১৯৯৫ সালের কথা। আমি তখন স্কুলে পড়ি। উপজেলা পর্যায়ে প্রতিবছর স্কুল ফুটবল লীগ হতো (এখন হয় কিনা জানি না )। প্রথম সাময়িক পরিক্ষা শেষ হবার পর জুন মাসের দিকে এই খেলা শুরু হতো । এজন্য আমাদের কাছে এই লিগের আর এক নাম ছিল "জুনের খলা !!!" । আমাদের স্কুল প্রতি বছর এই লীগে অংশ গ্রহন করতো এবং শোচনীয় ভাবে হারতো। আমরা প্রাইমারী ক্লাস থেকে এই ফলাফল দেখে আসতেছি। সবাই মেনে নিছে। খেলায় জয় না , অংশগ্রহন করাটাই বড় কথা - আমাদের ফুটবল দলের মনোভাছিল অনেকটা এই রকম। তবে আমাদের দলে দুই একজন খলোয়ার ছিলেন যার রিতিমতো নাম করা। তার মধ্যে ভাল খেলোয়ার হিসাবে আমার দুই কাজিন নাম ডাক পরো উপজেলায় ছড়িয়ে ছিল। তারা ছিলে রিতিমতো সেলেব্রেটি। বাজারে, অন্যপাড়ার চায়ের দোকানে, বিয়ে বা অন্য কোন সামাজিক অনুষ্টানে তাদের ছিলো আলেদা কদর। প্রয় খেপে খেলতে যতো বিভন্ন ক্লাবের হয়ে। সাথে আমিও লগ ধরতাম। এসব দেখে আমারও স্বপ্ন ছিলে ফুটবলার হবো এবং স্কুলটিমে খেবো।
১৯৯৫ সালে আমার সেই স্বপ্ন পুরন হলো। যদিও শারীরিক ঘটনের দিকে আমি ছোট ছিলাম , পাড়ার খেলায় আমার পারফরমেন্স আর আমার দুই চাচতো ভাইয়ের সুপারিশে দলে আমার জায়গা হলো। আমার সাথে আমার দুই বন্ধুও দলে জায়গা পেলেন আর আমার দুই লিজেন্ড ভাইদের এটা শেষ বছর (পরের বছর তাদের এস , এস সি পরিক্ষা)। নতুন আর পরাতন মিলে আমাদের দল হলো অন্যান্য বছরের থেকে বেশ ভালো। যেসব স্কুলের কাছে আমরা বছরের পর বছর হাতাম, একের পর এক তাদের কে হারিয়ে আমরা ফইনালে।
সেমি ফাইনাল খেলায় মারামারি হলো এবং আমাদের বেশ কিছু খেলোয়াড় ও ছাত্রকে খেলা শেষে ফিরে আশার পথে প্রতিপক্ষের ছাত্ররা আহত করলে। ফাইনাল খেলার আগে আমাদের স্কুল কমাটি আর শিক্ষরা আমাদের নিয়ে মিটিং এ বসলেন। এক পক্ষ দবি করলেন ফাইনা খেলা বাদ দিতে। কারন খেলা হবে প্রতি পক্ষের মাঠে। আমরা আবার হামলার সম্মুখিন হতে পারি। সব শিক্ষক আর স্কুল কমেটির সদস্যরা এক এক করে মন্তব্য দিতে লাগলেন। অধিকাংশের মতে আমাদের খেলতে যাওয়া উচিট না। এক মাত্র আমাদের ক্রিড়া শিক্ষক ছড়া সবার মতে আমাদের খেলতে যাওয়া নিরাপদ না। আমরা হতাশ হয়ে পড়লাম। কিন্তু মতামত দেবার কোন অনুমতি ছিলো না। এমন সময় আমাদের আসুাল আসুআলী স্যার দাড়ালেন। তিনি ছিলেন সবচেয়ে বয়স্ক শিক্ষক। অংক করাতেন। খেলাদুলা নিয়ে কোনদিন মাতামাতি করতেন না। তিনি তাকতেন তার মতো। ক্লাসে এসে অংক করাতেন, ক্লাস শেষে চলেযেতেন। তিনি দাড়িয়ে চোখের চশমাটা খুলেন। সবার দিকে তাকালেন। তার পর হুংকার ছেড়ে বল্লেন " আমি নিয়ে যাবো আমার ছাত্রদের । দেখি কে হাত দেয়। নয় বছর ধরে হারতেছি, এবার আমাদের জিতার পালা। "
স্যারের কথা শুনে সবাই নিরাব এবং অবাক। আমরা যানতামও না যে তিনি আমাদের খেলার খবর রাখেন। রুমের পরিবেশ পাল্টে গেল।
আমরা খেলতে গেলাম এবং চেম্পিয়ান হলাম। আমাদের স্কুল এই প্রথম ফইনালে খেল্ল এবং চেম্পিয়ান হলো।
প্রতিবার বিশ্বকাপ আসলে মনে পড়ে সেই সব দিলের কথা আর আসুআলী স্যারের সেই হুংকার। আসায় আছি , বাংলাদের ফুটবল ফেড়ারেশনে একদিন আসুআলী স্যারের মত কেউ একজন এসে বলবে, আর না, এবার আমরা জিতার জন্য খলবো, এশিয়াতে সেরা হয়ে বিশ্বকাপে বিশ্বের সেরাদের সাথে খেলবো। সরার বাংলাদেশে শুধু লাল সবুজের পতেকা উড়বে। বিশ্বকাপের মাঠে বাজবে আমাদের জাতীয় সংগীত ।
আচ্ছা আমদের বিশ্বকাপ দলের আওয়ে জার্সির রং কেমন হবে ? হোম জার্সি হবে লাল সবুজ, তবে কি আওয়ে জার্সির রং সাদা হবে, নাকি লাল টুকটুকে। প্রতিপক্ষের রক্ষন ভাগে আমাদের ফারওাদের রা কাপন ধরাইতেছে। ভবুন তো কেমন লাগবে আপনার ।
হোকনা অনেক দুরের স্বপ্ন। স্বপ্ন দেখতে দোষ কি ?