এলাহী ভরসা
মাদলা- 01/04/2018
প্রিয় বন্ধু রশিদ,
কেমন আছ? নিশ্চয় তোমার ঐশ্বরিক উপহার তোমার প্রিয় সন্তান, স্ত্রী- পরিবার পরিজন লইয়া সুস্থ ও সুখী আছ। আমি ও ভাল আছি। পরসমাচার এই যে, কত দিন হইল তোমার সহিত আমার পত্রালাপ হয় না, তা মনে পড়ে নে। যদি ও আমাদের মধ্যে প্রযুক্তির আশির্বাদে যোগাযোগ হয় তথাপি কথপোকথন (Chat) হয় না। কার্যত (Virtually) আমাদের মধ্যে মাথায় মথায় টোকর লাগিলেও নয়! জুকার বার্গ ভাই (সমবয়সী কিনা) যে প্লাটফরম সারা বিশ্বের মানুষদের জন্য তৈয়ার করিয়াছে- তাহাতে সামাজিক যোগাযোগ হয়ত রক্ষা হয়, প্রাকৃত প্রেম ভালবাসা রক্ষা পায় কি না-তাতে আমি সন্দিহান। তাই এই প্রেমাবেগ, বন্ধুত্বে ঠাসা অকৃত্রিম চিঠি খানি তোমাকে লিখিতেছি। জানি না তোমার পাড়িবার বা উত্তর দিবার সময় হইবে কি না । আমি জানি তোমার বড় বড় মানুষের বড় বড় অংকের হিসাব কষিতে কষিতে দিবা-রাত্র, সপ্তাহ জীবন থেকে বিলিন হইয়া যাইতেছে কিন্তু তোমার সঞ্চয়ের অংক বড় হয় নাই এ আমি হলফ করিয়া বলিতে পারি।
কি আশ্চার্য্য ! আমি তোমার ক্যাশ বাকশে হাত দিয়া ফেলিলাম- একেবারে অধিকার চর্চা। দুঃখিত বন্ধু!
তোমাকে দুইটা হেতুতে এই সাদা কাগজের বুকে কাল কালির আচঁড় কাটিতেছি। পহেলা নং হেতু- এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগে পৃথিবীর মানুষ একবারেই চিঠি লেখা ভুলিয়া যাইতেছে- বাঙালী হিসেবে আমার তো অনেক আগে থেকেই “সাহেব ভদ্র” হইয়া উঠিবার চেষ্টা করিয়া আসিতেছি; তাহার সদুত্তর ইতিহাসেই সুন্দর করিয়া মুদ্রিত রহিয়াছে। সেই বাংলা ভাষায় চিঠি লিখিবার ‘চল’ কে ধরিয়া রাখিতেই তোমাকে লেখা ।
দ্বিতীয় নং হেতুটি হইল- না, তোমার কাছে টাকা পয়সা ধার চাহিব না, তোমার থেকে অনেক ধার লইয়াছি- সময় টা ছিল ২০০০ সাল, আমার এখনও দিবালোকের মত স্পস্ট মনে আছে, আমার যখন এস এস সি পরীক্ষার ফরম ফিলাপের টাকা কম পরিয়াছিল বিদ্যালয়ের কসাই প্রশাসন যখন কিছুতেই ছাড় দিতে রাজি হইতেছিল না- তুমি তখন পাঁচ (৫০০/=) শত টাকার একটা কড়কড়ে নোট দিয়ে বলিয়া ছিলে-“এখন ফিলাপ কর পরে দিয়া দিস”। পরে তা তোমাকে দিয়াছি কিনা আমার মনে নেই ! শিক্ষকতা পেশায় ঢোকার পরও তোমার থেকে তিন হাজার (৩০০০/=) টাকা ধার লইয়াছিলাম। সেটা অবশ্য বছর দুই পরে পরিশোধ করেছিলাম।
বন্ধুত্বের সম্পর্কে বন্ধু, বন্ধুর কাছে কৃতজ্ঞ হয় কি না, হওয়া উচিৎ কিনা আমি বিচার করিতে পারিব না, তবে আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ! ঐ সকল ঋণে আমি তোমার কাছে অনেক ঋণী বন্ধু।
দ্বিতীয় হেতুরে কথা কিন্তু এখনও প্রকাশ করিই নি। আমার বড্ড খায়েশ হইয়াছে আমার কিছু কবিতা- অকবিতা জড়ো হইয়াছে-আমার ব্যাগে, কাগজে, ড্রয়ারে সেগুলোকে একটি গ্রন্থে গ্রন্থবদ্ধ করিতে চাহিতেছি। তোমার স্বরণাপন্ন হইলাম এই হেতুতেই। গত বছরে ২১ শে বই মেলায় তেমার একখানা উপন্যাস গ্রন্থ “প্রান্তিক” প্রকাশিত হইয়াছিল- সেই সুবাদে তুমি প্রকাশক ও প্রকাশনা বিষয়টির অ,আ জানো- এদিকে আমি তো এ ব্যাপারে প্রি-প্রাইমারীর শিশু। আমাকে পুস্তক প্রকাশের ব্যাপারে তোমার সাহায্য করিতে হইবে। এই ব্যাপারে সবিস্তার জানাইলে বাধিত হইব।
অনেক কথা বকি থাকিয়া গেল অন্য একদিন আরেক চিঠিতে সময় করিয়া বলিব। ভাবিকে আমার প্রার্থনা পৌছাইয়া দিও, তোমার বাচ্চটিকে আমার আদর দিও।
আজ আর নয় -
দেখা হবে ফেসবুকে, কথা হবে চ্যাটে (Chat)।
ইতি
তোমার
কৈশরের পাগলাটে বন্ধু
রফিক
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৭:১৪