থান পাব মোনে কোরে আহাম্মকের স্বর্গে বাস কোরছি৷ একথা বুঝবার মত বোধ শক্তিও আমাদের নেই যে আজ সমস্ত পৃথিবীতে এবলিস জিতে আছে৷ যে ফাসাদ আর সাফাকুদ্দিমার চ্যালেঞ্জ সে আল্লাহ(Allah)কে দিয়েছিলো তা দিয়ে আজ পৃথিবী ভরপুর৷ আর আল্লাহ(Allah) যে সুবিচার, ন্যায় ও শান্তির (এসলাম(Islam)) কথা বোলেছিলেন তা আজ পৃথিবীর কোথাও নেই৷ যে উম্মাহ, জাতির ওপর আল্লাহ(Allah)কে জয়ী করাবার দায়িত্ব বিশ্বনবী দিয়ে গিয়েছেন, সে জাতি তার ব্যর্থতার বোঝা কাঁধে নিয়ে দাড়ি লম্বা কোরে টুপি পাগড়ী আলখাল্লা পরে মসজিদে দৌঁড়াচ্ছে৷


১৩৷ মো'মেন, মোসলেম(Muslim) ও উম্মতে মোহাম্মদীর মধ্যে তফাত্‍:- বর্ত্তমানের বিকৃত এসলামে(Islam) আমরা ঐ তিনটি বিষয়কে একই বিষয় মনে কোরি৷ প্রকৃত পক্ষে তা নয়, ঐ তিনটি আলাদা আলাদা বিষয়৷


(ক) মো'মেন: শব্দটা এসেছে ঈমান অর্থাত্‍ বিশ্বাস থেকে৷ যে বা যারা আল্লাহ(Allah) আছেন, এবং তিনিই সমস্ত কিছু সৃষ্টি কোরেছেন একথা সন্দেহের লেশমাত্র না কোরে বিশ্বাস কোরে, আল্লাহ(Allah)কে জীবনের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আইন-কানুন, দণ্ডবিধি, শিক্ষা ইত্যাদি এক কথায় জীবনের প্রতি বিভাগে, প্রতি অঙ্গনে একমাত্র প্রভু এবং বিধাতা (বিধাতা শব্দের অর্থ বিধানদাতা অর্থাত্‍ আইনদাতা) বোলে বিশ্বাস করে, জীবনের কোন বিভাগে অন্য কারো কথা মানাকে শের্‌ক বোলে বিশ্বাস করে, সে বা তারা মো'মেন৷ যে বা যারা এ বিশ্বাস থেকে একটুও বিচ্যুত হবে না, জীবনের শেষ পর্য্যন্ত এ বিশ্বাসের ওপর অটল থাকবে তাকে আল্লাহ(Allah) ব্যক্তিগত জীবনের ছোট বড় সমস্ত গোনাহ মাফ কোরে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন বোলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন (বোখারী, মোসলেম(Muslim)সহ বহু হাদীস)৷ এ ব্যাপারে আল্লাহ(Allah) তাঁর কোর'আনে প্রকৃত মো'মেন কে এবং কারা তার পরিষ্কার সংজ্ঞা অর্থাত্‍ যাকে বলে Definition তা দিয়ে দিয়েছেন৷ সেটা হোল সুরা হুজরাতের ১৫ নং আয়াত৷ এখানে আল্লাহ(Allah) আমাদের জানিয়ে দিচ্ছেন যে প্রকৃত মো'মেন হোল শুধু তারা যারা আল্লাহ(Allah) ও তাঁর রসুলের ওপর ঈমান আনে, তার পর আর কোনদিন তাতে কোন সন্দেহ করে না (মৃত্যু পর্য্যন্ত) এবং (এই ঈমান ভিত্তিক দীনকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার জন্য) নিজেদের প্রাণ ও পার্থিব সম্পদ দিয়ে জেহাদ (সর্বাত্মক প্রচেষ্টা, সংগ্রাম) করে৷ আল্লাহ(Allah)র দেয়া প্রকৃত মো'মেনের এই সংজ্ঞাটা ঠিক ভাবে বুঝতে গেলে আমাদের বুঝতে হবে "যারা আল্লাহ(Allah)র ওপর ঈমানে"র অর্থ শুধু আল্লাহ(Allah)র অস্তিত্বে ও একত্বের ওপর ঈমান নয়, তাঁর উলুহিয়াতের ওপর ঈমান (লা এলাহা এল্লা আল্লাহ(Allah)), অর্থাত্‍ আল্লাহ(Allah) ছাড়া কোন আদেশদাতা, হুকুমদাতা নেই এই বিশ্বাস করা অর্থাত্‍ তওহীদ৷ এই সঙ্গে রসুলের কথাও আল্লাহ(Allah) সংযোগ কোরে দিয়েছেন কারণ রসুল শুধু আল্লাহ(Allah)র কথাই আমাদের জানিয়ে দেন- তিনি নিজে থেকে কোন কথা ইচ্ছামত যোগ করেন না (কোর'আন- সুরা নজম ৩, ৪)৷ আল্লাহ(Allah)র দেয়া মো'মেনের এই সংজ্ঞার দ্বিতীয় ভাগ হোল প্রাণ ও সম্পদ দিয়ে জেহাদ করা৷ কি জন্য জেহাদ করা? আল্লাহ(Allah)র তওহীদের, সার্বভৌমত্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত দীনটি যদি মানুষের জীবনে প্রতিষ্ঠা, কার্য্যকর না হয় তবে ওটা অর্থহীন৷ কাজেই আল্লাহ(Allah)র তওহীদ ভিত্তিক ঐ দীনুল হক, সত্য জীবন-ব্যবস্থাটা মানব জীবনে প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা, জেহাদ৷ এই দু'টি একত্রে প্রকৃত মো'মেনের সংজ্ঞা৷ এই দু'টি যার বা যাদের মধ্যে আছে, আল্লাহ(Allah)র দেয়া সংজ্ঞা মোতাবেক সে বা তারা প্রকৃত মো'মেন৷ এই সংজ্ঞায় আল্লাহ(Allah) বলেন নাই যে, যে নামায পড়বে সে মো'মেন, বা যে রোযা রাখবে সে মো'মেন, বা যে হজ্ব কোরবে, বা অন্য যে কোন পূণ্য, সওয়াবের কাজ কোরবে সে মো'মেন৷ এ সংজ্ঞায় শুধু আল্লাহ(Allah) ছাড়া আর সমস্ত রকম প্রভূত্ব অস্বিকার ও আল্লাহ(Allah)র পথে জেহাদ৷ এর ঠিক বিপরীতে তিনি এ সতর্কবাণীও বোলেছেন যে এ তওহীদে যে বা যারা থাকবে না, যারা তাদের ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগত জীবনের যে কোন একটি ভাগে, অঙ্গনে আল্লাহ(Allah) ছাড়া অন্য কারো বা নিজেদের তৈরী আইন-কানুন, রীতি-নীতি গ্রহণ বা প্রয়োগ কোরবে তাকে বা তাদের মাফ না করার অঙ্গীকার কোরেছেন (কোর'আন- সুরা নেসা ৪৮)৷


(খ) মোসলেম(Muslim): শব্দটি এসেছে সালাম থেকে৷ কোন কিছু সসম্মানে গ্রহণ কোরে নেয়াকে বলা হয় তসলিম কোরে নেয়া৷ যারা আল্লাহ(Allah)র দেয়া দীনুল এসলাম(Islam)কে সসম্মানে গ্রহণ কোরে নিয়ে নিজেদের জীবনে প্রতিষ্ঠা ও প্রয়োগ কোরলো, তারা মোসলেম(Muslim)৷ কোন লোক বা জনসমষ্টি আল্লাহ(Allah)কে ও তাঁর দেয়া জীবন-ব্যবস্থাকে সত্যিকার-ভাবে বিশ্বাস না কোরেও মোসলেম(Muslim) হোতে পারে৷ সমষ্টিগতভাবে একটি জনসমষ্টি বা জাতি আল্লাহ(Allah)র দেয়া দীনকে তাদের জীবনে প্রয়োগ কোরলে কিছু অবিশ্বাসী লোক সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিরুদ্ধে যাওয়ার অসুবিধা ও বিপদ চিন্তা কোরে প্রকাশ্যে দীনকে তসলিম কোরে নিলে এরা মোসলেম(Muslim) হোলো, কিন্তু মো'মেন হোলো না৷ এদের সম্বন্ধেই আল্লাহ(Allah) কোর'আনে তাঁর রসুলকে বোলেছেন_ 'আরবরা বলে- আমরা বিশ্বাস কোরেছি (ঈমান এনেছি)৷ তাদের বলো- তোমরা বিশ্বাস করো নি বরং বলো আমরা তসলিম কোরেছি (বশ্যতা স্বীকার কোরেছি); কারণ ঈমান তোমাদের হৃদয়ে প্রবেশ করে নি (কোর'আন- সুরা হুজরাত ১৪)৷ আল্লাহ(Allah)র কথা যে কত সত্য তা তাঁর রসুলের এন্তেকালের সঙ্গে সঙ্গেই বুঝা গেল৷ রসুলুল্লাহর এন্তেকালের সময় সমস্ত আরব মোসলেম(Muslim) হোয়ে গিয়েছিলো৷ অর্থাত্‍ আল্লাহ(Allah)র আইনের শাসনের অধীনে এসে গিয়েছিলো৷ মহানবীর ওফাতের সঙ্গে সঙ্গে ঐ মোসলেম(Muslim) আরবের একটা বিরাট অংশ আল্লাহ(Allah)র দীনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ কোরেছিলো এটা ইতিহাস৷ যারা বিদ্রোহ কোরেছিলো তারা মোসলেম(Muslim) হোয়েছিলো, মো'মেন হয় নি৷ আবু বকরের (রাঃ) নেতৃত্বে ঐ বিদ্রোহের বিরুদ্ধে প্রাণপণ যুদ্ধ কোরে সেদিন যারা এসলাম(Islam)কে রক্ষা কোরেছিলেন, তারা ছিলেন মো'মেন৷ কোর'আনের বিভিন্ন স্থানে, মো'মেন ও মোসলেম(Muslim)দের আল্লাহ(Allah) আলাদাভাবে সম্বোধন করা ছাড়াও মো'মেন কারা তা তিনি সুরা হুজরাতের ১৫নং আয়াতে পরিষ্কার কোরে দিয়েছেন যা একটু আগেই উল্লেখ কোরেছি৷ আল্লাহ(Allah)র দেয়া মো'মেনের সংজ্ঞায় দু'টি শর্ত্ত দেয়া হোলো; একটি ঈমান, অর্থাত্‍ তওহীদ, অন্যটি ঐ তওহীদ প্রতিষ্ঠার জেহাদ৷ বর্ত্তমানে মোসলেম(Muslim) বোলে পরিচিত জাতিটিতে এ দু'টি শর্ত্তের একটিও নেই৷ আকীদার বিকৃতিতে আমরা জীবনের সমস্ত অঙ্গন থেকে তওহীদ অর্থাত্‍ আল্লাহ(Allah)র সার্বভৌমত্বকে বাদ দিয়ে শুধু মাত্র ব্যক্তি জীবনে সংকুচিত কোরে রেখেছি- যা প্রকৃতপক্ষে শের্ক৷ আর জেহাদকে তো উত্‍খাতই কোরে দিয়েছি এবং তার পরও নিজেদের মো'মেন ও মোসলেম(Muslim) বোলে আত্মপ্রসাদ লাভ কোরছি৷
গ) উম্মতে মোহাম্মদী: আল্লাহ(Allah) এবলিসের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ কোরে একদিকে তাকে তাঁর খলিফা মানবের দেহ-মনের মধ্যে প্রবেশ কোরে তাকে তওহীদ অর্থাত্‍ সেরাতুল মুস্তাকীম থেকে বিচ্যুত করার চেষ্টার অনুমতি দিলেন৷ অন্যদিকে মানবের জন্যে জীবন-ব্যবস্থার, দীন তৈরী কোরে তা তাঁর রসুলদের মাধ্যমে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিলেন এবং তাঁর রসুলদের ওপর আল্লাহ(Allah) দায়িত্ব অর্পণ কোরলেন তাদের মাধ্যমে পাঠানো দীনকে প্রতিষ্ঠার৷ কোন রসুলের পক্ষেই এটা সম্ভব ছিলো না যে তিনি একা একা ঐ বিরাট দায়িত্ব পালন কোরবেন৷ কাজেই ঐ রসুলদের যারা বিশ্বাস কোরেছে, আল্লাহ(Allah) প্রেরিত বোলে গ্রহণ কোরেছে তাদের উপর অবশ্য কর্ত্তব্য (ফরদ) হোয়ে গেছে ঐ রসুলদের কাজে সাহায্য করা, রসুলদের উপর আল্লাহ(Allah)র দেয়া দায়িত্ব পূর্ণ কোরতে জান-মাল উত্‍সর্গ করা৷ যুগে যুগে এমনি ভাবে বহু রসুল পাঠাবার পর তিনি পাঠালেন তাঁর শেষ রসুল হযরত মুহাম্মদকে (দঃ)৷ একে পাঠালেন সমস্ত মানব জাতির জন্য এবং পৃথিবীর ও মানুষের বাকী আয়ু কালের জন্য, অর্থাত্‍ শেষ রসুল হিসাবে৷ একে পাঠাবার উদ্দেশ্য কি তা তিনি বোলে দিলেন তাঁর কোর'আনে- তিনি (আল্লাহ) তাঁর রসুলকে হেদায়াত (পথ নির্দেশনা) ও সত্যদীন (জীবন-বিধান) দিয়ে পাঠিয়েছেন এই জন্য যে তিনি এটাকে অন্য সমস্ত দীনের ওপর জয়ী করেন (কোর'আন- সুরা ফাতাহ ২৮, সুরা তওবা ৩৩, সুরা সফ ৯)৷ কারণ এই তওহীদ ভিত্তি করা দীনকে জয়ী না কোরতে পারলে পৃথিবীময় অত্যাচার, অবিচার, অশান্তি, যুদ্ধ ও রক্তপাত চোলতেই থাকবে, অর্থাত্‍ এবলিস জয়ী থাকবে৷ কি উপায়ে কি প্রক্রিয়ায় এ কাজ কোরতে হবে তাঁর নীতিও আল্লাহ(Allah) তাঁর নবীকে নির্দিষ্ট কোরে দিলেন- সেটা হোল জেহাদ ও কেতাল, সংগ্রাম ও সশস্ত্র সংগ্রাম৷ আল্লাহ(Allah)র ঐ নীতি ও নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর রসুল ঘোষণা কোরলেন- আমি (আল্লাহ(Allah) কর্ত্তৃক) আদিষ্ট হোয়েছি পৃথিবীর মানুষের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম (কেতাল) চালিয়ে যেতে যে পর্য্যন্ত না তারা স্বীকার কোরে নেয় যে আল্লাহ(Allah) ছাড়া কোন এলাহ নেই ও মোহাম্মদ তাঁর প্রেরিত, নামায পড়ে ও যাকাত দেয় [হাদীস- আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বোখারী]৷
এখন প্রশ্ন হোলো- শয়তানের বুদ্ধি-পরামর্শে মানুষের নিজেদের তৈরী প্রচলিত সমস্ত জীবন-ব্যবস্থা, দীনগুলিকে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে পরাজিত কোরে সত্যদীনকে প্রতিষ্ঠিত করার মত বিরাট কাজ কি আল্লাহ(Allah)র রসুলের একার পক্ষে এবং এক জীবনে সম্ভব? সাধারণ জ্ঞানই একথা বোঝার জন্য যথেষ্ট যে এটা অসম্ভব৷ তাই আল্লাহ(Allah)র রসুল তাঁর পৃথিবী থেকে চোলে যাবার পরও যাতে ঐ লক্ষ্য অর্জনের সংগ্রাম চালু থাকে সেজন্য একটি উম্মাহ, একটি জাতি গঠন কোরলেন- যার নাম উম্মতে মোহাম্মদী৷ তিনি যতোদিন এই পৃথিবীতে রোইলেন ততোদিন তিনি নিজে তাদের ভবিষ্যত কাজের জন্য প্রশিক্ষণ দিলেন৷ প্রথম দিকের জেহাদগুলিতে নিজে নেতৃত্ব দিলেন এবং পরে নতুন সামরিক নেতৃত্ব সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এক একবার এক এক জন সম্ভাবনাময় সাহাবাকে নেতৃত্ব দিয়ে পাঠাতে লাগলেন৷ এমনি কোরে মাত্র দশ বছরের মধ্যে আটাত্তরটি যুদ্ধ সংঘটিত কোরে, একটি দুর্দ্ধর্ষ যোদ্ধা জাতি গঠন কোরে তিনি তাঁর প্রেরক প্রভুর কাছে চোলে গেলেন৷ যে অপরাজেয় যোদ্ধা জাতিটি তিনি গঠন কোরে গেলেন সে জাতির আকীদার মধ্যে তিনি সুস্পষ্টভাবে গেঁথে দিয়ে গেলেন যে তাঁর ওপর আল্লাহ(Allah)র দেয়া দায়িত্ব-সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে সমস্ত পৃথিবীতে এই দীন প্রতিষ্ঠা করা, তাঁর অবর্ত্তমানে তাঁর গঠিত এই উম্মাহর ওপর অর্পিত হোয়েছে৷ তাঁর ঐ উম্মাহ যে, ঐ দায়িত্ব সম্বন্ধে কতখানি সচেতন ছিলো তার প্রমাণ পাওয়া যায় বিশ্বনবীর এন্তেকালের পর তাঁর উম্মাহর ইতিহাস থেকে৷ সে ইতিহাস হোল এই যে, নেতার পৃথিবী থেকে বিদায় নেবার সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত জাতিটি অস্ত্র হাতে স্বদেশ (আরব) থেকে বের হোয়ে উত্তাল ঢেউয়ের মত পৃথিবীতে ছড়িয়ে পোড়লো এবং সর্বদিক দিয়ে তাদের চেয়ে বহুগুণ শক্তিশালী দুইটি বিশ্বশক্তিকে সামরিকভাবে পরাজিত কোরে তদানিন্তন অর্দ্ধেক পৃথিবীতে আল্লাহ(Allah)র সার্বভৌমত্ব অর্থাত্‍ তওহীদ ভিত্তিক সত্যদীন প্রতিষ্ঠা কোরলো৷ ঐ উম্মাহর শতকরা আশি জনেরও বেশীর কবর তাদের স্বদেশ আরবের বাইরে হোয়েছে৷
তাঁর নিজের ওপর আল্লাহ(Allah)র দেয়া দায়িত্ব তাঁর উম্মাহর ওপর অর্পণ কোরে বিশ্বনবী বোলেছিলেন- যে বা যারা আমার সুন্নাহ ত্যাগ কোরবে সে বা তারা আমার কেউ নয়, আমি তাদের কেউ নই [হাদীস- বুখারী, মোসলেম(Muslim), মেশকাত]৷ আমার কেউ নয় অর্থ অবশ্যই উম্মতে মোহাম্মদী নয়৷ কোন্ সুন্নাহ ত্যাগ কোরলে উম্মতে মোহাম্মদী থেকে বহিষ্কার? সেটা হোচ্ছে অন্যান্য সমস্ত জীবন-ব্যবস্থা, দীনগুলিকে সামরিকভাবে পরাজিত কোরে সার্বিক জীবনে তওহীদ অর্থাত্‍ সত্যদীনকে প্রতিষ্ঠার জেহাদ৷ 'আমার সুন্নাহ' বোলে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত অভ্যাস, পছন্দ-অপছন্দ, পোষাক-পরিচ্ছদ বোঝান নি৷ পরবর্তীতে সশস্ত্র সংগ্রাম, জেহাদ ছেড়ে রাজত্ব করার সময় প্রকৃত সুন্নাহর বিকল্প হিসাবে ঐগুলিকে সুন্নাহ বোলে চালু করা হোয়েছে ও আজও তাই চোলছে৷ উম্মতে মোহাম্মদীর সংজ্ঞা হোল - আল্লাহ(Allah) যে কাজের দায়িত্ব দিয়ে তাঁর রসুলকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন ও যে দায়িত্ব তিনি তাঁর গঠিত জাতির ওপর অর্পণ কোরে চোলে গিয়েছেন, যে বা যারা সেই কাজ চালিয়ে যাবে শুধু তারাই উম্মতে মোহাম্মদী৷ যারা সেই কাজ অর্থাত্‍ জেহাদ চালিয়ে যাবে না তারা যতো বড় মুসুল্লিই হন, যতো বড় মুত্তাকি, আলেম, দরবেশ, পীর-মাশায়েখ হোন না কেন- উম্মতে মোহাম্মদী নন৷ হাশরের দিন তাঁর উম্মত হিসাবে রসুলের শাফায়াতের ওপর তাদের কোন দাবী থাকবে না৷


১৪৷ এই দীনের প্রধান এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাগ বা অংশ হোল দুইটি:- একটি হোল দীন নিজেই৷ এটা হোল ফরদে আইন, অবশ্য কর্ত্তব্য, কোরতেই হবে অর্থাত্‍ ঈমান (তওহীদ), সালাত (নামায), যাকাত, হজ্ব ও সওম (রোযা)৷ আর দ্বিতীয়টি হোল ঐ দীনকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য জেহাদ, সর্বাত্মক প্রচেষ্টা, সংগ্রাম৷ দীন যদি মানুষের সমষ্টিগত জীবনে প্রতিষ্ঠাই না হয় তবে দীনের আর কোন দাম নেই৷ এই জন্যই আল্লাহ(Allah) রসুলের মাধ্যমে দীন দিয়েই ক্ষান্ত হন নি, তিনি তাঁর রসুলকে আদেশ দিয়েছেন যুদ্ধ কোরে সেই দীন সমস্ত পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা কোরতে৷ আল্লাহ(Allah)র সেই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতেই তাঁর রসুল বোলেছেন- আমি আদিষ্ট হোয়েছি সশস্ত্র সংগ্রাম (কেতাল) চালিয়ে যেতে যে পর্য্যন্ত না সমস্ত পৃথিবীর মানুষ লা এলাহা এল্লাল্লাহ, মোহাম্মাদুর রসুলুল্ল্লাহ একথা স্বীকার কোরে নেয়৷ যে বা যারা দীনের শুধু প্রথম অংশটুকু পালন কোরলো অর্থাত্‍ ফরদে আইন পালন কোরলো সে জান্নাতে স্থান পাবার অধিকার পেয়ে গেলো একথা ঠিক, কারণ আল্লাহ(Allah) ও তাঁর রসুল বারবার বোলেছেন যে মৃতু্য পর্য্যন্ত তওহীদে (সর্বব্যাপী তওহীদ) অটল থাকবে তার আর কোন ভয় নেই, কারণ তার হাতে জান্নাতের চাবী এসে গেছে৷ কিন্তু যেহেতু ঐ তওহীদ ও দীন সমস্ত মানব জাতির ওপর কার্য্যকর না করা গেলে এবলিসের চ্যালেঞ্জে আল্লাহ(Allah) হেরে যাবেন, সেহেতু ঐ জেহাদও অবশ্য কর্ত্তব্য, ফরদ৷ সেজন্যই আল্লাহ(Allah)র রসুলকে যখন প্রশ্ন করা হোয়েছিলো, এই দীনে সবচেয়ে উত্তম কাজ (আমল) কি? তখন তিনি জবাবে বোলেছিলেন, আল্লাহ(Allah) ও তাঁর রসুলের ওপর ঈমান৷ আবার তাকে প্রশ্ন করা হোলো, তারপর কোন কাজ? তিনি জবাব দিলেন- আল্লাহ(Allah)র পথে জেহাদ৷ আবার প্রশ্ন করা হোল, তারপর কোন আমল? তিনি জবাব দিলেন_ মকবুল হজ্ব্ব [হাদীস- আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে মোসলেম(Muslim), বোখারী]৷ তওহীদের ওপর ঈমানের পরই শ্রেষ্ঠ আমল ঐ তওহীদ প্রতিষ্ঠার জেহাদ বোলেই তার পুরস্কার আল্লাহ(Allah) রেখেছেন এসলামে(Islam)র শ্রেষ্ঠ পুরস্কার ও সম্মান, যে পুরস্কার ও সম্মান কয়েকটি বৈশিষ্ট্যে আল্লাহ(Allah)র নবীদেরও ছাড়িয়ে গেছে৷ বিশ্বনবী বোলেছেন- যে লোক (এখানে যে লোক বোলতে অবশ্যই ঈমানদার, মো'মেনদের বুঝাচ্ছেন) জেহাদ কোরলো না এবং জেহাদ করার সংকল্পও কোরলো না, সে মোনাফেকের একটি স্তরে অবস্থান অবস্থায় মারা গেলো [হাদীস- আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে মোসলেম(Muslim), মেশকাত]৷ মোনে রাখতে হবে মোনাফেকদের স্থান হবে জাহান্নামের (আগুনের) সবচেয়ে নিচে এবং সবচেয়ে ভয়ঙ্কর শাস্তির স্থানে (কোর'আন- সুরা নেসা ১৪৫)৷ অর্থাত্‍ এ ঈমানদারের সমস্ত জীবনের ঐ এবাদতের কোন দাম রোইল না৷ বিশ্বনবী আরও বোলেছেন- জান্নাতের দরজাগুলি তলোয়ারের ছায়ার নিচে অবস্থিত [হাদীস- আবু মুসা (রাঃ) থেকে মোসলেম(Muslim), মেশকাত]৷ অর্থাত্‍ যে মো'মেনের (ঈমানদারের) তলোয়ারের অর্থাত্‍ অস্ত্রের সঙ্গে সম্পর্ক নেই তিনি কোন দরজা দিয়েই জান্নাতে প্রবেশ কোরতে পারবেন না৷ এ ব্যাপারে লিখতে গেলে শেষ নেই৷
আমি আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে এইটুকু বুঝি যে, যদি কিছু সংখ্যক লোক নিয়ে একটি সমিতি গঠন করা হয় এবং ঐ সমিতির গঠনতন্ত্রে, সংবিধানে (Constitution) যদি একথা লেখা হয় যে, এই সমিতির যে সভ্য, মেম্বার বিশ্ব অলিম্পিকে সাঁতারের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে স্বর্ণপদক জিতে আনতে পারবে, সেই সভ্যকে ঐ সমিতির পক্ষ থেকে সর্বশ্র্রেষ্ঠ পুরস্কার দেয়া হবে, সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মান প্রদর্শন করা হবে, তবে ঐ সমিতিটিকে সাঁতারের সমিতি ছাড়া অন্য কোন কিছুর সমিতি বলা যাবে কি? ওটাকে ফুটবলের বা তাস খেলার বা ক্রিকেট খেলার সমিতি বলা যাবে কি? অবশ্যই তা বলা যাবে না এবং অবশ্যই বোলতে হবে যে ওটা সাঁতারের সমিতি, সাঁতারুদের সমিতি৷ যারা সাঁতার জানে না তাদের ঐ সমিতিতে প্রবেশাধিকার নেই, ওটার সভ্য, মেম্বার হতে গেলে অবশ্যই সাঁতার শিখতে হবে৷ তাহোলে যে সমিতির (এসলাম, উম্মতে মোহাম্মদী) সংবিধানে, গঠনতন্ত্রে (কোর'আনে) একথা পরিষ্কার ভাষায় লেখা আছে যে, ঐ সমিতির যে সভ্য, মেম্বার যুদ্ধে অংশ নিলে বা যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ দিলে তাকে সমিতির পক্ষ থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার (জীবনের ছোট বড় সমস্ত গোনাহ, পাপ বিনা প্রশ্নে, বিনা বিচারে- ধুয়ে মুছে ফেলে, মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সরাসরি জান্নাতে প্রবেশ করানো, এমন কি কবরের প্রশ্নোত্তর পর্য্যন্ত না করানো) এবং সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মান (তাদের মৃত বলাকে নিষিদ্ধ করা) দেয়া হবে সেই সমিতিটিকে যুদ্ধের ও যোদ্ধার সমিতি ছাড়া অন্য কোন সমিতি বলা যাবে কি? শুধু তাই নয়, যে যোদ্ধা নয়, যুদ্ধ জানে না তাকে ঐ সমিতির সভ্যপদ দেয়া যাবে কি? তাই একথা যুক্তিসঙ্গত যে, যে যোদ্ধা নয়, যুদ্ধ জানে না, তাঁর এই দীনুল এসলাম(Islam) সমিতির প্রাথমিক সভ্যপদেরও (Primary membership) যোগ্যতা নেই, ভালো সভ্য হওয়াতো দুরের কথা৷


তাই যে মানুষটি শুধু মানব জাতির মুকুটমণি নন, মানবজাতির প্রথম সারির মানুষ, নবী-রসুলদেরও (আঃ) নেতা, তাকে বোলতে শুনি- আহা! আমি আকুল ভাবে কামনা কোরি আমি যেন আল্লাহ(Allah)র রাস্তায় জেহাদে শহীদ হই, তারপর আমাকে জীবিত করা হয়, আমি আবার শহীদ হই, আবার আমাকে জীবিত করা হয় এবং আবার শহীদ হই, আবার আমাকে জীবিত করা হয় এবং আবার শহীদ হই [হাদীস- আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বোখারী, মোসলেম(Muslim), মেশকাত]৷ হাশরের বিচার শেষ হওয়ার পর যাদের জান্নাতে যাবার ও যাদের জাহান্নামে যাবার, তাদের যাবার পর আল্লাহ(Allah) জান্নাতীদের জিজ্ঞাসা কোরবেন- তোমাদের মধ্যে কেউ আবার পৃথিবীতে ফিরে যেতে রাজী আছ? স্বভাবতঃই সবাই অস্বীকার করবেন, কারণ জান্নাতের সেই অতুলনীয় সুখ, সেই অকল্পনীয় আনন্দ উপভোগ ছেড়ে কে আবার পৃথিবীর দুঃখ কষ্টের মধ্যে ফিরতে চাইবে? অন্যদের বাদ দিন, এমন কি আল্লাহ(Allah)র নবী-রসুলরাও (আঃ) পৃথিবীতে ফিরতে অস্বীকার করবেন৷ শুধু শহীদরা উঠে দাঁড়াবেন- বোলবেন আল্লাহ(Allah)! আমরা আবার পৃথিবীতে ফিরে যেতে রাজি আছি তোমার রাস্তায় জেহাদ কোরে দশবার শহীদ হবার জন্য [হাদীস- আনাস (রাঃ) থেকে বোখারী, মোসলেম(Muslim), মেশকাত]৷ চিন্তায় আসে না, ধারণায় আসে না কী সে অসম্ভব পুরস্কার যা পেয়ে মানুষ আবার এই দুঃখ কষ্টময় পৃথিবীতে ফিরে আসতে চায়, আবার আল্লাহ(Allah)র জন্য, তাঁর দীন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাণ উত্‍সর্গ কোরতে; আর আল্লাহ(Allah)র সর্বশ্রেষ্ঠ রসুল, যার জন্য জান্নাতে "মাকামে মাহমুদা" নির্দিষ্ট করা আছে, তিনি আকুল হোয়ে যান শহীদ হবার জন্য৷ আর আজ বিকৃত আকীদায় আমরা তওহীদের পর এসলামে(Islam)র সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ, আমলকে সম্পুর্ণরূপে ত্যাগ কোরে নানা রকম খুঁটি-নাটি এবাদত কোরে ভাবছি আমরা অতি উত্‍কৃষ্ট মোসলেম(Muslim) হোয়েছি৷ ঐ তওহীদ ও জেহাদ ত্যাগ করার শাস্তি হিসাবে আল্লাহ(Allah) যে প্রায় সমস্ত মোসলেম(Muslim) জাতিটিকে দু'শো বছরের জন্য ইউরোপীয় খ্রীস্টানদের দাস বানিয়ে শাস্তি দিলেন এবং আজও যে পৃথিবীময় অন্যান্য জাতি দিয়ে এই জাতিকে পরাজিত, লাঞ্ছিত, অপমানিত করাচ্ছেন, হত্যা করাচ্ছেন, আমাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়াচ্ছেন, আমাদের মেয়েদের ধর্ষণ কোরে গর্ভর্বতী করাচ্ছেন, এ সত্য বুঝার জ্ঞানও আমাদের নেই৷ আকীদার বিকৃতিতে এ কথা বুঝার শক্তিও নেই যে আজ আমাদের নামাজ রোজা হজ্ব, যাকাত কিছুই আল্লাহ(Allah) গ্রহণ কোরছেন না৷


১৫৷ তাক্ওয়া ও হেদায়াহ:- দীনুল এসলামে(Islam)র উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্বন্ধে বর্ত্তমানে আমাদের আকীদা যেমন বিকৃত ও ভুল, তেমনি তাক্ওয়া ও হেদায়াহ সম্বন্ধেও আমাদের ধারণা ভুল৷ কোন দুষ্ট প্রকৃতির গোনাহগার লোককে যদি উপদেশ দিয়ে মদ খাওয়া ছাড়ানো যায়, চুরি-ডাকাতি ছাড়ানো যায়, তাকে নামাযী বানানো যায়, রোযা রাখানো যায় তবে আমরা বলি- লোকটা হেদায়াত হোয়েছে৷ ভুল বলি৷ কারণ আসলে সে হেদায়াত হয় নি, মুত্তাকী হোয়েছে৷ তাক্ওয়া এবং হেদায়াহ দু'টি সম্পুর্ণ ভিন্ন বিষয়৷ তাক্ওয়া হোচ্ছে সাবধানে, সতর্কভাবে জীবনের পথ চলা৷ খারাপ কাজ থেকে বেঁচে থেকে ভালো কাজ কোরে যাওয়াই হোচ্ছে তাক্ওয়া, পাপ, গোনাহ থেকে বেঁচে সওয়াব, পুণ্যের কাজ কোরে জীবনের পথ চলা হোচ্ছে তাক্ওয়া৷ কোর'আনের ঐ শব্দকে বাংলায় অনুবাদ করা হোয়েছে 'খোদাভীতি' দিয়ে এবং ইংরাজীতে Fear of God দিয়ে৷ আল্লাহ(Allah)কে ভয় না কোরলে পাপ-পূণ্য বেছে চলার প্রশ্ন ওঠে না, কাজেই সে দিক দিয়ে এ শব্দ দু'টি চলে, কিন্তু তাক্ওয়ার পূর্ণ অর্থ প্রকাশ হয় না৷ কোর'আনের অন্যতম প্রখ্যাত ইংরাজী অনুবাদক মোহম্মদ মারমাডিউক পিকথল তাক্ওয়ার অনুবাদ কোরেছেন Mindful of duty to Allah অর্থাৎ; "আল্লাহ(Allah)র প্রতি কর্ত্তব্য সম্বন্ধে সচেতনতা" বোলে৷ এটাও আংশিক ভাব প্রকাশ করে মাত্র৷ সংক্ষেপে, আল্লাহ(Allah) ন্যায়-অন্যায়ের পাপ-পুণ্যের যে মাপকাঠি মানুষের জন্য নির্দ্ধারিত কোরে দিয়েছেন সেই মাপকাঠি সম্বন্ধে সতর্কতা ও সচেতনতা নিয়ে জীবনের পথ চলার নাম তাক্ওয়া৷ আর হেদায়াহ হোচ্ছে আল্লাহ(Allah) রসুল যে পথ প্রদর্শন কোরেছেন, যে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন, সেই পথে, সেই দিকে চলা৷


তফাত্‍টা লক্ষ্য কোরতে হবে- একটা হোচ্ছে কোন নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থানের দিকে পথ চলা (হেদায়াহ), অন্যটি হোচ্ছে পথ চলার সময় সাবধানে, সতর্কতার সাথে পথ চলা, যাতে পা গর্ত্তে না পড়ে, কাঁদায় পা না পিছলায়, কাঁটায়, ময়লায় পা না পড়ে (তাক্ওয়া) কিম্বা অসতর্ক, অসাবধানে পথ চলা৷ আল্লাহ(Allah) যে পথে চোলতে আদেশ দিচ্ছেন সেটা হোল সেরাতুল মুস্তাকীম- সহজ, সরল পথ, জীবনের সর্বস্তরে, সর্ব অঙ্গনে, সর্ব বিভাগে এক আল্লাহ(Allah) ছাড়া আর কারো আইন-কানুন, নীতি নির্দেশ অস্বীকার করা এবং তাকে ছাড়া আর কারো উপাসনা না করা- এক কথায় তওহীদ; এই সহজ সোজা কথা৷ আর ঐ পথের, সেরাতুল মুস্তাকীমের লক্ষ্য হোল সর্বাত্মক সংগ্রামের মাধ্যমে ঐ তওহীদকে সমস্ত পৃথিবীতে মানব জীবনে প্রয়োগ ও কার্য্যকরী কোরে সুবিচার ও শান্তি (এসলাম) প্রতিষ্ঠা করা৷ কোর'আনের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহ(Allah) তাক্ওয়া ও হেদায়েতের পার্থক্যও দেখিয়ে দিয়েছেন৷ কোর'আনের শুরুতেই তিনি বোলেছেন, এই বই সন্দেহাতীত; এটা মুত্তাকীদের (সাবধানে, সতর্কতার সাথে পথ চলার পথিকদের) জন্য হেদায়াহ (সঠিক পথ প্রদর্শন, সঠিক দিক নির্দেশনা) (কোর'আন- বাকারা ২)৷ পরিষ্কার দু'টো আলাদা বিষয় হোয়ে গেলো একটি তাক্ওয়া, অন্যটি হেদায়াহ, একটি সাবধানে পথ চলা, অন্যটি সঠিক পথে চলা৷ আল্লাহ(Allah) তাঁর রসুলকে বোলেছেন আমি তোমাকে সেরাতুল মুস্তাকিমে হেদায়াত কোরেছি (কোর'আন- ফাতাহ ২)৷ অন্যত্র তিনি তাঁর নবীকে বোলছেন- তিনি (আল্লাহ) কি তোমাকে হেদায়াত করেন নি (কোর'আন- দোহা ৭)? বর্ত্তমানের বিকৃত আকীদায় মুত্তাকী হওয়া মানেই যদি হেদায়াত হওয়া হয় তবে বিশ্বনবীকে আবার হেদায়াত করার প্রয়োজন কি? নবুয়াত পাবার আগেও যার গোনাহ ছিলো না, যার চেয়ে বড় মুত্তাকী আর কেউ নেই, তাকে হেদায়াত করার প্রয়োজন কি?


আল্লাহ(Allah) রসুলের দেয়া দিক-নির্দেশনা (হেদায়াত) আজ এই জাতির সম্মুখ থেকে অদৃশ্য হোয়ে গেছে, এই জাতি এখন ঐ দিক-নির্দেশনার ঠিক বিপরীতদিকে চোলছে, তাই হেদায়াহ আর তাক্ওয়ার অর্থ আমাদের কাছে এক অর্থ হোয়ে গেছে৷ আল্লাহ(Allah)র দেখানো পথে, সঠিক পথে অর্থাত্‍ সেরাতুল মুস্তাকীমে দু'ভাবে চলা যায়৷ তাক্ওয়ার সাথেও চলা যায়, তাক্ওয়া বাদ দিয়েও চলা যায়৷ পথ যদি সঠিক থাকে, দিক-নির্দেশনা, গন্তব্যস্থান যদি ঠিক থাকে তবে তাক্ওয়াহীন ভাবে চোললেও মানুষ তার গন্তব্যস্থানে পৌঁছবে, রাস্তায় পা পিছলে আছাড় খেয়ে গায়ে, কাপড়ে কাঁদামাটি মেখেও সে তার গন্তব্যস্থানে, জান্নাতে পৌঁছবে৷ কিন্তু ঐ সঠিক পথে যদি সে না থাকে তবে অতি সতর্কর্তার সাথে পথ চোললেও, আছাড় না খেলেও, কাপড়ে, পায়ে কোন ময়লা না লাগলেও সে তার গন্তব্যস্থানে পৌঁছতে পারবে না, সে পৌঁছবে জাহান্নামে৷ আল্লাহ(Allah)র রসুল যখন আবু যরকে (রাঃ) বোলছেন- হে আবু যর! যে লোক মৃত্যু পর্য্যন্ত তওহীদে অটল থাকবে সে লোক ব্যাভিচার কোরলেও, চুরি কোরলেও জান্নাতে যাবে [হাদীস- আবু যর (রাঃ) থেকে বোখারী, মোসলেম(Muslim), মেশকাত], তখন তিনি ঠিক এই কথাই বুঝাচ্ছিলেন- ঐ ব্যভিচারী, চোর তাক্ওয়ায় নেই, কিন্তু হেদায়াতে অর্থাত্‍ সেরাতুল মুস্তাকীম- সহজ সোজা রাস্তায় অর্থাত্‍ তওহীদে আছে৷ তারপর লক্ষ্য করুন সেই ঘটনাটির দিকে- একজন লোকের জানাযার নামায পড়ার জন্য লোকজন সমবেত হোলে রসুলুল্লাহ সেখানে এলেন৷ ওমর (রাঃ) বিন খাত্তাব বোললেন- ইয়া রসুলাল্লাহ! আপনি এর জানাযার নামায পড়াবেন না৷ কারণ জিজ্ঞাসা করায় তিনি বোললেন, ঐ লোকটি অত্যন্ত খারাপ প্রকৃতির দুষ্কৃতিকারী লোক ছিলেন৷ শুনে বিশ্বনবী সমবেত জনতার দিকে চেয়ে জিজ্ঞাসা কোরলেন- তোমাদের মধ্যে কেউ এই লোকটিকে কখনও এসলামে(Islam)র কোন কাজ কোরতে দেখেছো? একজন লোক বোললেন- ইয়া রসুলাল্লাহ! আমি একে একবার আল্লাহ(Allah)র রাস্তায় (জেহাদে) একরাত্রি (অন্য একটি হাদীসে অর্দ্ধেক রাত্রি) পাহারা দিতে দেখেছি৷ এই কথা শুনে মহানবী ঐ মৃত ব্যক্তির জানাযার নামায পড়ালেন, তাকে দাফন করার পর, (তাকে উদ্দেশ্য কোরে) বোললেন তোমার সঙ্গীরা মোনে কোরছে তুমি আগুনের অধিবাসী (জাহান্নামী), কিন্তু আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি তুমি জান্নাতের অধিবাসী [হাদীস- ইবনে আয়াজ (রাঃ) থেকে বায়হাকী, মেশকাত]৷


এসলামে(Islam)র প্রকৃত আকীদা বুঝতে গেলে এই দুইটি হাদীস গভীর ভাবে চিন্তা কোরতে হবে৷ ওমর (রঃ) যখন রসুলাল্লাহকে বোললেন যে ঐ মৃত লোকটি অত্যন্ত খারাপ লোক ছিলেন তখন সমস্ত লোকজন থেকে কেউ ও কথার আপত্তি কোরলেন না, অর্থাত্‍ ওমরের (রাঃ) ঐ কথায় সবাই একমত৷ একমত হবার কথাই- কারণ হাদীসের ব্যাখ্যাকারীগণ বোলেছেন ঐ মৃত লোকটি ডাকাত ছিলেন- বণিকদের কাফেলা আক্রমণ কোরে লুটপাট কোরতেন৷ তারপর মহানবী যখন সমবেত লোকজনকে জিজ্ঞাসা কোরলেন তাদের মধ্যে কেউ ঐ মৃত লোকটিকে কোনদিন এসলামে(Islam)র কোন কাজ কোরতে দেখেছেন কিনা তখন ঐ একমাত্র লোক ছাড়া আর কেউ বোলতে পারলেন না যে তাকে কোনদিন এসলামে(Islam)র কোন কাজ কোরতে দেখেছেন৷ বিশ্বনবী বোলেছিলেন এসলামে(Islam)র কোন কাজ, শব্দ ব্যবহার কোরেছিলেন- আমলেল এসলাম(Islam)৷ এসলামে(Islam)র আমল কি? অবশ্যই নামায, যাকাত, হজ্ব, রোযা ইত্যাদি আরও বহুবিধ ফরয, ওয়াজেব, সুন্নত, নফল ইত্যাদি৷ কেউ তাকে কোনদিন এসলামে(Islam)র কোন কাজ কোরতে দেখেন নি অর্থাত্‍ কেউ তাকে ওগুলির কিছুই কোরতে দেখেন নি৷ একটি দুশ্চরিত্র ঘৃণিত ডাকাত যাকে কেউ কোনদিন কোন এবাদত করতে দেখে নি, শুধু মাত্র জেহাদে যেয়ে অর্দ্ধেক রাত্রি মোসলেম(Muslim) শিবির পাহারা দেয়ার জন্যই আল্লাহ(Allah)র রসুল প্রকাশ্যে ঘোষণা দিলেন যে ঐ লোক জান্নাতী এবং তিনি স্বয়ং সে ব্যাপারে সাক্ষী৷ কেন? এই জন্য যে, যারা পৃথিবীতে তওহীদ প্রতিষ্ঠা কোরে মানব জীবনের সমস্ত অন্যায় অবিচার মুছে ফেলে, আল্লাহ(Allah)কে এবলিসের চ্যালেঞ্জে জয়ী করাবার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামে নেমেছিলেন, ঐ লোকটি তাদের সঙ্গে ছিলেন এবং অর্দ্ধেক রাত্রি ঐ যোদ্ধাদের শিবির পাহারা দেওয়ার মত সামান্য কাজ কোরেছিলেন৷


আমি পেছনে বোলে এসেছি- এসলামে(Islam)র সর্বপ্রধান ভাগ ও সর্বশ্রেষ্ঠ কর্ত্তব্য দু'টি৷ একটি হোল সর্বব্যাপী তওহীদ, দ্বিতীয়টি হোল ঐ তওহীদ মানব জীবনে প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম৷ কাজেই যারা ঐ দুইটি কাজ কোরেছেন তাদের জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম হোয়ে গেছে, জান্নাত নির্দিষ্ট হোয়ে গেছে৷ তাদের ব্যক্তিগত গোনাহ যতোই থাকুক, এমন কি এই পৃথিবী পূর্ণ কোরে দেয়া যায় এত পাপ থাকলেও আল্লাহ(Allah) বোলেছেন তিনি তাকে জান্নাতে দেবেন (হাদীস- তিরমিজি)৷ এই আকীদা এবং বর্ত্তমানে প্রচলিত এসলামে(Islam)র আকীদা সম্পুর্ণ বিপরীতমুখী আকীদা৷ তাই আজ আমরা একটি অভিশপ্ত (মালাউন) জাতির মত পৃথিবীর অন্যান্য সমস্ত জাতি দিয়ে পরাজিত হোচ্ছি, অপমানিত, লান্ছিত হোচ্ছি, তারা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে আমাদের হাজারে হাজারে হত্যা কোরছে, আমাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে, আমাদের মেয়েদের নিয়ে যাচ্ছে, তাদের ধর্ষণ কোরে গর্ভবতী কোরছে, আমরা কিছুই কোরতে পারছি না৷ সংখ্যায় একশ' কোটির বেশী হোয়েও কিছুই কোরতে পারছি না, পোড়ে পোড়ে মার খাচ্ছি৷ আমাদের সাহায্যের জন্য কেউ নেই৷ আল্লাহ(Allah)ও আমাদের সাহায্যের জন্য একটি আঙ্গুল তুলছেন না, কারণ আমরা তাঁর দেয়া দিক নির্দেশনার ঠিক বিপরীত দিকে চোলেছি, তওহীদ ও জেহাদ ত্যাগ কোরেছি, তাঁর চোখে আমরা আর মো'মেনও নই, মোসলেম(Muslim)ও নই, তাঁর রসুলের উম্মত তো দুরের কথা৷ আর তার চেয়েও করুণ ও হাস্যকর হোল এই যে তবুও আমরা অতি নিষ্ঠার সাথে নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত ও তারাবি, তাহাজ্জুদ, দাড়ি, টুপি, মেছওয়াক নিয়ে ব্যস্ত আছি এবং ভাবছি আমরা অতি উত্‍কৃষ্ট মো'মেন তো বটেই, অতি উত্‍কৃষ্ট উম্মতে মোহাম্মদীও৷ আকীদা বিকৃত ও বিপরীত হোয়ে যাবার ফলে এ কথা বুঝছি না যে এই সব এবাদতের পূর্বশর্ত্ত (Pre-condition) হোচ্ছে হেদায়াহ, তওহীদ; বুঝছি না যে ঐ হেদায়াতে নেই বোলে, ঐ হেদায়াতের বিপরীত দিকে চোলছি বোলে আমাদের হাজারো এবাদত হাজারো তাক্ওয়া নিষ্ফল, তা কোন কাজে আসবে না, আল্লাহ(Allah)র কাছে কবুল হবে না৷ এই দুনিয়াতে আল্লাহ(Allah) যেমন খ্রীস্টান, ইহুদী, হিন্দু, বৌদ্ধর (পৃথিবীর প্রধান সব ক'টি জাতি) হাতে আমাদের পরাজিত, অপমান, অপদস্থ, লাঞ্ছিত কোরছেন, ঠিক তেমনি আখেরাতেও তাঁর মালায়েকদের দিয়ে শাস্তি দেওয়াবেন এবং সে শাস্তি হবে এই দুনিয়ার শাস্তির চেয়ে বহুগুণ সাংঘাতিক, বহুগুণ ভয়ঙ্কর৷
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×